মধ্য ডিসেম্বর থেকে শীতের প্রকোপ বাড়তে থাকে। গ্রামাঞ্চলে শীতের কামড় থেকে বাঁচার একটি সাধারণ উপায় দেখা যায় আগুন জ্বালিয়ে তাপ পোহানো। আর তা করতে গিয়েই প্রতিবছর বহু মানুষ দগ্ধ হয়। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
হাসপাতাল সুবিধা বাড়াতে হবে
- দ্রুত বাড়ছে আগুনে পোড়া রোগী
অন্যান্য

দেশের তিনটি জেলায় এখনো মৃদু শৈত্যপ্রবাহ চলছে। জেলাগুলো হচ্ছে কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড় ও সিলেট। আরো পাঁচটি জেলার তাপমাত্রা শৈত্যপ্রবাহের কাছাকাছি। আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি সপ্তাহের শেষ নাগাদ মৃদু শৈত্যপ্রবাহ চলমান থাকতে পারে।
শীতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র শ্রেণির মানুষ, বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা। অনেকেরই থাকার ভালো ঘর নেই। ভাঙা বেড়ার ঘরে কনকনে ঠাণ্ডা বাতাস হু হু করে ঢুকতে থাকে। লেপ-কম্বল বা মোটা শীতনিবারক বস্ত্রেরও অভাব রয়েছে। তা ছাড়া গ্রামের দরিদ্র মানুষ, বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের শরীরে রয়েছে রক্তাল্পতা ও পুষ্টির অভাব। শীতে তারা সহজেই কাবু হয়ে পড়ে। তারাই আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা বেশি করে আর দুর্ঘটনার শিকার হয়। আগুনে পোড়া রোগীদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বড় শহরের আধুনিক হাসপাতালে নেওয়ার মতো আর্থিক সংগতিও তাদের নেই। তাদের রক্ষায় দ্রুত গরম জামা-কাপড়ের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। পাশাপাশি উন্নত ঘরদোর তৈরিতে দরিদ্র মানুষকে সহযোগিতা করার দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনাও নিতে হবে। শহরের ভাসমান মানুষের জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। হাসপাতালগুলোতে, বিশেষ করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আগুনে পোড়া রোগীদের চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। শুধু আগুনে পোড়া নয়, শীতকালে যেসব স্বাস্থ্যসমস্যা তীব্র হয়, সেগুলো মোকাবেলায়ও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।
সম্পর্কিত খবর

কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করুন
- মাদকের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অপরাধ

মাদক ক্রমেই এক ভয়ংকর সামাজিক বিপর্যয়ের কারণ হয়ে উঠছে। দেশে মাদক নিয়ন্ত্রণে জিরো টলারেন্স রয়েছে। লাগাতার অভিযান হচ্ছে, কিন্তু কাজের কাজ তেমন কিছুই হচ্ছে না। মাদকের বিস্তার রোধ করা যাচ্ছে না।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মাদক সহজলভ্য হওয়ায় কিশোররা ক্রমেই বেশি করে আসক্ত হয়ে পড়ছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮ অনুযায়ী মাদকদ্রব্য পরিবহন, কেনাবেচা, সংরক্ষণ, উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ, অর্থ লগ্নীকরণ, পৃষ্ঠপোষকতাসহ বিভিন্ন অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা মৃত্যুদণ্ড। এত কঠোর আইন সত্ত্বেও মাদকের বিস্তার রোধ করা যাচ্ছে না। মাদকের ভয়ংকর থাবা থেকে দেশ বাঁচাতে মাদকের সহজলভ্যতা দূর করতে হবে। দেশে মাদক প্রবেশ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। মাদকসংক্রান্ত মামলাগুলোর বিচারকাজ দ্রুত সম্পন্ন করে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

বিকল্প বাজার খুঁজতে হবে
- শুল্কযুদ্ধের মারাত্মক প্রভাব

বৈশ্বিক পর্যায়ে রীতিমতো শুল্কযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। যেসব দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে, সেসব দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর মার্কিন প্রশাসন নানা মাত্রায় শুল্ক আরোপ করেছে। এর বিপরীতে অনেক দেশ যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপরও শুল্ক আরোপ করেছে। এই শুল্কযুদ্ধ বিশ্ববাণিজ্যকে অস্থির করে তুলেছে।
গতকাল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার শুল্কযুদ্ধ বা বাণিজ্যযুদ্ধ ক্রমেই তীব্র হচ্ছে। মার্কিন প্রশাসনের আরোপিত ৩৪ শতাংশ শুল্কের বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যেও একই পরিমাণ শুল্ক বসানোর ঘোষণা দিয়েছে চীন।
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে যেসব পণ্য আমদানি করে তার ওপরও ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। জানা যায়, দেশটিতে বাংলাদেশ বছরে মোট ৮৫০ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি করে। এর মধ্যে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয় ৭৫০ কোটি ডলারের। যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত শুল্কারোপের ফলে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। অথচ এই শিল্পে ৪০ লাখের বেশি শ্রমজীবী সরাসরি জড়িত। তাই অনেকে আশঙ্কা করছে, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে দেশের অর্থনীতি ও সমাজজীবনে। গতকাল প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, নতুন করে শুল্কারোপের কারণে অনেক ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে ক্রয়াদেশ স্থগিত করতে শুরু করেছে। পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, কোনো কোনো ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান মূল্যছাড়ও চাইতে শুরু করেছে। তাঁদের ধারণা, ৩৭ শতাংশ শুল্কারোপের ঘটনায় মার্কিন বাজারে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ রপ্তানি কমে যেতে পারে।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার পরিস্থিতি সামলাতে এর মধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেশি করে পণ্য আমদানির সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অতিরিক্ত শুল্কারোপ অন্তত তিন মাস স্থগিত রাখার জন্য চিঠি দিয়েছেন। তবে অর্থনীতি বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাংলাদেশকে রপ্তানি পণ্য বহুমুখী করতে হবে এবং বিকল্প বাজার খুঁজে বের করার ওপর আরো জোর দিতে হবে।

গণমাধ্যম ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে
- কমিশনের কিছু অবাস্তব সুপারিশ

গণমাধ্যম রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনায় সহযোগিতা করে। উন্নত বিশ্বে গণমাধ্যমে স্বাধীনতা ও স্বচ্ছতা রক্ষায় রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যাপক সহযোগিতা করা হয়। দুঃখজনক হলেও সত্য যে বাংলাদেশে অতীতে নানাভাবে গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করা হয়েছে।
স্বাধীনতার পর অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় ধরে নানা প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে এগিয়ে এসেছে আমাদের সংবাদপত্রশিল্প। কিন্তু এখনো অনেক প্রতিকূলতা রয়েছে। রয়েছে আর্থিক সংকট, গুণগত মান ও পেশাদারির অভাব।
আমরা মনে করি, কমিশনের সুপারিশগুলো বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন। এমন কিছু করা উচিত হবে না, যা দেশের বিকাশমান গণমাধ্যমকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

অবিলম্বে হামলা বন্ধ করতে হবে
- ফিলিস্তিনে গণহত্যার তীব্র প্রতিবাদ

বিশ্বজনমত উপেক্ষা করে ইসরায়েলি বাহিনী ফিলিস্তিনের গাজায় নির্বিচারে গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। নারী-শিশুসহ এ পর্যন্ত প্রাণ গেছে ৫০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনির। আর ইসরায়েলের এই বর্বরতাকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ফলে ইসরায়েল আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
ইসরায়েল গাজায় শুধু হামলাই করছে না, মানবিক সহায়তা কর্মসূচিও বন্ধ করে রেখেছে।
গাজায় মানবিক সাহায্য পৌঁছানো বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। স্পষ্টতই ইসরায়েল আন্তর্জাতিক আবেদনের তোয়াক্কা করেনি, বরং ক্রমবর্ধমানভাবে তীব্র হত্যাকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার ইসরায়েলকে অবিলম্বে সব সামরিক অভিযান বন্ধ, সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শন এবং আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের অধীনে তার দায়িত্ব পালন করার আহ্বান জানায়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ফিলিস্তিনি জনগণের সব ন্যায্য অধিকার, আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার এবং ১৯৬৭ সালের পূর্ববর্তী সীমানা অনুসারে পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতি বাংলাদেশ সরকারের দৃঢ় সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করছে।
শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা দুনিয়ায়ই ইসরায়েলি গণহত্যার তীব্র নিন্দা জানানো হচ্ছে। বিক্ষোভ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে, এমনকি খোদ ইসরায়েলেও। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকার কোনো কিছুকেই তোয়াক্কা করছে না। এমনকি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানাকেও আমলে নেওয়া হচ্ছে না। তাই বাংলাদেশে যে বিক্ষোভ প্রদর্শিত হয়েছে, তা অত্যন্ত যুক্তিপূর্ণ ও সময়োপযোগী। কিন্তু এই সুযোগে কিছু কিছু মানুষ ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে কেএফসি, বাটার শোরুমসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়েছে, ভাঙচুর করেছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা মনে করি, ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে ভবিষ্যতেও যেসব কর্মসূচি পালিত হবে, সব কর্মসূচিই হতে হবে শান্তিপূর্ণভাবে।
আমরা চাই ইসরায়েল অবিলম্বে গাজায় নিরীহ ফিলিস্তিনিদের গণহত্যা বন্ধ করবে। মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক রীতিনীতির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করবে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা, ফোরাম ও দেশ—সবাইকে ইসরায়েলের বর্বর হামলার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে, কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।