যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কানাডার পুরনো সম্পর্ক শেষ হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি। দুই দেশের অর্থনীতির গভীর সংযোগ এবং কঠোর নিরাপত্তা ও সামরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে গড়ে ওঠা সম্পর্কের অবসান ঘটেছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
স্থানীয় সময় গত বৃহস্পতিবার অটোয়ায় মন্ত্রিসভার এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের কার্নি বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া শুল্কের মুখে কানাডীয়দের অবশ্যই ‘অর্থনীতি নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে’।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওয়াশিংটনের পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় কানাডাও পাল্টা শুল্ক আরোপ করবে, যা যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ‘সর্বোচ্চ প্রভাব’ ফেলবে বলেও কার্নি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
ট্রাম্প গত বুধবার জানান, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে গাড়ি ও গাড়ির যন্ত্রাংশ আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করতে যাচ্ছেন। এই শুল্ক আরোপ স্থায়ী বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
লিবারেল পার্টির নেতা কার্নি বলেন, ১৯৬৫ সালে স্বাক্ষরিত কানাডা-মার্কিন অটোমোটিভ প্রডাক্ট অ্যাগ্রিমেন্ট তাঁর জীবনে দেখা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি।
এই শুল্ক আরোপের মাধ্যমে সেই চুক্তিও শেষ হয়ে গেল বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
সরকার ও ব্যাবসায়িক সম্প্রদায় একসঙ্গে কাজ করলে কানাডার গাড়িশিল্প ট্রাম্পের এই শুল্কের মুখেও টিকে থাকবে বলে আশা তাঁর।
তিনি বলেন, কানাডাকে এমন একটি অর্থনীতি গড়ে তুলতে হবে, যা তারা নিজেরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। অন্য অংশীদারদের সঙ্গে কানাডার বাণিজ্য সম্পর্ক কেমন হবে, তা নিয়ে নতুন করে ভাবতেও হবে।
তিনি আরো বলেন, কানাডীয়রা ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শক্তিশালী বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রাখতে পারবে কি না তা-ই এখন দেখার বিষয়।
যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে কানাডার সব ধরনের পণ্যে আরোপ করা ২৫ শতাংশ শুল্ক আংশিকভাবে কার্যকর করেছে। অ্যালুমিনিয়াম ও ইস্পাত আমদানিতেও একই হারে শুল্ক বসিয়েছে তারা। এর প্রতিক্রিয়ায় কানাডা এখন পর্যন্ত ছয় হাজার কোটি কানাডিয়ান ডলার (প্রায় চার হাজার ২০০ কোটি মার্কিন ডলার) মূল্যের পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে।
ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে গাড়ি আমদানিতে নতুন যে শুল্ক আরোপ করতে যাচ্ছেন, তা ২ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে। যে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো গাড়ি আমদানি করবে তাদের পরদিন থেকে অতিরিক্ত চার্জও দিতে হবে বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস।
গাড়ির যন্ত্রাংশ আমদানিতে শুল্ক কার্যকর হবে মে মাস বা এর পর থেকে।
গত বৃহস্পতিবার ট্রাম্প তাঁর শুল্কের পাল্টায় মিত্র দেশগুলো একসঙ্গে কোনো পদক্ষেপ নিলে তার পরিণতির ব্যাপারে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নকে সতর্ক করে তিনি বলেছেন, ‘যদি তারা একসঙ্গে মিলে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির ক্ষতি করার চেষ্টা করে, তাহলে তাদের ওপর আরো বড় পরিসরে শুল্ক আরোপ করা হবে।’
প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্র গত বছর প্রায় আট মিলিয়ন গাড়ি আমদানি করেছে, যা প্রায় ২৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের এবং কানাডার মোট গাড়ি বিক্রির প্রায় অর্ধেক। যুক্তরাষ্ট্রে গাড়ির শীর্ষ সরবরাহকারী দেশ মেক্সিকো। এর পরে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, কানাডা ও জার্মানি।
মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লডিয়া শেইনবাউম স্থানীয় সময় গত বৃহস্পতিবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে গাড়ির ওপর নতুন শুল্ক আরোপ নিয়ে সরাসরি মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।
তিনি বলেন, তাঁর সরকার সব সময় মেক্সিকোর স্বার্থ রক্ষা করবে। পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও শুল্কের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত মেক্সিকোর কম্পানিগুলোকে সুরক্ষা দেবে বলেও জানান তিনি।
তিনি জানান, শুল্ক কার্যকর হওয়ার পরদিন, আগামী ৩ এপ্রিল মেক্সিকো ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে একটি ‘সমন্ব্বিত প্রতিক্রিয়া’ জানাবে। সূত্র : বিবিসি