<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কক্সবাজারকে আধুনিক ও পরিকল্পিত পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক)। আট বছর পরও সংস্থাটি পর্যটন শহর ঘিরে কোনো মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে পারেনি। মহাপরিকল্পনার জন্য কয়েক দফা কাটছাঁট করে ১৭৪ কোটি ৭২ লাখ টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে কউক। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পর্যটন নগরীকে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের মিলনমেলা হিসেবে গড়ে তুলতে আধুনিক সুযোগ-সুবিধার সংযোজন জরুরি। শুধু সমুদ্রসৈকত ও আবাসন ব্যবস্থার মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই পর্যটনব্যবস্থা গড়ে উঠবে না। পর্যটকদের চাহিদার কথা বিবেচনায় রেখে নতুনত্ব আনতে হবে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পর্যটন ব্যবসায়ীরা বলছেন, কক্সবাজারের নৈসর্গিক সৌন্দর্য সুদীর্ঘ ১২০ কিলোমিটার উপকূলজুড়ে ছড়িয়ে থাকলেও পর্যটকরা কেবল কয়েকটি সুপরিচিত এলাকাতেই বেশি ভ্রমণ করেন। অদেখা রয়ে যায় বেশির ভাগ অঞ্চল। সবুজ পাহাড় সারি সঙ্গে মিশে যাওয়া সুদীর্ঘ সৈকতের সৌন্দর্য যাতে পর্যটকরা উপভোগ করতে পারেন তার জন্য কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত কেবল কার চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি। পাশাপাশি কক্সবাজারের কাছের দ্বীপ মহেশখালীর সঙ্গেও কেবল কার চালু করা জরুরি। এ ছাড়া এক্সক্লুসিভ টুরিস্ট জোন, বিদেশি পর্যটকদের জন্য আলাদা জোন, হালাল ট্যুরিস্ট জোন, পর্যটকদের নিরাপত্তায় সি নেটিং সিস্টেম, ওয়াচ টাওয়ার, বুঙ্গি জাম্পিং সিস্টেম, নিরাপদ প্যারা সেইলিংব্যবস্থা চালু করা উচিত।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ ছাড়া ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্য গোয়া, মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কার আদলে পর্যটনকে আরো বেশি আকর্ষণীয় করে গড়ে তোলা যায়। তার জন্য গোয়ার বিখ্যাত টিটোস নাইটক্লাব ও গোয়ার মানদোভি নদীর তীরে অবস্থিত ক্যাসিনো সমুদ্রসৈকতও গড়ে তোলা যায়। পাশাপাশি কক্সবাজার শহরে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের নাইট লাইফের জন্য আন্তর্জাতিক মানের শপিং মল ও সিনেপ্লেক্স গড়ে তোলা জরুরি।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কক্সবাজার সি ক্রজ অপারেটর ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হুসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, পর্যটকরা শুধু সমুদ্রসৈকত ও হোটেলে ঘুমানোর জন্য আসেন না। তাঁদের বিনোদনের জন্য বাড়তি সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। এতে করে পর্যটন খাতে আয়ও বাড়বে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তিনি বলেন, কক্সবাজারে ঘুরতে আসা ৯৮ শতাংশ পর্যটকই জানে না সমুদ্র থেকে পাহাড়ঘেরা কক্সবাজার দেখতে কেমন? পর্যটকদের জন্য ক্রুজ শিপ বা প্রমোদতরির ব্যবস্থা থাকা উচিত। তাঁরা গভীর সমুদ্রে রাত্রি যাপন করবেন, উল্লাস করবেন। কিন্তু কক্সবাজারে যাতায়াত করা শিপগুলোকে ১৮টি দপ্তরের অনুমোদন নিতে হয়, যা নতুন বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে নিরুৎসাহ করছে। অবশ্যই পর্যটন নগরীতে ওয়ান স্টপ লাইসেন্সিং সিস্টেম চালু করা উচিত।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের ২০২৩-২৪ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুসারে, বর্তমান বিশ্বে পর্যটন তার বহুমাত্রিক বৈশিষ্ট্যের কারণে একক বৃহত্তম শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পর্যটনশিল্প অন্যতম অর্থনৈতিক খাত হিসেবে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। বর্তমানে বৈশ্বিক জিডিপিতে পর্যটন খাতের অবদান প্রায় ১০ শতাংশ ও প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অবদান প্রায় ১১ শতাংশ। বাংলাদেশের জিডিপিতে পর্যটন খাতের অবদান ৩.১ শতাংশ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অবদান প্রায় ১.৭ শতাংশ, যা এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় তেমন আশাব্যঞ্জক নয়। একজন পর্যটক ১১ জন মানুষের প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করে থাকেন এবং স্বল্প বিনিয়োগের মাধ্যমে পর্যটনশিল্প অধিক রাজস্ব আহরণ করে থাকে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পর্যটনশিল্প অন্যতম অর্থনৈতিক খাত হিসেবে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সূত্র বলছে, ভ্রমণ ও পর্যটন সূচকে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের এক জরিপে দেখা গেছে, এই সূচকে বিশ্বের ১১৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৯তম। এ ছাড়া এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সবার শেষে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজমের (ডব্লিউটিটিসি) তথ্য মতে, ১৯৫০ সালে পৃথিবীতে পর্যটকের সংখ্যা ছিল মাত্র ২৫ মিলিয়ন, যা ২০১৬ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় এক হাজার ২৩৫ মিলিয়নে। ধারণা করা হচ্ছে, এই বছর প্রায় ১৩৯ কোটি ৫৬ লাখ ৬০ হাজার পর্যটক সারা পৃথিবীতে ভ্রমণ করবেন। বিগত ৬৭ বছরে পর্যটকের সংখ্যা প্রায় ৫০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি বছর বৈশ্বিক জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে পর্যটনের অবদান এর আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১২.১ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১১.১ ট্রিলিয়ন ডলার। ২০১৯ সালের হিসাবে এই প্রবৃদ্ধি ৭.৫ শতাংশ। কিন্তু অবকাঠামো উন্নয়নে সীমাবদ্ধ বাংলাদেশের পর্যটন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জানতে চাইলে হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার বলেন, পর্যটকদের নাইট লাইফ নিশ্চিত করতে হবে। সি বিচ ও হোটেলে রাত্রি যাপনের মধ্যেই পর্যটনকে সীমাবদ্ধ রাখা যাবে না। এ জন্য উন্নতমানের শপিং মল, সিনেপ্লেক্স, অ্যামিউজমেন্ট পার্ক চালু করা উচিত। একই সঙ্গে বিদেশি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করতে সব ব্যবস্থাপনায় আধুনিকায়ন করতে হবে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তিনি আরো বলেন, দেশের অন্যান্য এলাকার মতোই পর্যটন নগরীতে আইন-কানুনের কড়াকড়ি হলে পর্যটকরা তাঁদের সময়কে উপভোগ করতে পারবেন না। তবে, অবশ্যই তাঁদের নিরাপত্তার বিষয়টি নজরে রাখতে হবে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কক্সবাজার নাগরিক ফোরাম ও বাংলাদেশ পরিবেশ অ্যান্ড ডায়ভারসিটি কনভারসন ফাউন্ডেশনের সভাপতি এ এন এম হেলাল উদ্দিন বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে জিডিপিতে পর্যটন খাতের অবদান বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি। কিন্তু পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত থাকার পরও আমাদের জিডিপিতে পর্যটন খাতের অবদান সামান্য। শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, নেপাল ও ভারতের মতো আমাদের দেশে পর্যাপ্ত বিদেশি পর্যটক নেই। আসলে আমরা তাঁদের এখনো আমন্ত্রণ জানাতে পারিনি।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তিনি বলেন, প্রকৃতি ও পরিবেশকে রক্ষা করে পর্যটকবান্ধব পরিকল্পনা করতে হবে। এতে অর্থনীতিতে পর্যটনের অংশীদারি বাড়বে।</span></span></span></span></p>