প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের অধিকার আদায়ের সংগঠন, আওয়ামী লীগ আর্থ-সামাজিক উন্নতি করার সংগঠন। কাজেই বারবার আঘাত এসেও এই সংগঠনকে কোনো ক্ষতি করতে পারেনি। ফিনিক্স পাখির মতো পুড়িয়ে ফেলার পরও ভস্ম থেকে জেগে ওঠে, ঠিক সেভাবে আওয়ামী লীগও জেগে উঠেছে। খুব বেশিদিন আগের কথা নয়, ২০০৭ সালেও চেষ্টা করা হয়েছিল—আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে নতুন কিংস পার্টি গড়ে তুলবে। সেটাও করতে পারেনি, কারণ আওয়ামী লীগের মূল শক্তি হচ্ছে বাংলাদেশের জনগণ, তৃণমূলের মানুষ, আওয়ামী লীগের অগণিত নেতাকর্মী মুজিব আদর্শের সৈনিক।
এই সৈনিকরা কখনো পরাভব মানেন না, মাথানত করেন না।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘হয়তো কখনো কখনো কোনো নেতা ভুল করেছেন। কেউ আওয়ামী লীগে থাকতে মনে করেছেন তাঁরাই বোধ হয় বড় নেতা। দলের চেয়ে নিজেকে বড় মনে করে কেউ দল ছেড়ে গিয়ে অন্য দল করেছেন, কেউ দল ছেড়ে চলে গেছেন। কিন্তু তাঁরা ভুল করেছেন। আকাশে মিটিমিটি তারা জ্বলে। তারা আলোকিত হয় কার দ্বারা? সূর্যের আলোতে আলোকিত হয়। যেসব নেতা ভুল করেছিলেন তাঁরা ভুলে গিয়েছিলেন যে তাঁরা আলোকিত আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আছেন বলেই। এখান থেকে চলে যাওয়ার পর ওই তারা আর জ্বলে নাই, তারা আস্তে আস্তে নিভু নিভু, কেউ মিটেই গেছে। কেউ ভুল বুঝতে পেরে হয়তো ফেরত এসেছেন, আমরা নিয়েছিও। আবার কেউ এখনো আওয়ামী লীগ সরকার পতন, ধ্বংস—নানা জল্পনাকল্পনা করে যাচ্ছেন।’
দেশ গঠনে দলের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছেই তো বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য, যা আমরা প্রমাণ করেছি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর বারবার ক্ষমতা বদল হয়েছে। প্রত্যেক ক্ষমতা বদল হয়েছে হয় অস্ত্রের মাধ্যমে না হয় ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে। জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ছিল না। জনগণের খাদ্য, বাসস্থান, আহার, শিক্ষা, চিকিৎসা—কোনো ভাগ্যই তারা পরিবর্তন করতে পারেনি। নিজেদের বিলাসিতা, অর্থ-সম্পদ বানানো, অর্থপাচার, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, খুনখারাবি, অস্ত্রের ঝনঝনানি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্ত্র দিয়ে, অর্থ দিয়ে সেখানে ক্ষমতার ভিত্তি তৈরি করতে চেয়েছিল, কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে। তারা ভুলে গেছে, জনগণের শক্তি অপরিসীম। আওয়ামী লীগ জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস করে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর আম্রকাননে এ দেশের স্বাধীনতার সূর্য অস্ত যায়। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আওয়ামী লীগ গঠিত হয়। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে সেই মেহেরপুরের আম্রকাননে। যেখানে চক্রান্ত হয় সেই কুঠিবাড়ি কিন্তু এখান থেকে বেশি দূরে নয়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের প্রতিটি পদক্ষেপের ফলে আজ বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।...মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা দেশে ফিরে এসে এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ভাষণ দিয়েছিলেন। তিনি এখানে ঘোষণা দিয়ে মাত্র তিন বছর সাত মাসের মধ্যে দেশকে স্বল্পোন্নত দেশে পরিণত করেছিলেন। এত অল্প সময়ে পৃথিবীর ইতিহাসে আর কেউ এটা পেরেছে কি না আমার জানা নেই। কিন্তু বঙ্গবন্ধু করতে পেরেছিলেন, কারণ সংগঠন ছিল সব সময় বঙ্গবন্ধুর পাশে। যুদ্ধের পর হেঁটে, নৌকায় করে বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছানো, ত্রাণ পৌঁছানো—এসব কাজ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই করেছেন। তাঁরাই গণমানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু এরপর ২১ বছরের ইতিহাস পেছনে চলে যাওয়ার ইতিহাস, বঞ্চনার ইতিহাস, ক্ষুধার্ত নরনারীর হাহাকারের ইতিহাস, দুর্ভিক্ষের ইতিহাস, জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসের ইতিহাস।’
আবেগতাড়িত হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রচণ্ড শীত, প্রচণ্ড গরমে বঙ্গবন্ধু জেলখানায় কাটিয়েছেন। আমার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কখনো নিজের কষ্টের কথা বলেননি। আমরা যখন বারবার জানতে চাইতাম তখন তিনি একটি কথাই বলেছেন—তোরা শুনিস না, শুনলে সহ্য করতে পারবি না। তিনি আমাদের তাঁর কষ্টের কথা বলেননি। যে জাতিকে ভালোবেসে এত অত্যাচার সয়েছেন, তাঁকেই নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। আমরা দুই বোন এতিম হয়ে গেলাম। বিদেশে রিফিউজি হিসেবে আমাদের থাকতে হলো, আমাদের নামটা পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারিনি।’
দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমার একটাই আবেদন থাকবে সংগঠনের প্রতিটি নেতাকর্মীর কাছে—সংগঠনকে সুসংগঠিত করতে হবে। যেকোনো রাজনীতিবিদের জীবনে সংগঠন হচ্ছে সবচেয়ে শক্তিশালী। যদি সংগঠন শক্তিশালী হয় আর দেশের মানুষের সমর্থন পাওয়া যায়, তাহলে যতই ষড়যন্ত্র হোক...। সংগঠন শক্তিশালী করতে হবে আর জনগণের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করতে হবে। আর সেই আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছি বলেই জনগণ বারবার আমাদের ভোট দিয়েছে।’
বিকেল পৌনে ৪টার আগে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। আলোচনাসভার আগে দেশবরেণ্য শিল্পীরা গান ও নাচ পরিবেশন করেন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে ধর্মীয় গ্রন্থ থেকে পাঠের মধ্য দিয়ে আলোচনাসভা শুরু হয়। আওয়ামী লীগ সভাপতির আগে বক্তব্য দেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ। অনুষ্ঠানে জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের, ১৪ দলের কেন্দ্রীয় নেতা রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, শিরীন আখতার, নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী, বাংলাদেশে অবস্থিত বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশন ও দূতাবাসের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।