কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার যে খবর মহানবী (সা.) দিয়েছেন, তা অবশ্যই সত্য। মহানবী (সা.)-এর আঙুলের ইশারায় চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হওয়া তারই প্রমাণ। পরে মক্কার কাফিরদের সামনে নুহ (আ.)-এর জাতি, আদ জাতি, সামুদ জাতি, লুত (আ.)-এর জাতি এবং ফেরাউনের অনুসারীদের অবস্থা সংক্ষেপে বর্ণনা করা হয়েছে।
আদেশ-নিষেধ-হিদায়াত
১. প্রবৃত্তির অনুসরণ কোরো না। (আয়াত : ৩)
২. আল্লাহ কোরআন সহজ করেছেন। (আয়াত : ১৭)
৩. আল্লাহ সব কিছু নির্ধারিত পরিমাণে সৃষ্টি করেছেন। (৪৯-৫০)
সুরা আর-রহমান
আলোচ্য সুরায় কিয়ামত ও জান্নাত-জাহান্নাম সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এই সুরায় আল্লাহর অসংখ্য নিয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। দ্বিনের নিয়ামত, কোরআনের নিয়ামত ও মানব সৃষ্টির বিষয়টিকে এখানে সব কিছুর ওপর স্থান দেওয়া হয়েছে। আল্লাহর তাসবিহ ও তাঁর প্রশংসাগীতির মাধ্যমে সুরাটি শেষ করা হয়েছে।
আদেশ-নিষেধ-হিদায়াত
১. মাতৃভাষা আল্লাহর দান। তিনিই মানুষকে ভাষা শিখিয়েছেন।
(আয়াত : ৩-৪)
২. ওজনে কম দিয়ো না। (আয়াত : ৯-১০)
৩. প্রবাল আল্লাহর বিশেষ সৃষ্টি। সুতরাং তা সংরক্ষণ করা আবশ্যক। (আয়াত : ২২-২৩)
৪. আকাশমণ্ডলীর সীমা অতিক্রম করাও সম্ভব। (আয়াত : ৩৩)
সুরা ওয়াকিয়া
কিয়ামতের দিন এ পৃথিবী কী ভয়াবহ আকার ধারণ করবে, তার চিত্র বর্ণনা করার মাধ্যমে সুরাটি শুরু হয়েছে। সুরার শুরুতেই বলা হয়েছে যে মানুষ তিন ধরনের। ডানপন্থী, বামপন্থী ও অগ্রগামী। এ সুরায় বিপদ-আপদে আল্লাহর করুণার কথা তুলে ধরা হয়েছে। এ খবর জানানো হয়েছে যে পবিত্র সত্তা ফেরেশতারা পবিত্রতা ছাড়া কোরআন স্পর্শ করে না। সুরার শেষে ওই তিন ধরনের মানুষের পরিণতি ও প্রতিফল বর্ণনা করা হয়েছে।
আদেশ-নিষেধ-হিদায়াত
১. হতভাগ্য বাঁ দিকের দল। (আয়াত : ৯)
২. নির্ধারিত সময়েই মৃত্যু হবে। (আয়াত : ৬০)
৩. আল্লাহর কোরআন সংরক্ষিত। (আয়াত : ৭৭-৭৯)
৪. আল্লাহর বাণীকে তুচ্ছ জ্ঞান কোরো না। (আয়াত : ৮০-৮১)
৫. আল্লাহ মানুষের খুব কাছেই। (আয়াত : ৮৫)
সুরা হাদিদ
আলোচ্য সুরা শুরু হয়েছে মহান আল্লাহর তাসবিহের মাধ্যমে। এই সুরায় ঈমান, সংগ্রাম, আল্লাহর পথে ব্যয়, ফিতনা থেকে দূরে থাকা ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। মুনাফিকদের দ্বিমুখী মনোভাব প্রকাশ করে দেওয়া হয়েছে। সুরায় তাকওয়া অর্জন করতে বলা হয়েছে। নবী-রাসুলদের পথ অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। সুরার শেষে বলা হয়েছে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বিশেষ রহমতে সিক্ত করেন।
আদেশ-নিষেধ-হিদায়াত
১. সব কিছু আল্লাহর দিকেই প্রত্যাবর্তিত হবে। (আয়াত : ৫)
২. সম্পদের প্রকৃত মালিক আল্লাহ। (আয়াত : ১০)
৩. নিঃশর্ত ঋণদাতার জন্য সম্মানজনক পুরস্কার। (আয়াত : ১১)
৪. মুমিন কোমল হৃদয়ের অধিকারী। (আয়াত : ১৬)
৫. হৃদয়ের কঠোরতা নিন্দনীয়। (আয়াত : ১৬)
৬. নিঃশর্ত ঋণ দানতুল্য। (আয়াত : ১৮)
৭. কার্পণ্য কোরো না। (আয়াত : ২৪)
৮. ইসলামে বৈরাগ্য নেই। (আয়াত : ২৭)
সুরা মুজাদালা
সুরার শুরুতে আল্লাহর গুণাবলি ইত্যাদি উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহর মহত্ত্ব ও অনুকম্পা বর্ণনার মাধ্যমে এই সুরা শুরু ও শেষ করা হয়েছে। এই সুরায় জিহার, কাফফারা, মোনাজাতের হুকুম, মজলিসের শিষ্টাচার, কোনো কাজ শুরু করার আগে রাসুল (সা.)-এর সদকা দেওয়া ইত্যাদি বিষয় বর্ণিত হয়েছে।
আদেশ-নিষেধ-হিদায়াত
১. আল্লাহ মানুষের অনুযোগ শোনেন। (আয়াত : ১)
২. রাসুলের বিরুদ্ধাচারীরা অপদস্থ হবে। (আয়াত : ৫)
৩. ষড়যন্ত্র কোরো না। (আয়াত : ৮)
৪. আল্লাহর শাস্তি প্রত্যাশা কোরো না। (আয়াত : ৮)
৫. বৈঠকে অন্যের জন্য জায়গা করে দাও। (আয়াত : ১১)
৬. আল্লাহর শত্রুদের সঙ্গে বন্ধুত্ব কোরো না। (আয়াত : ১৪)
৭. মিথ্যা শপথ কোরো না। (আয়াত : ১৬)
৮. দ্বিনবিদ্বেষীরা লাঞ্ছিত হবে এবং সত্যপন্থীরাই বিজয়ী হবে।
(আয়াত : ২০-২১)
সুরা হাশর
এই সুরায় শরিয়তের কিছু বিধান বর্ণিত হয়েছে। যেমন—মদিনা থেকে ইহুদিদের বনি নজিরকে দেশান্তর করা, ফাই ও গনিমতের আহকাম, তাকওয়া ইত্যাদি বিষয় আলোচিত হয়েছে। অনুরূপভাবে ইহুদিদের সঙ্গে মুনাফিকদের সখ্য, কোরআনের মাহাত্ম্য ও তাৎপর্য এবং আল্লাহ তাআলার বিশেষ কিছু নাম বিবৃত হয়েছে।
আদেশ-নিষেধ-হিদায়াত
১. বাস্তুচ্যুত মুসলিমদের আশ্রয় দাও। (আয়াত : ৮)
২. মুসলমানের প্রতি বিদ্বেষ রেখো না। (আয়াত : ১০)
৩. অনাগত দিনের জন্য প্রস্তুত থাকো। (আয়াত : ১৮)
৪. আল্লাহকে ভুলে যেয়ো না। (আয়াত : ১৯)
৫. কোরআনের প্রতি বিনীত হও। (আয়াত : ২১)
সুরা মুমতাহিনা
এই সুরায় যেসব মুশরিক মুসলিমদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ, যারা মুসলিমদের সঙ্গে যুদ্ধ করে না এবং যেসব মুমিন নারী হিজরত করেছেন, তাঁদের বিধি-বিধান বর্ণিত হয়েছে। সুরার প্রারম্ভে মুশরিকদের সঙ্গে বন্ধুত্ব ও বন্ধুত্বের উপকরণ অবলম্বনে নিষেধ করা হয়েছে। যুদ্ধ কিংবা শান্তিপূর্ণ অবস্থায় আহলে কিতাবদের সঙ্গে মুসলিমদের সম্পর্কের মূলনীতিও বর্ণিত হয়েছে।
আদেশ-নিষেধ-হিদায়াত
১. আল্লাহবিমুখদের সঙ্গে বন্ধুত্ব কোরো না। (আয়াত : ১)
২. জেনে-বুঝে সত্যবিমুখ হয়ো না। (আয়াত : ১)
৩. বিপদে আল্লাহমুখী হও। (আয়াত : ৪)
৪. অহেতুক শত্রুতা নয়। (আয়াত : ৮)
৫. পরকালে অবিশ্বাসীদের বন্ধু কোরো না। (আয়াত : ১৩)
গ্রন্থনা : মুফতি আতাউর রহমান