ঘোষণা ছাড়া পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোনো কম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালকের শেয়ার বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও অনেকেই এ নিয়মটি মানছেন না। নিয়ম ভঙ্গ করে শেয়ার বিক্রি করে পুঁজি উত্তোলনে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। আইন ভঙ্গ করা উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে চিঠি দেবে স্টক এক্সচেঞ্জ।
গতকাল বুধবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বোর্ড রুমের ডিএসই, ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) ও বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) চতুর্পক্ষীয় সভায় এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
পরবর্তীতে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে গণমাধ্যমে বিস্তারিত তুলে ধরেন ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান ও মিনহাজ মান্নান ইমন এবং ডিবিএ সভাপতি শাকিল রিজভী। পুঁজিবাজার মনিটরিংয়ে স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে একটি মনিটরিং টিম গঠনেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
নিয়ম অনুসারে কম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালক শেয়ার বিক্রি করতে চাইলে স্টক এক্সচেঞ্জকে ঘোষণা দিতে হয়। এই ঘোষণার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে শেয়ার বিক্রি সম্পন্ন করে আবারও স্টক এক্সচেঞ্জকে জানাতে হয়।
কিন্তু সম্প্রতি পুঁজিবাজারের বেশ কিছু কম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকরা ঘোষণা না দিয়ে নিজেদের শেয়ার বিক্রি করে পুঁজিবাজার থেকে টাকা উত্তোলন করেছে। ফলে পুঁজিবাজারের চলমান সমস্যা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, যেসব কম্পানি ঘোষণা ছাড়া শেয়ার বিক্রি করে আইন ভঙ্গ করেছে, তাদের চিহ্নিত করতে ডিএসইর চিফ রেগুলেটরি অফিসারকে (সিআরও) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কমিশনকে অবহিত করে একটি চিঠিও দেওয়া হবে।
ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, যেসব উদ্যোক্তা ও পরিচালক ঘোষণা না দিয়ে শেয়ার বিক্রি করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে একটি তালিকা তৈরিতে সিআরওকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। শেয়ার বিক্রি করে উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা কত টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছেন সেটাও বের করা হবে। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে কমিশনকে অবহিত করা হবে।
ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বিএসইসি গত ২৯ এপ্রিল অনেকগুলো সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে।
কমিশন উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের পৃথকভাবে ২ শতাংশ ও সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ নিয়েও কড়াকড়ি আরোপ, অযৌক্তিক বোনাস শেয়ার বন্ধ, উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের শেয়ার বিক্রি নিয়ন্ত্রণে ব্লক মডিউল তৈরির পদক্ষেপ নিয়েছে। এখন থেকে ইচ্ছা করলেই উদ্যোক্তা ও পরিচালক শেয়ার বিক্রি করতে পারবেন না।’
শাকিল রিজভী বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন বিষয়ে সংস্কার চাইতেই পারি। তবে শেয়ারের দর ওঠানামার জন্য কাউকে দায়ী করা ঠিক হবে না। সারা বিশ্বের শেয়ারবাজারে শেয়ারের দর ওঠানামা করে। সেটা অনেক কারণেই হতে পারে। এ ক্ষেত্রে বিএসইসিকে দায়ী করা ঠিক হবে না। সূচকের ওঠানামায় বিএসইসির ভূমিকা থাকে না। তাদের কাজ আইনকানুন ঠিকমতো মানা হচ্ছে কি না, তা দেখা। শেয়ারের দর ঠিক করে বিনিয়োগকারী।
স্টেকহোল্ডারদের বাজার মনিটরিং টিম : ডিএসই, ডিবিএ, সিএসই ও বিএমবিএ মধ্যে একটি সমন্বয় কমিটি তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ছে। এই কমিটি একসঙ্গে কাজ করবে ও বাজারবিষয়ক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় প্রস্তাব দেবে।
ডিএসই পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, ডিএসই, ডিবিএ, সিএসই ও বিএমবিএর মধ্যে বৈঠকের উদ্দেশ্য হচ্ছে সবার মধ্যে সমন্বয় তৈরি করা। যাতে আগামীতে বাজার নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন প্রস্তাব না দিয়ে, সমন্বয় করে একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়। আগামীতে যেকোনো বিষয়ে প্রস্তাব দেওয়ার ক্ষেত্রে এই চারটি সংগঠনের পক্ষে একটি প্রস্তাব দেওয়া হবে।