<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমি এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা <strong>এ এফ হাসান আরিফ।</strong> বাংলাদেশের সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল। তিনি ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, ভূমি এবং ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ছিলেন। দেশের ভূমি ব্যবস্থাপনা, সেবাপ্রার্থী মানুষের ভোগান্তি দূর করতে সরকারের উদ্যোগ ও পরিকল্পনা নিয়ে সম্প্রতি সচিবালয়ে তাঁর দপ্তরে রাত ১১টায় কালের কণ্ঠ</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">র সঙ্গে তিনি কথা বলেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বিশেষ প্রতিনিধি <strong>উবায়দুল্লাহ বাদল</strong></span></span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">কালের কণ্ঠ : </span></span></span></strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ওয়ান-ইলেভেনের সময় উপদেষ্টা হিসেবে আপনার একটি প্রতিশ্রুতি ছিল ভূমিসংক্রান্ত সব সেবা এক ছাতার নিচে নিয়ে আসা হবে, এবারও কী সেই পদক্ষেপ নেবেন?  </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">এ এফ হাসান আরিফ : হ্যাঁ, ঠিক বলেছেন। ২০০৮ সালেও আমি ভূমি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলাম। তখন বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের একটি গবেষণা ছিল। তাতে বলা হয়েছিল, ভূমিসংক্রান্ত সব সেবা এক ছাতার নিচে নিয়ে আসতে হবে। যেমন</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">—</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">জমি নিবন্ধনকারী ব্যক্তি কাজ শেষে অফিস থেকে বের হওয়ার সময় তাঁর হাতে খাজনা, খতিয়ান, নামজারিসহ সব কিছুর রশিদ নিয়ে বের হবেন। কিন্তু ভূমির নিবন্ধন অফিস আইন মন্ত্রণালয়ের অধীন, আর অন্যগুলো ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীন। অর্থাৎ সেবাপ্রার্থীকে দুই জায়গায় দুই অফিসে দৌড়াতে হচ্ছে। ভূমি অফিস কিন্তু একান্তভাবেই ভূমিসংক্রান্ত। এখানে আইনি বিচারের কোনো বিষয় নেই। সুতরাং ভূমি অফিস আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা কতটুকু যৌক্তিক তা ভেবে দেখার বিষয়। ভূমিসংক্রান্ত সব সেবা এক ছাতার নিচে আনা এককভাবে ভূমি মন্ত্রণালয়ের বিষয়ও নয়, আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে কেবিনেটে (উপদেষ্টা পরিষদের সভা) একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে। </span></span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">কালের কণ্ঠ : ভূমি অফিসে নামজারি, খাজনা, খতিয়ান ও রশিদ পেতে সেবাপ্রার্থীকে নানা ধরনের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এই ভোগান্তি ও হয়রানি দূর করতে কী উদ্যোগ নেবেন?</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">এ এফ হাসান আরিফ : বর্তমানে অটোমেশনের মাধ্যমে জমির নামজারি, খাজনা, খতিয়ান ও রশিদ অনলাইনেই পাওয়া যাচ্ছে। অনলাইনের ফলে কাউকে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে যেতে হচ্ছে না। এতে সেবাপ্রার্থী মানুষের ভোগান্তি ১৫ আনা দূর হয়েছে। ভূমি অফিসে যখন আমাকে এই অটোমেশনের প্রকল্পটা দেখানো হয়, তখন জানতে চেয়েছি, পুরো প্রক্রিয়ায় অর্থাৎ আবেদন করার পর থেকে কাঙ্ক্ষিত কাগজটা হাতে পেতে কয় জায়গায় </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">হিউম্যান এজেন্সি</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> আছে? তারা জানায়, মাত্র এক জায়গায়। সেটা হলো হোল্ডিং খোলার জন্য তহশিলদারের অফিসে। তাঁদের বলেছিলাম, এই জায়গায় </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">এলিমেনেট</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> করেন। অর্থাৎ যেখানে মানুষের সঙ্গে সেবাপ্রার্থীর </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ইন্টারেকশন</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> হবে, ডেস্কে যেতে হবে, সেখানেই হয়রানি ও ভোগান্তি হবে। সুতরাং ডেস্ক তুলে দিতে হবে। সফটওয়্যার এমনভাবে উন্নয়ন করতে হবে যেন হোল্ডিং খুলতে কাউকে কোনো ব্যক্তির কাছে যেতে না হয়। অনলাইনেই সব সমস্যার সমাধান হয়। এটা হলে আশা করি এসব ভোগান্তি দূর হবে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">তবে কিছু সমস্যাও আছে। সেবাপ্রার্থীকে সেবা পেতে মোবাইল ফোন নম্বর দিতে হয়। গ্রামের বেশির ভাগ লোক অন্যের মাধ্যমে এসব সেবা নেন। সেবাপ্রার্থীর হয়তো মোবাইল নম্বর নেই। অনলাইনের আবেদন যিনি পূরণ করে দেন তিনি হয়তো সেবাপ্রার্থীর আত্মীয় বা পরিবারের কোনো সদস্যের নম্বর দিচ্ছেন। সেই নম্বর দিয়ে যখন আবেদনকারী প্রকৃত ব্যক্তি কি না জানতে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) চেক করা হচ্ছে, তখন হয়তো আরেকজনের নাম আসছে। আবেদনকারী হয়তো রহিমা খাতুন, কিন্তু আসছে কলিম উদ্দিনের নাম। এই জায়গায় সমস্যা হচ্ছে। এনআইডি নম্বরের ভিত্তিতে অনলাইনে আবেদন করলে আশা করি সেটাও দূর হবে। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">পাশাপাশি ভূমিসংক্রান্ত সব অফিসের স্টাফদের এসব বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে পারলে হয়রানি দূর হবে। সবচেয়ে বড় সমস্যা সৃষ্টি হয় ভূমি জরিপের সময়। জরিপকালে জমির মালিকরা পেরেশানিতে থাকেন, তাঁর জমি তাঁর নামে থাকবে কি না! সেটাও দূর করতে বিদেশি কম্পানির মাধ্যমে স্যাটেলাইট জরিপ করা হচ্ছে। যাতে কারো জমি কারো মধ্যে এক ইঞ্চিও না থাকে। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে নির্ভুল জরিপ হবে, সেখানে সব তথ্য থাকবে। এই জরিপটাও ১২ আনা শেষ, চার আনা বাকি আছে। ভূমিসংক্রান্ত যেকোনো ভোগান্তি ও হয়রানি করা হলে ভূমি মন্ত্রণালয়ের কল সেন্টারে অভিযোগ দিতে হবে। এতে সংশ্লিষ্ট অফিসও নজরদারির মধ্যে থাকবে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা কল সেন্টারে সেবা দেওয়া হচ্ছে। এটা সাধারণ মানুষকে জানাতে হবে। গণমাধ্যমকর্মীদেরও জনসচেতনতায় এগিয়ে আসতে হবে।</span></span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">কালের কণ্ঠ : বন্যা ও অতিবৃষ্টির কারণে গ্রামীণ রাস্তাঘাট ভেঙে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে, এ ব্যাপারে সরকার কী পদক্ষেপ নিয়েছে?</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">এ এফ হাসান আরিফ : বন্যা-পরবর্তী পুনর্বাসন, রাস্তাঘাট মেরামতের জন্য সরকারের বরাদ্দ রয়েছে। অর্থ বিভাগের কাছে চাওয়ামাত্র বরাদ্দ ছাড় করা হচ্ছে। বানের পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে। মেরামতের কাজ দেখতে কুমিল্লায় গিয়েছিলাম। চট্টগ্রামে যেতে চেয়েছিলাম। বৃষ্টির কারণে মিরসরাই পর্যন্ত গিয়েছিলাম। সেখানে দেখলাম রাস্তাঘাট মেরামতের কাজ চলছে। আশা করি সারা দেশের ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট দ্রুতই মেরামত হয়ে যাবে।</span></span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">কালের কণ্ঠ : শহরে জন্মনিবন্ধনের হার ৭ থেকে ৮ শতাংশ। এর কারণ কী বলে আপনি মনে করেন?</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">এ এফ হাসান আরিফ : ২০০৪ সালে একটি আইনের মাধ্যমে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন করার বিধান চালু হয়। এর আগেও ছিল, কিন্তু মানুষ অত সচেতন ছিল না। আইনের ফলে জন্মনিবন্ধন সনদ খুব গুরুত্বপুর্ণ দলিল হয়েছে। ব্যাংকের হিসাব খোলা, সন্তানকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করানো, হাসপাতালের সেবা পাওয়া, পাসপোর্ট ও ড্রাইভিং লাইসেন্স করাসহ অন্তত ২০-২৫টি জায়গায় এই সনদের প্রয়োজন হয়। সুতরাং এই সনদ সংগ্রহে সবাই গুরুত্ব দিচ্ছে। এখন প্রশ্ন উঠেছে</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">—</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">শহরে এর হার কম কেন? শহরে বেশির ভাগ সন্তানের জন্ম হয় হাসপাতাল, ক্লিনিক বা ম্যাটার্নিটিতে। হাসপাতালে জন্ম হলে সেই তথ্যটা জন্মনিবন্ধন কর্তৃপক্ষের কাছে যাচ্ছে না। হাসপাতালের সনদ নিয়ে ওই সন্তানের মা-বাবা তাঁদের গ্রামের বাড়ি বা সুবিধামতো জায়গায় নিবন্ধন করাচ্ছেন। সেখানে শিশুটির শহরে না গ্রামে জন্ম হয়েছে তার উল্লেখ থাকছে না। যে এলাকা থেকে নিবন্ধন করা হচ্ছে, সনদে সেই এলাকায় জন্ম নিয়েছে বলা হচ্ছে। এ সংখ্যাটা কিন্তু অনেক। অন্যদিকে গ্রামে যেসব শিশু জন্মগ্রহণ করছে, তার নিবন্ধন কিন্তু গ্রামেই হচ্ছে, শহরে না। এমনিতেই গ্রামে মানুষের বসবাস বেশি, তা ছাড়া শহরে বসবাসকারী ব্যক্তিদের সন্তান জন্ম নিলে বাপ-দাদার ভিটে-মাটির ঠিকানায় দিতে গ্রামেই নিবন্ধন করছে। এ কারণে শহরে জন্ম নিবন্ধনের হার কম। আমরা চেষ্টা করছি হাসপাতাল, ক্লিনিক বা ম্যাটার্নিটিতে জন্মগ্রহণকারী শিশুদের তাত্ক্ষণিক জন্মনিবন্ধনের আওতায় আনতে। এটা করতে পারলে শহরে এ হার বাড়বে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"><strong>এ এফ হাসান আরিফ</strong></span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ভূমি ও এলজিআরডি উপদেষ্টা</span></span></span></span></span></p>