<p>নফল আরবি শব্দ। এর অর্থ কর্তব্যের অতিরিক্ত কাজ, ঐচ্ছিক ও অতিরিক্ত। ইসলামের পরিভাষায়, ফরজ ও ওয়াজিবের অতিরিক্ত ইসলামী শরিয়ত প্রবর্তিত বিধান বা বিষয়কে নফল বলা হয়। (মুজামুত তারিফাত, পৃ. ২৬৬)</p> <p>যে আমল রাসুলুল্লাহ (সা.) নিয়মিত করতেন এবং মাঝে মাঝে ছেড়ে দিতেন তাকে মুস্তাহাব, নফল বা মানদুব বলা হয়। এমন বিধানের ওপর আমল করা প্রশংসনীয় ও সওয়াবের কাজ। এর ত্যাগকারীকে তিরস্কার করা যাবে না। যথা তাহাজ্জুদসহ অন্যান্য নফল নামাজ, নফল রোজা, নফল সদকা, নফল হজ ইত্যাদি।</p> <p>নফল সালাতের গুরুত্ব ও ফজিলত অপরিসীম। নিম্নে এ বিষয়ে আলোকপাত করা হলো—</p> <p>ফরজ সালাতের ঘাটতি পূরণ : হাশরের ময়দানে ফরজ সালাতের ঘাটতি পূরণ হবে নফল সালাত দ্বারা। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, কিয়ামতের দিন বান্দার সর্বপ্রথম হিসাব নেওয়া হবে তার সালাতের। যদি তার সালাতের হিসাব সঠিক হয়, তাহলে সে সফল হবে ও নাজাত পাবে। আর যদি সালাত বিনষ্ট হয়ে যায় তাহলে সে বিফল ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যদি ফরজ সালাতে কিছু কমতি হয়, তাহলে প্রতিপালক আল্লাহ বলবেন, দেখ আমার বান্দার কোনো নফল ইবাদত আছে কি না? তখন নফল দিয়ে ফরজের ঘাটতি পূরণ করা হবে। অতঃপর তার অন্য আমল সম্পর্কেও অনুরূপ করা হবে। (তিরমিজি, হাদিস : ৪১৩)</p> <p>আল্লাহর ভালোবাসা লাভ : নফল সালাতের মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, আল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি আমার কোনো প্রিয় বান্দার সঙ্গে শত্রুতা করল, আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দিলাম। আমি যেসব বিষয় ফরজ করেছি, তার মাধ্যমে আমার নৈকট্য অনুসন্ধানের চেয়ে প্রিয় আমার কাছে আর কিছু নেই। বান্দা বিভিন্ন নফল ইবাদতের মাধ্যমে সর্বদা আমার নৈকট্য হাছিল করে, এমনকি আমি তাকে ভালোবাসি। অতঃপর যখন আমি তাকে ভালোবাসি, তখন আমিই তার কান হয়ে যাই, যা দিয়ে সে শ্রবণ করে। চোখ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দর্শন করে। হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে সে ধারণ করে। পা হয়ে যাই, যার সাহায্যে সে চলাফেরা করে। যদি সে আমার কাছে কোনো কিছু প্রার্থনা করে, আমি তাকে তা দান করে থাকি। যদি সে আশ্রয় ভিক্ষা করে, আমি তাকে আশ্রয় দিয়ে থাকি। (বুখারি, হাদিস : ৬৫০২)</p> <p>রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে জান্নাতে থাকার সৌভাগ্য : জান্নাতে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে থাকা বড়ই সৌভাগ্য ও মর্যাদার বিষয়। এই সৌভাগ্য তারাই অর্জন করতে পারবে, যারা অধিক হারে নফল সালাত আদায় করবে। রবিআ বিন কাব (রা.) বলেন, আমি রাতের বেলা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে সঙ্গে থাকতাম এবং অজুর পানিসহ অন্য প্রয়োজনীয় জিনিস এগিয়ে দিতাম। একদিন তিনি আমাকে বলেন, (কল্যাণের কিছু) চেয়ে নাও। আমি নিবেদন করলাম, আমি জান্নাতে আপনার সাহচর্য চাই। তিনি বলেন, এ ছাড়া আর কিছু চাও? আমি বললাম, এটাই (আমি চাই)। তিনি বলেন, তুমি বেশি বেশি সিজদা করে (এ ব্যাপারে) আমাকে সাহায্য করো। (মুসলিম, হাদিস : ৯৮১)</p> <p>নিম্নে কিছু নফল সালাত সম্পর্কে আলোচনা করা হলো—</p> <p>তাহাজ্জুদ : মধ্য রাতের পর বা শেষ রাতে সুবহে সাদিক পর্যন্ত তাহাজ্জুত সালাত দুই থেকে আট রাকাত পড়া যায়। মহানবী (সা.) বলেছেন, রমজানের পর সর্বশ্রেষ্ঠ রোজা হলো আল্লাহর মাস মহররমের রোজা। আর ফরজ নামাজের পর সর্বশ্রেষ্ঠ নামাজ হলো রাতের (তাহাজ্জুদের) নামাজ। (মুসলিম, হাদিস : ১১৬৩)</p> <p>ইশরাক : সূর্য পরিপূর্ণভাবে উদিত হওয়ার পর ইশরাকের নামাজ আদায় করতে হয়। আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি জামাতের সঙ্গে ফজরের নামাজ আদায় করল এবং সূর্যোদয় পর্যন্ত আল্লাহর জিকিরে বসে থাকল; অতঃপর দুই রাকাত নামাজ আদায় করল, সে একটি পরিপূর্ণ হজ ও ওমরাহর সওয়াব পাবে।</p> <p>(সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৫৮৬)</p> <p>দুহা : সূর্য মধ্য আকাশে স্থির হওয়ার আগমুহূর্তে ‘দুহা’র নামাজ আদায় করা হয়। অনেক আলেমের মতে, ইশরাক ও দুহা পৃথক নামাজ। কেউ কেউ বলেছেন, সময়ের শুরুতে আদায় করলে সেটা ইশরাক আর সময়ের শেষে আদায় করলে দুহা। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে তিনটি বিষয়ে অসিয়ত করেছেন, যেন আমি তা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ত্যাগ না করি। প্রতি মাসে তিন দিন রোজা রাখা, দুহার নামাজ ও ঘুমানোর আগে বিতর আদায় করা। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১১৭৮)</p> <p>আউয়াবিন : মাগরিব ও এশার নামাজের মধ্যবর্তী সময়ে আদায়কৃত ছয় রাকাত নামাজ ‘আউয়াবিন’ নামে পরিচিত। আল্লামা মাওয়ার্দি এই অভিমত প্রাধান্য দিয়েছেন।</p> <p>(মুগনির মুহতাজ : ১/৩৪৩)</p> <p>রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি মাগরিবের পর ছয় রাকাত নামাজ আদায় করবে এবং এগুলোর মধ্যে কোনো মন্দ কথা না বলে, তার আমলনামায় ১২ বছর ইবাদতের সওয়াব লেখা হবে। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১১৬৭)</p> <p>তাহিয়্যাতুল অজু : অজুর মাধ্যমে অপবিত্র অবস্থা থেকে পবিত্র হওয়ার কৃতজ্ঞতাস্বরূপ দুই রাকাত নামাজ আদায় করা হয়। এই নামাজকে বলা হয় তাহিয়্যাতুল অজু। নিষিদ্ধ সময়ের বাইরে যেকোনো সময় এই নামাজ আদায়ের অবকাশ আছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি</p> <p>উত্তমরূপে অজু করল এবং নিষ্ঠার সঙ্গে দুই রাকাত নামাজ আদায় করল তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৩৪)</p> <p>তাহিয়্যাতুল মসজিদ : মসজিদে প্রবেশ করার পর আদায় করার নামাজ।  নিষিদ্ধ সময় ছাড়া অন্য সময়ে মসজিদে প্রবেশের পর তাহিয়্যাতুল মসজিদ পড়া যায়। তবে নামাজের জামাত ও ওয়াক্তের নির্ধারিত সুন্নত ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে তাহিয়্যাতুল মসজিদ পড়বে না। মহানবী (সা.) বলেন, তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে সে যেন দুই রাকাত নামাজ আদায় করার পর বসে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১১৬৭)</p> <p>তাওবার নামাজ : তাওবা বা ক্ষমা প্রার্থনার জন্য যে সালাত আদায় করা হয় তাকে সালাতুত তাওবা বলা হয়। আবু বকর (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, কোনো ব্যক্তি যদি গুনাহ করে, অতঃপর উঠে দাঁড়ায় এবং পবিত্রতা অর্জন করে আর দুই রাকাত সালাত আদায় করে, তারপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন। (ইবনু মাজাহ, হাদিস : ১৩৯৫)</p> <p>সফর থেকে প্রত্যাবর্তনের সালাত :  সফর থেকে সুস্থ অবস্থায় ফিরে আসা আল্লাহর বিশেষ রহমতের বহিঃপ্রকাশ। তাই রাসুলুল্লাহ (সা.) সফর থেকে ফিরে সাধারণত প্রথমে মসজিদে দুই রাকাত নফল সালাত আদায় করে তারপর বাড়িতে প্রবেশ করতেন।</p> <p>(বুখারি, হাদিস : ৪৪৩, ৪৬৭৭)</p> <p>মহান আল্লাহ আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন।</p> <p> </p> <p> </p> <p> </p>