<p><strong>[সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের সপ্তম অধ্যায়ে টিকটিকির উল্লেখ আছে]</strong></p> <p>টিকটিকি শীতল রক্তবিশিষ্ট সরীসৃপজাতীয় এক ধরনের প্রাণী। এরা দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। দেখতে অনেকটা কুমিরের ছোট সংস্করণের মতো মনে হলেও কুমিরের সঙ্গে এদের কোনো সম্পর্ক নেই। বেশির ভাগ টিকটিকিই নিশাচর, দিনের বেলা লুকিয়ে থাকে এবং রাতে পোকামাকড়ের সন্ধানে বের হয়। এরা সাধারণত তিন থেকে ছয় ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়। এদের পায়ের আঙুলের আঠালো বিরাট ক্ষেত্রফলযুক্ত পাতা থাকে। এর সাহায্যে এরা যেকোনো মসৃণ দেয়ালেও সহজেই চলাচল করতে পারে। কারণ পা ফেলার সঙ্গে সঙ্গেই এদের পায়ের নিচটা বায়ুশূন্য হয়ে যায়। বাড়িঘরে বসবাসকারী টিকটিকির বৈজ্ঞানিক নাম Hemidactylus frenatus. এদের গায়ের রং ধূসর এবং দেহে ডোরাকাটা দাগ থাকে।</p> <p>বাংলাদেশের সব জায়গায় টিকটিকির দেখা মেলে। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, মিয়ানমার, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশে টিকটিকি রয়েছে। টিকটিকির ডাক সবার কাছে খুবই পরিচিত। পুরুষ টিকটিকি জোরে ডাকে এবং স্ত্রী টিকটিকি কিছুটা আস্তে ‘টিকটিক’ শব্দ করে। ছোট আকৃতির টিকটিকিগুলো সাধারণত বিষাক্ত হয় না। এরা মানুষের ক্ষতি করে না। বেশির ভাগ মাঝারি থেকে বৃহদাকারের টিকটিকি শান্ত প্রকৃতির হয়। কিন্ত বিপদের আভাস পেলে এরা কামড় দিতে পারে।</p> <p>টিকটিকির খাদ্যতালিকার প্রধান অংশ জুড়ে রয়েছে বিভিন্ন অমেরুদণ্ডী প্রাণী, যা মূলত শহুরে কাঠামোর চারপাশে শিকার করা হয়। এরা প্রধানত তেলাপোকা, উইপোকা, কিছু কিছু মৌমাছি ও ভিমরুল, প্রজাপতি, পতঙ্গ, মাছি, মাকড়সা এবং বিভিন্ন ধরনের গুবরে পোকা খায়। কিছু কিছু গবেষণায় স্বজাতিভক্ষণের অল্পবিস্তর প্রমাণ পাওয়া গেছে। টিকটিকির রক্ত লাল নয়। রক্তের লোহিত কণিকায় থাকা হিমোগ্লোবিনই মূলত রক্তকে লাল দেখায়। মানুষের রক্তে লোহিত কণিকার পরিমাণ বেশি থাকে, তাই মানুষের রক্ত লাল। কিন্তু টিকটিকির রক্তে লোহিত কণিকার পরিমাণ কম। তাই রক্তও লাল নয়।</p> <p>টিকটিকির সবচেয়ে অবাক করা বৈশিষ্ট্য হলো এর লেজ খসে যাওয়া। কারণ এদের লেজের হাড় গঠিত হয় কতকগুলো ছোট কশেরুকা দিয়ে। এই কশেরুকা একে অপরের সঙ্গে এমনভাবে যুক্ত থাকে যে এদের মাঝে একটি ফাটলের দাগ থাকে। এখানে কশেরুকাগুলোর সংযুক্তি হয় অত্যন্ত হালকা। তাই একটু হালকা আঘাতেই এই লেজ ভেঙে যায়। টিকটিকির শরীরের স্নায়ুতন্ত্র ও রক্তনালি এই ফাটল পর্যন্ত এসে থেমে যায়। আর তাই লেজে কোনো আঘাতে এমনকি খসে পড়লেও টিকটিকি তা টেরও পায় না। টিকটিকির গড় জীবনকাল প্রায় পাঁচ বছর।</p> <p> </p> <p> </p> <p> </p>