রাষ্ট্রের নাম বদলে আপত্তি বিএনপির বেশির ভাগ প্রস্তাবে একমত এনসিপি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
রাষ্ট্রের নাম বদলে আপত্তি বিএনপির বেশির ভাগ প্রস্তাবে একমত এনসিপি

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবে ১৯৭১ ও ২০২৪ সালকে এক কাতারে আনা এবং রাষ্ট্রের সাংবিধানিক নাম পরিবর্তন করার প্রস্তাবে আপত্তি জানিয়েছে বিএনপি। দলের পক্ষ থেকে কমিশনের বেশ কয়েকটি প্রস্তাবে একমতের পাশাপাশি কিছু দ্বিমত ও বেশ কিছু নতুন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দেওয়া ১৬৬টি প্রস্তাবের মধ্যে ১১৩টিতে পুরোপুরি একমত পোষণ করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। তবে কিছু প্রস্তাবে দ্বিমতও করেছে দলটি।

এদিকে সিপিবি জরুরি ভিত্তিতে নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে। গতকাল ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে দলগুলো পৃথকভাবে নিজেদের মত, দ্বিমত ও নতুন প্রস্তাব জমা দেয়।

 

বিএনপির প্রস্তাবে যা রয়েছে

গতকাল রবিবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে লিখিতভাবে দলীয় মতামত জমা দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, সংবিধানের প্রস্তাবনা স্প্রেডশিটে উল্লেখ করেনি। এটি উচিত ছিল। সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো প্রস্তাবনা। সেটি পুরোপুরি পরিবর্তন বা সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

অনেকটা পুনর্লিখনের মতো। সেখানে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধের সঙ্গে ’২৪-এর অভ্যুত্থানকে এক কাতারে আনা হয়েছে। এটা সমুচিত বলে বিএনপি মনে করে না। বিএনপি পঞ্চদশ সংশোধনের আগের অবস্থায় যে প্রস্তাবনা ছিল সেটির পক্ষে।

সংবিধানে রাষ্ট্রের নাম পরিবর্তনের বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ দীর্ঘদিনের প্র্যাকটিসের মাধ্যমে রাষ্ট্রের নাম মেনে নিয়েছে।

এটা নিয়ে কতটুকু অর্জন হবে তা প্রশ্নের দাবি রাখে। এ বিষয়ে বিএনপি একমত নয়।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বিষয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘দুদক নিয়ে ২০টির মতো প্রস্তাবনা ছিল। এর মধ্যে আমরা ১১টিতে সরাসরি একমত। আর সাত-আটটিতে আমরা মন্তব্যসহ নীতিগতভাবে একমত। শুধু একটি প্রস্তাবে আমরা মন্তব্যসহ ভিন্নমত পোষণ করেছি।’

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘প্রশাসন সংস্কারে আমরা যেসব প্রস্তাব পেয়েছি তার প্রায় অর্ধেক প্রস্তাবে একমত। সেখানে ২৬টি প্রস্তাবনা রয়েছে। বাকি অর্ধেকে ভিন্নমত রয়েছে।’

বিচার বিভাগ সংস্কার প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘বিচার বিভাগের ক্ষেত্রে সব প্রস্তাবে আমরা একমত।’

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে ২৭ সুপারিশের মধ্যে বেশির ভাগ প্রস্তাব সংবিধান সংশোধনের সঙ্গে সম্পৃক্ত উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, ‘এটা আমরা ঠিক বুঝতে পারিনি। নির্বাচনব্যবস্থাসংক্রান্ত সংস্কারের প্রস্তাবে কিছু কিছু সংবিধান সংশ্লিষ্টতা আছে, কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় নির্বাচন সংস্কার কমিশনের কাজ নয় যেটা রিপোর্টে এসেছে। একটি বিষয়ে আমরা মতামত পজিটিভলি দিয়েছি, কিন্তু নির্বাচন বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের কিছু ক্ষমতা খর্ব করার প্রস্তাব দিয়েছে যেগুলো আমরা মনে করি নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ। আমরা মনে করি জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডি নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারে থাকা দরকার।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ বিষয়টা নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক এখতিয়ার। আমরা সরকারকে আহ্বান জানাব, অধ্যাদেশের মাধ্যমে সংশোধনী দিয়ে নির্বাচন কমিশনের হাতে ডিলিমিটেশনটা রাখা হোক। আলাদা কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে রাখার বিষয়টি আমরা নাকচ করছি।’

সালাহউদ্দিন আহমদ আরো বলেন, ‘মৌলিক অধিকার বা মূলনীতির ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু আমরা প্রস্তাব করেছি, সংবিধানের যেসব ধারা রয়েছে তার মধ্যে বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে হয়তো মূলনীতির ক্ষেত্রে সংশোধনী আনা যায়। আমরা আমাদের পক্ষ থেকে আগের অবস্থা বহাল রাখার জন্য বলেছি।’ সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, রাষ্ট্রের মৌলিক অধিকার এনশিউর করতে হবে রাষ্ট্রকে।

এনসিপি কমিশনের ১১৩টি প্রস্তাবে পুরোপুরি একমত  : জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দেওয়া ১৬৬টি প্রস্তাবের মধ্যে ১১৩টিতে পুরোপুরি একমত পোষণ করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। গতকাল রবিবার দুপুরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে দেওয়া লিখিত মতামতে এনসিপি আরো জানিয়েছে, তারা ২৯টি প্রস্তাবের আংশিক একমত এবং ২২টি প্রস্তাবে একমত নয়।

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার তুষার সাংবাদিকদের বলেন, ‘পুলিশ সংস্কার কমিশন ও স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন বিষয়ে আমাদের কাছে স্প্রেডশিট পাঠানো হয়নি। এই রিপোর্টগুলো আমরা দেখতে পাইনি। এ ব্যাপারে কমিশনের অবস্থান জানতে চেয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের প্রস্তাব এসেছে। এটা আমরা সমর্থন করেছি। অন্তর্বর্তী সরকারের বিষয় রয়েছে। আমরা বলেছি, এটা হবে নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকার। এ সরকারের মেয়াদ ৭০ থেকে ৭৫ দিন হবে। এনসিপির বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উঠলে সেটা তদন্ত করতে পারবে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল। যে পরিস্থিতিই হোক না কেন, নির্বাচনকালীন সময়ে জরুরি অবস্থা জারি করা যাবে না বলে আমরা প্রস্তাব করেছি।’

সরোয়ার তুষার বলেন, ‘আমরা বলেছি তরুণ-তরুণীদের বয়সসীমা সর্বোচ্চ কত হবে, তা নির্ধারণ করতে হবে। সেটা ৩৫ বছর পর্যন্ত হতে পারে। আর প্রার্থী হওয়ার বয়স ন্যূনতম ২৩ বছর হবে। ডেপুটি স্পিকার দুজনের কথা বলা হয়েছিল, আমরা বলেছি একজন হবেন এবং তা বিরোধী দল থেকে হওয়া উচিত।’

এনসিপি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুই কক্ষবিশিষ্ট সংসদের বিষয়ে একমত পোষণ করেছে দলটি। তবে তারা বলেছে, নির্বাচনের আগেই উচ্চকক্ষের প্রার্থী কারা, তা দলগুলোকে ঘোষণা করতে হবে। কারণ, নির্বাচনে একজন ভোটারের জানার অধিকার আছে, উচ্চকক্ষে কারা যাচ্ছেন।

জরুরি ভিত্তিতে নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কার চায় সিপিবি : জরুরিভাবে এখনই দেশের নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারের পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে লিখিত মতামতে পার্টির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আপনাদের পাঠানো ‘স্প্রেডশিট’-এ বেশির ভাগ প্রশ্নই অস্বচ্ছ, অসম্পূর্ণ, একপেশে ও ব্যাখ্যার দাবি করে। এমতাবস্থায় সেসব বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা ব্যতিরেকে এসব প্রশ্নের বিষয়ে টিক চিহ্ন দিয়ে মতামত দেওয়া সম্ভব কিংবা যথাযথ হবে বলে আমরা মনে করছি না। যে কারণে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।

গতকাল রবিবার দুপুরে সিপিবি সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্সের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে লিখিত মতামত জমা দেয়। এ সময় দলের সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ, সম্পাদক ডা. সাজেদুল হক রুবেলসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘যে প্রস্তাব আমরা পেয়েছি এসবের অনেক বিষয়ে আমরা একমত হলেও কোনো কোনো বিষয়ে এমনকি মৌলিক কিছু বিষয়ে আমাদের দ্বিমত ও আপত্তি আছে। এর বিকল্প অথবা নতুন প্রস্তাবও আমাদের আছে।’

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

ক্রিকেটার সাকিবের সম্পদ জব্দের আদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
ক্রিকেটার সাকিবের সম্পদ জব্দের আদেশ
সাকিব আল হাসান

চার কোটি টাকার চেক ডিজ-অনার মামলায় জাতীয় দলের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের সম্পদ জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল সোমবার ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমানের আদালত এ আদেশ দেন। আদালতের পেশকার রিপন মিয়া এ তথ্য জানিয়েছেন।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, বাদীপক্ষ সাকিবের সম্পদ জব্দ চেয়ে আবেদন করেন।

শুনানি শেষে আদালত এ আদেশ দেন।

এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন সাকিব আল হাসান অ্যাগ্রো ফার্মের ম্যানেজিং ডিরেক্টর গাজী শাহাগীর হোসাইন, সাকিব আল হাসান অ্যাগ্রো ফার্মের ডিরেক্টর ইমদাদুল হক ও ডিরেক্টর মালাইকা বেগম। তাঁদের মধ্যে মালাইকা বেগম মারা গেছেন। অন্য দুজন জামিনে রয়েছেন।

এর আগে গত ১৫ ডিসেম্বর ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুল হকের আদালতে বেসরকারি আইএফআইসি ব্যাংকের রিলেশনশিপ অফিসার মো. শাহিবুর রহমান বাদী হয়ে মামলা করেন। এ মামলার পর তাঁকে আদালতে হাজিরের জন্য ১৯ জানুয়ারি দিন ধার্য করা হয়। তবে ওই দিন সাকিব ও গাজী শাহাগীর হোসাইন আদালতে হাজির না হওয়ায় তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ২৪ মার্চ দিন ধার্য করেন আদালত।

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, সাকিব আল হাসান অ্যাগ্রো ফার্ম লিমিটেড-এর চেয়ারম্যান হিসেবে সাকিব দায়িত্ব পালন করছেন। কম্পানিটির কার্যক্রম সাতক্ষীরায়। কম্পানিটি ২০১৭ সালে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসেবে এক কোটি এবং টার্ম লোন হিসেবে দেড় কোটি টাকা বনানী শাখার আইএফআইসি ব্যাংক থেকে নেন। পরে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসেবে নেওয়া টাকা সময়মতো পরিশোধ না করায় ব্যাংকটি এই টাকা মেয়াদি লোনে পরিবর্তন করে। টাকা ফেরত চেয়ে কয়েক দফা নোটিশ দেওয়ার পর কম্পানিটি ব্যাংককে চলতি বছরের ৪ সেপ্টেম্বর চার কোটি ১৪ লাখ টাকার দুটি চেক দেয়।

তবে সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্টে যথেষ্ট টাকা না থাকায় চেক বাউন্স করে। পরে ঋণের টাকা ফেরত চেয়ে আইএফআইসি ব্যাংকের বনানী শাখা নেগোশিয়েবল ইনস্ট্রুুমেন্টস অ্যাক্ট অনুযায়ী দৈনিক পত্রিকার মাধ্যমে লিগ্যাল নোটিশ পাঠায়। তবে নোটিশ পাঠানোর ৩০ দিন পার হলেও তা না পেয়ে আদালতে এসে মামলা করে।

 

 

মন্তব্য

হান্নান মাসুদের সভায় বিএনপির হামলা

    প্রতিবাদে এনসিপির বিক্ষোভ
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
হান্নান মাসুদের সভায় বিএনপির হামলা
হামলায় আহত আব্দুল হান্নান মাসুদ

নোয়াখালীর হাতিয়ায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদের পথসভায় বিএনপির নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়েছেন। এতে হান্নান মাসুদসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।

গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় জাহাজমারা ইউনিয়নের জাহাজমারা বাজারে এ ঘটনা ঘটে।

হামলার প্রতিবাদে গতকাল রাত ১২টায় ঢাকায় তাত্ক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল করেছে এনসিপি।

বাংলামোটর থেকে শুরু হয়ে মিছিলটি শাহবাগ ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের মোড় ঘুরে আবার বাংলামোটরে এসে শেষ হয়।

এনসিপির নেতারা এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও তাদের রাজনৈতিক দল থেকে বহিষ্কারের দাবি জানান।

হামলার ঘটনার পর হান্নান মাসুদ বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে বিএনপি নামধারী সন্ত্রাসীরা হাতিয়ায় চাঁদাবাজির সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। আমার ঘোষণা ছিল এসব চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে।

সেই বিএনপি নামধারী চাঁদাবাজরা আজ আমার পথসভায় হামলা চালিয়েছে। হামলায় ৫০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে তিনি দাবি করেন।

অভিযোগের বিষয়ে হাতিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী তানভীর আহমেদ রাজিব বলেন, হান্নান মাসুদ আওয়ামী লীগের পদধারী পলাতক সন্ত্রাসীদের নিয়ে জাহাজমারা বাজারে মিছিল করছিলেন দেখে বিএনপি নেতাকর্মীরা তাতে বাধা দেন। শুনেছি এ সময় হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে।

মন্তব্য

শহীদ আবু সাঈদের বাবাকে সেনাপ্রধানের আর্থিক সহায়তা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
শহীদ আবু সাঈদের বাবাকে সেনাপ্রধানের আর্থিক সহায়তা
জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে রংপুরের আলোচিত শহীদ আবু সাঈদের বাবাকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। গতকাল ঢাকা সেনানিবাসে। ছবি : আইএসপিআর

গত জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে রংপুরের আলোচিত শহীদ আবু সাঈদের বাবাকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন
সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। সোমবার (২৪ মার্চ) সেনানিবাসে আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেনের হাতে আর্থিক সহায়তা তুলে দেন সেনাপ্রধান।

গত বছরের ১৬  জুলাই রংপুরে আন্দোলন চলাকালে নিরস্ত্র অবস্থায় পুলিশের গুলিতে শহীদ হন আবু সাঈদ।

গত ১০ ডিসেম্বর শহীদ আবু সাঈদের বাবা হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তাঁকে জরুরি ভিত্তিতে সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারের মাধ্যমে রংপুর থেকে সিএমএইচ ঢাকায় আনা হয় এবং উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন।

এর আগে রবিবার জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের সম্মানে আয়োজিত ইফতার মাহফিলে সেনাবাহিনী প্রধানের আমন্ত্রণে আবু সাঈদের বাবাও উপস্থিত ছিলেন।

 

মন্তব্য

বন্ধ হয়ে যাচ্ছে একাত্তরের বধ্যভূমি সংরক্ষণ প্রকল্প

    সাড়ে ৬ বছরে কাজের অগ্রগতি মাত্র ১৫ শতাংশ ২৮১টির মধ্যে কাজ শেষ ৪৩টির আসছে জুনের মধ্যে শেষ হবে আরো ১২টির কাজ
খায়রুল কবির চৌধুরী
খায়রুল কবির চৌধুরী
শেয়ার
বন্ধ হয়ে যাচ্ছে একাত্তরের বধ্যভূমি সংরক্ষণ প্রকল্প

জুলাই বিপ্লবে ক্ষমতার পালাবদলের পর বন্ধ হয়ে যাচ্ছে একাত্তরের বধ্যভূমি সংরক্ষণ প্রকল্প। মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক নির্বিচার গণহত্যার সাক্ষী হিসেবে ২৮১টি বধ্যভূমি সংরক্ষণে স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর ২০১৮ সালে চালু হওয়া এ প্রকল্পটি জমি অধিগ্রহণসহ নানা কারণে বন্ধ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে সরকার। তবে সরকারের এমন সিদ্ধান্তে হতাশা প্রকাশ করেছেন মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁরা বলছেন, ইতিহাস রক্ষার খাতিরেই এই বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণ করা রাষ্ট্রের অবশ্য কর্তব্য।

মন্ত্রণালয় সূত্র ও প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, শুরু থেকেই ভূমি অধিগ্রহণে জটিলতাসহ বেশ কিছু সমস্যার কারণে প্রকল্পটি এগিয়েছে শামুকের গতিতে। গত সাড়ে ছয় বছরে মাত্র ৪৩টি বধ্যভূমির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। ২০১৮ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পটির মেয়াদ চলতি বছরের জুনে শেষ হওয়ার কথা।

বর্তমানে প্রকল্পটির অধীনে ৯টি বধ্যভূমির কাজ চলমান রয়েছে, আরো তিনটির কাজ শুরু হবে।

অর্থাৎ সব মিলিয়ে ২৮১টির মধ্যে ৫৫টি বধ্যভূমি সংরক্ষণের মধ্য দিয়ে প্রকল্পটির সমাপ্তি টানা হচ্ছে।

প্রকল্প পরিচালক ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, এটি ক্লোজ (বন্ধ) করে দেওয়া হচ্ছে। আমাদের টার্গেট ছিল (বন্ধের আগে) ৫৭টি বধ্যভূমির কাজ শেষ করা। কিন্তু ৫৫টা করেই বন্ধ করে দেওয়া হবে।

আগামী জুনের মধ্যেই শেষ করা হবে। শুধু রায়েরবাজার বধ্যভূমির কাজ শেষ করতে ডিসেম্বর লেগে যাবে।

এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম কালের কণ্ঠকে বলেন, যেসব বধ্যভূমি আমরা নিরঙ্কুশ পেয়েছি সেগুলোর কাজ শেষ হবে। আর যেগুলোর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে সেগুলো আমরা বাতিল করেছি। একজন লোক জানে তার জমিতে বধ্যভূমি আছে।

কিন্তু যদি এটা (জমি) দামি জমি হয়, তাহলে তার কাছে এর (বধ্যভূমি) কোনো পবিত্রতা বা ভ্যালু নেই।

তাহলে কি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ আকর এসব বধ্যভূমি আর সংরক্ষণ করা হবে না? এমন প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, মানুষের জায়গা অধিগ্রহণ করে সরকার এটা সংরক্ষণ করবে না। স্বেচ্ছায় যদি কেউ জমি দেয় তাহলে আমরা এটা করব।

২০১৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রায় ৪৪২ কোটি (৪৪২ কোটি ৪০ লাখ ১৩ হাজার) টাকার প্রকল্পটির বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছিল ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত। মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের এই প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী সংস্থা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে গণপূর্ত অধিদপ্তর।

এখন পর্যন্ত প্রকল্পটির মেয়াদ বেড়েছে দুই দফায়। কাজের তেমন অগ্রগতি না থাকায় ২০২১ সালে প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত করা হয়। ২০২৩ সালের মধ্যেও কাজ শেষ না হওয়ায় দ্বিতীয় দফায় আবারও মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করা হয়।

তবে দুই দফা মেয়াদ বাড়ালেও প্রকল্পটির অগ্রগতির চিত্র হতাশাজনক। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৪৩টি বধ্যভূমির কাজ শেষ হয়েছে। অর্থাৎ অগ্রগতি মাত্র ১৫.৩ শতাংশ। এ ছাড়া আরো ১২টি বধ্যভূমির কাজ শেষ করা হবে।

মন্ত্রণালয় ও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বেশির ভাগ বধ্যভূমির জায়গাই ব্যক্তি মালিকানাধীন। বধ্যভূমির জন্য ভূমি অধিগ্রহণের দায়িত্ব পুরোটাই জেলা প্রশাসনের ওপর। মন্ত্রণালয় থেকে জায়গার জন্য চাহিদা দেওয়া হয়। এরপর দাগ ও বিভিন্ন নথি দেখে জায়গা চূড়ান্ত করে দিলে অধিগ্রহণের প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই জায়গা চূড়ান্ত হচ্ছে না, অধিগ্রহণও হচ্ছে না।

ভূমি অধিগ্রহণ সমস্যার পর লোকবল সংকটকে সবচেয়ে বড় কারণ বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয় সূত্র। নেই কোনো স্থায়ী পরিচালক। দীর্ঘদিন ধরেই অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে প্রকল্প পরিচালকের কাজ করছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব জাহাঙ্গীর আলম। মন্ত্রণালয়ের রুটিন কাজের বাইরে তাঁকে এই দায়িত্বটি পালন করতে হয়।

জমি অধিগ্রহণের বিষয়টি দেখার জন্য মাঠ পর্যায়ে কোনো লোক নেই। ফলে এই অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ার কিছু কাজ কখনো কখনো অন রিকোয়েস্টে  প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী সংস্থা গণপূর্ত অধিদপ্তরকে দিয়ে করানো হয় বলে জানান প্রকল্প পরিচালক।

এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জমিই তো পাওয়া যায় না। জায়গার সমস্যা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সমস্যার মধ্যেই আমরা বন্ধ করে দিলাম। কারণ এভাবে এগোনো যায় না।

গণহত্যার বেদনাবিধুর স্মারক বধ্যভূমি, রক্ষা করা রাষ্ট্রের কর্তব্য

১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর চালানো নৃশংস গণহত্যার বিভিন্ন স্মৃতি ও ক্ষতচিহ্ন আজও অনেকটা অনাদরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে দেশজুড়ে। ২০১৭ সাল থেকে খুলনায় অবস্থিত দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র গণহত্যা জাদুঘর  ১৯৭১ : গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর জেলাভিত্তিক গণহত্যার জরিপকাজ পরিচালনা করছে। জরিপে দেখা গেছে, কেবল ৪২টি জেলায়ই ২১ হাজার ৮৫৬টি গণহত্যা, গণকবর, বধ্যভূমি ও নির্যাতন কেন্দ্রের সন্ধান মিলেছে। এর মধ্যে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে ১৮ হাজার ৪৮১টি। বধ্যভূমি শনাক্ত হয়েছে  ৮৮৮টি।  এ ছাড়া গণকবর এক হাজার ৩১৩টি ও নির্যাতনকেন্দ্র শনাক্ত হয়েছে এক হাজার ১৭৪টি। ৬৪ জেলার জরিপ শেষে গণহত্যা, গণকবর, বধ্যভূমি ও নির্যাতনকেন্দ্রের সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়াতে পারে বলে ধারণা করছেন জাদুঘরের গবেষকরা।

এমন বাস্তবতায় সরকারের বধ্যভূমি সংরক্ষণের চিন্তা থেকে সরে আসা এবং এগুলোকে অবহেলা করা ঠিক হবে না বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণ করা অবশ্যই কর্তব্য। আমাদের তো ইতিহাসকে রক্ষা করতে হবে এবং চর্চা করতে হবে। এর জন্য ইতিহাসের স্মৃতিগুলো রাষ্ট্রের সংরক্ষণ করতে হবে। না হলে মানুষ তো সব ভুলেই যাবে। শহীদদের আত্মত্যাগকে ভুললে চলবে না।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সারওয়ার আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সরকারের নির্বিচার গণহত্যা, নৃশংসতা ও বেদনার সাক্ষ্য বহন করে। এর স্মারক হচ্ছে বধ্যভূমিগুলো। ফলে পরিকল্পিতভাবে বধ্যভূমি সংরক্ষণ একান্ত প্রয়োজন। আমি আশা করছি, বধ্যভূমি সংরক্ষণের বিষয়টি সরকার পুনরায় বিবেচনা করবে।

 

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ