বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি তথ্য দিয়েছেন, যা নিয়ে আমাদের গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করা প্রয়োজন, পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। তিনি বলেছেন, বিদেশে চিকিৎসা করাতে গিয়ে প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে পাঁচ বিলিয়ন ডলার দেশের বাইরে চলে যায়। যেখানে আমাদের বার্ষিক রপ্তানি আয় মাত্র ৬০ বিলিয়ন ডলারের মতো, যেখানে লাখ লাখ প্রবাসী কর্মী সারা বছরে রেমিট্যান্স পাঠান ২৩ বিলিয়ন ডলারের মতো, সেখানে চিকিৎসার পেছনে পাঁচ বিলিয়ন ডলার বাইরে চলে যাওয়া অনেক বড় একটি বিষয়। রবিবার পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) বাংলাদেশ আয়োজিত ‘ক্রস বর্ডার ডাটা ফ্লো : বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক কর্মশালায় ড. মনসুর আরো বলেন, এই তথ্যও চূড়ান্ত নয়।
প্রতিকারের উপায় খুঁজতে হবে
- বিদেশে চিকিৎসায় বছরে ৫০০ কোটি ডলার

বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর অনেক রোগী ভারত, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, এমনকি ইউরোপ-আমেরিকায় গিয়েও চিকিৎসা করায়। মেডিক্যাল ভিসায় না গিয়ে তারা ট্যুরিস্ট বা অন্যান্য ভিসায় গিয়ে চিকিৎসা করায়। ফলে অনেকেই মনে করে, চিকিৎসার কারণে বৈদেশিক মুদ্রা দেশের বাইরে চলে যাওয়ার পরিমাণ আরো অনেক বেশি হবে।
আমাদের স্বাস্থ্য খাতে বাজেট নেহাত কম নয়। প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা।
দেশের চিকিৎসাব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থা কমে যাওয়াকে ঠেকাতে হবে। কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় দেশের চিকিৎসাব্যবস্থার উন্নয়ন ও সেবার মান বাড়াতে হবে। তা না হলে দেশ থেকে বৈধ বা অবৈধ উপায়ে চিকিৎসার জন্য বৈদেশিক মুদ্রা বাইরে চলে যাওয়ার পরিমাণ দিন দিন বাড়তেই থাকবে।
সম্পর্কিত খবর

কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে
- কমছে না মানবপাচার

মানবপাচার আমাদের বড় সমস্যাগুলোর একটি। বেকারত্বের অভিশাপ ঘোচাতে কিংবা কিছুটা উন্নত জীবন পেতে প্রতিবছর বহু তরুণ অবৈধভাবে বিদেশে যেতে চায় এবং পাচারকারীদের শিকারে পরিণত হয়। এসব তরুণ বা তাদের পরিবার শুধু আর্থিক ক্ষতিরই মুখোমুখি হয় না, অনেককে বেঘোরে প্রাণও দিতে হয়। রবিবার কালের কণ্ঠে উপকূলীয় এলাকায় মানবপাচার সংক্রান্ত তিনটি আলাদা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, টেকনাফ সীমান্তেই মানবপাচারে জড়িত আছে ১৫টি চক্র। এসব চক্রের তিন শতাধিক সদস্য রয়েছে। তারা শুধু রোহিঙ্গা নয়, বাংলাদেশিদেরও নানা কৌশলে পাচার করছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন পাঁচটি স্থান মানবপাচারের অন্যতম পয়েন্ট। উদ্ধারকৃত অনেকে পুলিশকে জানিয়েছে, বাহারছড়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কচ্ছপিয়া গ্রামে পাচারকারীচক্রের বিশাল আস্তানা আছে। আছে কমপক্ষে ছয়টি বন্দিশালা। বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজনকে এনে এখানে আটক করে রাখা হয়। টেকনাফ থানার পুলিশ গত জানুয়ারিতে অভিযান চালিয়ে বন্দিশালা থেকে পাচারের জন্য আটকে রাখা কয়েকজন রোহিঙ্গাসহ ১৬ জনকে উদ্ধারও করেছিল।
মানবপাচার প্রতিরোধে আমাদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো খুব একটা সফল নয়। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, মানবপাচার নির্মূলে বাংলাদেশ ন্যূনতম মানও অর্জন করতে পারেনি, তবে কিছু ক্ষেত্রে অপর্যাপ্ত পদক্ষেপ রয়েছে। কক্সবাজারের পুলিশ সুপার জানান, গত দুই বছর তিন মাসে ১৫৫ জন পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং উদ্ধার করা হয়েছে পাচারের শিকার ৫০০ জনকে। অভিযোগ রয়েছে, ছোটখাটো মানবপাচারকারী গ্রেপ্তার হলেও রাঘব বোয়ালরা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যায়। আবার বিচারকাজে দীর্ঘসূত্রতাও রয়েছে। জামিনে বেরিয়ে এসে অনেকে আবার একই কাজ করে।
মানবপাচার একটি গুরুতর অপরাধ। এর সঙ্গে রাষ্ট্রের মর্যাদার প্রশ্নও জড়িত আছে। তাই মানবপাচারের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। জড়িতদের দ্রুত বিচারের মাধ্যমে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি অবৈধ পথে বিদেশে না যাওয়ার জন্য ব্যাপক সচেতনতামূলক প্রচারণাও চালাতে হবে।

আনন্দ উৎসবে মেতে উঠুক দেশ
- স্বাগত ১৪৩২ সাল

স্বাগত ১৪৩২ সাল। আজ পহেলা বৈশাখ, বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন। আবির রাঙানো উষার আলোতে অবগাহন করে বাঙালি মেতে উঠবে প্রাণের উৎসবে। ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় মিলিত হবে বর্ষবরণের আনন্দ-হিল্লোলে।
নববর্ষ বরণের সংস্কৃতি চিরন্তন, সর্বব্যাপী। সব দেশ, সব জনগোষ্ঠী নিজ নিজ নতুন বছরে এভাবেই মেতে ওঠে বর্ষবরণের নানা আয়োজনে। বাংলা নববর্ষেও একই রীতি চলে আসছে হাজার বছর ধরে।
আজ কিছু মানুষ বাঙালির সুপ্রাচীন এই ঐতিহ্য অস্বীকার করতে চাইছে।
বাঙালির সংস্কৃতি ধ্বংসের যে অপচেষ্টা তদানীন্তন পাকিস্তানে শুরু হয়েছিল, তার প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে ১৯৬৭ সালে রমনার বটমূলে যে আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেছিল ছায়ানট, তা আজও বাঙালির এক অমলিন ঐতিহ্য হয়ে টিকে আছে। রাজধানীতে দিন শুরু হবে রমনায় ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। জঙ্গিবাদী অপশক্তির বোমা হামলাও ছায়ানটের এই যাত্রাকে থামাতে পারেনি। অন্যদিকে বাঙালির যে ঐতিহ্য আজ বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হয়ে গেছে, সেই শোভাযাত্রাও রয়েছে আরো বেশি বর্ণাঢ্য আয়োজনে। রমনায় ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে যেমন লাখো মানুষের ঢল নামবে, একই চিত্র দেখা যাবে চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে আয়োজিত শোভাযাত্রায়ও। রাজধানীজুড়েই থাকবে উৎসবের আমেজ। থাকবে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, খুলনাসহ দেশের বড় শহরগুলোতে। থাকবে গ্রামবাংলায়ও। বর্ষবরণ উৎসবের ক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীগুলোকে সর্বোচ্চ পেশাদারির পরিচয় দিতে হবে। প্রাণের উৎসবের স্বতঃস্ফূর্ততায় কোনো শঙ্কা যেন না থাকে।
আজকের এই বিশেষ দিনে সবার একটাই চাওয়া, ‘মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা/অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।’ নববর্ষে আমাদের অগণিত পাঠক, বিজ্ঞাপনদাতা ও শুভানুধ্যায়ীকে জানাই নতুন বছরের আন্তরিক শুভেচ্ছা। শুভ নববর্ষ।

ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করুন
- পেঁয়াজ নিয়ে অস্বস্তিতে কৃষক

পেঁয়াজ একটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। সাধারণত মৌসুমে এর দাম কমে যায়। মৌসুম শেষে দাম বাড়তে থাকে। নিকট অতীতে বেশ কয়েকবারই পেঁয়াজের দাম মানুষের উদ্বেগের কারণ হয়েছে।
চাষিরা বলছেন, বীজ প্রতারণা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এবার ফলন কম। তাঁদের অভিযোগ, মৌসুমের শুরুতে ভর্তুকির পেঁয়াজবীজ নিয়ে অনেক কৃষক প্রতারিত হন। পরে সরকার পুনরায় কৃষকদের বীজ দিয়েছে। কিন্তু এবার বৃষ্টিপাত কম হওয়ায়, বালাইনাশক ও ওষুধের দাম বেশি হওয়ায় এবং পোকার আক্রমণের কারণে ফলন কম হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, বাংলাদেশে দুই ধাপে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। মুড়ি কাটা বা মূল কাটা পেঁয়াজ, যা গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ নামে পরিচিত। অন্যটি শীতের পেঁয়াজ। পেঁয়াজের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বেছে নেওয়া হয় গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজকে। দুই মৌসুম মিলে গত অর্থবছরে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩৬ লাখ টন। উৎপাদিত হয়েছিল ৩৪ লাখ ১৭ হাজার টন।
পচনশীল বলে কৃষকরা দীর্ঘ সময় পেঁয়াজ ধরে রাখতে পারেন না। সংরক্ষণব্যবস্থা বা হিমাগারের অভাব রয়েছে। এতে বছরে কয়েক লাখ টন পেঁয়াজ পচে নষ্ট হয়। ফলে চাহিদার তুলনায় বেশি উৎপাদিত হলেও প্রতিবছর প্রচুর পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। আর চাষিরা বাধ্য হন মৌসুমে কম দামে বা লোকসানে হলেও পেঁয়াজ বিক্রি করে দিতে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে সারা দেশে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের আবাদ বাড়াতে হবে। উচ্চফলনশীল বিভিন্ন জাত, বিশেষ করে বারি-৫ জাতের পেঁয়াজের চাষ সারা দেশে দ্রুত ছড়িয়ে দিতে হবে। এ ছাড়া কৃষককে আর্থিক সুবিধা দিতে স্বল্প সুদে কৃষিঋণ বিতরণ করা এবং মৌসুুমে ভালো দামের নিশ্চয়তা দিতে হবে। পেঁয়াজ সংরক্ষণ করার আধুনিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে
- সুন্দরবন ও কক্সবাজারে জলদস্যু আতঙ্ক

সুন্দরবন ও কক্সবাজার এলাকায় জলদস্যুদের উৎপাত অনেক বেড়ে গেছে। জেলে, বাওয়ালি, মৌয়ালসহ বিভিন্ন পেশার লোকজনের মধ্যে রীতিমতো আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেককে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। নির্যাতন করে মুক্তিপণ আদায় করছে।
গত শুক্রবার সন্ধ্যায় কোস্ট গার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম উল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘২০১৮ সালের ১ নভেম্বর সুন্দরবন দস্যুমুক্ত ঘোষণা হওয়ায় এ অঞ্চলের জেলেরা ভালোই ছিল, কিন্তু সম্প্রতি আবারও বন ও জল দস্যুদের তৎপরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের অধীন এলাকাগুলো মৎস্যজীবীদের নিরাপত্তা বিধান, জলদস্যু ও বনদস্যু দমন এবং নিরাপদ সুন্দরবন নিশ্চিত করতে ২৪ ঘণ্টা টহল অব্যাহত রাখা হয়েছে। সবার সহযোগিতা নিয়ে আমরা আবারও জলদস্যুমুক্ত করব।’ জানা যায়, সর্বশেষ গত বুধবারও ছয়জন নারীসহ ৩৩ জন জেলেকে অপহরণ করা হয়েছে।
বরগুনার সকিনার মোহনাসংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে ডাকাতের কবলে পড়া চারটি ফিশিং ট্রলারসহ ৬৭ জন জেলেকে উদ্ধার করেছে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড। শুক্রবার বিকেলে কোস্ট গার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম উল হক এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, গত ২ এপ্রিল বরগুনা জেলার পাথরঘাটা থেকে চারটি ফিশিং ট্রলার (এমভি তারেক, আব্দুল্লাহ তুফান, এমভি মা ও জুনায়েদ ইসলাম) ৬৭ জন জেলেসহ মাছ শিকারের উদ্দেশ্যে গভীর সমুদ্রে যায়। এরপর গত ৯ এপ্রিল আনুমানিক রাত ১১টায় বরগুনার তালতলী উপজেলাধীন সকিনার মোহনাসংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে জলদস্যুরা ট্রলারগুলোতে আক্রমণ করে।
জেলে, মৌয়ালদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ছাড়াও সুন্দরবন ও কক্সবাজারে প্রচুর পর্যটক যাওয়া-আসা করে। অর্থনীতিতে তারও বড় অবদান আছে। জলদস্যুদের উৎপাত বন্ধ করতে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।