জানাজা কি নামাজ নাকি দোয়া?
প্রশ্ন : আমাদের এলাকার কিছু লোক বলছে, জানাজা হলো দোয়া। তাই জানাজার পর কবরে লাশ রাখার আগে দোয়া করা যাবে না। অন্য দল বলছে, জানাজা হলো নামাজ। তাই জানাজার পর কবরে লাশ রাখার আগে দোয়া করা বৈধ।
জানাজা কি নামাজ নাকি দোয়া?
প্রশ্ন : আমাদের এলাকার কিছু লোক বলছে, জানাজা হলো দোয়া। তাই জানাজার পর কবরে লাশ রাখার আগে দোয়া করা যাবে না। অন্য দল বলছে, জানাজা হলো নামাজ। তাই জানাজার পর কবরে লাশ রাখার আগে দোয়া করা বৈধ।
আরিফ, বাড্ডা
উত্তর : জানাজা মূলত দোয়া। তবে নামাজের সাদৃশ্য হওয়ায় তাকে নামাজও বলা হয়। যা-ই হোক, জানাজার নামাজের পর দাফনের আগে সম্মিলিতভাবে দোয়া করার কোনো প্রমাণ নেই, তাই তা বর্জনীয়।
সম্পর্কিত খবর
পৃথিবীতে মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ আনুগত্য হলো অন্তরালের জীবন পরিশুদ্ধ করা এবং অন্তরের ব্যাধি দূর করা।
আবদুল্লাহ ইবনে নূর (রহ.)
।বদলি হজ করলে কি নিজের ফরজ হজ আদায় হয়?
প্রশ্ন : নিজের ওপর হজ ফরজ থাকলে বদলি হজ আদায় হবে কি?
মুনির, গুলশান, ঢাকা
উত্তর : যাঁর ওপর হজ ফরজ—এমন ব্যক্তি নিজের হজ আদায় না করে অন্যের বদলি হজ করলে তা আদায় হলেও মাকরুহে তাহরিমি বলে বিবেচিত হবে। (রদ্দুল মুহতার : ৪/২৫, আহসানুল ফাতাওয়া : ৪/৫১২)
।আয়াতের অর্থ : ‘অন্ধের জন্য দোষ নেই, খঞ্জের জন্য দোষ নেই, রোগীর জন্য দোষ নেই এবং তোমাদের নিজেদের জন্যও দোষ নেই আহার করা তোমাদের ঘরে অথবা তোমাদের পিতাদের ঘরে, মায়েদের ঘরে, ভাইদের ঘরে, বোনদের ঘরে, পিতৃব্যদের ঘরে, ফুফুদের ঘরে, মাতুলদের ঘরে, খালাদের ঘরে অথবা সেইসব ঘরে যার চাবির মালিক তোমরা অথবা তোমাদের বন্ধুদের ঘরে। তোমরা একত্রে আহার করো অথবা পৃথকভাবে আহার করো তাতে তোমাদের জন্য কোনো অপরাধ নেই।...’ (সুরা : নুর, আয়াত : ৬১)
আয়াতে খাবার গ্রহণে মালিকের অনুমতি নেওয়ার বিধান বর্ণনা করা হয়েছে।
শিক্ষা ও বিধান
১. কোনো সমাজে যদি আত্মীয়-স্বজনের অনুমতি ছাড়া খাবার খাওয়ার প্রচলন থাকে, তাহলে তাদের জন্য খাবার খাওয়ার আগে অনুমতি নিতে হবে না।
২. বর্তমান সমাজে আত্মীয়-স্বজনের অনুমতি ছাড়া খাবার গ্রহণের প্রচলন নেই। তাই আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতেও খাবার খাওয়ার আগে অনুমতি নিতে হবে।
৩. কোনো ব্যক্তি যদি তার মালিকানাধীন খাবার, গাছের ফল বা ক্ষেতের শস্য মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়, তাহলে তা খাওয়ার জন্য অনুমতি গ্রহণের প্রয়োজন নেই।
৪. কোনো মজলিসে উপস্থিত হলে সবাইকে লক্ষ্য করে সালাম দেওয়া আদব ও মুস্তাহাব।
৫. মুসলমান নিজ ঘরে প্রবেশের সময়ও সালাম দেবে। এটাই ইসলামের শিক্ষা। (মাআরেফুল কুরআন : ৬/৪৪২)
আরবিতে ‘হায়া’ অর্থ লজ্জা বা সংকোচ বোধ করা, ইতস্তত বোধ করা ইত্যাদি। সহজভাবে বলা যায়, লজ্জা হচ্ছে এক ধরনের মানবীয় অনুভূতি, যা মানুষকে মন্দ কাজে বাধা দেয় এবং জনসমক্ষে সম্মানহানির ভয় সৃষ্টি করে। ইবনুল কাইয়িম (রহ.) বলেন, ‘হায়া’ অর্থ শরম, বৃষ্টি, তরতাজা ইত্যাদি, যা ‘হায়াত’ শব্দমূল থেকে উৎপন্ন। এর অর্থ হলো ‘জীবন’।
ইসলামে লজ্জা ও শালীনতার গুরুত্ব
ইসলামের দৃষ্টিতে লজ্জা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি গুণ। যেমন—
১. লজ্জা ঈমানের অংশ : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘লজ্জা ঈমানের অঙ্গ।’
(মুসলিম, হাদিস : ৫১)
২. আল্লাহর গুণ : লজ্জা মহান আল্লাহর গুণ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীল, লজ্জাশীল।
৩. নবী-রাসুলদের গুণ : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, মুসা (আ.) ছিলেন অত্যন্ত লজ্জাশীল একজন ব্যক্তি। অধিক লজ্জার কারণে তাঁর শরীরের সামান্য ত্বকও দেখা যায়নি। (বুখারি, হাদিস : ৩৪০৪)
৪. লজ্জা কল্যাণের বাহক : মহানবী (সা.) বলেছেন, লজ্জা-শালীনতার পুরোটাই কল্যাণ। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৪৭৯৬)
৫. লজ্জা জান্নাত লাভের মাধ্যম : লজ্জা ঈমানের অঙ্গ, আর ঈমানদারদের স্থান জান্নাত।
৬. লজ্জা ইসলামের চরিত্র : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, প্রতিটি ধর্মের একটা চরিত্র আছে, আর ইসলামের মূল চরিত্র হলো লজ্জাশীলতা।
(ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪১৮১)
জীবনযাপনে লজ্জার প্রয়োগ
১. স্বভাবজাত লজ্জা রক্ষা : আল্লাহ সৃষ্টিগতভাবে মানুষের মধ্যে লজ্জা ও শালীনতার বোধ রেখেছেন। মুমিনের উচিত তা রক্ষা করা। এ জন্য নবীজি (সা.) কারো চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতেন না, তিনি খোলা স্থানে গোসল করতেন না। পাপ কাজে সংকোচ বোধ করা স্বভাবজাত লজ্জার একটি দিক। তাকে গুরুত্ব দেওয়া।
২. একান্ত ব্যক্তিগত জীবনে শালীনতা : একান্ত ব্যক্তিগত জীবনেও মুমিন লজ্জা ও শালীনতা রক্ষা করবে। যেমন—আয়েশা (রা.) বলেছেন, আমি ও রাসুলুল্লাহ (সা.) কখনো পরস্পরের লজ্জাস্থান দেখিনি।
৩. কথা ও কাজে শালীনতা রক্ষা করা : মুমিন তার কথা ও কাজে লজ্জা ও শালীনতা রক্ষা করে চলবে। কেননা লজ্জা ও শালীনতা না থাকলে ব্যক্তি যেকোনো অন্যায় কাজও করে ফেলতে পারে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন তুমি নির্লজ্জ হয়ে পড়বে, তখন যা ইচ্ছা তা-ই করো।
(বুখারি, হাদিস : ৬১২০)
৪. পোশাক-আশাকে শালীনতা রক্ষা করা : নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য শালীন পোশাক পরা আবশ্যক। কেননা আল্লাহ পোশাককে লজ্জা নিবারণের মাধ্যম বানিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে বনি আদম! তোমাদের লজ্জাস্থান ঢাকার জন্য ও বেশভূষার জন্য আমি তোমাদের পোশাক দিয়েছি। আর তাকওয়ার পোশাক, এটাই সর্বোত্কৃষ্ট।’
(সুরা : আরাফ, আয়াত : ২৬)
৫. সমাজ থেকে অশ্লীলতা দূর করা : সামাজিক জীবন থেকে অশ্লীলতা দূর করা না গেলে শালীন জীবন যাপন করা সম্ভব নয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে দিতে ভালোবাসে, তাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি। (সুরা : নুর, আয়াত : ১৯)
আল্লাহ সবাইকে সুমতি দান করুন। আমিন।