আনাস বিন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) মদিনায় পৌঁছে প্রথমে মদিনার উচ্চ এলাকায় অবস্থিত বনু আমর ইবনু আউফ গোত্রে উপনীত হন। তাদের সঙ্গে নবী (সা.) ১৪ দিন (অন্য বর্ণনায় ২৪ দিন) অবস্থান করেন। অতঃপর তিনি (তাঁর মাতুল বংশ) বনু নাজ্জারকে ডেকে পাঠালেন। তারা কাঁধে তলোয়ার ঝুলিয়ে উপস্থিত হলো।
হাদিসের শিক্ষা
দ্বিনি কাজে শ্রম দেওয়া সদকাতুল্য
মো. আবদুল মজিদ মোল্লা

হাদিসের শিক্ষা
উল্লিখিত হাদিসের আলোকে মুহাদ্দিসরা বেশ কয়েকটি শিক্ষা ও বিধান বর্ণনা করেন। তাহলো—
১. প্রয়োজনে নিরাপত্তা গ্রহণ করা নবুয়ত ও তাকওয়ার পরিপন্থী নয়, বরং নিরাপত্তা উপকরণ গ্রহণ করাই ইসলামের শিক্ষা ও বিধান।
২. যেকোনো পবিত্র স্থানে নামাজ আদায় করা বৈধ। পশুর চারণ ভূমির পবিত্র অংশে নামাজ পড়তে কোনো বাধা নেই।
৩. দ্বিনি কাজে হলেও কোনো স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি ব্যবহারের আগে মালিকের সম্মতি আবশ্যক। সম্মতি ছাড়া কারো সম্পদ ব্যবহার করা অনুমোদিত নয়।
৪. প্রাচীন কবর মুসলমানের হোক বা মুশরিকের তা মিটিয়ে দেওয়া এবং সে স্থান যেকোনো বৈধ কাজে ব্যবহার করা জায়েজ।
৫. নবীজি (সা.) কবি ছিলেন না, তবে তিনি কখনো কখনো ছন্দোবদ্ধ বাক্য পাঠ করেছেন। এমন ঘটনা তাঁর জীবনে খুব সামান্যই ঘটেছে।
৬. যারা মুসলমানের নেতা হবে, তারা কাজকর্মে অনুসারীদের সঙ্গে থাকবে। শুধু নির্দেশ দিয়ে বসে থাকবে না।
৭. পরকালের কল্যাণই প্রকৃত কল্যাণ। আর পরকালীন কল্যাণের প্রধান দিক হলো আল্লাহর ক্ষমা লাভ করা।
৮. দ্বিনি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা ও পরিচালনার ক্ষেত্রে মুসলিম সমাজের সবাই যথাসাধ্য অংশ নেবে।
৯. মসজিদের জন্য ভূমি দান করা একটি মর্যাদাপূর্ণ নফল আমল।
১০. মসজিদ নির্মাণসহ যেকোনো দ্বিনি কাজে অর্থ দান করা যেমন সওয়াবের, কায়িক শ্রম দান করাও সওয়াবের। এটা সদকাতুল্য নেক আমল।
আল্লাহ সবাইকে পরকালীন কল্যাণ দান করুন। আমিন।
সম্পর্কিত খবর

মনীষীর কথা

সুবিচার হৃদ্যতা দৃঢ় করে এবং সদাচার বন্ধুত্ব দীর্ঘ করে।
—আহনাফ বিন কায়েস (রহ.)
।
প্রশ্ন-উত্তর
- সমাধান : ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশ, বসুন্ধরা, ঢাকা

সাহু সিজদার নিয়ম
প্রশ্ন : আমি হানাফি মাজহাবের আলোকে সাহু সিজদা আদায় পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাই। দলিলসহ জানালে উপকৃত হব।
আবুল হোসেন, কুমিল্লা
উত্তর : নামাজের মধ্যে ভুলবশত কোনো ওয়াজিব ছুটে গেলে বা নামাজের ফরজ ও ওয়াজিবের পরস্পর ধারাবাহিকতায় আগে-পরে হলে বা ফরজ ও ওয়াজিব দ্বিগুণ আদায় করলে অথবা ফরজ ও ওয়াজিব আদায়ে বিলম্ব হলে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়। তা আদায়ের পদ্ধতি হলো, শেষ বৈঠকে তাশাহুদ তথা আত্তাহিয়্যাতু পড়ার পর ডান দিকে এক সালাম ফেরাবে, অতঃপর নামাজের মতো দুটি সিজদা দেবে এবং পুনরায় তাশাহুদ, দরুদ ও দোয়া মাসুরা পড়ে নামাজ শেষ করবে।
মসজিদের ওয়াক্ফকৃত জায়গায় কবরস্থান বানানো
প্রশ্ন : আমাদের এলাকায় এক ব্যক্তি মসজিদের নামে একটি জায়গা ওয়াক্ফ করেছেন। তাঁর মৃত্যুর অনেক দিন পর তাঁর পরিবারের লোকেরা মসজিদের নামে ওয়াক্ফকৃত ওই জায়গার এক পাশে তাদের পরিবারের জন্য কবরস্থান বানিয়েছে। তাদের এই কাজের ব্যাপারে ইসলামের বিধান কী?
সোহেল, গাইবান্ধা
উত্তর : মসজিদের জন্য ওয়াক্ফকৃত জায়গায় কবরস্থান বানানো জায়েজ নেই। তাই সন্তানদের জন্য পিতার ওয়াক্ফকৃত জায়গার এক পাশে কবরস্থান বানানো জায়েজ হয়নি।

কোরআন থেকে শিক্ষা
- পর্ব : ৭৪৭

আয়াতের অর্থ : ‘যেদিন তিনি একত্র করবেন তাদের এবং তারা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের ইবাদত করত তাদের, সেদিন তিনি জিজ্ঞাসা করবেন, তোমরাই কি আমার এই বান্দাদের বিভ্রান্ত করেছিলে, না তারা নিজেরাই পথভ্রষ্ট হয়েছিল? তারা বলবে, পবিত্র ও মহান তুমি! তোমার পরিবর্তে আমরা অন্যকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করতে পারি না; তুমিই তাদের এবং তাদের পিতৃপুরুষদের ভোগসম্ভার দিয়েছিলে; পরিণামে তারা উপদেশ বিস্মৃত হলেছিল এবং পরিণত হয়েছিল এক ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতিতে।’ (সুরা : ফুরকান, আয়াত : ১৭-১৮)
আয়াতদ্বয়ে মিথ্যা উপাস্য ও তাদের উপাসনাকারীদের পরকালীন পরিণতি বর্ণিত হয়েছে।
শিক্ষা ও বিধান
১. আদম (আ.) থেকে কিয়ামত পর্যন্ত আগত সব মানুষকে কিয়ামতের দিন সমবেত করা হবে এবং তাদের কৃতকর্মের প্রতিদান দেওয়া হবে।
২. কিয়ামতের দিন নিশ্চল পাথরের মূর্তিগুলো বলবে, হে আল্লাহ! নিজের ইবাদত-উপাসনার নির্দেশ দেওয়ার মতো শক্তি-সামর্থ্য আমার তো ছিলই না।
৩. কিয়ামতের দিন অবিশ্বাসীরা জাহান্নামে যাওয়ার পর অপেক্ষা করবে, কখন তাদের উপাস্যদের জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
৪. প্রতিটি বস্তুর নিজস্ব ভাষা ও সংকেত আছে, যার দ্বারা তারা পরস্পরের মধ্যে ভাব বিনিময় করে; যদিও মানুষ তা বোঝে না।
৫. মানুষের না বোঝাটা বস্তুগুলোর ভাষাহীন হওয়ার প্রমাণ নয়। কেননা মানুষ তো মানুষেরই বহু ভাষা বোঝে না।

যে আমলের ওজন সবচেয়ে বেশি
উম্মে আহমাদ ফারজানা

ইসলামে উত্তম চরিত্রের বিশেষ গুরুত্ব ও ফজিলত রয়েছে। মুমিনদের জন্য বিভিন্ন গুণে চরিত্রকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করা ঈমানের দাবি। কেননা উত্তম চরিত্র ছাড়া একজন মুমিনের ঈমান পরিপূর্ণ হতে পারে না। ঈমানের পরিপূর্ণতার জন্য উত্তম চরিত্র অর্জন করা অপরিহার্য।
আমাদের সমাজে মানুষের সর্বোত্তম হওয়ার বিভিন্ন মাপকাঠি আছে। বিভিন্নজনের কাছে ভিন্ন মাপকাঠিতে ভিন্ন ধরনের মানুষ সর্বোত্তম। কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে সর্বোত্তম হওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠি হচ্ছে উত্তম চরিত্র।
(বুখারি, হাদিস : ৩৫৫৯)
রাসুল (সা.) ছিলেন সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী। তিনি কখনো কারো সঙ্গে খারাপ আচরণ করেননি।
উত্তম চরিত্রের সওয়াব এত বেশি, যা আমরা কল্পনাও করতে পারি না। কিয়ামতের দিন মানুষের সওয়াব ও গুনাহ পরিমাপের জন্য দাঁড়িপাল্লায় ওজন করা হবে। সেদিন যে আমলের ওজন সবচেয়ে বেশি ভারী হবে তা হলো উত্তম চরিত্র। এ সম্পর্কে আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, কিয়ামতের দিন মুমিনের দাঁড়িপাল্লায় উত্তম চরিত্রের চেয়ে বেশি ওজনের আর কোনো জিনিস হবে না। কেননা আল্লাহ অশ্লীল ও কটুভাষীকে ঘৃণা করেন।
(সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২০০২)
উত্তম চরিত্রের সওয়াব ওজনে সবচেয়ে বেশি ভারী হওয়ার রহস্য আরেকটি হাদিস থেকে জানা যায়। এক ব্যক্তি সারা দিন সাওম পালন করে এবং সারা রাত নফল সালাত পড়ে যেরূপ সওয়াব পায়, মহান আল্লাহ উত্তম চরিত্রের বদৌলতে সেরূপ সওয়াব দান করেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, নিশ্চয়ই মুমিন ব্যক্তি তার ভালো চরিত্রের মাধ্যমে (দিনে) সাওম পালনকারী ও (রাতে) নামাজ আদায়কারীর মর্যাদা লাভ করতে পারে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৭৯৮)
জান্নাতে মানুষের আমল অনুযায়ী সম্মানজনক জায়গায় অধিষ্ঠিত করা হবে। যার আমল যত ভালো হবে, সে তত বেশি সম্মানিত হবে। রাসুল (সা.) নিজে উত্তম চরিত্রবানদের জন্য জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে ঘর বরাদ্দের জিম্মাদারি নিয়েছেন। এ বিষয়ে আবু উমামা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ন্যায়সংগত হওয়া সত্ত্বেও ঝগড়া পরিহার করবে, আমি তার জন্য জান্নাতের বেষ্টনীর মধ্যে একটি ঘরের জিম্মাদার। আর যে ব্যক্তি তামাশার ছলেও মিথ্যা বলে না, আমি তার জন্য জান্নাতের মাঝখানে একটি ঘরের জিম্মাদার এবং যে ব্যক্তি তার চরিত্রকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করেছে, আমি তার জন্য জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে অবস্থিত একটি ঘরের জিম্মাদার।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮০০)