এটা নিয়ে কতটুকু অর্জন হবে তা প্রশ্নের দাবি রাখে। এ বিষয়ে বিএনপি একমত নয়।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বিষয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘দুদক নিয়ে ২০টির মতো প্রস্তাবনা ছিল। এর মধ্যে আমরা ১১টিতে সরাসরি একমত। আর সাত-আটটিতে আমরা মন্তব্যসহ নীতিগতভাবে একমত। শুধু একটি প্রস্তাবে আমরা মন্তব্যসহ ভিন্নমত পোষণ করেছি।’
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘প্রশাসন সংস্কারে আমরা যেসব প্রস্তাব পেয়েছি তার প্রায় অর্ধেক প্রস্তাবে একমত। সেখানে ২৬টি প্রস্তাবনা রয়েছে। বাকি অর্ধেকে ভিন্নমত রয়েছে।’
বিচার বিভাগ সংস্কার প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘বিচার বিভাগের ক্ষেত্রে সব প্রস্তাবে আমরা একমত।’
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে ২৭ সুপারিশের মধ্যে বেশির ভাগ প্রস্তাব সংবিধান সংশোধনের সঙ্গে সম্পৃক্ত উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, ‘এটা আমরা ঠিক বুঝতে পারিনি। নির্বাচনব্যবস্থাসংক্রান্ত সংস্কারের প্রস্তাবে কিছু কিছু সংবিধান সংশ্লিষ্টতা আছে, কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় নির্বাচন সংস্কার কমিশনের কাজ নয় যেটা রিপোর্টে এসেছে। একটি বিষয়ে আমরা মতামত পজিটিভলি দিয়েছি, কিন্তু নির্বাচন বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের কিছু ক্ষমতা খর্ব করার প্রস্তাব দিয়েছে যেগুলো আমরা মনে করি নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ। আমরা মনে করি জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডি নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারে থাকা দরকার।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ বিষয়টা নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক এখতিয়ার। আমরা সরকারকে আহ্বান জানাব, অধ্যাদেশের মাধ্যমে সংশোধনী দিয়ে নির্বাচন কমিশনের হাতে ডিলিমিটেশনটা রাখা হোক। আলাদা কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে রাখার বিষয়টি আমরা নাকচ করছি।’
সালাহউদ্দিন আহমদ আরো বলেন, ‘মৌলিক অধিকার বা মূলনীতির ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু আমরা প্রস্তাব করেছি, সংবিধানের যেসব ধারা রয়েছে তার মধ্যে বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে হয়তো মূলনীতির ক্ষেত্রে সংশোধনী আনা যায়। আমরা আমাদের পক্ষ থেকে আগের অবস্থা বহাল রাখার জন্য বলেছি।’ সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, রাষ্ট্রের মৌলিক অধিকার এনশিউর করতে হবে রাষ্ট্রকে।
এনসিপি কমিশনের ১১৩টি প্রস্তাবে পুরোপুরি একমত : জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দেওয়া ১৬৬টি প্রস্তাবের মধ্যে ১১৩টিতে পুরোপুরি একমত পোষণ করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। গতকাল রবিবার দুপুরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে দেওয়া লিখিত মতামতে এনসিপি আরো জানিয়েছে, তারা ২৯টি প্রস্তাবের আংশিক একমত এবং ২২টি প্রস্তাবে একমত নয়।
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার তুষার সাংবাদিকদের বলেন, ‘পুলিশ সংস্কার কমিশন ও স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন বিষয়ে আমাদের কাছে স্প্রেডশিট পাঠানো হয়নি। এই রিপোর্টগুলো আমরা দেখতে পাইনি। এ ব্যাপারে কমিশনের অবস্থান জানতে চেয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের প্রস্তাব এসেছে। এটা আমরা সমর্থন করেছি। অন্তর্বর্তী সরকারের বিষয় রয়েছে। আমরা বলেছি, এটা হবে নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকার। এ সরকারের মেয়াদ ৭০ থেকে ৭৫ দিন হবে। এনসিপির বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উঠলে সেটা তদন্ত করতে পারবে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল। যে পরিস্থিতিই হোক না কেন, নির্বাচনকালীন সময়ে জরুরি অবস্থা জারি করা যাবে না বলে আমরা প্রস্তাব করেছি।’
সরোয়ার তুষার বলেন, ‘আমরা বলেছি তরুণ-তরুণীদের বয়সসীমা সর্বোচ্চ কত হবে, তা নির্ধারণ করতে হবে। সেটা ৩৫ বছর পর্যন্ত হতে পারে। আর প্রার্থী হওয়ার বয়স ন্যূনতম ২৩ বছর হবে। ডেপুটি স্পিকার দুজনের কথা বলা হয়েছিল, আমরা বলেছি একজন হবেন এবং তা বিরোধী দল থেকে হওয়া উচিত।’
এনসিপি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুই কক্ষবিশিষ্ট সংসদের বিষয়ে একমত পোষণ করেছে দলটি। তবে তারা বলেছে, নির্বাচনের আগেই উচ্চকক্ষের প্রার্থী কারা, তা দলগুলোকে ঘোষণা করতে হবে। কারণ, নির্বাচনে একজন ভোটারের জানার অধিকার আছে, উচ্চকক্ষে কারা যাচ্ছেন।
জরুরি ভিত্তিতে নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কার চায় সিপিবি : জরুরিভাবে এখনই দেশের নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারের পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে লিখিত মতামতে পার্টির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আপনাদের পাঠানো ‘স্প্রেডশিট’-এ বেশির ভাগ প্রশ্নই অস্বচ্ছ, অসম্পূর্ণ, একপেশে ও ব্যাখ্যার দাবি করে। এমতাবস্থায় সেসব বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা ব্যতিরেকে এসব প্রশ্নের বিষয়ে টিক চিহ্ন দিয়ে মতামত দেওয়া সম্ভব কিংবা যথাযথ হবে বলে আমরা মনে করছি না। যে কারণে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।
গতকাল রবিবার দুপুরে সিপিবি সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্সের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে লিখিত মতামত জমা দেয়। এ সময় দলের সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ, সম্পাদক ডা. সাজেদুল হক রুবেলসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘যে প্রস্তাব আমরা পেয়েছি এসবের অনেক বিষয়ে আমরা একমত হলেও কোনো কোনো বিষয়ে এমনকি মৌলিক কিছু বিষয়ে আমাদের দ্বিমত ও আপত্তি আছে। এর বিকল্প অথবা নতুন প্রস্তাবও আমাদের আছে।’