প্রশাসন ক্যাডারের প্রতিবাদসভা

মুয়ীদের পদত্যাগে ৪৮ ঘণ্টা আল্টিমেটাম

  • * ‘বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস’ প্রতিষ্ঠা চায় বিএএসএ * প্রশাসন ক্যাডারে কোটা আরোপ করতে দেওয়া হবে না * দেশ অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র কঠোরভাবে মোকাবেলা করা হবে
উবায়দুল্লাহ বাদল
উবায়দুল্লাহ বাদল
শেয়ার
মুয়ীদের পদত্যাগে ৪৮ ঘণ্টা আল্টিমেটাম
সংস্কারকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার প্রতিবাদে গতকাল প্রশাসন ক্যাডারের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তাদের যৌথ প্রতিবাদসভা রাজধানীর ইস্কাটনের বিয়াম ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। ছবি : কালের কণ্ঠ

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের খসড়া প্রস্তাব ঘিরে পুরো প্রশাসনযন্ত্র এখন উত্তপ্ত। ক্রমেই তারা শক্তি সঞ্চয় করে কঠোর কর্মসূচি দিচ্ছে। এখন খোদ কমিশনপ্রধানকেই সরে যেতে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে। অন্যদিকে স্বাস্থ্য ও শিক্ষাকে ক্যাডার সার্ভিস থেকে আলাদা করার প্রস্তাবে ক্ষুব্ধ ও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে স্বাস্থ্য ও শিক্ষাসহ অন্য ক্যাডার সংগঠনগুলোও।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সরকারের অবিচ্ছেদ্য অর্গান বলে পরিচিত এই ক্যাডারদের নিজেদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট অবস্থান একেবারেই নজিরবিহীন। পদোন্নতিতে পরীক্ষা ও কোটার বণ্টন প্রস্তাব এবং জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের মতো আন্ত ক্যাডার দ্বন্দ্ব এমন প্রকাশ্যে রূপ নিতে আগে কেউ দেখেছে বলে মনে করা যাচ্ছে না। এতে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে যেমন কাজে স্থবিরতা নেমে এসেছে, তেমনি মাঠ প্রশাসনেও চলছে অস্থিরতা। গতকাল বুধবার সরকারি ছুটির দিনেও দিনভর প্রতিবাদসভা করে আমলাদের পক্ষ থেকে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. আবদুল মুয়ীদ চৌধুরীকে সরে যেতে বলা হয়েছে।
অন্যথায় তাঁরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, কিভাবে সরাতে হয় তা তাঁদের জানা আছে।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের উপসচিব পদে কোটা পদ্ধতি বাতিল, নিজ নিজ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ নীতিনির্ধারণী পদে দায়িত্ব দেওয়া এবং সব ক্যাডার কর্মকর্তার সমান অধিকার নিশ্চিত করার দাবিতে গত মঙ্গলবার কলম বিরতি পালন করেছে ২৫টি ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত আন্ত ক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ। আজ বৃহস্পতিবার মানববন্ধন করারও ঘোষণা দিয়েছে তারা। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডারও আলাদাভাবে মাঠে নেমেছে।

তারা পৃথকভাবে সংবাদ সম্মেলন করে নিজেদের দাবির কথা জানিয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে গতকাল বুধবার রাজধানীর বিয়াম ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে যৌথ প্রতিবাদসভা করেছেন বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তারা। জনপ্রশাসনের সংস্কারকে ভিন্ন খাতে পরিচালিত করে দেশকে অস্থিতিশীল করার গভীর ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে যৌথভাবে এই প্রতিবাদসভার আয়োজন করে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন এবং বিসিএস (প্রশাসন) কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড।

সকাল ১১টায় শুরু হওয়া সভাটি টানা বিকেল ৩টা পর্যন্ত চলে। বিসিএস ১৯৭৩ ব্যাচ থেকে শুরু করে ৪১তম ব্যাচের কর্মকর্তারাও প্রতিবাদসভায় অংশ নেন।

এতে নবীন-প্রবীণ কর্মকর্তাদের মিলনমেলায় পরিণত হয় সভাটি। বড়দিনের সরকারি ছুটির দিনেও মিলনায়তন কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। এ ছাড়া বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের জেলা সভাপতি হিসেবে ঢাকার বাইরের জেলা প্রশাসকরা অনলাইনে এই প্রতিবাদসভায় অংশ নেন। ঢাকার জেলা প্রশাসক (ডিসি) তানভীর আহমেদ সশরীরে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য দেন।

বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএএসএ) মহাসচিব মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমানের সঞ্চালনায় প্রতিবাদসভায় বক্তব্য দেন প্রশাসনের ১৯৭৩ ব্যাচের কর্মকর্তা মাহমুদ হোসেন আলমগীর, সাবেক স্বরাষ্ট্রসচিব ও ১৯৭৯ ব্যাচের এস এম জহিরুল ইসলাম, ১৯৮১ ব্যাচের হেলালুজ্জামান, ১৯৮৪ ব্যাচের এম এ খালেক, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ, আবু ইউসুফ, ১৯৮৫ ব্যাচের মোহাম্মদ মসিউর রহমান, ১৯৮৬ ব্যাচের মো. জাকির হোসেন কামাল, শামীম আল মামুন, ঢাকার জেলা প্রশাসক তানভীর আহমেদ, উপসচিব নূরুল করিম ভুঁইয়া, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টার একান্ত সচিব মো. সারওয়ার আলম, পররাষ্ট্র উপদেষ্টার একান্ত সচিব মো. সামিউল মাসুদ, ২৮ ব্যাচের খন্দকার মুশফিক রহমান, ঢাকার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. বদরুদ্দোজা, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহীদুল ইসলাম, যুগান্তরের উপসম্পাদক বি এম জাহাঙ্গীর, ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ প্রমুখ। এ ছাড়া বৈঠকে অনলাইনে যুক্ত ছিলেন দেশের সব বিভাগীয় কমিশনার এবং জেলা প্রশাসকরা (ডিসি)।

সভায় বিসিএস (প্রশাসন) কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি এ বি এম আব্দুস সাত্তার বলেন, আমরা আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মুয়ীদ ভাইয়ের অপসারণ চাই। সরকার যদি অপসারণ না করে, কিভাবে অপসারণ করতে হবে সেই কৌশল আমাদের জানা আছে।

প্রতিবাদসভায় আরো একাধিক কর্মকর্তা জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধানের পদত্যাগ দাবি করে কমিশন পুনর্গঠনের আহবান জানান। বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব সোহেল রানা সিভিল সার্ভিসের বিভিন্ন ইতিহাস ও নানা তথ্য তুলে ধরেন। একই সঙ্গে উপসচিবের পদটি শুধু যে প্রশাসন ক্যাডারের জন্য হওয়া উচিত, তার পক্ষে নানা যুক্তি তুলে ধরেন। উপসচিব পদ নিয়ে সংস্কার কমিশনের সুপারিশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা মনে করি, এটি বৈষম্যমূলক, অযৌক্তিক ও ষড়যন্ত্রমূলক। রাষ্ট্রকে দুর্বল করার কোনো প্রচেষ্টা চলছে কি না, এটাও আমাদের দেখতে হবে।

মুয়ীদের পদত্যাগে ৪৮ ঘণ্টা আল্টিমেটাম

কঠোর কর্মসূচির হুমকি ও ছয় দফা : বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আনোয়ার উল্ল্যাহ কঠোর কর্মসূচির হুমকি দেন এবং নিজেদের ছয় দফা ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, প্রথমত, আমরা এক আছি, এক থাকব। দ্বিতীয়ত, আমরা প্রশাসন ক্যাডারের ওপর কোনো রকমের সার্জারি বা কোটা আরোপ করতে দেব না। তৃতীয়ত, কমিশন কোনো অযাচিত সুপারিশ করলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে। চতুর্থত, প্রশাসনে কোনো পর্যায়ে অন্ধভাবে বহিরাগত কাউকে বসানোর চেষ্টা করা হলে তা কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে। পঞ্চমত, পদোন্নতি ও পদায়নের ক্ষেত্রে বঞ্চিত কর্মকর্তাসহ সব ধরনের কর্মকর্তাকে সম্মানজনক অবস্থান তৈরি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে অবিলম্বে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ষষ্ঠত, দেশকে কোনোভাবে অস্থিতিশীল করার জন্য যেকোনো ধরনের ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করার জন্য প্রশাসন সারা দেশে সতর্ক থেকে দায়িত্ব পালন করবে। এ সময় উপস্থিত কর্মকর্তারা তাতে সম্মতি দেন।

সাবেক স্বরাষ্ট্রসচিব ও ১৯৭৯ ব্যাচের কর্মকর্তা এস এম জহুরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসকে দুর্বল করতে ষড়যন্ত্র এটিই প্রথম নয়, অতীতেও এ ধরনের ষড়যন্ত্র হয়েছে; কিন্তু কোনো কাজে আসেনি। এখনো কিছুই হবে না, যদি আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকি।

বিসিএস ১৯৮১ ব্যাচের কর্মকর্তা হেলালুজ্জামান বলেন, যাদের কারণে গত ১৫ বছর প্রশাসনের শত শত কর্মকর্তাকে বঞ্চনার শিকার হতে হয়েছে, সেই কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। তাঁদের বিচার করতে হবে।

প্রশাসনের ১৯৮৫ ব্যাচের কর্মকর্তা মশিউর রহমান বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সূচনা হয়েছিল কোটা তুলে দেওয়ার জন্য। সংস্কার কমিশনের উচিত এই কোটা তুলে দেওয়া। কিন্তু সেটা না করে তাঁরা উল্টো কোটা বাড়ানোর চিন্তা করছেন, এটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। এই কমিশনের মাধ্যমে কর্মকর্তারা সুবিচার পাবেন না। তাই তাঁদের পদত্যাগ দাবি করছি।

বিসিএস নবম ব্যাচের কর্মকর্তা জাকির হোসেন কামাল বলেন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরীকে পদত্যাগ করতে হবে। শুধু পদত্যাগ করলেই হবে না, সব স্টেকহোল্ডারকে নিয়ে এই সংস্কার কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে। তিনি নিজে কি পরীক্ষা দিয়ে পদোন্নতি পেয়েছিলেন? তাহলে আমাদের বাচ্চাদের কেন পরীক্ষা দিতে হবে?

ঢাকার ডিসি তানভীর আহমেদ তাঁর বক্তব্যে বলেন, জেলা ও উপজেলায় প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের ক্ষমতা এরশাদ সরকারের আমলে খর্ব করা হয়েছে। এখন কেন্দ্রীয়ভাবে সেই ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে, এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা কোটামুক্ত পদোন্নতি চাই। এখনো আমাদের পদোন্নতির জন্য মাঠ পর্যায়ের একজন কনস্টেবলের প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। এটা খুবই অবমাননাকর। পদোন্নতির ক্ষেত্রে গোয়েন্দা প্রতিবেদন তুলে দিতে হবে।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহীদুল ইসলাম বলেন, যার কাজ তাকে করতে দিন। অন্যকে অন্যের কাজে দেবেন না। এর ফল ভালো হবে না। যিনি যে ক্যাডারে প্রবেশ করেছেন, তিনি সেখানে থেকে দেশ ও জাতিকে সর্বোচ্চ সেবা দিনএটাই আমাদের প্রত্যাশা।

যুগান্তরের উপসম্পাদক বি এম জাহাঙ্গীর বলেন, প্রশাসন ক্যাডারকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। দেশের জন্য দক্ষ, নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী প্রশাসন দরকার। চূক্তিভিত্তিক নিয়োগ, কোটার নিয়োগ তুলে দিন। মেধার ভিত্তিতে সব পর্যায়ে নিয়োগ হবে। কর্মকর্তাদের দলীয় প্রভাবমুক্ত রাখতে হবে। প্রশাসনে পুরনো ঐতিহ্য ফেরত আনতে হবে। আগামী দিনে যাঁরা ক্ষমতায় আসবেন তাঁদের প্রতি অনুরোধ, আপনারা নিজের লোক খুঁজবেন না। কারণ প্রশাসনের সব লোক রাষ্ট্রের।

বিসিএস ২৫ ব্যাচের সভাপতি উপসচিব নূরুল করিম ভুঁইয়া বলেন, আমরা কোনো নোংরা প্রতিযোগিতায় নামতে চাই না। এক কথা আমাদের, আমরা প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তা, আমাদের আলাদা সার্ভিস হতে হবে। আমরা কারো আঙিনায় যাব না, আমাদের পরিধিতে কাউকে আসতে দেব না। কোটামুক্ত পদোন্নতি হতে হবে।

জানা যায়, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন এখনো তাদের সুপারিশ জমা দেয়নি। কিন্তু গত ১৭ ডিসেম্বর সচিবালয় বিটের সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী বলেন, পরীক্ষা ছাড়া সিভিল সার্ভিসের উপসচিব ও যুগ্ম সচিব পর্যায়ে কেউ পদোন্নতি পাবেন না। উপসচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের জন্য ৫০ এবং অন্য ক্যাডার থেকে ৫০ শতাংশ কর্মকর্তা নেওয়া হবে। বিদ্যমান বিধিমালা অনুযায়ী, উপসচিব পদে প্রশাসন ক্যাডারের ৭৫ শতাংশ এবং অন্য সব ক্যাডারের ২৫ শতাংশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেওয়া হয়। এ ছাড়া জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের মতো স্বাস্থ্য ও শিক্ষাকে ক্যাডার সার্ভিস থেকে আলাদা করার জন্য সরকারকে সুপারিশ করা হবে। এমন খবরে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন প্রশাসন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ক্যাডারসহ সব ক্যাডার কর্মকর্তা।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

সচিবালয় এলাকায় শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষ আহত অর্ধশতাধিক

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
সচিবালয় এলাকায় শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষ আহত অর্ধশতাধিক

রাজধানীতে বকেয়া বেতন-বোনাসের দাবিতে আন্দোলনকারী শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাব ও সচিবালয়ের লিংক রোডের সামনে এই ঘটনা ঘটে।

সংঘর্ষের সময় উভয় পক্ষের অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। এর মধ্যে অন্তত ৪০ জন শ্রমিক এবং ১১ জন পুলিশ সদস্য রয়েছেন।

পুলিশের দাবি, সংঘর্ষ চলাকালে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা পুলিশের একটি গাড়ি ভাঙচুর করেন। আর আন্দোলনকারী শ্রমিকরা বলছেন, পুলিশ বিনা উসকানিতে তাঁদের ওপর সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করলে আতঙ্কে তাঁরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। এ সময় শ্রমিকদের মারধর করা হয় বলেও তাঁরা অভিযোগ করেন।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) শাহবাগ থানার পরিদর্শক সরদার বুলবুল আহমেদ বলেন, সড়ক অবরোধ করে শ্রমিকরা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করার চেষ্টা করেন।

এ সময় পুলিশ তাঁদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু শ্রমিকরা পুলিশের ওপর হামলা করলে পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হন। তাঁদের মধ্যে পাঁচজন রাজারবাগ পুলিশ লাইনস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এর মধ্যে ফজলে রাব্বি নামের এক পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হয়েছেন।

গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ বলেন, সচিবালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে  তাঁদের ৩০ থেকে ৩৫ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন।

জানা গেছে, টানা তিন দিন ধরে শ্রম মন্ত্রণালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে আসছিলেন গার্মেন্টস শ্রমিকরা। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী গতকাল সকাল ১০টার দিকে নয়াপল্টন থেকে বিজয়নগরের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করেন তাঁরা। এ সময় পুলিশ তাঁদের প্রথমে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও সেই বাধা উপেক্ষা করে তাঁরা সামনে এগিয়ে যান। পরে পল্টন পার হয়ে তোপখানা রোডে প্রবেশ করতে গেলে পুলিশ আবারও তাঁদের বাধা দেয়, যা পরে সংঘর্ষে রূপ নেয়।

এরপর তাঁরা সেখান থেকে সচিবালয় অভিমুখে মিছিল নিয়ে যান। এ সময়  শ্রমিকরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলে পুলিশ তাঁদের সরিয়ে দিতে ধাওয়া দেয়। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় শ্রমিকরা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। এতে পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এই আন্দোলনে অংশ নেন টি এন জেড অ্যাপারেলস, অ্যাপারেল প্লাস ইকো লিমিটেড, রোর ফ্যাশন, স্টাইল ক্রাফট গার্মেন্টস ও ডার্ড কম্পোজিট টেক্সটাইল লিমিটেডের কয়েক শ শ্রমিক।

সংঘর্ষের এক পর্যায়ে  শ্রম ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার্স শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন  বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। বেতন-বোনাস না পেলে ঈদের দিন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ঘেরাও করা হবে।

শাহবাগ থানার পরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান বলেন, সচিবালয় সড়কে ঢুকতে চাইলে নিয়ম অনুযায়ী শ্রমিকদের বাধা দেওয়া হয়। এ সময় তাঁরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়লে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে টিয়ার শেল ছুড়ে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

শাহবাগ থানার ওসি মো. খালিদ মনসুর বলেন, পুলিশের ব্যারিকেড থেকে দূরে থাকতেই শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়েন। এতে আমাদের কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন। অল্প সময়ের মধ্যে আমরা তাঁদের  ছত্রভঙ্গ করে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসি। পরে শ্রমিকরা যে যাঁর মতো চলে গেছেন।

 

 

মন্তব্য

১০% কারখানা নিয়ে আশঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
১০% কারখানা নিয়ে আশঙ্কা
ঈদের আগে বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবিতে গতকাল শ্রমিকরা শ্রম ভবনের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে সচিবালয়ের দিকে যাওয়ার সময় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে লাঠিপেটা করে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। ছবি : সংগৃহীত

তৈরি পোশাকশিল্পের নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও অধিকাংশ মালিক শ্রমিকদের বেতন ও ঈদ বোনাস পরিশোধ করেছেন। কিছু কারখানা, যেগুলো নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে সেগুলো নিয়েও মালিক-শ্রমিক ও সরকার তৎপর। আশা করা হচ্ছে দু-এক দিনের মধ্যে এ সংকটও কেটে যাবে। গতকাল মঙ্গলবার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

১০% কারখানা নিয়ে আশঙ্কাখাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, কয়েক হাজার কারখানার মধ্যে দু-চার-দশটি কারখানায় প্রতিবছরই সংকট দেখা দেয়। তবে সবশেষে খুশিমনে শ্রমিকরা ঈদ করতে বাড়ি ফিরতে পারেন।

এদিকে ১৪টি কারখানার বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাস নিয়ে গতকাল আশঙ্কার কথা জানিয়েছে বিজিএমইএ। তবে এ নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে বলেও জানিয়েছে তৈরি পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠনটি।

জানতে চাইলে বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল কালের কণ্ঠকে বলেন, আশা করছি প্রতিবারের মতো এবারও শ্রমিকরা তাঁদের ঈদ বোনাস ও বকেয়া বেতন নিয়ে বাড়ি ফিরবেন। এর জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও ব্যাংকগুলোকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। কারণ এসব ব্যাংক তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদেরই অংশীদার। তাই যেসব মালিক ব্যাংকঋণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁদের সহযোগিতায় হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।

সমস্যা সমাধানে কাজ করতে হবে। 

তিনি বলেন, শ্রমিক ভাইদের প্রতি অনুরোধ, ভাঙচুর চালিয়ে এই শিল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত করবেন না। এতে কর্মসংস্থানসহ দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কোনো পক্ষই উপকৃত হবে না।

এদিকে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন এবং ঈদ বোনাস নিয়ে গতকালও রাজধানীতে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে।

 

গতকাল দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাব ও সচিবালয়ের লিংক রোডে পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের এই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছে।

 

১২ পোশাক কারখানার মালিকের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা

সরকারের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাস পরিশোধ না করায় ১২টি কারখানার মালিকের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। এসব কারখানার মালিকরা শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ না করা পর্যন্ত বিদেশ যেতে পারবেন না।

গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নৌ পরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন এ তথ্য জানান।

শ্রম উপদেষ্টা বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ইমিগ্রেশনে তাঁদের বিষয়ে তথ্য জানানো হয়েছে। আজ (গতকাল) থেকেই এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়েছে।

তিনি বলেন, ২৭ মার্চের মধ্যে পোশাক কারখানার শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করার কথা। কিন্তু ১২টি কারখানা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে পারছে না বলে জানিয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি কারখানায় অসন্তোষ চলছে।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যাঁরা বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে পারছেন না, তাঁদের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। আমরা শ্রম আইন অনুযায়ী এঁদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেববলেন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন।

কোনো কোনো কারখানার মালিকদের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে কারখানাগুলোর নাম বলা যাবে না বলে জানান উপদেষ্টা।

১২ কারখানার বাইরে অন্য কারখানা শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ না করলে তাঁদের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে প্রশ্ন করলে উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ২৭ মার্চের মধ্যে সব কারখানার শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ করতে হবে। ২৭ মার্চের পর আমরা বিষয়টি পর্যালোচনা করব। যদি আরো কোনো প্রতিষ্ঠান শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ করতে না পারে তাদের বিরুদ্ধেও সর্বোচ্চ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

কালিয়াকৈরে বকেয়া বেতন না দিয়ে গেটে তালা ঝুলিয়ে পলাতক কর্তৃপক্ষ

কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি জানান, গাজীপুরের কালিয়াকৈরে তিন মাসের বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাস না দিয়ে কারখানার গেটে তালা ঝুলিয়ে পালিয়ে গেছে কর্তৃপক্ষ।  মঙ্গলবার সকালে  মৌচাকের  কামরাঙ্গীচালা এলাকার হ্যাগ নিট ওয়্যার নামের একটি নিট কারখানার শ্রমিকরা বেতনের জন্য কারখানায় এসে তালা দেখে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। পরে বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাসের দাবিতে সকাল সাড়ে ৭টা থেকে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। এতে ওই মহাসড়কে চলাচলকারীরা বিপাকে পড়ে।

কারখানার শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, চলতি মাসসহ তিন মাস ধরে তাঁদের কোনো বেতন দেয় না মালিক পক্ষ। আশপাশের সব কারখানায় বেতন ও ঈদের বোনাস দেওয়া হয়েছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে কিভাবে এখন তাঁরা ঈদ করবেন।

কালিয়াকৈর থানার ওসি রিয়াদ মাহমুদ বলেন, মৌচাকের একটি কারখানা কর্তৃপকক্ষ শ্রমিকদের বেতন ও ঈদ বোনাস না দিয়ে গেটে তালা ঝুলিয়ে রেখেছে। তাদের পাওয়া যাচ্ছে না। বেতনের দাবিতে শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দিলে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হতে থাকে। পরে শ্রমিকরা কারখানার সামনে গিয়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন।

 

সাভারে ঈদের ছুটি বৃদ্ধি, বন্ধ কারখানা চালুর দাবিতে শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ

সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি, জানান সাভারে ঈদের ছুটি বৃদ্ধি, বন্ধ কারখানা খুলে দিয়ে শ্রমিকদের ওভারটাইম পরিশোধ এবং দাবি আদায়ে আন্দোলনের ঘটনায় আটক ছয় শ্রমিকের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন তৈরি পোশাক শ্রমিকরা। এ সময় কারখানা বন্ধের প্রতিবাদ জানিয়ে বহিরাগত সন্ত্রাসী দিয়ে শ্রমিকদের ওপর হামলা-মামলার প্রতিবাদ জানিয়ে কর্তৃপক্ষের অপসারণ দাবি করে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন তাঁরা। গতকাল সকালে সাভারের হেমায়েতপুর-সিংগাইর-মানিকগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয় জিন্স ম্যানুফ্যাকচারিং কম্পানি লিমিটেড কারখানার দুই হাজার শ্রমিক।

 

 

মন্তব্য

ব্যাঙ্ককে ইউনূস-মোদি বৈঠকের জন্য প্রস্তুত ঢাকা দিল্লির সম্মতির অপেক্ষা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
ব্যাঙ্ককে ইউনূস-মোদি বৈঠকের জন্য প্রস্তুত ঢাকা দিল্লির সম্মতির অপেক্ষা

আগামী সপ্তাহে ব্যাঙ্ককে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠকের জন্য ঢাকা প্রস্তুত। এ বৈঠকের জন্য নয়াদিল্লির ইতিবাচক উত্তরের অপেক্ষায় আছে ঢাকা।

গতকাল মঙ্গলবার ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন এ কথা জানান। ড. ইউনূস-নরেন্দ্র মোদির বৈঠকের সম্ভাবনা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, যেকোনো দেশের সঙ্গে শীর্ষ পর্যায়ের যে বৈঠক, সেই বৈঠক আমরা গুরুত্বপূর্ণ মনে করি।

ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের বর্তমান যে প্রেক্ষাপট সেই পরিপ্রেক্ষিতে এই বৈঠকটি আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি এবং আমরা আশা করছি, এই বৈঠকটি যদি অনুষ্ঠিত হয় তাহলে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে সৃষ্ট যে স্থবিরতা, সেটি কেটে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

পররাষ্ট্রসচিব বলেন, আমাদের দিক থেকে বলতে পারি, আমরা এই বৈঠকের জন্য প্রস্তুত আছি। ভারতের দিক থেকে আমরা একটা ইতিবাচক উত্তরের অপেক্ষায় আছি।

বৈঠকের জন্য দিল্লি কি প্রস্তুত নয়এই প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, দিল্লি প্রস্তুত কি না, সেটা দিল্লি বলবে।

আমরা এই বৈঠকের অপেক্ষায় থাকব।

ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, আগামী ৪ এপ্রিল থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাঙ্ককে ষষ্ঠ বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে প্রধান উপদেষ্টা আগামী ৩ এপ্রিল ব্যাঙ্ককে পৌঁছবেন।

পররাষ্ট্রসচিব বলেন, তিনি আগামী ২ এপ্রিল বিমসটেকের সচিব পর্যায়ের সভায় অংশ নেবেন।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন আগামী ৩ এপ্রিল বিমসটেকের মন্ত্রী পর্যায়ের সভায় অংশ নেবেন। প্রধান উপদেষ্টা শীর্ষ সম্মেলন শেষে আগামী ৪ এপ্রিল বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা হবেন।

পররাষ্ট্রসচিব বলেন, এবারের বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের আগে আগামী ৩ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টা বিমসটেক ইয়াং জেনারেশন ফোরাম : হয়্যার দ্য ফিউচার মিটস শীর্ষক ফোরামে মূল বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেবেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ষষ্ঠ বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশ আগামী ২ বছরের জন্য বিমসটেকের সভাপতিত্ব গ্রহণ করবে। এ কারণে এবারের বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আসন্ন বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে বিমসটেক সদস্য রাষ্ট্রগুলোর রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা বিমসটেক সহযোগিতার বিভিন্ন দিক নিয়ে মতবিনিময় করবেন এবং বিমসটেক অঞ্চলের জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নসহ এই অঞ্চলকে আর্থ-সামাজিকভাবে আরো উন্নত, টেকসই ও শান্তিপূর্ণ হিসেবে গড়ে তোলার বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেবেন। বিমসটেকের আওতায় ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ, বিমসটেক মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, যোগাযোগ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন, জ্বালানি সহযোগিতা, প্রতিরক্ষা ও মানব নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন, দারিদ্র্য দূরীকরণ, মানবসম্পদ উন্নয়ন, কৃষি, সংস্কৃতি, পর্যটনের বিকাশ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও অতিমারি মোকাবেলায় প্রস্তুতি প্রভৃতি বিষয়ে আঞ্চলিক সহযোগিতার অগ্রগতি পর্যালোচনাপূর্বক শীর্ষ সম্মেলনে রাষ্ট্র/সরকারপ্রধানরা সর্বসম্মতিক্রমে যৌথ ঘোষণা দেবেন। 

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, বিমসটেকের ষষ্ঠ শীর্ষ সম্মেলনে বিমসটেকের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে মেরিটাইম ট্রান্সপোর্ট কো-অপারেশন সংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। এ চুক্তি বাণিজ্যিক শিপিং ও সামুদ্রিক পরিবহন শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে আঞ্চলিক অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে বলে বাংলাদেশ আশা করছে।

 

 

মন্তব্য
সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশ

জরুরি অবস্থা ঘোষণায় দ্বিমত বিএনপির

হাসান শিপলু
হাসান শিপলু
শেয়ার
জরুরি অবস্থা ঘোষণায় দ্বিমত বিএনপির

জাতীয় সাংবিধানিক কমিশনের (এনসিসি) সিদ্ধান্তক্রমে রাষ্ট্রপতি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারবেন—সংবিধান সংস্কার কমিশনের এমন সুপারিশের সঙ্গে একমত হয়নি বিএনপি। দলটি বলেছে, জরুরি অবস্থা জারির সঙ্গে সরকারের নির্বাহী কর্তৃত্বের বিষয়টি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত হওয়ায় এসংক্রান্ত ক্ষমতা সরকার ও সংসদের বাইরে অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের কাছে থাকা সংগত নয়।

সংস্কার কমিশনের সুপারিশে আরো বলা হয়, জরুরি অবস্থার সময় নাগরিকদের কোনো অধিকার রদ বা স্থগিত করা যাবে না এবং আদালতে যাওয়ার অধিকার বন্ধ বা স্থগিত করা যাবে না। তাই অনুচ্ছেদ ১৪১(খ) ও অনুচ্ছেদ ১৪১(গ) বাতিল হবে।

এই প্রস্তাবের সঙ্গেও একমত নয় বিএনপি। দলটির মতামত, নাগরিকদের কোনো অধিকার রদ বা স্থগিত না করে জরুরি অবস্থা জারির কী উদ্দেশ্য থাকতে পারে, প্রস্তাবিত সুপারিশে তা বোধগম্য নয়।

গত রবিবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে জমা দেওয়া সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশের ওপর বিএনপি এই মতামত তুলে ধরেছে।

বিএনপির দেওয়া মতামত পর্যালোচনায় এ তথ্য জানা গেছে।

ওই দিন সংবিধান কমিশনসহ পাঁচ সংস্কার কমিশনের সুপারিশের ওপর মতামত জমা দেয় দলটি। জাতীয় সাংবিধানিক কমিশনের বিষয়টি প্রস্তাবিত।

সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশের ওপর দেওয়া মতামতে বিএনপি জাতীয় সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছর বহাল রাখার পক্ষে মত দিয়েছে। সংস্কার কমিশনের চার বছর মেয়াদের সুপারিশের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে দলটি এই মত দেয়।

একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক দলের প্রধান ও সংসদ নেতা হতে পারবেন না বলে সংস্কার কমিশন যে প্রস্তাব দিয়েছে তার সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করে দলটি বলেছে, এটি রাজনৈতিক দলের সিদ্ধান্তের বিষয়।

প্রধানমন্ত্রী কোনো রাজনৈতিক দলের প্রধান কিংবা সংসদ নেতা হিসেবে থাকতে পারবেন না বলে সংবিধান সংস্কার কমিশন যে সুপারিশ করেছে সে বিষয়ে বিএনপির বক্তব্য হলো প্রধানমন্ত্রী দলের প্রধান অথবা সংসদ নেতা পদে কোনো এক বা একাধিক ব্যক্তি অধিষ্ঠিত হবেন কি না, তা একান্তই সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে সাংবিধানিকভাবে কোনো বিধি-নিষেধ আরোপ সংসদীয় গণতন্ত্রের মূল চেতনার পরিপন্থী।

অবশ্য সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ তিন মাসের কথা বলা হলেও নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ চার মাস করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এই সময়ে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচন অনুষ্ঠানের সুপারিশ করা হয়।

এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বিএনপি বলেছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাংলাদেশের বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে একটি ব্যতিক্রমধর্মী ব্যবস্থা। জনগণের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনা সাংবিধানিক বিধান। এ ক্ষেত্রে  আগের মতো ৯০ দিন মেয়াদেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার হওয়া বাঞ্ছনীয়। এই সরকারের প্রধান দায়িত্ব একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। এই সময়ে শুধু জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা আবশ্যক, অন্য কোনো নির্বাচন নয়। সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের কোনো সুযোগ নেই।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় কালের কণ্ঠকে বলেন, দলের পক্ষ থেকে সুপারিশ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে দেওয়া হয়েছে। এখন সরকার অতি প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে—এটাই সবার প্রত্যাশা। তিনি বলেন, সংবিধান সংশোধনের দায়িত্ব নির্বাচিত সরকারের। সে জন্য সংবিধানসংক্রান্ত কোনো সংশোধন করতে হলে আগে নির্বাচন দিতে হবে। নির্বাচিত সরকার সংসদে সেই সংশোধন আনবে।

সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশের ওপর বিএনপির মতামত পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ন্যূনতম বয়স ২১ বছর চায় না দলটি। আইনসভার নিম্নকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের সমর্থনে প্রধানমন্ত্রী মনোনীত হওয়ার বিধানের সঙ্গেও একমত নয়। তবে সংসদের দুজন ডেপুটি স্পিকারের মধ্যে একজন বিরোধী দল থেকে মনোনীত করায় দলটি একমত। একই সঙ্গে উচ্চকক্ষের একমাত্র ডেপুটি স্পিকার সরকারি দলের বাইরে থেকে নির্বাচিত হোক, সেটাও চায় বিএনপি।

বিএনপির দেওয়া মতামত পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট একটি আইনসভার বিষয়ে নীতিগতভাবে তারা একমত। তবে উভয় কক্ষের (উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষ) মেয়াদ চার বছর করার যে সুপারিশ করা হয়েছে, সেখানে বিএনপি বলেছে, মেয়াদ পাঁচ বছর হওয়া সমীচীন হবে।

প্রস্তাবের সংবিধান সংশোধনী অংশে সংবিধানের যেকোনো সংশোধনী উভয় কক্ষের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় অনুমোদন এবং গণভোটে করার কথা বলা হয়েছে। বিএনপি এর সঙ্গে একমত নয়। দলটি বলেছে, সংবিধানের সব সংশোধনী গণভোটে উপস্থাপন বাস্তবসম্মত নয়। এ ক্ষেত্রে অনুচ্ছেদ ১৪২-কে পঞ্চদশ সংশোধনীপূর্ব অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়াই যথেষ্ট। নিম্নকক্ষে পাস হওয়া বিল উচ্চকক্ষ সুপারিশসহ কিংবা সুপারিশ ব্যতিরেকে পুনর্বিবেচনার জন্য নিম্নকক্ষে ফেরত পাঠাতে পারবে—এরূপ বিধান করা যেতে পারে।

রাষ্ট্রপতি অংশে বলা আছে, রাষ্ট্রপতির মেয়াদ হবে চার বছর। রাষ্ট্রপতি সর্বোচ্চ দুইবারের বেশি অধিষ্ঠিত থাকবেন না। এই প্রস্তাবের সঙ্গে একমত না হয়ে বিএনপি তাদের মতামতে বলেছে, রাষ্ট্রপতির মেয়াদ পাঁচ বছর হওয়া সমীচীন হবে। বিদ্যমান সংবিধানে সর্বোচ্চ দুইবারের বেশি রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত না থাকার বিধান [অনুচ্ছেদ ৫০(২)] থাকায় এতত্সংক্রান্ত সুপারিশ অপ্রয়োজনীয়।

প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী অংশে বলা হয়েছে, আইনসভার নিম্নকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের সমর্থনে প্রধানমন্ত্রী মনোনীত হবে। এর সঙ্গে একমত নয় বিএনপি।

প্রধানমন্ত্রী অংশে আরো বলা হয়েছে, আইনসভার মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার আগে যদি কখনো প্রধানমন্ত্রী স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন বা আস্থা ভোটে হেরে যান কিংবা অন্য কোনো কারণে রাষ্ট্রপতিকে আইনসভা ভেঙে দেওয়ার পরামর্শ দেন, সে ক্ষেত্রে যদি রাষ্ট্রপতির কাছে এটা প্রতীয়মান হয় যে নিম্নকক্ষের অন্য কোনো সদস্য সরকার গঠনে প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থন অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছে, তবেই রাষ্ট্রপতি আইনসভার উভয় কক্ষ ভেঙে দেবেন। সংবিধান সংস্কার কমিশনের এই সুপারিশের সঙ্গে একমত নয় বিএনপি।

বলা হয়েছে, একজন ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সর্বোচ্চ দুইবার দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। তিনি একাদিক্রমে অথবা অন্য যেকোনো উপায়ে দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন হতে পারবেন না। সুপাশিরকৃত এই বিধানের সঙ্গে একমত পোষণ না করে বিএনপি বলেছে, প্রধানমন্ত্রী পদের মেয়াদসংক্রান্ত বিষয়ে ‘কোনো ব্যক্তি একাদিক্রমে তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ লাভের যোগ্য বলিয়া বিবেচিত হইবেন না’—এরূপ বিধান করাই যথেষ্ট।

প্রস্তাবে আরো বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের প্রধান এবং সংসদ নেতা হিসেবে অধিষ্ঠিত থাকতে পারবেন না। এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বিএনপি বলেছে, প্রধানমন্ত্রী দলের প্রধান অথবা সংসদ নেতা পদে কোনো এক বা একাধিক ব্যক্তি অধিষ্ঠিত হবেন কি না, তা একান্তই সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে সাংবিধানিকভাবে কোনো বিধি-নিষেধ আরোপ সংসদীয় গণতন্ত্রের মূল চেতনার পরিপন্থী।

সংবিধান সংস্কার কমিশনের বিচার বিভাগের সুপ্রিম কোর্ট অংশে দেশের সব বিভাগে হাইকোর্ট বিভাগের সমান এখতিয়ারসম্পন্ন হাইকোর্টের স্থায়ী আসন প্রবর্তনের সুপারিশ করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আসন রাজধানীতেই থাকবে। সব বিভাগে হাইকোর্টের স্থায়ী আসন প্রবর্তনের বিষয়ে একমত নয় বিএনপি। দলটি বলেছে, দেশের সব বিভাগে হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী আসন সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় এটি করার সুযোগ নেই। বিকল্প হিসেবে ঢাকার বাইরে অনুচ্ছেদ ১০০-এর অধীনে হাইকোর্ট বিভাগের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপন করা যেতে পারে।

প্রস্তাবে আপিল বিভাগের বিচারকদের মধ্য থেকে সর্বোচ্চ জ্যেষ্ঠ বিচারককে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ প্রদানকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের একটি বিধান সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। বিএনপি এই প্রস্তাবের সঙ্গে আংশিকভাবে একমত। দলটি তাদের মতামতে বলেছে, ‘ডকট্রিন অব নেসেসিটি’ বিবেচনায় রেখে প্রবীণতম তিনজন বিচারকের মধ্য থেকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা যেতে পারে।

স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস অংশে সংবিধানের অধীন একটি স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস প্রতিষ্ঠা করার সুপারিশ করা হয়েছে। এর সঙ্গে একমত নয় বিএনপি। দলটি বলেছে, স্থায়ী প্রসিকিউশন সার্ভিসের প্রয়োজনীয়তা থাকলেও তা আইনের মাধ্যমে ও পর্যায়ক্রমে হওয়া সমীচীন।

প্রস্তাবে সংবিধানের মূলনীতি অংশে বলা হয়েছে, কমিশন নিম্নোক্ত বিধান অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করছে। ‘বাংলাদেশ একটি বহুত্ববাদী, বহুজাতি, বহুধর্মী, বহুভাষী ও বহু-সংস্কৃতির দেশ, যেখানে সব সম্প্রদায়ের সহাবস্থান ও যথাযথ মর্যাদা নিশ্চিত করা হবে।’

অন্যদিকে রাষ্ট্রের মূলনীতি অংশে সংবিধানের মূলনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদ এবং এসংশ্লিষ্ট সংবিধানের ৮, ৯, ১০ ও ১২ অনুচ্ছেদ বাদ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। উভয় ক্ষেত্রে একমত নয় বিএনপি। দলটি দুই ক্ষেত্রেই বলেছে, অনুচ্ছেদ ৮, ৯, ১০ ও ১২-কে পঞ্চদশ সংশোধনীর আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়াই অধিকতর যুক্তিযুক্ত।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ