আজ শুক্রবার, অমর একুশে ফেব্রুয়ারি। ৭৩ বছর আগে এই দিনে বাংলা ভাষার জন্য নিজেদের তাজা প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিলেন বাংলার দামাল ছেলেরা। সেই থেকে একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষার মুক্তি ও বাংলার গৌরবের দিন। আজ মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।
চিরগৌরবের অমর একুশে আজ
নিজস্ব প্রতিবেদক ও ঢাবি প্রতিনিধি

এদিকে ইউএনবি জানায়, দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বাণীতে ড. ইউনূস বলেছেন, শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আমি বাংলাসহ বিশ্বের সব ভাষাভাষীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। ২০০০ সাল থেকে বাংলাদেশ ও ইউনেসকো যৌথভাবে দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করে আসছে।
তিনি বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত অন্তর্বর্তী সরকার দেশ ও এর ভাষার মর্যাদা রক্ষায় ধারাবাহিকভাবে কাজ করছে, যা প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য।’ তিনি আরো বলেন, ‘তথ্য-প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতেও কাজ করা হচ্ছে। ব্রেইল বইসহ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মাতৃভাষায় পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে।
সব পথ আজ মিলে যাবে ভাষাশহীদদের স্মৃতিস্মারক শহীদ মিনারে। সবার হাতে থাকবে শ্রদ্ধার অর্ঘ্য। কণ্ঠে বাজবে অমর সেই গান—‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/আমি কি ভুলিতে পারি...।’ শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষাশহীদদের প্রতি সম্মান জানাবে রক্তঋণে বাঁধা জাতি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের মূল অনুষ্ঠানের সঙ্গে সারা দেশে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করা হবে।
দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালে হয় দেশ ভাগ। জন্ম হয় পাকিস্তান রাষ্ট্রের। জন্মের পর থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী পূর্ব পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে। সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালির মাতৃভাষাকে উপেক্ষা করে উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার অপচেষ্টা চালায়। কিন্তু উর্দু ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার এই আগ্রাসী তৎপরতা মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায় বাংলার মানুষ।
শুরু হয় প্রতিবাদ-আন্দোলন। এর চূড়ান্ত রূপ দেখা যায় ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। সেদিন বাংলাকে এ দেশের রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়ার দাবিতে ১৪৪ ধারা ভেঙে মিছিল বের করে ছাত্র-জনতা। সেই মিছিলে নির্বিচার গুলি চালায় পুলিশ। রফিক, সালাম, বরকত, জব্বার, শফিকসহ নাম না জানা অনেকের রক্তে রঞ্জিত হয় রাজপথ। তাঁদের রক্তের পথ বেয়েই বাংলা পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি পায়।
বাংলা ভাষার জন্য আত্মত্যাগের দিনটির স্বীকৃতি এখন বিশ্বজুড়ে। ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘ স্বীকৃতি দেওয়ার পর ইউনেসকো বাংলাদেশের সঙ্গে ২০০০ সাল থেকে প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন করে আসছে। এবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের ২৫ বছর পূর্তি হচ্ছে। এ উপলক্ষে প্যারিসে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের রজত জয়ন্তীর বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এতে থাকছে বাংলাদেশের শিল্পীদের পরিবেশনা। এই অনুষ্ঠানে ইসলাম উদ্দিন পালাকার, ‘কথা ক’খ্যাত র্যাপার সেজান, শূন্য ব্যান্ডের এমিল, নারী ব্যান্ড দল এফ মাইনর, পারশা মাহজাবীন, টুনটুন বাউল, জালাল, মিথুন চক্র, জাহিদ নীরব প্রমুখের অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।
রাষ্ট্রীয়ভাবে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনে নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও নিজ নিজ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। দল-মত-নির্বিশেষে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ আজ নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে। এরই মধ্যে ভাষা আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে চালু করা এবারের একুশে পদক তুলে দেওয়া হয়েছে দেশের ১৮ বিশিষ্ট ব্যক্তি ও দলকে। গতকাল পদকপ্রাপ্তদের হাতে এ পদক তুলে দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
ভাষাশহীদ দিবসে ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানটের রয়েছে বিশেষ আয়োজন। আজ শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ধানমণ্ডির ছায়ানট মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে পরিবেশিত হবে স্মৃতিকথা, একক ও সম্মেলক গান এবং দলীয় আবৃত্তি। অন্যদিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে রয়েছে অমর একুশে নাট্যোৎসব। শিল্পকলা একাডেমি ও গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের যৌথ আয়োজনে গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে ১০ দিনের ‘অমর একুশে নাট্যোৎসব’। উৎসব চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হবে নাটকের প্রদর্শনী।
ভাষাশহীদদের প্রতি রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা নিবেদন
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সশরীরে উপস্থিত হয়ে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানালেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। একুশের প্রথম প্রহরে ভাষা আন্দোলনে জীবন উৎসর্গ করা বীরদের প্রতি জাতির পক্ষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন তাঁরা।
গত রাত ১২টা ১ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। রাষ্ট্রপতির পুষ্পস্তবক অর্পণের পর রাত ১২টা ১০ মিনিটে শহীদ মিনারে এসে পৌঁছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এর দুই মিনিট পর শহীদ মিনারের বেদিতে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন তিনি। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর কিছু সময় তিনি নীরবে দাঁড়িয়ে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।
সম্পর্কিত খবর

ভোটারের বয়স ১৬, প্রার্থীর ২৩ করার প্রস্তাব দেবে এনসিপি
নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে ভোটারের সর্বনিম্ন বয়স ১৬ বছর এবং নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বয়স ২৩ বছর করার প্রস্তাব দেবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। আজ রবিবার কমিশনের কার্যালয়ে সংস্কার প্রস্তাবের ওপর দলটির পক্ষ থেকে মতামত জানানোর সময় এই প্রস্তাব দেওয়া হবে।
গতকাল শনিবার রাজধানীর বাংলামোটরে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির যুগ্ম আহবায়ক এবং সংস্কার সমন্বয় কমিটির কো-অর্ডিনেটর সারোয়ার তুষার এ তথ্য জানান।
এ সময় সারোয়ার তুষার বলেন, ‘সংস্কার প্রস্তাবে বলা হয়েছে, নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীর ন্যূনতম বয়স ২১ বছর হতে হবে।
তিনি বলেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ছয়টি পদ্ধতিতে সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনার প্রস্তাব দিয়েছে। এর মধ্যে আমরা দুটি পদ্ধতিতে সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যৌক্তিক উপায় বলে মনে করেছি। একটি হচ্ছে নির্বাচনের আগে অধ্যাদেশ জারি করে সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনা করা।
১১১টি সংস্কারেও আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে জানিয়ে এনসিপির এই যুগ্ম আহবায়ক বলেন, ‘গতকাল (শুক্রবার) এক প্রতিবেদনে দেখতে পেলাম, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন বলেছে ১১১টি সুপারিশ কোনো রকম আলোচনা ছাড়াই সংস্কার করা সম্ভব। আমরা এ বিষয়ে কমিশনের কাছে জানতে চাইব, কিসের ভিত্তিতে ১১১টি সুপারিশ কোনো রকম আলোচনা ছাড়া সংস্কার করা সম্ভব। আমরা মনে করি, ১১১টি সুপারিশের মধ্যে অনেক সুপারিশ রয়েছে, যেগুলো সংস্কারের আগে আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। এ ছাড়া আমাদের সংস্কার সুপারিশমালার যে স্প্র্রেডশিট দেওয়া হয়েছে, সেখানে পুলিশ সংস্কার কমিশন ও স্থানীয় সংস্কার কমিশনের কোনো সুপারিশমালা নেই। আমরা এ বিষয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে জানতে চাইব।’
সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির সংস্কারবিষয়ক কমিটির পরিচয় করিয়ে দিয়ে সারোয়ার তুষার বলেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপ ও বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আলোচনার জন্য পাঁচ সদস্যের সংস্কারবিষয়ক সমন্বয় কমিটি গঠন করেছে এনসিপি। কমিটিতে সমন্বয়কের দায়িত্ব আমাকে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কমিটির আরো বকি চার সদস্য হলেন যুগ্ম আহবায়ক মনিরা শারমিন, জাবেদ রাসিন, যুগ্ম সদস্য সচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাত ও দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক আরমান হোসাইন।

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি
দ্বিতীয় দিনেও বিক্ষোভে উত্তাল রাজধানী
নিজস্ব প্রতিবেদক

গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে গতকাল শনিবার দ্বিতীয় দিনেও বিক্ষোভে উত্তাল ছিল ঢাকা। গতকাল রাজধানীর শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, প্রেস ক্লাব, মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ এবং গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করা হয়। কর্মসূচিগুলো পলন করে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও নাগরিক সংগঠন। অভিন্ন দাবিতে শনিবার দেশের নানা প্রান্তেও বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
গতকাল বিকেল ৩টার দিকে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে অবস্থিত জাতীয় জাদুঘরের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির ঢাকা মহানগর শাখার উদ্যোগে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘কোনো শান্তিপূর্ণ ঘটনার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের বিদায় হয়নি। হাজারো মানুষের রাজপথ ভেজানো রক্তের মধ্য দিয়ে এই খুনি-ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের বিদায় হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ‘সাত মাস পেরিয়ে গেছে, অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের ব্যাপারে কোনো বিচারিক কার্যক্রম শুরু করেনি। অন্তর্বর্তী সরকারকে বলব, দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে।’
সমাবেশে দলটির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আপনারা আওয়ামী লীগকে চিনতে পারেননি।
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের সব কিছু হবে আওয়ামী লীগকে রাষ্ট্রকাঠামোর বাইরে রেখে। আওয়ামী লীগের নাম, মার্কা ও আদর্শ এ দেশে রাজনীতি করার অধিকার হারিয়েছে।’
গণভোটের মাধ্যমে নিষিদ্ধের দাবি ইনকিলাব মঞ্চের : নির্বাহী আদেশে নয় বরং গণভোটের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ।
৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম, ঢাকা অবরোধের হুঁশিয়ারি : আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে জুলাই আন্দোলনে আহতদের সংগঠন ‘ওয়ারিয়ার্স অব জুলাই’। এ সময়ের মধ্যে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত না এলে ঢাকা শহর অবরোধের হুঁশিয়ারি দেয় তারা। গতকাল এক বিক্ষোভ মিছিল শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান নিয়ে এ ঘোষণা দেন সংগঠনটির নেতারা।
গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করে গণ অধিকার পরিষদ : আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করেছে গণ অধিকার পরিষদ। গতকাল সকাল সাড়ে ১১টার দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে দলটির ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার উদ্যোগে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কোনো দল নয়। এটি একটি খুনি মাফিয়া গণহত্যাকারী গোষ্ঠী।’
ছাত্র অধিকার পরিষদের বিক্ষোভ : আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ও গণহত্যার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ। গতকাল বিকেল ৩টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এই বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় সংগঠনটির পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের নিন্দা জানানো হয়। বিক্ষোভ মিছিলে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, ‘যে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার জন্য দুই হাজারেরও অধিক মানুষকে খুন করতে পারে, সে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসার জন্য আমাদের দুই লাখেরও অধিক বিপ্লবী ভাই-বোনকে খুন করতে ন্যূনতম কুণ্ঠা বোধ করবে না।’
শাহবাগ মোড়ে জুলাই মঞ্চের অবস্থান : আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে জুলাই মঞ্চ। গতকাল বিকেল ৩টার দিকে জুলাই মঞ্চের ব্যানারে দাঁড়ানো শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড়ে সড়কের মাঝখানে অবস্থান নেন। তাঁরা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে নানা স্লোগান দেন।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, কোনো চক্রান্ত করে অভ্যুত্থানের খুনি দল আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করা যাবে না। ছাত্র-জনতার মধ্যে ছোটখাটো নানা বিষয়ে মতানৈক্য থাকলেও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে সবার মত একই।
এদিকে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগে রাত পৌনে ৮টার দিকে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে মশাল মিছিল ও জুতা নিক্ষেপ কর্মসূচি পালন করা হয়।

রোহিঙ্গাবোঝাই নৌকাডুবি
চার মরদেহ এবং ২৫ জনকে জীবিত উদ্ধার
টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি

মায়ানমার থেকে নৌকায় চেপে সাগর পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময় রোহিঙ্গাদের বহন করা একটি নৌকা ডুবে গেছে। গতকাল শনিবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপসংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বিজিবির তত্পরতায় ২৫ রোহিঙ্গা জীবিত উদ্ধার হয়েছে। তবে নিখোঁজ রোহিঙ্গার সঠিক সংখ্যা জানা না গেলেও সন্ধ্যা পর্যন্ত চারজনের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে।
টেকনাফ-২ বিজিবির ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান জানান, ‘রোহিঙ্গাদের একটি দল অবৈধ উপায়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময় শাহপরীর দ্বীপ পশ্চিমপাড়াসংলগ্ন সাগরে নৌকার তলা ফেটে ডুবে যায়। নৌকাডুবির খবর পেয়ে সৈকতের পাশের স্থানে কর্তব্যরত বিজিবি সদস্যরা স্থানীয় জেলেদের নৌকা নিয়ে উদ্ধার করতে নেমে ২৫ জনকে জীবিত উদ্ধার করতে সক্ষম হন। এ সময় উদ্ধার তত্পরতায় অংশ নেওয়া এক বিজিবি সদস্য নিখোঁজ হন।’
শাহপরীর দ্বীপ মাঝেরপাড়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ আরমান বলেন, ‘ভোরে ফজরের নামাজ পড়ে সৈকতের দিকে হাঁটতে যাই।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দীন বলেন, ‘অনুপ্রবেশের সময় সাগরে একটি রোহিঙ্গাবোঝাই নৌকাডুবির ঘটনা ঘটেছে। উদ্ধার তত্পরতায় অংশ নিয়ে বিজিবির এক সদস্য নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে জেনেছি। সাগরে উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
এদিকে নৌকাডুবির ঘটনায় গতকাল শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সাবরাং ও শাহপরীর দ্বীপ সৈকত এলাকায় চারজনের মরদেহ ভেসে আসে। তাদের মধ্যে তিনটি নারীর এবং একটি শিশুর।
শাহপরীর দ্বীপ মাঝেরপাড়া বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল গফুর জানান, রোহিঙ্গাবোঝাই নৌকাটি টেকনাফ এলাকার। সম্ভবত তারা ভাড়ায় রোহিঙ্গা আনতে রাখাইনে যায়। যেসব নৌকা রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের সঙ্গে জড়িত তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা দরকার।
টেকনাফের শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘রোহিঙ্গারা রাখাইনে ফিরে যেতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। সেখানে নতুন করে কেন রোহিঙ্গারা রাখাইন ছেড়ে বাংলাদেশে আসছে তা জানি না। আমাদের আত্মীয়-স্বজন যারা এখনো কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করে রাখাইনে রয়ে গেছে তাদের আমরা বারবার বলছি, রাখাইন ছেড়ে বাংলাদেশে না আসতে।’
বিজিবিকে নিয়ে গুজব ও অপপ্রচার: এদিকে রোহিঙ্গাবোঝাই নৌকাডুবির ঘটনায় এক বিজিবি সদস্য নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার ও গুজব ছড়িয়েছে একটি চক্র। বলা হচ্ছে, গত দুই দিন হয় ৩৩ জন বিজিবি সদস্য নাফ নদীতে মিশনে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছে। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিজিবির দৃষ্টি আকর্ষণ হলে বিজিবির পক্ষ থেকে প্রেরিত এক বার্তায় এ ধরনের গুজব ও অপপ্রচারের প্রতিবাদ জানানো হয়।
বিজিবি প্রচারিত বার্তায় উল্লেখ করা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত তথ্যটি ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। প্রকৃত ঘটনা হলো—২২ মার্চ শনিবার ভোররাতে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমপাড়া ঘাটের কাছ দিয়ে রোহিঙ্গাবোঝাই একটি নৌকা অবৈধ উপায়ে সাগরপথে বাংলাদেশে আসার সময় প্রবল স্রোতের কারণে নৌকাটি উল্টে যায়। খবর পেয়ে সৈকতের পার্শ্ববর্তী স্থানে কর্তব্যরত বিজিবি সদস্যরা তত্ক্ষণাত্ স্থানীয় জেলেদের সঙ্গে নিয়ে রোহিঙ্গাদের উদ্ধারের জন্য ছুটে যান এবং ২৪ জন রোহিঙ্গাকে জীবিত উদ্ধার করতে সক্ষম হন। উদ্ধারকার্য চলাকালে সমুদ্র উত্তাল থাকায় এবং অন্ধকার রাতের কারণে একজন বিজিবি সদস্য সম্ভবত পা পিছলে পড়ে সমুদ্রে নিখোঁজ হন।
পরে ডুবে যাওয়া নৌকাসহ ২৪ জন রোহিঙ্গাকে জীবিত উদ্ধার করেছে বিজিবি। সম্পূর্ণ দুর্ঘটনাটি অত্যন্ত হূদয়বিদারক এবং বর্তমানে নিখোঁজ একজন বিজিবি সদস্যসহ অন্য রোহিঙ্গাদের উদ্ধার কার্যক্রম সর্বান্তকরণে অব্যাহত রয়েছে।

সংস্কার প্রস্তাবে অনির্বাচিতদের ক্ষমতায়নের চেষ্টা দেখছে বিএনপি
নিজস্ব প্রতিবেদক

সংবিধান ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ পর্যালোচনা করে কিছু প্রশ্ন তুলেছে বিএনপি। দলটির মনে হয়েছে, সংস্কার প্রস্তাবে অনির্বাচিত ব্যক্তিদের সাংবিধানিকভাবে ক্ষমতায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে। এখানে রাজনীতিবিদদের অপাঙক্তেয় এবং অনির্বাচিত লোকদেরই দেশ পরিচালনার সুযোগ সৃষ্টি করছে।
গতকাল শনিবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংস্কার সুপারিশ তুলে ধরে এই কথা বলা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘ন্যাশনাল কনস্টিটিউশনাল কাউন্সিল—এনসিসি নামে একটা ফ্রেমের প্রস্তাব করা হয়েছে, সেটার গঠন প্রক্রিয়া ও কার্যপরিধি বর্ণনা করা হয়েছে, তাতে সব স্তরে স্তরে দেখা যায়, অনির্বাচিত বিভিন্ন ব্যক্তিরা এসব কার্যক্রম পরিচালনা করবেন এবং সাংবিধানিকভাবে তাদের ক্ষমতায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে। তাতে দেখা যাবে নির্বাচিত প্রতিনিধির আর কোনো গুরুত্ব নেই। প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলি রাষ্ট্রের অনির্বাচিত প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে সম্পন্ন হবে যদি এগুলো গৃহীত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে সর্বোচ্চ নিরপেক্ষ অবস্থায় বজায় রাখতে হবে। কোনো মহলের রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের এজেন্ডা যেন সরকারের কর্মপরিকল্পনার অংশ না হয়, সেদিকেও সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, সুপারিশমালায় সাংবিধানিক কমিশনসহ (এনসিসি) নতুন নতুন বিভিন্ন কমিশনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব কমিশনের এখতিয়ার, কর্মকাণ্ডের যে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে তাতে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে, আইন বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগকে যতটা সম্ভব অবমূল্যায়ন করা এবং ক্ষমতাহীন করাই উদ্দেশ্য।
তিনি বলেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের স্প্রেড শিটের অবস্থা ও কমিশনের সদস্যদের বিভিন্ন সময়ের বক্তব্য ও বিশেষ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের বক্তব্য বিবৃতির মধ্যে মিল পাওয়া যায় যাতে জনমনে প্রশ্নের জন্ম হতে পারে যে, সব বিষয়গুলো যেন একটি পূর্বপরিকল্পনার অংশ, যা গণতন্ত্রের স্বার্থের পক্ষে কি না বলা মুশকিল। সুপারিশমালা পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয় যে, এতে ভবিষ্যতে অনির্বাচিত ব্যক্তিদের রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে নিয়োগের অযৌক্তিক প্রচেষ্টা রয়েছে, যা অনভিপ্রেত। রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক চরিত্র, জনগণের মালিকানার প্রতিফলন হয় নির্বাচিত সংসদ এবং জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে। কিন্তু সংবিধান ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশসগুলো পর্যালোচনা করলে প্রতীয়মান হয়, রাজনীতিবিদরা অপাঙতেয় এবং অনির্বাচিত লোকদেরই দেশ পরিচালনার সুযোগ সৃষ্টি করাই শ্রেয়।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কর্তৃক প্রেরিত স্প্রেডশিটে টিক চিহ্ন দিতে বলা হয়েছে। তাতে একটি বিষয় প্রতিভাত হয়েছে, যে বিষয়গুলো প্রস্তাবাকারে আসতে পারত তা প্রস্তাবে না রেখে হ্যাঁ, না, উত্তর দিতে বলা হয়েছে। যেমন, প্রস্তাবগুলো গণপরিষদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন চাই কি না? হ্যাঁ অথবা না বলুন। কিন্তু প্রথমে সিদ্ধান্ত আসতে হবে যে, গণপরিষদের প্রস্তাবে আমরা একমত কি না? একইভাবে ‘গণভোট’, ‘গণপরিষদ এবং আইন সভা’ হিসেবে নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন চাই কি না ইত্যাদি হ্যাঁ-না বলুন।
তিনি বলেন, সংবিধানের প্রস্তাবনার মতো অতিগুরুত্বপূর্ণ বিষয় সংস্কার কমিশনের সুপারিশে থাকলেও তা স্প্রেডশিটে উল্লেখ করা হয়নি। স্প্রেডশিটে ৭০টির মতো প্রস্তাব উল্লেখ করা হলেও মূল প্রতিবেদনে সুপারিশসংখ্যা প্রায় ১২৩টির মতো। একইভাবে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের মূল প্রতিবেদনে ১৫০টির মতো সুপারিশ তুলে ধরা হলেও স্প্রেডশিটে আছে মাত্র ২৭টি বিষয়। তার মধ্যে বেশির ভাগই সংবিধান সংস্কারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তাই আমরা মনে করছি, স্প্রেডশিটের সঙ্গে মূল সুপারিশমালার ওপর আমাদের মতামত সংযুক্ত করে দিলে বিভ্রান্তি এড়ানো যাবে।
সংস্কার আগে না নির্বাচন পরে, কিংবা নির্বাচন আগে না সংস্কার পরে এ ধরনের অনাবশ্যক বিতর্কের কোনো অবকাশ নেই বলে মনে করেন তিনি। মির্জা ফখরুল বলেন, যেহেতু সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, সংস্কার ও নির্বাচন প্রক্রিয়া দুটিই একই সঙ্গে চলতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি চার্টার অব রিফর্ম (সংস্কার সনদ) তৈরি হতেই পারে, নির্বাচিত সরকার পরবর্তী সময়ে যা বাস্তবায়ন করবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকারের কোনো কোনো উপদেষ্টা ক্ষমতায় থেকে রাজনৈতিক দল গঠন প্রক্রিয়ায় প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িত থাকায় জনমনে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় প্রশাসন যন্ত্রকে ব্যবহার করার নানা প্রকার লক্ষণ ও প্রমাণ ক্রমেই প্রকাশ পাচ্ছে, যা দেশ ও গণতন্ত্রের জন্য মোটেই সুখকর নয়।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, উপযুক্ত সময় যখন হবে, তখনই তারেক রহমান দেশে ফিরবেন। দেশে ফেরার বিষয়ে আমরা এখনো সুনির্দিষ্ট কোনো দিনক্ষণ নির্ধারণ করিনি। আমাদের যখন মনে হবে যে, উপযুক্ত সময় সেই সময়ে তিনি (তারেক রহমান) আসবেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, সালাহউদ্দিন আহমদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও সেলিমা রহমান উপস্থিত ছিলেন।