লেবাননের দক্ষিণ বৈরুতে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার মধ্যরাতে ইসরায়েলি হামলায় হিজবুল্লাহর এক কর্মকর্তাসহ চারজন নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর একটি সূত্র। চার মাস ধরে চলা একটি ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতির মধ্যে এটি দ্বিতীয় হামলা।
লেবাননের নেতারা এই হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। ঈদুল ফিতর চলাকালীন আনুমানিক মধ্যরাত সাড়ে ৩টায় কোনো পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই এ হামলা চালানো হয়।
এর আগে শুক্রবার ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীর শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলে ইসরায়েল হামলা চালিয়েছিল। তখন বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সর্বশেষ হামলায় চারজন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে একজন নারীও রয়েছেন। এএফপির একজন সাংবাদিক জানিয়েছেন, বহুতল ভবনের ওপরের দুটি তলা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে।
বিপরীত দিকের একটি ভবনের বাসিন্দা ইসমাইল নুরেদ্দিন এএফপিকে বলেন, ‘আমার পরিবারের সবাই চিৎকার করছিল। এত বড় বিস্ফোরণ হয়েছিল যে আমরা ধুলার মধ্যে একে অপরকে দেখতে পাচ্ছিলাম না।’
আরো পড়ুন
গাজায় সব পক্ষকে যুদ্ধবিষয়ক আইন মানতে হবে : যুক্তরাষ্ট্র
হিজবুল্লাহর ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র এএফপিকে জানিয়েছে, হামলায় নিহতদের একজন হলেন হাসান বুদাইর, যিনি হিজবুল্লাহর ‘ফিলিস্তিনবিষয়ক উপপ্রধান’। হামলার সময় তিনি তার পরিবারের সঙ্গে বাড়িতেই ছিলেন।
অন্যদিকে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী ও দেশটির অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা শিন বেট এক যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা বুদাইরকে হত্যা করেছে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, সম্প্রতি তিনি হামাসের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছিলেন, হামাসের যোদ্ধাদের পরিচালনা করছিলেন এবং ইসরায়েলি বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও আসন্ন সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে সহায়তা করছিলেন। তবে বিবৃতিতে এর বেশি বিস্তারিত আর কিছু জানানো হয়নি।
‘পরিষ্কার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন’
লেবাননের প্রেসিডেন্ট জোসেফ আউন এই হামলার নিন্দা জানিয়ে তার দেশের মিত্রদের প্রতি ‘আমাদের পূর্ণ সার্বভৌমত্বের অধিকারের’ পক্ষে সমর্থন দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী নাওয়াফ সালাম বলেছেন, এই হামলা ‘পরিষ্কারভাবে যুদ্ধবিরতি চুক্তির লঙ্ঘন’ এবং এটি গত এক বছরের বেশি সময় ধরে ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে চলমান উত্তেজনা নিরসনের চেষ্টাকে ব্যাহত করছে।
হিজবুল্লাহর সংসদ সদস্য ইব্রাহিম মুসাভি লেবানিজ কর্তৃপক্ষকে ‘লেবাননের জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উচ্চ পর্যায়ের পদক্ষেপ নেওয়ার’ আহ্বান জানিয়েছেন।
এই হামলা এমন সময় ঘটল, যখন কয়েক দিন আগে ইসরায়েল বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলে হামলা চালায়। ওই হামলার আগে লেবানন থেকে ইসরায়েলের দিকে ছোড়া রকেট হামলার জন্য হিজবুল্লাহকে দায়ী করেছিল ইসরায়েল, যদিও ওই হামলার দায় কেউ স্বীকার করেনি। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সতর্ক করে বলেছিলেন, তার দেশের সামরিক বাহিনী ‘লেবাননের যেকোনো জায়গায় যেকোনো হুমকির’ বিরুদ্ধে হামলা চালাবে।
আরো পড়ুন
দক্ষিণ গাজায় ‘অত্যন্ত কঠোর যুদ্ধে’ ফিরছে ইসরায়েলি সেনারা
‘যুদ্ধবিরতি কার্যকর রাখতে হবে’
লেবাননে জাতিসংঘের বিশেষ সমন্বয়ক জিনিন হেনিস-প্লাসশায়ের্ট বলেছেন, ‘আরো সংঘাত কেউই চায় না।’ তিনি এক্সে লিখেছেন, ‘একমাত্র কার্যকর পথ হলো জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব ১৭০১ বাস্তবায়ন করা’, যা ২০০৬ সালে ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে যুদ্ধের অবসান ঘটিয়েছিল এবং চলমান যুদ্ধবিরতির ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে।
হিজবুল্লাহর নেতা নাইম কাসেম শনিবার বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলে ইসরায়েলের হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘আমরা এটি চালিয়ে যেতে দিতে পারি না।’
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেছেন, ‘লেবাননের সরকার সরাসরি দায়ী’ এবং যদি তারা যুদ্ধবিরতি কার্যকর না রাখে, ‘আমরাই তা প্রয়োগ করব।’
চুক্তি অনুযায়ী, ১৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে লেবানন থেকে ইসরায়েলের সম্পূর্ণ সেনা প্রত্যাহার করার কথা ছিল, কিন্তু তারা পাঁচটি ‘কৌশলগত স্থান’ ধরে রেখেছে বলে জানিয়েছে। যুদ্ধবিরতি শর্ত অনুযায়ী, হিজবুল্লাহর উচিত ছিল তাদের বাহিনীকে লিটানি নদীর উত্তরে সরিয়ে নেওয়া এবং দক্ষিণে তাদের অবশিষ্ট সামরিক স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া। ইসরায়েলি সেনারা পিছু হটতে শুরু করার পর লেবাননের সেনাবাহিনী দক্ষিণাঞ্চলে মোতায়েন হয়েছে।