<p>রূপান্তরিত লিঙ্গ হলো সেই সব ব্যক্তি, যাদের মানসিক লিঙ্গবোধ জন্মগত লিঙ্গচিহ্ন থেকে ভিন্ন। রূপান্তরিত লিঙ্গের ব্যক্তিরা যদি তাদের লিঙ্গ পরিবর্তন করতে ডাক্তারি সাহায্য কামনা করে তাহলে তাদের অনেক সময় রূপান্তরকামী নামে ডাকা হয়।</p> <p>আর তৃতীয় লিঙ্গ হলো একটি মতবাদ, যাতে এমন ব্যক্তিদের শ্রেণিভুক্ত করা হয়, যারা হয় নিজে অথবা সমাজের দ্বারা পুরুষ বা নারী কোনোটাই হিসেবে স্বীকৃত নয়। বাংলাদেশে হিজড়ারা সরকার কর্তৃক আইনগতভাবে তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃত। হিজড়া বলতে আন্তঃলিঙ্গ ব্যক্তিদেরও বোঝানো হয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায়, হিজড়া হলো ক্রোমোজোমের ত্রুটির কারণে জন্মগত যৌনপ্রতিবন্ধী ব্যক্তি, যাদের জন্ম-পরবর্তী লিঙ্গ নির্ধারণে জটিলতা দেখা দেয়। সহজভাবে বলা যায়, ট্রান্সজেন্ডার এমন নারী-পুরুষ, যারা মহান আল্লাহর সৃষ্টিতে সন্তুষ্ট না হয়ে তাদের জন্মগত লিঙ্গ পরিবর্তন করে পুরুষ থেকে নারী বা নারী থেকে পুরুষ হতে চেষ্টা করে। এমন ব্যক্তিদের ব্যাপারে ইসলামের কঠোর মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে। পক্ষান্তরে থার্ড জেন্ডার হলো হিজড়া জনগোষ্ঠী, যারা জন্মগতভাবে অস্বাভাবিক এবং কিছু যৌন ত্রুটি বা জটিলতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করার ফলে যৌনপ্রতিবন্ধী। সব ধরনের প্রতিবন্ধীর ব্যাপারে ইসলামের কোমল মনোভাব আছে।</p> <p>প্রতিবন্ধীদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি : শারীরিক বা মানসিক প্রতিবন্ধীরাও আল্লাহর সৃষ্টি। তাদের অবজ্ঞা বা অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেই। বরং তাদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দিয়ে তাদেরও বেড়ে ওঠার সুযোগ করে দিতে হবে এবং সমাজের মূলধারার সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে। একদিন রাসুলুল্লাহ (সা.) কুরাইশ নেতাদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করছিলেন। এ অবস্থায় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম (রা.) সেখানে উপস্থিত হয়ে নবী (সা.)-কে দ্বিন সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়ার অনুরোধ করেন। এতে আলোচনায় ব্যাঘাত সৃষ্টি হওয়ায় নবী (সা.) একটু বিরক্তি প্রকাশ করেন। তিনি কুরাইশ নেতাদের মনরক্ষার্থে প্রতিবন্ধী সাহাবির প্রতি ভ্রুক্ষেপ করেননি। মহান আল্লাহর কাছে বিষয়টি পছন্দনীয় হয়নি। তখনই প্রতিবন্ধীদের অধিকার বিষয়ক আয়াত নাজিল হয়, যাতে তাদের প্রতি ইসলামের কোমল মনোভাব প্রকাশ পায়। আল্লাহ বলেন, ‘সে ভ্রু কুঞ্চিত করল এবং মুখ ফিরিয়ে নিল, কারণ তার কাছে অন্ধ লোকটি এলো। তুমি কেমন করে জানবে, সে হয়তো পরিশুদ্ধ হতো, অথবা উপদেশ গ্রহণ করত। ফলে উপদেশ তার উপকারে আসত। পক্ষান্তরে যে পরোয়া করে না, তুমি তার প্রতি মনোযোগ দিয়েছ।’</p> <p>(সুরা : আবাসা, আয়াত : ১-৬)</p> <p>এরপর নবী (সা.) প্রতিবন্ধীদের সর্বদা অত্যন্ত ভালোবাসতেন এবং বিশেষ গুরুত্ব দিতেন।</p> <p>আল্লাহর সন্তুষ্টিকে অপ্রিয় গণ্য করার পরিণতি : নারী-পুরুষ মহান আল্লাহর সৃষ্টি। আল্লাহ যাকে চেয়েছেন পুরুষ বানিয়েছেন, যাকে চেয়েছেন নারী বানিয়েছেন। এখানে মানুষের ইচ্ছা-অনিচ্ছার কোনো বিষয় নেই। কাজেই আল্লাহর সিদ্ধান্ত ও ফায়সালার ওপর সন্তুষ্ট থাকা ঈমানদার মানুষের কাছে একান্ত কাম্য। আল্লাহর সিদ্ধান্ত অপ্রিয় গণ্য করার করুণ পরিণতি পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘যখন ফেরেশতারা তাদের মুখমণ্ডল ও পৃষ্ঠদেশে আঘাত করতে করতে তাদের প্রাণ হরণ করবে, তখন তাদের দশা কেমন হবে! এটা এই জন্য যে তারা তা অনুসরণ করে, যাতে আল্লাহর অসন্তোষ জন্মায় এবং তার সন্তুষ্টিকে অপ্রিয় গণ্য করে; তিনি তাদের কাজ নিষ্ফল করে দেন।’</p> <p>(সুরা  : মুহাম্মদ, আয়াত : ২৭-২৮)</p> <p>সৃষ্টিতে বিকৃতি ঘটাতে শয়তান দৃঢ়প্রতিজ্ঞ : আল্লাহর সৃষ্টির পরিবর্তন শয়তানের সুস্পষ্ট নির্দেশনা। শয়তান অভিশপ্ত হয়ে মানুষকে এসব করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ তাকে (শয়তানকে) অভিসম্পাত করেন এবং সে (শয়তান) বলে, আমি অবশ্যই তোমার বান্দাদের এক নির্দিষ্ট অংশকে আমার অনুসারী করব। আমি তাদের পথভ্রষ্ট করবই, তাদের হৃদয়ে মিথ্যা বাসনার সৃষ্টি করবই; আমি তাদের নিশ্চয় নির্দেশ দেব আর তারা পশুর কর্ণচ্ছেদ করবেই এবং তাদের নিশ্চয়ই নির্দেশ দেব, ফলে তারা আল্লাহর সৃষ্টি বিকৃত করবেই। আল্লাহর পরিবর্তে শয়তানকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করলে সে স্পষ্টতই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’</p> <p>(সুরা : নিসা, আয়াত : ১১৮-১১৯)</p> <p>দেহ বা অঙ্গ বিকৃতি অভিশপ্ত কাজ : যারা আল্লাহর সৃষ্টিতে বিকৃতি ঘটায়, হাদিসে তাদের অভিসম্পাত করা হয়েছে। আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এমন সব নারীর ওপর অভিসম্পাত করেছেন, যারা অঙ্গে উল্কি আঁকে এবং অন্যকে দিয়ে উল্কি আঁকায় এবং সৌন্দর্যের জন্য ভ্রুর চুল উপড়ে আল্লাহ তাআলার সৃষ্টিকে পরিবর্তন করে। (তিরমিজি, হাদিস : ২৭৮২)</p> <p>অন্য হাদিসে নারীর বেশধারী পুরুষ ও পুরুষের বেশধারী নারীদের প্রতিও অভিসম্পাত করা হয়েছে। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) নারীর বেশধারী পুরুষদের এবং পুরুষের বেশধারী নারীদের অভিসম্পাত করেছেন।</p> <p>(বুখারি, হাদিস : ৫৮৮৫)</p> <p>পরিশেষে বলা যায়, মহান আল্লাহ মানুষকে যে স্বাভাবিক দেহাবয়ব দিয়ে সৃষ্টি করেছেন, সেটাই তার জন্য উত্কৃষ্ট নিয়ামত। পুরুষের জন্য তার পুরুষালি বৈশিষ্ট্য বজায় রাখা এবং নারীর জন্য তার নারীত্বের বৈশিষ্ট্য ধরে রাখাই আল্লাহর বিধান। এ ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার বা হরমোন প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে লিঙ্গ পরিবর্তন করে আল্লাহ্র সৃষ্টিতে বিকৃতি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।</p> <p> </p> <p>লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, আরবি বিভাগ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়</p> <p> </p> <p> </p>