বিনোদনের মধ্য দিয়ে সচেতনতার বার্তা নিয়ে তিন যুগ ধরে বিটিভিতে প্রচারিত হয়ে আসছে ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’। দেশের মিডিয়া জগতে এক অনন্য নিদর্শন ইত্যাদি। আর ঈদের ইত্যাদি মানেই বিশেষ আকর্ষণ, বিশেষ আয়োজন। ইত্যাদি পরিণত হয়েছে ঈদ ঐতিহ্যে।
মানবিক গুণের কখনোই মৃত্যু হয় না : হানিফ সংকেত
বিনোদন প্রতিবেদক

হানিফ সংকেত বলেন, ‘প্রতি ঈদেই আমরা চেষ্টা করি সমসাময়িক বিষয় নিয়ে বিষয়বৈচিত্র্যে অনুষ্ঠান সাজাতে। প্রতি ঈদেই থাকে আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের অমর সংগীত ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’ গানটি। যেহেতু এটি ঈদের প্রধান গান, তাই আমি গানটিকে ব্যাপক আয়োজনে বর্ণাঢ্যভাবে উপস্থাপনের চিন্তা করি।
এবারের ইত্যাদিতে একটি গান গেয়েছেন সিয়াম আহমেদ ও জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি।
প্রতি ঈদের মতো এবারও বিদেশিদের নিয়ে একটি পর্ব রয়েছে। এই পর্বের শুটিং অভিজ্ঞতা জানিয়ে হানিফ সংকেত বলেন, ‘এই অভিজ্ঞতা বলে বোঝানো যাবে না। আমি গত দুই যুগ ধরেই এই কাজটি করছি। কাজটি অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ এবং কষ্টসাধ্য। এর জন্য প্রচুর সময় দিতে হয়। বিদেশিদের সঙ্গে কাজ করার আনন্দই আলাদা। তারা সময় মেনে চলেন এবং কাজটাকে উপভোগ করেন। তারা অপেশাদার, তবে অনেক পেশাদার শিল্পীরও তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। বিশেষ করে বিদেশিদের সময়জ্ঞান, নিষ্ঠা, একাগ্রতা, কষ্টসহিষ্ণুতা, আন্তরিকতা দেখে আমি মুগ্ধ। মাত্র কয়েক দিনের পরিচয়ে বিদেশিদের সঙ্গে যে আত্মিক বন্ধন তৈরি হয়েছে, তা কখনোই ভোলার নয়।’
তাঁদের কোথা থেকে খুঁজে নেন? উত্তরে হানিফ সংকেত বলেন, ‘আমরা যেমন তাদের জন্য অপেক্ষা করি, তেমনি তারাও ইত্যাদির জন্য অপেক্ষা করেন। এ বছর যাঁরা করেছেন, আগামী বছর তাঁরা না থাকলেও ইত্যাদির জন্য তাঁরা তাঁদের বন্ধু-বান্ধব ও পরিচিতজনদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ করিয়ে দেন। বিভিন্ন বিদেশি দূতাবাস ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বিদেশিরাই এই পর্বে অংশগ্রহণ করেন। বিদেশিরা মনে করেন, এটি তাঁদের জীবনে একটি নতুন অভিজ্ঞতা, অন্য রকম আনন্দ। তাই তাঁরা উৎসাহের সঙ্গে এই পর্বটির জন্য অপেক্ষা করেন এবং অংশগ্রহণ করেন।’
ঈদে ইত্যাদির পাশাপাশি একটি নাটকও নির্মাণ করেন হানিফ সংকেত। এবারের ‘ঘরের কথা ঘরেই থাক’ নাটকটি নিয়ে তিনি বলেন, “বছরে দুই ঈদে দুটি নাটক নির্মাণ করি। তা-ও প্রায় দুই দশক ধরে। তবে আমি স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করি ইত্যাদিতেই। এটিএন বাংলার অনুরোধেই এখনো করে যাচ্ছি এই চ্যানেলেই। ভিউসর্বস্ব অস্থির বাণিজ্যিক যুগে ‘ঘরের কথা ঘরেই থাক’ নাটকটি বাণিজ্যিক বা ভিউর উদ্দেশ্যে নির্মিত নয়। তবে নাটকটি দর্শকরা পরিবার নিয়ে দেখতে পারবেন। কারণ এটি একটি সামাজিক নাটক। নাটকে গল্পের মাধ্যমে সমাজের ক্ষতগুলোকে তুলে ধরার চেষ্টা করি। সদ্য বিবাহিত এক দম্পতি এবং তাদের মা-বাবা, পাড়া-প্রতিবেশী ও বন্ধু-বান্ধব নিয়েই গড়ে উঠেছে ‘ঘরের কথা ঘরেই থাক’ নাটকের কাহিনি।”
বিটিভিতে ইত্যাদি, এটিএনে নাটক। এই দুটি চ্যানেলের বাইরে হানিফ সংকেতের কাজ সেভাবে পাওয়া যায় না। প্রশ্ন করতেই তিনি বলেন, ‘নানা চ্যানেলে ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করি না। আমি শিল্প-সংস্কৃতির চর্চার ক্ষেত্রে ব্যবসাটাকে গুরুত্ব দিই না। নাটক প্রতি মাসেই করা সম্ভব। কারণ ইত্যাদির ১ মিনিটের একটি নাট্যাংশ লিখতে অনেক সময় দুই-তিন দিনও লেগে যায়। আর নাটক শুরু করলে দুই দিনেই লিখে শেষ করা সম্ভব। চিত্রায়ণ-সম্পাদনা শেষে এক সপ্তাহেই একটি নাটকের নির্মাণ সম্পন্ন করা যায়। কিন্তু একটি ইত্যাদি নির্মাণ করতে দুই-তিন মাস সময় দরকার পড়ে। কারণ এর নির্মাণ অত্যন্ত জটিল। আমি নাটকের চেয়ে ইত্যাদিকে বেশি গুরুত্ব দিই। দর্শকরা তাদের মূল্যবান সময় বের করে আমার অনুষ্ঠান দেখতে বসেন, আমিও আন্তরিকভাবে তাদের সময়ের মূল্য দিতে চেষ্টা করি।’
ইত্যাদি এবং আপনার নাটকে শিল্পীদের একটা বলয় আছে। বেশ কয়েকজন চেনা মুখ। তাঁদের অন্য কোথাও তেমন দেখা না গেলেও হানিফ সংকেতের কাজে বরাবরই দেখা যায়। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সম্পর্ক হয় ভালোবাসা থেকেই। শিল্পীরা আমাকে ভালোবাসেন, আমিও তাঁদের ভালোবাসি। এ সম্পর্ক দীর্ঘ তিন যুগেরও বেশি সময়ের। অনেক শিল্পীই আছেন, যারা অন্যান্য অনুষ্ঠান করলেও আমৃত্যু ইত্যাদিতেই অভিনয় করেছেন। দু-একটি উদাহরণ না দিলে বোঝা যাবে না। যেমন-পপসম্রাট আজম খান, বাংলা গানের ঐশ্বর্য এন্ড্রু কিশোর কিংবা সংগীতশিল্পী খালিদ হাসান মিলু তাঁদের সবারই শেষ গানটি ছিল ইত্যাদিতে পরিবেশিত। অভিনেতা মহিউদ্দিন বাহার তাঁর শেষ দিনগুলোতে অ্যাম্বুল্যান্সে করে আমার এখানে এসে অভিনয় করে গেছেন, এ টি এম শামসুজ্জামানকে আমরা হুইলচেয়ার দিয়ে নিয়ে এসে অভিনয় করিয়েছি, সাইফুদ্দিন আহমেদ যত দিন পর্যন্ত একটি মাত্র শব্দ বলতে পারতেন, তত দিন পর্যন্ত আমার এখানে অভিনয় করে গেছেন, অভিনেতা আরিফুল হক বিদেশ যাওয়ার আগে শেষ অভিনয় আমার ইত্যাদিতেই করেছেন। হাসমত, ব্ল্যাক আনোয়ার, আমিনুল হক, হুমায়ুন ফরীদি, নাজমুল হুদা বাচ্চু, কে এস ফিরোজ, আলী আকবর রুপু, আব্দুল কাদের, এস এম মহসিন— এ রকম বহু শিল্পীর উদাহরণ দেওয়া যাবে, যাঁদের শেষ কাজটি ছিল আমার অনুষ্ঠানেই। আসলে শিল্পীরা আমার সঙ্গে কাজ করে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, আমিও তাঁদের নিয়ে কাজ করে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি—এ জন্যই অনেক শিল্পীকে বরাবরই আমার এখানে কাজ করতে দেখা যায়।
হানিফ সংকেত সমাজের নানা অসংগতি তুলে ধরে আসছেন যুগ যুগ ধরে। মানুষ সচেতনও হচ্ছে। কিন্তু লোকে বলে, দিন দিন সমাজে অবক্ষয়, অসহিষ্ণুতা বাড়ছে। মানুষের মানবিকবোধ কমছে। এটা কিভাবে দেখেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের সমাজে মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ে সমাজের এক বিরাট অংশ পাশ্চাত্যের চমকসর্বস্ব বিকৃতির মরীচিকার পেছনে ছুটে ভুলতে বসেছে নিজের সভ্যতা-সংস্কৃতি, জড়িয়ে পড়ছে অসামাজিক কাজে, আসক্ত হয়ে পড়ছে মারণনেশায়, হারিয়ে ফেলছে মানবিক গুণ। আত্মস্বার্থ, ব্যক্তিলোভও কেড়ে নিয়েছে মানুষের মানবিক গুণ। কিন্তু আশার কথা হলো- মানবসত্তা ও মানবিক গুণের কখনোই মৃত্যু হয় না। অনেক জাগতিক স্বার্থের নিচে তা চাপা পড়ে থাকলেও তাকে জাগিয়ে তোলা যায়। মহানুভূতি ও সহানুভূতিতে জেগে উঠতে পারে মানুষ, নিজেকে করতে পারে মানবসেবায় উৎসর্গ। আমরা প্রায়ই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে চেষ্টা করি মানুষের সেই মানবিক গুণগুলো তুলে ধরতে।’
সম্পর্কিত খবর

অভিনেত্রীর ১৪ মিনিটের ভিডিও ফাঁস!
বিনোদন ডেস্ক

তামিল সিনেমার অভিনেত্রী শ্রুতি নারায়ণ। কিছুদিন আগে তার ১৪ মিনিট দৈর্ঘ্যের একটি ভিডিও ফাঁস হয়েছে। জানা যায়, এটি প্রাইভেট অডিশনের সময়ে ধারণ করা। কাস্টিং কাউচের ভিডিওটি ফাঁস হওয়ার পর তুমুল সমালোচনা চলছে।
ভিডিওটি ফাঁস হওয়ার পর এতদিন চুপ ছিলেন শ্রুতি তবে অবশেষে বিষয়টি নিয়ে মুখ খুললেন এই অভিনেত্রেী। ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে দেওয়া পোস্টে শ্রুতি জানান, খুবই কঠিন সময় পার করছেন তিনি।
শ্রুতি বলেন, এই ধরনের কনটেন্ট ছড়িয়ে দেওয়া কেবল রসিকতা-মজার বিষয়। কিন্তু আমার এবং আমার ঘনিষ্ঠজনদের জন্য এটি খুব কঠিন পরিস্থিতি।
অনুরোধ জানানোর পাশাপাশি ক্ষোভ উগরে শ্রুতি বলেন, ‘আপনাদের বিনীতভাবে অনুরোধ করছি, সব কিছু দাবানলের মতো ছড়িয়ে দেবেন না। তার পরও যদি একই কাজ করেন, তবে আপনি আপনার মা-বোন বা বান্ধবীর ভিডিও দেখুন। কারণ তারাও মেয়ে, তাদেরও আমার মতো শরীর আছে। সুতরাং তাদের ভিডিও উপভোগ করুন।’
তামিল টিভি সিরিয়াল দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেন শ্রুতি।

উৎসবের নায়িকা বুবলী, থাকছেন দুই মাধ্যমে
বিনোদন প্রতিবেদক

শবনম বুবলীকে বলা হয় উৎসবের নায়িকা। অভিষেকের পর থেকেই ঈদ উৎসবে ডাবল সিনেমা নিয়ে প্রেক্ষাগৃহে হাজির হয়েছেন তিনি। মাঝে ছন্দঃপতন হলেও আবারও ফিরেছেন স্বমহিমায়।
এবার ঈদ উৎসবেও দুই সিনেমা নিয়ে আসছেন তিনি।
তবে বুবলীর ডাবল ঈদ মিস হচ্ছে না কোনোভাবেই। প্রেক্ষাগৃহের পাশাপাশি এবার এই নায়িকা থাকছেন ওটিটিতেও।
বুবলী অভিনীত ‘জংলি’ পরিচালনা করেছেন এম রাহিম।

এবার গানের প্রশিক্ষক মিলা
বিনোদন প্রতিবেদক

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত সংগীতবিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রশিক্ষক হিসেবে অংশ নিয়েছেন পপ তারকা মিলা। সদ্য শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত তিন দিনব্যাপী এই কর্মশালায় ক্লাস নিয়েছেন তিনি।
এমন একটি আয়োজনে অংশ নিয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত এই পপ তারকা। এটি তার ক্যারিয়ারে একটি নতুন অভিজ্ঞতা যোগ করেছে বলে মনে করেন।
কালের কণ্ঠকে মিলা ইসলাম বলেন, ‘এ ধরনের কর্মশালায় আমি আগে এভাবে কখনো অংশ নিইনি। এটা আমার জন্য একদমই অন্য রকম একটা অভিজ্ঞতা, খুবই চমৎকার। তিন দিন খুবই দারুণ সময়ে কেটেছে আমার।’
কর্মশালা প্রসঙ্গে এই গায়িকা আরো বলেন, ‘এই কর্মশালার আয়োজনটা মূলত শ্রোতাদের সঙ্গে শিল্পীদের সংযোগ স্থাপন করার জন্য।
মিলা এখন ব্যস্ত রয়েছেন তার নতুন গান নিয়ে।
এ ছাড়া সম্প্রতি দীর্ঘদিন পর প্লেব্যাক করেছেন। ‘ইনসাফ’ সিনেমার একটি আইটেম গানে কণ্ঠ দিয়েছেন মিলা। এর মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রের গানে সাত বছরের বিরতি ভেঙেছেন তিনি।

১৫ নাটকে জমকালো ঈদ উৎসব
বিনোদন প্রতিবেদক

উৎসব মানেই যেন সিএমভির তারকাখচিত আয়োজন। ঈদ হলে তো সেই আয়োজনে যোগ হয় বাড়তি মাত্রা। বরাবরের মতো এবারের ঈদেও জমকালো আয়োজন রয়েছে এই ব্যানারে।
এবার মোট ১৩টি বিশেষ নাটকে অভিনয় করেছেন দেশের জনপ্রিয় সব টিভি তারকা।
এর মধ্যে উৎসবের শুরুটা হবে চাঁদরাতে সজীব খান নির্মিত ‘প্রেম ভাই’ নাটকের মাধ্যমে। এতে অভিনয় করেছেন তৌসিফ মাহবুব, তটিনী ও ফারুক আহমেদ। ঈদের দিন মুক্তি পাবে আলোচিত নাটক ‘বাজি’।
সিএমভির কর্ণধার এস কে সাহেদ আলী পাপ্পু জানান, চাঁদরাত থেকে টানা ১৫ দিন নাটকগুলো উন্মুক্ত হবে প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টায় প্রতিষ্ঠানটির ইউটিউব চ্যানেলে।
এই তালিকায় আরো থাকছে মহিদুল মহিমের ‘ফিরে দেখা’, অভিনয়ে জোভান ও তটিনী। হাসিব হাসান রাখির ‘মন দিওয়ানা’, অভিনয়ে তৌসিফ মাহবুব ও তটিনী।
থাকছে মাহমুদ মাহিনের ‘শেষটা তুমি’, অভিনয়ে ফারহান ও স্পর্শিয়া। প্রবীর রায় চৌধুরীর ‘বান্টির বিয়ে’, অভিনয়ে জোভান ও কেয়া পায়েল।
আরো থাকছে মাসরিকুল আলমের ‘মেঘের বৃষ্টি’, অভিনয়ে জোভান ও নিহা। এ কে পরাগের ‘হাউ কাউ’, অভিনয়ে ফারহান ও সাফা কবির।
এবারের ঈদ আয়োজন প্রসঙ্গে প্রযোজক এসকে সাহেদ আলী পাপ্পু বলেন, ‘বলতে পারেন গোটা বছর ধরেই আমরা ঈদের গল্পগুলো সাজাতে থাকি। যেন ঈদ উৎসবে দর্শকদের দারুণ সব নাটক উপহার দিতে পারি। সেই ধারাবাহিকতা এবারও থাকছে। মোট ১৫টি প্রজেক্ট এবার আমরা তৈরি করেছি। যেখানে দেশের প্রায় সব তারকা শিল্পী, নির্মাতা ও চিত্রনাট্যকারের মেলবন্ধন ঘটেছে। আশা করছি, আমাদের এই কাজগুলো দর্শকদের ঈদের আনন্দ বাড়িয়ে দেবে।’