ঢাকা, শুক্রবার ২১ মার্চ ২০২৫
৬ চৈত্র ১৪৩১, ২০ রমজান ১৪৪৬

ঢাকা, শুক্রবার ২১ মার্চ ২০২৫
৬ চৈত্র ১৪৩১, ২০ রমজান ১৪৪৬

প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকুক

  • রপ্তানি আয়ে সুখবর
শেয়ার
প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকুক

গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ছয় মাস অতিক্রান্ত হয়েছে। গত দেড় দশকে সীমাহীন লুটপাটের মাধ্যমে দেশকে জরাজীর্ণ করে ফেলা হয়েছিল। দেশের ব্যাংকিং খাতের রীতিমতো মেরুদণ্ড ভেঙে ফেলা হয়েছিল। শঙ্কা কাটিয়ে রপ্তানি আয়েও সুখবর এসেছে।

রপ্তানি আয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে।

দেশ নানামুখী চ্যালেঞ্জ ও বহু ধরনের ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করেছে। এর মধ্যেও কিছু প্রাপ্তি, কিছু অর্জন আমাদের উৎসাহিত করে। গত সোমবার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) পণ্য রপ্তানি আয়ের যে হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) দেশ থেকে মোট দুই হাজার ৮৯৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে।

এই রপ্তানি আয় আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১১.৬৮ শতাংশ বেশি। রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) আয় বেড়েছে ১২ শতাংশ। সাত মাসে তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানি আয়ের মধ্যে এক হাজার ২৬৮ কোটি ৭৬ লাখ ডলার এসেছে নিটওয়্যার রপ্তানি থেকে, যা বছর ব্যবধানে ১২.০৩ শতাংশ বেড়েছে। রপ্তানিতে দ্বিতীয় শীর্ষ স্থানে চলে এসেছে কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য।
চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে ৬৭ কোটি ডলারের কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। জানুয়ারিতে সাত কোটি ৮৩ লাখ ডলারের কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২১.৩৫ শতাংশ।

দেশ এগিয়ে চলেছেদেশপ্রেমিক যেকোনো মানুষের কাছে তা স্বস্তিকর, আনন্দদায়ক। বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধির এই ধারা অব্যাহত থাকুক।

  আমাদের এখন ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যাংক ঋণসহ পুঁজির জোগান বৃদ্ধি ও সহজলভ্য করতে হবে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমাতে হবে। রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণ করতে হবে। বাজার সম্প্রসারণের উপযুক্ত উদ্যোগ নিতে হবে। রপ্তানি বহুমুখীকরণ বা বহুমুখী রপ্তানির উপাদান নিয়ে কাজ করতে হবে। রপ্তানি বহুমুখীকরণের প্রধান শর্ত পণ্য বহুমুখীকরণ। রপ্তানির ক্ষেত্রে অপ্রচলিত পণ্যও সম্ভাবনাময় হতে পারে। পণ্য বহুমুখীকরণ ও রপ্তানিযোগ্য পণ্যের নতুন বাজার খুঁজে বের করতে বা নতুন বাজার সৃষ্টি করতে আমাদের বৈদেশিক মিশনগুলোকে কাজ করতে হবে। বিকল্প ও নতুন বাজার খুঁজে বের করতে হবে। রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে বিকল্প ও নতুন বাজার খুঁজে বের করতে হবে। বিশ্ববাজারে আমাদের কৃষিপণ্যের চাহিদা ও সম্ভাবনা আছে। বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের শাক-সবজি ও ফলমূলের চাহিদা রয়েছে। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে এখন বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে দেশে উৎপাদিত সিরামিক পণ্য। সরকারকে নানামুখী উদ্যোগ নিতে হবে।

আমরা চাই বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধির এই ধারা অব্যাহত থাকুক। এ জন্য গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানিসহ অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। ব্যাংকঋণসহ পুঁজির জোগান বৃদ্ধি ও সহজলভ্য করতে হবে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমাতে হবে। এ থেকে শিল্প ও বাণিজ্যকে রক্ষা করতে হবে। সর্বোপরি বাজার বিস্তৃত করা ও নতুন নতুন বাজার সৃষ্টির চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। আমরা আশা করি, সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে এবং উত্তরোত্তর আরো সমৃদ্ধ হবে।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

শুল্ক-কর কমানো প্রয়োজন

    সংকটে নির্মাণশিল্প
শেয়ার
শুল্ক-কর কমানো প্রয়োজন

দেশের অর্থনীতিতে এখন নানামুখী সংকট চলছে। সংকট উত্তরণে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হলেও অনেক সংকট থেকেই গেছে। আগে থেকেই অর্থনীতির স্থবিরতা, এরপর ক্ষমতার পালাবদলের রেশ, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, ব্যবসা-উদ্যোগে আস্থাহীনতা, ডলার সংকট, উচ্চ সুদহার, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ব্যাংক খাতের দুর্বলতা, রাজস্ব আয়ে বড় ঘাটতিসব মিলিয়ে অর্থনীতি ঠিকমতো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। এসবের প্রভাব পড়েছে দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান খাত নির্মাণশিল্পেও।

বিশেষ করে আবাসন ও অবকাঠামো খাতসহ সরকারের সব ধরনের অবকাঠামো উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ব্যাপক প্রভাব পড়ছে।

সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম বাস্তবায়িত হয়েছে। তা ১৭ শতাংশের কাছাকাছি। এর অর্থ হলো দেশের সরকারি উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বলতে গেলে স্থবির।

এ খাতে সরকারের অর্থায়ন ছাড় হয়েছে কম। ফলে দেশব্যাপী যে কর্মযজ্ঞ হওয়ার কথা ছিল, সেটি হয়নি। বিপুলসংখ্যক মানুষ কাজের সুযোগ হারিয়েছে। আবার এসব কাজের সঙ্গে জড়িত ঠিকাদারিসহ অন্যান্য ব্যবসা বা উদ্যোগও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
একইভাবে বেসরকারি খাতেও নির্মাণ ও অবকাঠামো উন্নয়ন কর্মকাণ্ড প্রায় স্থবির হয়ে গেছে। বেসরকারি পর্যায়ে আবাসন খাতের উদ্যোক্তাদের মতে, তাঁদের ব্যবসা ৩০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। নতুন বিনিয়োগ নেই। কোনো কোনো উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান চালানোর খরচও মেটাতে পারছেন না বলেও খবর প্রকাশিত হয়েছে। মোটকথা, নির্মাণশিল্পের সঙ্গে জড়িতদের অবস্থা এখন খুবই নাজুক।
এমন প্রেক্ষাপটে আসছে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট। নির্মাণশিল্পের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত হাউজিং, সিমেন্ট, স্টিল, বালু, সিরামিক, হার্ডওয়্যারসহ এ রকম শতাধিক ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে এ খাতে শুল্ক-কর কমানোর দাবি জানিয়েছেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএমইএ) ও বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএসএমএ) নির্মাণ খাতকে এগিয়ে নিতে এ খাতের শুল্ক-কর কমানোর আহ্বান জানায়। তারা চায় আসছে বাজেটে সিমেন্টের মূল উপকরণ ক্লিংকারের শুল্ক প্রতি মেট্রিক টনে ৫০০ থেকে কমিয়ে ২০০ টাকা করা হোক। একইভাবে নির্মাণশিল্পের অন্যতম প্রয়োজনীয় উপকরণ স্টিলের নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক প্রত্যাহার ও শুল্কহার কমিয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণেরও প্রস্তাব উদ্যোক্তাদের।

আমরা মনে করি, নির্মাণ খাতকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে এ খাতের সঙ্গে জড়িত শতাধিক উপখাতকে টিকিয়ে রাখা, ব্যবসা চাঙ্গা করা এবং নতুন বিনিয়োগ-কর্মসংস্থান করতে হলে উদ্যোক্তাদের দাবিগুলো সদয় বিবেচনায় নিতে হবে। আসছে বাজেটে ব্যবসাবান্ধব নীতি গ্রহণ করা হলে অর্থনীতিতে যে স্থবিরতা বিরাজ করছে, তা অনেকটাই কেটে যাবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

মন্তব্য

নিয়ন্ত্রণে কঠোর হতে হবে

    মাদকের ভয়াবহ বিস্তার
শেয়ার
নিয়ন্ত্রণে কঠোর হতে হবে

শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত সর্বত্রই মাদকের ছোবল ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। তরুণরা তো বটেই, কিশোর-কিশোরীরাও মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে। এর প্রধান কারণ মাদকের সহজলভ্যতা। হাত বাড়ালেই মাদক পাওয়া যায়।

অন্যদিকে মাদকের অর্থ সংগ্রহের জন্য মাদকাসক্তরা নানা অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছে। গতকাল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদনে মাদকের বিস্তার ও অপরাধ ঊর্ধ্বগামী হওয়ার এক ভয়ংকর চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর শিথিলতার সুযোগ নিয়ে মাদক কারবারিরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। প্রায় প্রকাশ্যেই চলে কেনাবেচা।
তাই মাদকাসক্তের সংখ্যাও দ্রুত বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কয়েক মাসে মাদকসেবীর সংখ্যা অন্তত ২০ লাখ বেড়েছে। সেই সঙ্গে মাদক কারবারে অর্থপাচারও বাড়ছে।

মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থার (মানস) তথ্য মতে, দেশে মাদকসেবীর সংখ্যা বেড়ে এখন দেড় কোটির কাছাকাছি।

সংস্থাটির প্রধান ডা. অরূপ রতন চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, আমাদের গবেষণা বলছে, করোনার সময় থেকে মাদকসেবীর সংখ্যা বৃদ্ধি শুরু হয়েছে। গত কয়েক মাসে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর শিথিলতার কারণে ২০ লাখের মতো মাদকসেবী বেড়েছে। আমরা বলছি, দেশে বর্তমানে প্রায় দেড় কোটি মাদকসেবী রয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) এক প্রতিবেদনে অনুযায়ী, দেশে সামাজিক অবক্ষয় এবং বহু রকম অপরাধের পেছনে অন্যতম অনুঘটকের কাজ করছে মাদকাসক্তি। তাদের মতে, মাদকাসক্তদের প্রায় ৯০ শতাংশই কিশোর-তরুণ।
মাদক ব্যবসার গডফাদাররা খুন, অপহরণ ও চাঁদাবাজিতে এই কিশোর-তরুণদের ব্যবহার করে। ২০২৩ সালের জুনে জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা আংকটাড (ইউনাইটেড নেশনস কনফারেন্স অন ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, প্রতিবছর শুধু মাদকের কারণে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৪৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (বর্তমান বিনিময় মূল্যে পাঁচ হাজার ৮৪১ কোটি টাকারও বেশি) পাচার হয়ে যায়। মাদক ব্যবসার মাধ্যমে অর্থপাচারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বে পঞ্চম এবং এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে।

বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে দেখা গেছে, সারা দেশে অনেক জায়গায়ই নিয়মিত মাদকের হাট বসে। রাজধানীতেও বেশ কিছু স্পটে মাদক বিক্রি হয়। অভিযোগ আছে, পুলিশ বা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অবৈধ যোগসাজশেই সেগুলো পরিচালিত হয়। কথিত সোর্সের মাধ্যমে বিরাট অঙ্কের আর্থিক লেনদেন হয়। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অবৈধ যোগসাজশের কারণেই মাদকের কারবার বিস্তার লাভ করছে। আরেকটি বড় কারণ সীমান্ত পেরিয়ে বিপুল পরিমাণ মাদক আসা রোধ করতে না পারা। পাশাপাশি মাদক মামলার বিচারের দীর্ঘসূত্রতা, তদন্তের দুর্বলতা, জামিন পেয়ে কারবারিদের পুনরায় কারবারে নামা মাদকের বিস্তারে ভূমিকা রাখছে বলেও মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

মাদক নিয়ন্ত্রণে কঠোর ও সমন্বিত কার্যক্রম হাতে নিতে হবে। মাদকের অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হবে। গডফাদারসহ ছোট-বড় সব কারবারিকে আইনের আওতায় আনতে হবে। মাদকসেবীদের চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। বিচারকাজের দীর্ঘসূত্রতা দূর করতে হবে।

মন্তব্য

অর্থনীতিতে আরো গতি আসুক

    যমুনা রেল সেতুর উদ্বোধন
শেয়ার
অর্থনীতিতে আরো গতি আসুক

যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নের সঙ্গে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। একসময় দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ছিল সবচেয়ে অনুন্নত। ফেরিতে যমুনা নদী পার হতে ১০-১২ ঘণ্টাও লেগে যেত। শুষ্ক মৌসুমে ফেরি আটকে যেত চরে।

ঘন কুয়াশায় ফেরি চলাচল ব্যাহত হতো। মানুষের ভোগান্তি চরমে উঠত। জরুরি পণ্য পরিবহন ব্যাহত হতো ব্যাপকভাবে। কিন্তু যমুনা সেতু নির্মাণের পর যমুনা পার হতে লাগে কয়েক মিনিট।
ঢাকা থেকে দিনের মধ্যে উত্তরাঞ্চলের প্রত্যন্ত গ্রামেও পৌঁছানো যায়। পণ্য পরিবহন বহুগুণে বেড়েছে। কৃষকরা তাঁদের উৎপাদিত ফসলের ভালো মূল্য পাচ্ছেন। মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে।
যমুনা সেতুতে ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা থাকলেও তা ছিল সমস্যাগ্রস্ত। সে কারণে রেলযোগাযোগকে গতিশীল করতে তৈরি হয়েছে আলাদা রেল সেতু। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর মঙ্গলবার উদ্বোধন করা হয়েছে দেশের বৃহত্তম যমুনা রেল সেতুর। ফলে উত্তরাঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থায় সম্ভাবনার এক নতুন দুয়ার উন্মোচিত হলো।

সড়কপথের তুলনায় রেলপথে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন অনেক বেশি সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব।

তাই সারা দুনিয়ায় নতুন করে রেলপথের প্রসার ঘটছে। বাংলাদেশও সে পথেই হাঁটছে। তা ছাড়া বাংলাদেশের মতো বন্যাপ্রবণ এলাকায় সড়কপথের রক্ষণাবেক্ষণ খরচও অনেক বেশি। সেই বিবেচনায়ও রেলপথের প্রসার আমাদের জন্য লাভজনক। পদ্মা সেতুতে রেলসংযোগের মাধ্যমে ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের রেলযোগাযোগ অনেক সহজ হয়েছে। এবার যমুনা সেতু উত্তরাঞ্চলের রেলযোগাযোগকে আরো অনেক সহজ করেছে। যমুনা রেল সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, জাপান ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে ৪.৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই রেল সেতু প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে ২৭.৬০ শতাংশ অর্থায়ন করা হয়েছে দেশীয় উৎস থেকে আর ৭২.৪০ শতাংশ ঋণ দিয়েছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। জাপানি পাঁচটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে। জাপান, ভিয়েতনাম, নেপাল, অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপিন্স ও বাংলাদেশের সাত হাজারেরও বেশি কর্মীর টানা চার বছরের পরিশ্রমে সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। সেতুটিতে ৫০টি পিলার এবং প্রতি দুই পিলারের মাঝে একটি করে মোট ৪৯টি স্প্যান রয়েছে। মূল সেতুর দৈর্ঘ্য ৪.৮ কিলোমিটার হলেও দুই দিকে ৭.৬৬৭ কিলোমিটার রেলওয়ে অ্যাপ্রচ এমব্যাংকমেন্ট, লুপ, সাইডিংসহ মোট ৩০.৭৩ কিলোমিটার রেললাইন স্থাপন করা হয়েছে। যমুনা রেল সেতু প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী জানান, সমান্তরাল ডুয়াল গেজ ডাবল ট্র্যাকের এই সেতুর প্রতিটি স্প্যানের ওপর জাপানি অত্যাধুনিক প্রযুক্তির রেললাইন বসানো হয়েছে। ফলে সেতুর ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলাচল করতে পারবে।

আমরা আশা করি, যমুনা রেল সেতুর মাধ্যমে উত্তরাঞ্চলের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড অনেক বেশি গতি পাবে এবং ওই অঞ্চলের মানুষও উন্নত সেবা পাবে।

 

মন্তব্য

সুশাসন ফেরাতেই হবে

    ব্যাংক খাতে মূলধন ঘাটতি
শেয়ার
সুশাসন ফেরাতেই হবে

ব্যাংক খাত মানুষের আস্থা, ভরসা ও নির্ভরতার প্রতীক। বিনিয়োগ-ব্যবসা-বাণিজ্য ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে অন্যতম সহায়ক হলো এই ব্যাংক খাত। কোনো দেশের অর্থনীতির রক্তপ্রবাহ হিসেবেও এই খাতকে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের ব্যাংক খাত কঠিন সংকট পার করছে।

বিশেষ করে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে এসে ব্যাংক খাতে বড় অঙ্কের ঋণখেলাপি, আমানতের টাকা নামে-বেনামে লুটে নেওয়া, রাজনৈতিক প্রভাবে মাত্রাতিরিক্ত নৈরাজ্য সৃষ্টি করে মালিকানা বদল, স্বজনপ্রীতির নজিরবিহীন ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। সুশাসনের বদলে ব্যাংক খাতে অনিয়ম আর বিশৃঙ্খলার সীমাহীন রাজত্ব ছিল, যার ফলে পুরো ব্যাংক খাত আজ খাদের কিনারে। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর নতুন গভর্নরের নেতৃত্বে বেশ কিছু ত্বরিত পদক্ষেপ নেওয়া হয়। কঠিন সংকটে পড়া কয়েকটি ব্যাংককে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে টাকা ধার দেওয়া হয়।
এর ফলে ব্যাংকগুলোতে যে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা ছিল, সেই পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে সংকট কাটেনি। গতকাল কালের কণ্ঠ ব্যাংক খাতে মূলধন ঘাটতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

মূলত খেলাপি ঋণ কিভাবে ব্যাংক খাতকে মূলধন ঘাটতির চোরাবালিতে নিয়ে যাচ্ছে সেই চিত্রই তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ বেড়ে তিন লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকায় ঠেকেছে। এটি মোট ঋণের ২০.২০ শতাংশ। নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিটি ব্যাংকের জন্য মন্দ বা লোকসান ক্যাটাগরির খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন হিসেবে রাখতে হয়। প্রভিশন বা নিরাপত্তা সঞ্চিতি হচ্ছে ব্যাংকগুলোর জন্য অবশ্য পালনীয় একটি নির্দেশনা, যার মাধ্যমে ব্যাংকে থাকা আমানতকারীর আমানতের সুরক্ষা দেওয়া হয়। অথচ এখন অনেক ব্যাংকেই প্রভিশন ঘাটতি বাড়তে দেখা যাচ্ছে।

প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ভালো ও মন্দ ঋণের বিপরীতে পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রভিশন রাখতে পারছে না সরকারি ও বেসরকারি খাতের ১০টি ব্যাংক। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর শেষে এসব ব্যাংকে মোট প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ৫৬ হাজার ৩৬ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। গত জুনে এটি ছিল ৩১ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা। অর্থাত্ মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে প্রভিশন ঘাটতি বেড়েছে ২৪ হাজার ৪৯২ কোটি টাকা। ১৬টি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতিও ৪০ হাজার কোটি টাকার বেশি।

অন্তর্বর্তী সরকার ব্যাংক খাতে সুশাসন ফেরানোর এবং এই খাত থেকে লুটে নেওয়া টাকা ফেরানোর চেষ্টা করছে। একইভাবে পাচার হওয়া লাখ লাখ কোটি টাকা ফেরাতেও বিভিন্নমুখী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, কিন্তু এসব পদক্ষেপ আরো ফলপ্রসূ ও জোরদার করতে হবে। ব্যাংক খাতে কঠোর নজরদারি করতে হবে। বিশেষ করে বড় অঙ্কের খেলাপি ঋণ আদায়ে সর্বশক্তি নিয়োগ করতে হবে। লুটেরা ও পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ত্বরিত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। মোটকথা, ব্যাংক খাতকে এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে, যাতে মানুষ আস্থা ফিরে পায় এবং তারা যেন ব্যাংকমুখী হয়। ব্যাংক খাতে আস্থা না ফিরলে অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য গতি পাবে না। এ বিষয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকদের আরো বেশি কৌশলী ও জনবান্ধব নীতি গ্রহণ করতে হবে।

 

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ