মির্জা ফখরুল

পার্লামেন্ট না থাকলে সংস্কারও থাকবে না

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
পার্লামেন্ট না থাকলে সংস্কারও থাকবে না

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ও স্বল্প সময়ের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ বিভিন্ন দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার দেশের কয়েকটি জেলায় জনসভা করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে এসব সমাবেশে বক্তৃতা করেন কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা। কালের কণ্ঠের সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর

যশোর : অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সংস্কারের নামে জাতিকে অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। পার্লামেন্ট না থাকলে সংস্কারও থাকবে না।

ওয়ান-ইলেভেনের কথা মনে আছে। তারাও সংস্কারের কথা বলে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলে নিয়েছিল।

গতকাল বিকেলে যশোর মুনশি মেহেরউল্লা ময়দানে (টাউন হল মাঠ) জেলা বিএনপি আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।

সম্প্রতি সংস্কার প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তাব ওয়েবসাইটে জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার সরকারপ্রধানের বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

বলেন, জনগণের ভয় আমাদের দেখাবেন না। আমরা যা করি, তার সবই জনগণকে জানাই। কিছুই গোপন করি না।

জেলা বিএনপির আহবায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগমের সভাপতিত্বে জনসভায় বক্তৃতা দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, সহধর্মবিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু, সহস্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক জাহানারা সিদ্দিকী প্রমুখ।

কুমিল্লা : বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক বিরোধীদলীয় চীফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক বলেছেন, হাসিনা দিল্লিতে থাকুক আর যেখানেই থাকুক আয়নাঘরের চেয়ারে একদিন তাঁকে বসানো হবে।

তিনি বলেছেন, আয়নাঘরের সেই অত্যাচারের কথা ভুলি নাই, ডিবি হারুনের অত্যাচারও আমরা ভুলি নাই। এই সরকার সেই হারুনকেও এখনো গ্রেপ্তার করতে পারে নাই। যদি তাদের গ্রেপ্তার করা হতো তাহলে সচিবালয়ে আগুন লাগা কিংবা গাজীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ওপর হামলার ঘটনা আমাদের দেখতে হতো না।

গতকাল বিকেলে কুমিল্লায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও স্বল্প সময়ের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ঝিনাইদহ : বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আবুল খায়ের ভূঁইয়া বলেছেন, আইন-শৃঙ্খলার উন্নয়ন ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচিত সরকার প্রয়োজন। এ জন্য সংস্কার শেষে দ্রুত নির্বাচন দিতে হবে। সময় নষ্ট করা দেশের মানুষ সহ্য করবে না।

গতকাল বিকেলে শহরের উজির আলী স্কুল মাঠে আয়োজিত এক জনসমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতাদানকালে তিনি এসব কথা বলেন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের এই উপদেষ্টা বলেন, জুলাই গণ-আন্দোলন আকাশ থেকে পড়েনি। বিএনপির ১৭ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের ফল জুলাই অভ্যুত্থান।

জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট এম এ মজিদের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু, সহতথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল, কেন্দ্রীয় নেতা ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল প্রমুখ।

হবিগঞ্জ : বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি বলেছেন, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে যে অপকর্ম করেছে তার কোনো ক্ষমা হবে না, তাদের বিচার করা হবে। গতকাল বিকেলে হবিগঞ্জ পৌরসভা মাঠে জেলা বিএনপির সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

সাবেক এমপি এ্যানি আরো বলেন, বিএনপির রাজনীতি যাঁরা করবেন তাঁদের সতর্ক থাকতে হবে। দলের মধ্যে কেউ অপকর্ম করলে ক্ষমা পাবেন না। কারণ আওয়ামী লীগ আর বিএনপির মধ্যে পার্থক্য আছে।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও টানা তিনবারের নির্বাচিত হবিগঞ্জ পৌরসভার পদত্যাগকারী মেয়র আলহাজ জি কে গউছ। বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক আহমদ আলী মুকিব, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মিজানুর রহমান চৌধুরী, জেলা শ্রমিকদলের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এস এম বজলুর রহমান প্রমুখ।

পাবনা : কেন্দ্রীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু একটি রাজনৈতিক দলকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, ১৯৭১ সালে আপনারা পাকিস্তানিদের পক্ষ নিয়ে আমাদের বিরোধিতা করেছেন। এখন আবার ষড়যন্ত্র করছেন। ৭১-কে বাদ দিয়ে কিছু করলে আমরা মানব না।

গতকাল পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ মাঠে সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির আহবায়ক হাবিবুর রহমান হাবিবের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শাহিন শওকত, ওবাদুর রহমান চন্দন প্রমুখ।

সৈয়দপুর (নীলফামারী) : বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিএনপি ছয় মাসেও কোনো কথা বলেনি। আমরা পর্যবেক্ষণ করেছি তাদের সব কর্মকাণ্ড। এখন দেখছি তারা জনগণকে পাশ কাটিয়ে চলছে। এ জন্য আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সরকারকে বার্তা দিচ্ছি।

গতকাল বিকেলে নীলফামারীর সৈয়দপুর রাজনৈতিক জেলা বিএনপি আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। শহরের শেরেবাংলা সড়কে এই সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সৈয়দপুর রাজনৈতিক জেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ অধ্যক্ষ আব্দুল গফুর সরকার।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

বিশেষ লেখা

বাংলাদেশ কি সত্যিই খাদের কিনারে?

    অদিতি করিম
শেয়ার
বাংলাদেশ কি সত্যিই খাদের কিনারে?

বিলেতের প্রভাবশালী সংবাদপত্র দ্য গার্ডিয়ানের সাংবাদিক হান্না এলিস পিটারসেন সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাত্ হয়। এই সব কিছু মিলিয়ে সম্প্রতি তিনি দ্য গার্ডিয়ানে একটি দীর্ঘ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। এই প্রতিবেদনটি দেশে-বিদেশে সাড়া ফেলেছে।

এই প্রতিবেদনের এক জায়গায় হান্না বলেছেন, ঢাকার রাজপথ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে তাঁর মনে হয়েছে, বাংলাদেশ এখন খাদের কিনারে।

তাঁর এই সাক্ষাৎকারভিত্তিক প্রতিবেদনটি নিয়ে এ দেশের রাজনীতিতে তোলপাড় চলছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তো বটেই, বিভিন্ন রাজনৈতিক আলোচনায়ও হান্না এলিস পিটারসেনের এই উক্তিটি নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। অনেক রাজনীতিবিদ তাঁর উক্তিকে উদ্ধৃত করে বাংলাদেশের সংকট মোকাবেলার জন্য আশু এবং জরুরি পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছেন।

বাস্তবতা কী বলে? বাংলাদেশ কি সত্যি খাদের কিনারে, নাকি হান্না এলিস পিটারসেনের বক্তব্য একটু বাড়াবাড়ি?

এ কথা ঠিক যে, ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর নতুন সরকার খুব একটা স্বস্তিতে নেই। এই সরকারের মধুচন্দ্রিমা সময় পার হয়েছে। এখন এই সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশার চাপ দিন দিন বাড়ছে। প্রত্যাশা পূরণ না হলে হতাশাও তৈরি হয়েছে অনেক ক্ষেত্রে।

বাংলাদেশের মানুষ ৫ আগস্টের পর অনেক বড় রকম একটা প্রত্যাশার ফানুস নিয়ে নতুন সরকারের দিকে তাকিয়ে ছিল। ১৫ বছরের দম বন্ধ অবস্থা থেকে মুক্তির পর এ দেশের জনগণ তাদের পুঞ্জীভূত বঞ্চনার অবসান চাচ্ছে খুব দ্রুত। আর এ কারণেই দাবি-দাওয়ার চাপ অনেক বেশি। বিশেষ করে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষের গত ১৭ বছর জমে থাকা অভাব-অভিযোগ, বঞ্চনা, নিপীড়ন ইত্যাদি পূরণের জন্য তারা চটজলদি পথ খোঁজে রাজপথে নামার মাধ্যমে।

দায়িত্ব গ্রহণের পর এই সরকার সবচেয়ে বড় যে চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়ে তা হলো কথায় কথায় রাজপথ দখল এবং বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে সড়ক অবরোধ।

এটি জনজীবনকে রীতিমতো অতিষ্ঠ করে তোলে। বিভিন্ন সড়ক অবরোধ হওয়ার ফলে মানুষের কর্মজীবনে এক ভয়ংকর বিশৃঙ্খল অবস্থা সৃষ্টি হয়। আমরা জানি যে শেখ হাসিনার পতনের পর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, বিশেষ করে পুলিশ বাহিনী নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। এই বাহিনীর একটা বড় অংশ দলীয়করণের কারণে রীতিমতো আওয়ামী লীগের পেটোয়া বাহিনীতে পরিণত হয়েছিল। অনেকে গণ-অভ্যুত্থানের পর জনরোষের ভয়ে পালিয়ে যায়। ফলে পুলিশ প্রশাসনের কার্যক্রম সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে। বেশ কিছুদিন পুলিশের কোনো কার্যক্রমই ছিল না।

নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করার পর একটি ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে পুলিশ প্রশাসনকে নতুন করে গড়ে তুলছে। এই প্রক্রিয়া এখনো শেষ হয়নি। এই গণ-অভ্যুত্থান সামগ্রিক ভাবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা পুলিশের মনোবলকে দুর্বল করে ফেলেছে। পুলিশের বেশ কিছু সদস্য এই গণ-অভ্যুত্থানে মারা গেছেন। এটিও গোটা বাহিনীর মনোবল ভেঙে যাওয়ার একটি বড় কারণ। ফলে ৫ আগস্টের পর তাঁরা আগের মতো উদ্যম এবং দায়িত্ব নিয়ে কাজ করছেন না। তাঁদের মধ্যে একটা ঢিলেঢালা ভাব। এক ধরনের আতঙ্ক এবং হতাশাগ্রস্ত মনোভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। এ কারণে বিভিন্ন রাস্তায় কথায় কথায় অবরোধ এবং অবস্থান কর্মসূচিগুলোতে পুলিশ বাহিনী নিরাপদ দূরত্বে থাকছে। গা বাঁচিয়ে তামাশা দেখছে। পুলিশের এই হতাশাজনক অবস্থা দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নাজুক হওয়ার প্রধান কারণ।

আমরা জানি, ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন থানা থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র লুট হয়েছিল। এসব অস্ত্র এখনো সন্ত্রাসীদের দখলে। অস্ত্র উদ্ধারের নামে যে অভিযান পরিচালিত হয়েছিল, সেই অভিযান মোটেও সফল হয়নি। ফলে সন্ত্রাসীদের হাতে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র রয়েছে। পাশাপাশি ৫ আগস্টের পর বেশ কিছু চিহ্নিত সন্ত্রাসী কারাগার থেকে মুক্তি পায়। তারা নতুন করে তাদের নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে। ফলে সারা দেশে চুরি, ছিনতাই, রাহাজানি ইত্যাদি ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। বিশেষ করে বিচার নিজের হাতে তুলে নেওয়া এবং মব জাস্টিসের নামে এক ধরনের মতলববাজি সারা দেশে রীতিমতো আতঙ্ক বাড়াচ্ছে। সুযোগসন্ধানী দুর্বৃত্তরা এই সুযোগে যে যার মতো দখল বাণিজ্যে শামিল হয়ে প্রতিপক্ষের জমিজমা, ঘাট, হাট-বাজার ইত্যাদি সব দখল করে নিচ্ছে। দখল-পাল্টাদখল নিয়েও চলছে হানাহানি-খুনাখুনি। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে সারা দেশে নির্বিচারে নারী নিপীড়নের ঘটনা। বিশেষ করে মাগুরার আছিয়া গোটা বাংলাদেশকে কাঁদিয়ে বিদায় নিয়েছে। এ রকম একটা নাজুক পরিস্থিতিতে শুধু সেনাবাহিনীর উপস্থিতির কারণে এখনো মানুষের মধ্যে কিছুটা আশা আছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি একই রকম অবস্থান একটা পর্যায়ে মানুষকে ক্ষুব্ধ করে তোলে, হতাশ করে তোলে এবং মানুষ বিরক্ত হতে শুরু করছে। যেকোনো সময় যেকোনো স্থানে কিছু দর্বৃত্ত মব করে হামলা চালাচ্ছে, লুটপাট করছে, আগুন লাগিয়ে বিচার নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে, রাস্তায় কাউকে প্রতিপক্ষ হিসেবে চিহ্নিত করে তাকে পেটানো হচ্ছে ইত্যাদি ঘটনাগুলো একটা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশে। এসব উদ্বেগজনক।

এ রকম একটি নাজুক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির কারণেই দেশের অর্থনীতিতেও সৃষ্টি হয়েছে স্থবিরতা। ব্যবসায়ীরা কেউ নতুন বিনিয়োগ করছেন না। সাম্প্রতিক প্রধান উপদেষ্টা অর্থ মন্ত্রণালয়ের জন্য একজন বিশেষ সহকারী নিয়োগ দিয়েছেন। ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী একজন দক্ষ অর্থনীতিবিদ। দেশে-বিদেশে তিনি বিভিন্ন উদ্ভাবনী অর্থনৈতিক চিন্তার জন্য আলোচিত। দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই একটি মতবিনিময়সভায় তিনি বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কে ব্যবসা করতে চাইবে? এই সরকারের মেয়াদ সম্পর্কে মানুষের সুস্পষ্ট ধারণা নেই। এই সরকার কত দিন টিকবে, সেটা মানুষ জানে না।

সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, এই সরকারের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য কী, সে সম্পর্কে একটা অস্পষ্টতা থাকার কারণে বিদেশি বিনিয়োগ যেমন কমছে, তেমনি বাংলাদেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে দেশীয় শিল্প উদ্যোক্তারাও বিনিয়োগে আগ্রহী নন। আমরা জানি, ৫ আগস্টের পর থেকে বহু শিল্প-কারখানা আক্রান্ত হয়েছে। সেখানে দর্বৃত্তরা আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। অনেকে নিরুপায় হয়ে শিল্প-কারখানা বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে লাখ লাখ শ্রমিক এখন বেকার। বেতন-ভাতার দাবিতে প্রতিদিনই বিভিন্ন সড়ক অবরোধ হচ্ছে। সাধারণ চোখে আমরা মনে করতে পারি, বাংলাদেশ একটা নাজুক সময় পার করছে। দেশটির সার্বিক অবস্থা ভালো নয়।

কিন্তু আমরা যদি বিশ্বের যেকোনো দেশের বিপ্লবের তাৎপর্য অনুভব করি এবং বিপ্লবের পরবর্তী পরিস্থিতিগুলোকে বিচার-বিশ্লেষণ করতে চাই, তাহলে দেখব, বিপ্লবোত্তর সমাজে এই ঘটনাগুলো স্বাভাবিক ঘটনা। বিশেষ করে বিপ্লবের ধ্বংসস্তূপের মধ্য দিয়ে নতুন সভ্যতার সূচনা হয়। নতুন দিন বিনির্মাণের আকাঙ্ক্ষা জাগ্রত হয়। বাংলাদেশ এখন সেই নতুন বিনির্মাণের প্রাক-স্তরে রয়েছে। বাংলাদেশের গত ১৫ বছরে যে বিধিব্যবস্থা এবং আইন-প্রশাসন ইত্যাদি ছিল, সবই ছিল ভঙ্গুর, দলীয়করণে দুষ্ট। একটি নির্দিষ্ট দলকে ক্ষমতায় রাখার অভিপ্রায়ে আবর্তিত। এই অবস্থা থেকে একটি জনগণের সরকার এবং জনগণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা অনেক কঠিন কাজ। ৫ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ আসলে সেই কঠিন সময়টা পার করেছে। এ কারণেই হয়তো ঢাকার রাস্তায় ঘুরতে গিয়ে গার্ডিয়ানের সাংবাদিক হান্না এলিস পিটারসেনের মনে হয়েছে, বাংলাদেশ খাদের কিনারে। সে জন্যই জনগণের মধ্যে সাময়িক অস্থিরতা, হতাশা। কিন্তু এই অস্থিরতা ও হতাশা বেশি দিন থাকবে না। অতীত ইতিহাস তাই বলে। হান্না এলিস পিটারসেন যদি বাংলাদেশ সম্পর্কে আরো একটু গভীরভাবে অনুসন্ধান করতেন, এ দেশের মানুষের মনমানসিকতা, চেতনা, ঐতিহ্য এবং আকাঙ্ক্ষাগুলোকে গভীরভাবে বিশ্লেষণ করতেন, তাহলে কিন্তু তিনি বাংলাদেশকে খাদের কিনারে দেখতেন না। তখন তিনি বাংলাদেশকে দেখতেন একটি নতুন অভিযাত্রার বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে। তখন তিনি তাঁর লেখায় কবি সুকান্তকে উদ্ধৃত করতেন।

সাবাস, বাংলাদেশ, এ পৃথিবী

অবাক তাকিয়ে রয়:

জ্বলে পুড়ে-মরে ছারখার

তবু মাথা নোয়াবার নয়।

বাংলাদেশ যেন সেই রকমই একটি ঐতিহ্যকে ধারণ করে। যে দেশটি জ্বলে-পুড়ে ছারখার হওয়ার পরও আবার মাথা তুলে দাঁড়ায়। আবার ঘুরে দাঁড়ায়। বাংলাদেশের মানুষের রয়েছে অফুরন্ত প্রাণশক্তি। স্রোতের বিপরীতে সাঁতার কাটার অফুরন্ত সাহস। এটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা রাজনৈতিক দুর্যোগ যাই হোক না কেন, বাংলাদেশের মানুষ লড়াই করে, ঘুরে দাঁড়ায়, হারে না, বাংলাদেশের মানুষ দমে না। নতুন স্বপ্নের জাল বোনে। এটাই হলো বাংলাদেশের ইতিহাস।

মার্চ আমাদের স্বাধীনতার মাস। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বর আক্রমণ, হত্যা, লুণ্ঠন এবং অপারেশন সার্চলাইটের পরও বাংলাদেশ হারেনি। তখনো বাংলাদেশ খাদের কিনারায় চলে গিয়েছিল। কিন্তু আমাদের বাংলাদেশের অকুতোভয় বীর জনগণ সেই খাদের কিনারা থেকে এক অভূতপূর্ব মুক্তি সংগ্রামের মধ্য দিয়ে দেশকে মুক্ত করেছে। আমরা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ পেয়েছি। বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ।

অর্থনীতিবিদরা বলতেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ভারাক্রান্ত বাংলাদেশ কখনো উন্নতি করতে পারবে না। বাংলাদেশ হবে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের একটি মডেল। যুক্তরাষ্ট্রের দুজন অর্থনীতিবিদ বাংলাদেশ সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন, বাংলাদেশ যদি ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত হতে পারে, তাহলে সেটিই হবে বিশ্বের একটি মডেল। বিশ্বে তাহলে আর কোনো দেশেই ক্ষুধা-দারিদ্র্য থাকবে না। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও শ্রম তাদের ভবিষ্যদ্বাণী ভুল প্রমাণ করেছে। স্বাধীনতার পর কেউ চিন্তা করেনি, বাংলাদেশ ক্ষুধা-দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে। কিন্তু বাংলাদেশ সারা বিশ্বকে যেন অবাক করে দেওয়ার জন্যই জন্ম হয়েছে। আমরা দেখি, ক্ষুধা-দুর্ভিক্ষ পেরিয়ে বাংলাদেশ একটি সুখী-সমৃদ্ধ রাষ্ট্রের পথে অভিযাত্রা করেছে। বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল হয়েছে। এই দেশের ১৮ কোটি মানুষ অফুরন্ত প্রাণশক্তি দিয়ে খাদ্য উৎপাদন যেমন বাড়িয়েছে, তেমনি শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্থনীতিকেও নিয়ে গেছে একটি সম্ভাবনার দুয়ারে। যার ফলে বাংলাদেশ সম্পর্কে স্বাধীনতার পর যে মূল্যায়ন করা হতো, সেই মূল্যায়ন ৫৩ বছর পর এসে ভুল প্রমাণিত হয়েছে। এটি বাংলাদেশের সাফল্য। বাংলাদেশ সম্পর্কে তাই কোনো পূর্ব অনুমান ঠিক নয়। এ দেশের মানুষ আবেগপ্রবণ, ভালোবাসার আলিঙ্গনে আপনার জন্য সব কিছু উজাড় করে দেবে। এ দেশের মানুষ হাসতে হাসতে মরতে পারে। ধ্বংসস্তূপের অন্ধকারে নতুন স্বপ্নের সকাল গড়ে। বাংলাদেশ নিয়ে হতাশার মুহূর্তে এ দেশের জনগণ নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচন করে। আর এ কারণেই বাংলাদেশ নিয়ে আজ যে হতাশা বা দুর্ভাবনা, সেটি হয়তো শেষ বিচারে সঠিক হবে না। কারণ এ দেশের মানুষ পরাজয় মানে না, হার মানে না। একাত্তরে যেমন বাংলাদেশ প্রমাণ করেছে, তেমনি প্রমাণ করেছে চব্বিশে। বাংলাদেশ খাদের কিনারে নয়, বাংলাদেশ এখন নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের দুর্গম পথে। তবে এ দেশের জনগণের জয় অনিবার্য।

 

লেখক : নাট্যকার ও কলাম লেখক

auditekarim@gmail.com

 

মন্তব্য

সস্ত্রীক বিদেশ যেতে বাধা নেই ওরিয়ন চেয়ারম্যানের

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
সস্ত্রীক বিদেশ যেতে বাধা নেই ওরিয়ন চেয়ারম্যানের

ওরিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান ওবায়দুল করিম ও তাঁর স্ত্রী মিসেস আরজুদা করিমের বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। গতকাল সোমবার ঢাকার মহানগর দায়রা জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালত অভিযোগসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন।

আদালত সূত্রে জানা যায়, চিকিৎসা ও ওমরাহ হজ পালনের জন্য বিদেশ যেতে অনুমতি চেয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে আবেদন করেন ওবায়দুল করিম, তাঁর স্ত্রী আরজুদা করিম ও তাঁর মেয়ে জেরীন করিম। শুনানি শেষে আদালত ওবায়দুল করিম ও তাঁর স্ত্রীর বিদেশ যাওয়ার অনুমতির আদেশ দেন।

এর আগে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওবায়দুল করিমসহ পরিবারের সদস্যদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন আদালত। আবেদনে বলা হয়, ওরিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং সংক্রান্ত অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। অনুসন্ধানকালে প্রাপ্ত তথ্য প্রমাণে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা প্রমাণিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গোপন সূত্রে জানা যায়, অভিযোগসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দেশ ত্যাগ করে অন্য দেশে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।

তাদের বিদেশ গমন রহিত করা প্রয়োজন।

 

মন্তব্য
ডা. শফিকুর রহমান

শহীদ সেলিম ও মন্টু দাসের পরিবারের পাশে জামায়াত

ঝালকাঠি ও বরগুনা প্রতিনিধি
ঝালকাঠি ও বরগুনা প্রতিনিধি
শেয়ার
শহীদ সেলিম ও মন্টু দাসের পরিবারের পাশে জামায়াত
শফিকুর রহমান

রাজধানীতে জুলাইয়ে শহীদ সেলিম তালুকদারের শ্বশুরবাড়ি ঝালকাঠি শহরের কবিরাজবাড়ি এলাকায় গিয়ে তাঁর স্ত্রী-সন্তানের খোঁজখবর নিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। গতকাল সোমবার দুপুরে ওই পরিবারকে সান্ত্বনা জানিয়ে শিশুটির দায়িত্ব নেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।

এর আগে গতকাল সকালে বরগুনায় নির্যাতিত শিশু এবং তার বাবা নিহত মন্টু চন্দ্র দাসের বাড়িতে গিয়ে অসহায় পরিবারটির পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জামায়াতের আমির।

গতকাল দুপুরে হেলিকপ্টারে ঝালকাঠি শহরের পৌর মিনি স্টেডিয়ামে নামেন তিনি।

এ সময় জেলা জামায়াতের নেতৃবৃন্দ তাঁকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। পরে শহীদ সেলিম তালুকদারের বাড়িতে গিয়ে তিনি বলেন, আমরা নবজাতক কন্যাসন্তানটির নাম রেখেছি সাইমা সেলিম রোজা। তার বেড়ে ওঠা, বিকশিত হওয়া, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বিয়ে পর্যন্ত সব দায়িত্ব আমরা নিচ্ছি।

দুপুরে ঝালকাঠি পৌর মিনি স্টেডিয়ামের সামনে এক পথসভায় জামায়াতের আমির বলেন, শহীদরা এ জাতির সম্পদ।

আমরা সবাই শহীদ পরিবারের সদস্য। জামায়াতে ইসলামী জুলাই-আগস্টের সব শহীদ পরিবারের প্রতি নৈতিক দায়িত্ব পালন করবে। 

তিনি বলেন, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে একটি কল্যাণকর এবং মানবিক রাষ্ট্র গড়তে চাই। কোরআনের ভিত্তিতে একটি মানবিক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি আমরা।

সেই অভিযাত্রায় দেশবাসীকে পাশে থাকার আহ্বান জানাই।

জেলা জামায়াতের আমির অ্যাডভোকেট হাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে পথসভায় কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ছাড়াও বক্তব্য দেন ঝালকাঠি-২ আসনে জামায়াতের প্রার্থী শেখ নেয়ামুল করিম, বরিশাল জেলা আমির অধ্যাপক আব্দুল জব্বার প্রমুখ। 

এর আগে, সকাল ১০টায় জামায়াতের আমির ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারযোগে বরগুনা সার্কিট হাউস মাঠে পৌঁছান। এরপর শহরের কালীবাড়ি এলাকায় মন্টু দাসের বাড়িতে গিয়ে ভুক্তভোগী পরিবারকে উপহারসামগ্রী দেন। এরপর সকাল এগারোটায় বরগুনা শহীদ মিনারে এক পথসভায় অংশ নেন তিনি।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আল্লাহ আল-কোরআনে বলেছেন, যারা ধর্ষণ করে, তারা পশুর চেয়ে নিকৃষ্ট। আমরা সামাজিকভাবে মজলুমের পাশে দাঁড়ালে, জুলুমকারী ভয় পাবে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন দলটির কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাড. মোয়াজ্জেম হোসেন হেলাল, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবর, বরগুনা জেলা আমির অধ্যাপক মহিবুল্লাহ হারুন প্রমুখ।

 

মন্তব্য
এনডিটিভিকে মার্কিন গোয়েন্দা প্রধান

বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্র

    গ্যাবার্ডের মন্তব্য সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে করা হয়নি : অন্তর্বর্তী সরকার
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্র
তুলসী গ্যাবার্ড

বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন ও সহিংসতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। দেশটির গোয়েন্দা প্রধান তুলসী গ্যাবার্ড ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি ওয়ার্ল্ডকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসন বিশ্বজুড়ে ইসলামী সন্ত্রাসবাদকে হারাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। গতকাল সোমবার  সাক্ষাৎকারটি প্রচারিত হয়েছে।

এনডিটিভি ওয়ার্ল্ডকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ড বলেন, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতন, হত্যা ও নিপীড়ন যুক্তরাষ্ট্র সরকার এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তাঁর প্রশাসনের জন্য একটি বড় উদ্বেগের বিষয়।

এদিকে তুলসী গ্যাবার্ডের মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। সরকার স্পষ্ট করে বলেছে, তুলসী গ্যাবার্ডের মন্তব্যে আমরা গভীর উদ্বিগ্ন হতাশ ও ক্ষুব্ধ। তিনি তাঁর মন্তব্যে অভিযোগ করেছেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন ও হত্যা চলছে এবং বাংলাদেশের আদর্শ ও লক্ষ্যে ইসলামী সন্ত্রাসবাদীদের মূল নিহিত, যারা বাংলাদেশে ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। তাঁর এই বিবৃতি যেমন বিভ্রান্তিকর, তেমনি বাংলাদেশের সুনামের প্রতি অবিচার।

কারণ এই জাতি ঐতিহ্যগতভাবে ইসলামী রীতিনীতি অনুশীলন করে এবং সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে দেশটির প্রশংসনীয় অবস্থান রয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, গ্যাবার্ডের মন্তব্য কোনো প্রমাণ ও সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে করা হয়নি। তাঁর মন্তব্য পুরো জাতির ওপর কলঙ্ক লেপে দিয়েছে। বাংলাদেশ যেকোনো ধরনের ইসলামী খেলাফত ব্যবস্থার নিন্দা জানায়।

তুলসী গ্যাবার্ড বলেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন মন্ত্রিসভা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নতুন মন্ত্রিসভা এবং বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে, তবে এটি আমাদের উদ্বেগের কেন্দ্রীয় বিষয় হিসেবে রয়ে গেছে।

এ সময় তিনি বাংলাদেশে ইসলামী চরমপন্থা ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর উত্থানের কথা উল্লেখ করেন।

সাক্ষাৎকারে তুলসী গ্যাবার্ড ইসলামী খিলাফত-এর আদর্শের কথা উল্লেখ করে বলেন, বিশ্বজুড়ে চরমপন্থী ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো এমন একটি ফলাফল অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করছে। ইসলামী সন্ত্রাসীদের হুমকি এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বৈশ্বিক প্রচেষ্টা একই আদর্শ ও লক্ষ্যে নিবদ্ধ, যা হলো ইসলামী খিলাফতের মাধ্যমে শাসন বা শাসন করা।

তিনি আরো বলেন, এটি স্পষ্টতই অন্য যেকোনো ধর্মের মানুষকে প্রভাবিত করে, বিশেষ করে যারা তাদের গ্রহণযোগ্য ধর্মের বাইরে। তারা এটিকে সন্ত্রাস ও সহিংসতার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে চায়। সূত্র : এনডিটিভি

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ