<p>দেশের মানুষের বিদেশযাত্রার ব্যয় চোখে পড়ার মতো। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশের মানুষ বিদেশযাত্রায় ব্যয় করেছে ৩৩ হাজার ৬৮৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এর মধ্যে বিদেশযাত্রার আগে প্রস্তুতিমূলক খরচই সাত হাজার ৪৯৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা।</p> <p>দেশ থেকে যেসব পর্যটক বিদেশে যাচ্ছে, তারা সর্বাধিক ব্যয় করছে স্বাস্থ্যসেবা বা চিকিৎসা খাতে, শতাংশের হারে যা ২৯.৪৯। এর পরই রয়েছে এই যাত্রীদের পরিবহন ব্যয়, যা বিদেশযাত্রার মোট ব্যয়ের ২৫.২৮ শতাংশ।</p> <p>সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের নাগরিকদের ভ্রমণচিত্র বুঝতে এবং জিডিপিতে পর্যটনের অবদান কতটা, তা চিহ্নিত করতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের তথ্য নিয়ে জরিপ করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। ‘ট্যুরিজম স্যাটেলাইট অ্যাকাউন্ট ২০২০’ নামে প্রথমবারের মতো জরিপটি চালানো হয়। </p> <p>ভ্রমণের জন্য শীতকালকে উপযুক্ত সময় মনে করেন জরিপে অংশগ্রহণকারীরা। এই বার্তা দিয়ে বিবিএস বলেছে, ওই অর্থবছরের ভ্রমণকারীদের মধ্যে ডিসেম্বর মাসে ১৩.৭১ শতাংশ বিদেশে গেছে। জানুয়ারি মাসে ১০.৬৬ শতাংশ আর এপ্রিল মাসে গেছে ১১.১৭ শতাংশ মানুষ।</p> <p>জানতে চাইলে ওই জরিপ প্রকল্পের পরিচালক তোফায়েল আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘২০২০ সালের মার্চে শেষ হওয়া এই জরিপটি একটি পূর্ণাঙ্গ জরিপ। ২০১২ সালে আমরা যে জরিপটি করেছিলাম তা ছিল পাইলট জরিপ।’ তিনি জানান, এই জরিপের মূল উদ্দেশ্য ছিল সামগ্রিক অর্থে দেশের মানুষের ভ্রমণের গতিবিধি বোঝা। পাশাপাশি এই খাতে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) পূরণ, জিডিপিতে পর্যটন খাতের অবদান কত তা জানা। একই সঙ্গে এই খাতের নীতিনির্ধারণে সরকারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করতেও জরিপটি সহায়তা করবে।</p> <p>গত মাসে বিবিএস এই জরিপের ফল প্রকাশ করে। দৈবচয়নের ভিত্তিতে দেশের ৩৯ হাজার ৪১৭টি খানার ওপর পরিচালিত হয় জরিপ। এর মধ্যে ওই অর্থবছরে এক হাজার ১৬৭টি খানা বা পরিবারের সদস্য অন্তত একবার বিদেশ ভ্রমণ করেছে। শতকরা হিসাবে এটা মোট খানার ২.৯৬ শতাংশ। </p> <p>সানজিদা আলম সানজি নামের একজন পর্যটক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি একাধিকবার ভারতে গিয়েছি মূলত ঘোরাঘুরি আর চিকিৎসা করাতে। ওখানে অনেক কম খরচে চিকিৎসাসেবা পাওয়া যায়।’ আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘শপিং তো করতেই হয়, কিছু কেনাকাটা ছাড়া বিদেশভ্রমণ অসম্পূর্ণ মনে হয়।’ একই ধরনের বক্তব্য দেন জান্নাতুল ফেরদৌস নামের আরেক পর্যটক। তিনিও এ পর্যন্ত পাঁচ-ছয়বার চিকিৎসার জন্য ভারতে গেছেন।</p> <p>বিবিএসের জরিপও বলছে একই কথা। জরিপে অংশ নেওয়া ৬০.৪১ শতাংশ খানা ভ্রমণের জন্য প্রথম পছন্দ হিসেবে ভারতের কথা বলেছে। ৮.১২ শতাংশ সৌদি আরব আর ৪.৫৭ শতাংশের গন্তব্য মালয়েশিয়া।</p> <p>ভ্রমণের কারণ হিসেবে ৪৭.৯৭ শতাংশ পর্যটক বলেছেন, তাঁরা তাঁদের বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে যান। বিবিএস বলছে, বিদেশে যারা ভ্রমণে যাচ্ছে, তাদের কাছে বন্ধু ও আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা করা গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। তবে চিকিৎসাসেবা নিতে বিদেশভ্রমণ চোখে পড়ার মতো, শতাংশের হারে যা ১৫.৭৬।</p> <p>জরিপের ফল বলছে, ১২.৭৭ শতাংশ পর্যটক বিদেশে যায় অবসর ছুটি কাটাতে। পেশার দিক থেকে সর্বাধিক বিদেশ ভ্রমণ করে স্বাস্থ্যসেবা খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা, শতাংশের হারে যা ৬৩.৯৫। কৃষি খাতসংশ্লিষ্ট ২৯.২৫ শতাংশ এবং শিল্প খাতের ৬.৮০ শতাংশ মানুষ বিদেশে যায়।</p> <p>বিদেশভ্রমণে এগিয়ে ঢাকা বিভাগের মানুষ, শতাংশের হারে তা ২৫। এরপর রয়েছে খুলনা বিভাগ, ১৯.৮৪ শতাংশ। পিছিয়ে রয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগ, শতাংশের হারে যা ০.৫৪।</p> <p>মাগুরার বাসিন্দা রাজীব বিশ্বাস স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। প্রতিষ্ঠানটি পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের বোলপুরে। এ কারণে দীর্ঘ সময় ধরে তাঁকে ভারতে যাতায়াত করতে হয়েছে। তিনি তাঁর ভ্রমণ অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, ‘আমি মূলত খরচ কমাতে বেনাপোল হয়ে বাসে পশ্চিমবঙ্গ যাতায়াত করতাম। কেউ কেউ আকাশপথে যাতায়াত করে। এই সংখ্যা বেশি নয়। বাসে যাতায়াত করা যাত্রীর সংখ্যাই বেশি।’</p> <p>‘ট্যুরিজম স্যাটেলাইট অ্যাকাউন্ট ২০২০’ জরিপও বলছে একই কথা। জরিপে অংশ নেওয়া ৪৮.০১ শতাংশ মানুষ বাসে বিদেশ ভ্রমণ করছে। ১৮.৪৫ শতাংশ মানুষ ভ্রমণের জন্য বেছে নিয়েছে রেলপথ। আর আকাশপথে ভ্রমণ করেছে ১১.২২ শতাংশ মানুষ।</p> <p>ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ডিপার্টমেন্টের সাবেক অধ্যাপক সৈয়দ রাশিদুল হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, জরিপ অনুযায়ী, ভ্রমণকারীরা স্বাস্থ্যসেবা নিতে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা খরচ করছে। দেশের চিকিৎসা খাতের উন্নতি করে সহজে এই অর্থ দেশে রাখা যায়। তিনি বলেন, ‘আমরা কিছুদিন আগে বৃহৎ পরিসরে একটি সমীক্ষা করেছিলাম। তাতে দেখা গেছে, বাংলাদেশের পর্যটন খাতে প্রশিক্ষিত লোকবলের অভাব আছে। বর্তমানে দেশের ২৩ লাখ লোক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পর্যটন খাতের সঙ্গে যুক্ত। ২০৩০ সাল নাগাদ এই খাতে জনবলের চাহিদা হবে ৪২ লাখ। এর অর্থ আমাদের দেশের ভেতরে পর্যটন বাড়ছে। এই তথ্য মাথায় রেখে আমাদের পর্যটন খাত নিয়ে কাজ করতে হবে। না হলে পর্যটকদের বিদেশ গমন আরো বাড়বে।’</p>