বাংলাদেশের বয়সটা খুব বেশি না হলেও এর বয়নশিল্পের ইতিহাস বেশ দীর্ঘ। মহাভারতের যুধিষ্ঠিরের কাছে বঙ্গ থেকে ভেট গিয়েছিল মসলিন। সেটা খ্রিস্টপূর্ব ষোড়শ শতকের কথা। এমন অসংখ্য কাহিনী বলে ইতিহাস।
গর্বের শিল্প
রূপগঞ্জের রূপসী জামদানি
রাসেল আহমেদ, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)

জামদানির ইতিহাস ও বৈশিষ্ট্য : ৯৬ বছরের আবদুল গফুরসহ কয়েকজন প্রবীণ তাঁতি জানান, মোগল আমলে জামদানি উৎকর্ষতার চরম পর্যায়ে পৌঁছেছিল। সে আমলে জামদানি আংরাখা বা পোশাকে ব্যবহৃত হয়েছিল, যা নারী-পুরুষ উভয়েই ব্যবহার করত। সে সময়ের ইউরোপিয়ান চিত্রকলার দরবার ভার্সিলি এবং লন্ডনের নারীদের পোশাকে জামদানি গজ কাপড়ের ব্যবহার দেখা যায়। পঞ্চদশ এবং ষোড়শ শতাব্দীতেও রাজ দরবারে জামদানি ব্যবহৃত হতো। এগুলো মূল্যবান সম্পদ হিসেবে ঢাকা থেকে আগ্রা, বোখারা, সমরখন্দসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বাণিজ্য হতো। সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতাব্দীতেও শতাধিক পণ্য বাংলা থেকে ইউরোপিয়ানরা হামবুর্গ, লন্ডন, মাদ্রিদ, কোপেনহেগেন ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠাত, যার মধ্যে জামদানিই সর্বাধিক সমাদৃত ছিল। জামদানিশিল্প অদ্বিতীয় মূলত দুটি কারণে। প্রথমত, এর রয়েছে বৈশিষ্ট্যমূলক জ্যামিতিক প্যাটার্নের ধারাবাহিকতা। দ্বিতীয়ত, এর মোটিফ, যা বুননের সময়েই কাপড়ে খুব সুন্দরভাবে গেঁথে যায়। জামদানি মোটিফের বয়ন কৌশল অভিনব এবং একই সঙ্গে জটিল। মোটিফগুলো বিমূর্ত দেখালেও এগুলো সরাসরি প্রকৃতির সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং ফুল, লতাপাতা, প্রাণিকুলেরই শোভন জ্যামিতিক রূপান্তর। একটি বিশেষ ফুলেল মোটিফ যদি বিচ্ছিন্নভাবে জমিনে বিছানো থাকে তাকে বলা হয় বুটিদার। ফুলের নকশার কোনাকুনি বিন্যাসকে বলা হয় তেছরি। আর মোটিফের সংযুক্তিকে বলা হয় জাল। মোটিফগুলো তাঁতির পারিপার্শ্বিক পরিবেশের প্রভাবে প্রভাবিত বিধায় এগুলোর নাম তাঁতিভেদে পরিবর্তিত হয়।
কেন বিখ্যাত রূপগঞ্জের নোয়াপাড়া : তাঁতি নুরুল আমিন, আনোয়ার, বাচ্চু মিয়াসহ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকার ডেমরা সুলতানা কামাল সেতু পার হলেই শীতলক্ষ্যাপারের যে নোয়াপাড়া গ্রাম, দীর্ঘকাল ধরে জামদানি কারিগরদের বসবাসের ফলে এখানে গড়ে উঠেছে জামদানি পল্লী। আবহাওয়া এখানে তাঁতিদের মধ্যে তৈরি করেছে উদ্দীপনা, কর্মস্পৃহা। এ প্রসঙ্গে মজার একটা গল্প প্রচলিত আছে। দুই দশক আগের জামদানি তৈরিতে দক্ষ শাহিন মিয়া নামের এক তাঁতি তাঁতসহ চলে গেলেন ময়মনসিংহের নিজ বাড়িতে। কিন্তু তাঁর কাজের মান খারাপ হচ্ছে। অগত্যা তিনি ফিরে এলেন রূপগঞ্জে আর তাঁর কাজে ফিরে এলো আগের জৌলুস। ধারণা করা হয়, এর পেছনে রয়েছে শীতলক্ষ্যার জলহাওয়া আর অজানা রসায়ন। এখানকার রোদের তেজে সুতায় আসে আলাদা ঔজ্জ্বল্য, যা পৃথিবীর আর কোথাও পাওয়া যায় না। এই শিল্পে যেমন রয়েছে সম্ভাবনার সমুদ্র, তেমনি আছে সমস্যার পাহাড়। মুক্তবাজার অর্থনীতি, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, সিদ্ধান্ত প্রদানে সরকারের দীর্ঘসূত্রতা, হরতাল-অবরোধ, প্লট প্রদানে অনিয়ম ও ব্যাংক ঋণের অপ্রতুলতার কারণে জামদানিশিল্প বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
তাঁতিদের সুখ-দুঃখ : ১৯৭৫ সালেও এখানে প্রায় এক লাখ ৩০ হাজার জামদানি তাঁতি ছিলেন। রূপগঞ্জের জামদানি তাঁতশিল্প শ্রমিক ইউনিয়ন সূত্র জানায়, নব্বইয়ের দশকে এসে এ সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ৬০ হাজারে। আর বর্তমানে দেড় থেকে দুই হাজার পরিবার এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত। কথা হয় জামদানি পল্লীর ৯ নম্বর ওয়ার্ডের তাঁতি নুরুল আমিন ও তাঁর স্ত্রী আমিনা বেগমের সঙ্গে। বুকে জমানো কষ্ট আর ক্ষোভ নিয়েই তাঁরা বলেন, 'আমাগো তাঁতিগো কোনো শখ নাই। শরীরের ঘাম ঝরাইয়া আর পরিশ্রম কইরাও ভালা মতোন মজুরি পাই না। হগল লাভ অয় মহাজনগো।' তাঁতি হাওয়া বেগম, আকরাম হোসেন ও সাব্বির হোসেন বলেন, 'একটা শাড়ি বানাইয়া তাঁতিগো কিছুই থাহে না। সরকারের তরফ থেইক্কা যদি ৫০ হাজার টেকা কইরা গরিব তাঁতিগো লোন দিত, তাইলে তাঁতিরা খাইয়া-পইরা বাঁচত।' সত্তরোর্ধ্ব তাঁতি ফজর আলী আবেগজড়িত কণ্ঠে বলেন, 'দেশের নাম ধইরা রাহনের লেইগ্যা আমরা এই ঐতিহ্য ধইরা রাখছি। সারা দুনিয়ায় জামদানি শাড়ির লেইগ্যা বাংলাদেশেরে চিনে। এত্তো কষ্ট কইরা তাঁতিরা শাড়ি বানায়, হেই তাঁতিগো সরকার কোনো সুযোগ-সুবিধা দেয় না। তাঁতিরা যদি এই পেশা ছাইড়া চইলা যায়গা, তাইলে সরকার কেমনে এই ঐতিহ্য ধইরা রাখবো?' তাঁতি চম্পা আক্তার, আনোয়ারা বেগম ও সফুরা খাতুন বলেন, 'মাতার ঘাম পায়ে ফালাইয়া একটা শাড়ি বানাই। এত্তা শাড়ি বানাইয়াও আমাগো শাড়ি পরার ভাগ্য নাই। হের পর যদি ঘামের মজুরি ঠিক মতোন না পাই, তাইলে দেশের ইজ্জত বাঁচাইয়া আমরা কী করমু? নিজেরা বাঁইচা তারপর তো দেশের চিন্তা করুম!'
প্লট বরাদ্দে অনিয়ম-দুর্নীতি : ১৯৯৩ সালে জামদানিশিল্পীদের কথা ভেবে নোয়াপাড়া এলাকায় ২০ একর জমিতে প্লট বরাদ্দের পরিকল্পনা নেয় তৎকালীন সরকার। ৪০৬টি প্লট তৈরি করা হয়। কিন্তু বরাদ্দের শুরুতেই চলে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি। মাত্র ১২০ জন প্রকৃত তাঁতির মধ্যে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। আর ৩০টি প্লট খালি পড়ে আছে। বাকি প্লটগুলো স্থানীয় ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালীরা দখল করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। নোয়াপাড়ার বিসিক শিল্প নগরীর কার্যালয়ের কতিপয় কর্মকর্তা মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে এসব প্লট বরাদ্দ দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। প্লট দখলকারীদের অনেকে জামদানি কারখানা করার পরিবর্তে টেক্সটাইল মিল নির্মাণ করেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বিসিক কার্যালয়ের সামনের ১ নম্বর ওয়ার্ডের প্লটগুলো অবৈধভাবে দখলে নিয়ে স্থানীয় রশিদ মিয়া, জয়নাল মিয়া, সোহরাব মাস্টার, হযরত আলী, রহমান মিয়া, আলী আলম, মোখলেস মিয়া টেক্সটাইল মিল করেছেন। এ ছাড়া তারাব পৌরসভার মহিলা কমিশনার জ্যোৎস্না বেগম, মিল ব্যবসায়ী নুরু হাজি, গাড়ি ব্যবসায়ী নুরে আলম, টেক্কু মিয়াসহ আরো অনেকে অবৈধভাবে প্লট দখলে নিয়ে বাড়িঘর নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছেন। জামদানি তাঁতি হিসেবে জানান দিতে কেউ কেউ নামমাত্র বাঁশ-খুঁটি পুঁতে রেখেছেন। অনেক তাঁতি প্লট না পেয়ে বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। কথা হয় তেমন একজনের সঙ্গে। আউয়াল আলী নামের এ তাঁতি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, 'কাগজপত্র জমা দিছি। অথচ প্লট পাই নাই। হেই প্লট পাইছে এক ব্যবসায়ী।' নুরুল আমিন গত ১১ বছর ধরে ভাড়ায় তাঁত চালিয়ে আসছেন। অথচ তাঁর কপালেও জোটেনি প্লট। নুরুল আমিন বলেন, 'আমরা প্রকৃত তাঁতি অইয়াও প্লট পাই না। আর যেরা তাঁতি না হেরা প্লট পায়।'
গত বুধবার দুপুর আড়াইটার দিকে প্লট দখলের অভিযোগ সত্যি কি না বক্তব্য নিতে তারাব পৌরসভার সংরক্ষিত মহিলা আসনের কমিশনার জ্যোৎস্না বেগমের সেলফোনে ফোন দিলে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে তিনি দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। তাঁতিরা আরো বলেন, বিসিকের অফিস সহকারী আবদুল হকের বিরুদ্ধেও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। এ ব্যাপারে আবদুল হক বলেন, প্লট বরাদ্দে অনিয়ম হয়েছে এটা ঠিক না। গরিব তাঁতিরা প্লট পেলেও তারা ঘর তুলতে না পেরে বিক্রি করে দেয়।
জামদানি রপ্তানি : তাঁতিরা জানান, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, সৌদি আরব, শ্রীলঙ্কা, লন্ডনসহ বিভিন্ন দেশে জামদানি রপ্তানি হয়। প্রতিবছর ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকার জামদানি রপ্তানি করা হয়। প্রতিবছর বাংলদেশসহ ভারত, ইসলামাবাদ, করাচি, লাহোর ও ইউরোপে বসে জামদানি মেলা। এসব মেলায় নোয়াপাড়া জামদানি ব্যবসায়ী মজিবুর, আনোয়ার মিয়াসহ প্রায় ১৫ জন অংশ নেন। মৌসুমি জামদানি শাড়ি হাউসের মালিক জিয়াউল হক বলেন, জামদানির কদর রয়েছে সারা বিশ্বে। কিন্তু সমস্যা রয়েছে অনেক। তাঁতিরা এ পেশা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। মহাজনদের জ্বালায় অতিষ্ঠ তাঁরা। পূজা, বৈশাখ, ঈদ, ফাল্গুন ও বসন্তের সময় তাঁদের কদর থাকে। এ ছাড়া কদর নেই। আরেকটা সমস্যা হচ্ছে, ক্রেতারা ঢাকা থেকে জামদানি কেনে। ক্রেতাদের যদি পল্লীতে এসে জামদানি কেনার সুযোগ থাকত তাহলে তাঁরাও ভালো দামে ও ভালো শাড়ি পেত, পাশাপাশি তাঁতিরা কটা টাকা বেশি পেতেন। ঢাকা থেকে শাড়ি কিনে অনেক ক্রেতাই ঠকে।
লাভের গুড় খায় পিঁপড়ায় : জামদানি তাঁতিদের অসচ্ছলতার সুযোগকে ষোলআনাই কাজে লাগাচ্ছেন এক শ্রেণির দাদন ব্যবসায়ী। ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় ওই সব মহাজনের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে জামদানিশিল্প ও কারিগররা। রূপগঞ্জের জামদানি শিল্পনগরীতে ৭০ জনের মতো মহাজন দাদন ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। তাঁতিরা মনে করেন, স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণ পেলে তাঁরা দাদন ব্যবসায়ীদের খপ্পর থেকে বের হতে পারতেন। তাঁতি দ্বীন ইসলাম ও জহিরুল ইসলাম বলেন, ব্যাংক থেকে যদি প্রত্যেক তাঁতিকে কম সুদে ৫০ হাজার করে টাকা করে ঋণ দেওয়া হতো আর প্রকৃত জামদানি কারিগরদের প্লট দিত সরকার, তাহলে জামদানিশিল্পে আবার সুদিন ফিরে আসত। তাঁত বোর্ড থেকে ১৮ হাজার টাকা ঋণ দেওয়া হয় বছরে। এটাও অনেকে পায় না। পেতেও অনেক হয়রানি হতে হয়। এ শিল্পকে বাঁচাতে সরকার যদি একটু নজর দেয় তাহলে সারা বিশ্বে জামদানি বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করে তুলবে।
উপজেলা তাঁত বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য দায়িত্বশীল কাউকে পাওয়া যায়নি। লিয়াজোঁ অফিসারের সেলফোনে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। বিসিক জামদানি শিল্পনগরী নোয়াপাড়ার কার্যালয়ে গত বুধবার দুপুরে কথা হয় শিল্পনগরী কর্মকর্তা শফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ৪৯টি প্লট অবৈধ দখলে আছে। আবার কেউ কেউ প্লট দখলে নিয়ে টেক্সটাইল মিল করেছে এটাও সত্য। এগুলো অচিরেই দখলমুক্ত করা হবে। ২০০৮ সালে ১৭৯টি প্লট অবৈধ দখলে ছিল। এগুলো বাতিল করা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জামদানি এ দেশের ঐতিহ্য। এ শিল্পকে বাঁচাতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। ইতিমধ্যে জামদানি প্লট কল্যাণ সমিতি আট দফা দাবি পেশ করে আবেদন করেছে। এসব জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হয়েছে।
সম্পর্কিত খবর

বাটা কোন দেশের, জানে না লুটপাটকারীরা
- ভাঙচুরের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৭২
ওমর ফারুক

খুলনার খালিশপুরের সাজিদ (২০) গত সোমবার যোগ দিয়েছিলেন খুলনা শহরে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ মিছিলে। সেই বিক্ষোভ থেকেই কিছু সুযোগসন্ধানী লোক খুলনা শহরে বাটার শোরুমে প্রথমে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ভাঙচুর করে। এরপর লুটপাট চালায়। সেই লুটপাটকারীদের মধ্যে ছিলেন সাজিদও।
পুলিশ সাজিদের মতো আরো অনেকের কাছেই জানতে চেয়েছিল, বাটা কোন দেশের প্রতিষ্ঠান। তাঁরা কেউই জানাতে পারেননি। তাহলে কেন তাঁরা হামলা ও লুটপাট করেছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তাঁরা জানান, অনেকেই লুটপাট করেছে, এ কারণে তাঁরাও লুটপাটে যোগ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে খুলনার সোনাডাঙ্গা থানার ওসি মো. শফিকুল ইসলাম মোবাইল ফোনে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ঘটনার সময় কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এরপর ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত করে জড়িত আরো অনেককে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। আমরা এখন পর্যন্ত ৩৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছি। অন্যদের চিহ্নিত করা হচ্ছে।
এক প্রশ্নের জবাবে শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছি। তারা জানায়, বাটা ইসরায়েলি পণ্য কি না তারা তা জানে না।’ তিনি আরো বলেন, ‘ঘটনার পর আশপাশের এলাকায় কিছু জুতা পড়ে ছিল, সেগুলো শিক্ষার্থীরা উদ্ধার করে থানায় জমা দেয়। আর যেগুলো লুট হয়েছে সেগুলো আমরা উদ্ধারের চেষ্টা করছি। এখন পর্যন্ত পাঁচ জোড়া জুতা উদ্ধার করা গেছে।
সোনাডাঙ্গা থানার পুলিশ সদস্যরা জানান, গত মঙ্গলবার রাত থেকে গতকাল বুধবার পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্য রয়েছেন খালিশপুরের বাসিন্দা মো. সাইদ তালুকদার (১৮), খান জাহানআলী থানার বাড়ৈপাড়ার মৃত আনন্দ দাসের ছেলে সবুজ দাস ওরফে মো. আবদুল্লাহ (২৬), খালিশপুরের রাজ শিকদার (২১), মো. আশরাফ হোসেন (২৬) এবং সোনাডাঙ্গার মো. লাল মিয়া (৫২)।
ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুরের ঘটনায় ৭২ জন গ্রেপ্তার : প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম গতকাল সাংবাদিকদের জানান, গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে গত সোমবার অনুষ্ঠিত বিক্ষোভের সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও হামলার ঘটনায় ১০টি মামলা করা হয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৭২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যের বরাতে প্রেস সচিব জানান, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে খুলনায় ৩৩ জন, সিলেটে ১৯ জন, চট্টগ্রামে পাঁচজন, গাজীপুরে চারজন, নারায়ণগঞ্জে চারজন, কুমিল্লায় তিনজন এবং কক্সবাজারে চারজন রয়েছেন। এসব ঘটনা সংক্রান্তে এখন পর্যন্ত মোট ১০টি মামলা করা হয়েছে।
খুলনা থেকে কালের কণ্ঠের খুলনা ব্যুরো প্রধান এইচ এম আলাউদ্দিন জানান, কেএফসি, ডমিনোস পিত্জা ও বাটা শোরুমে হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় পৃথক তিনটি মামলা করা হয়েছে। তিন মামলায় মোট আসামির সংখ্যা প্রায় তিন হাজার। তবে আসামিরা সবাই অজ্ঞাতপরিচয়। এ ঘটনায় প্রথম দিন ৩১ জনকে গ্রেপ্তার করার পর আরো পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে মোট গ্রেপ্তার হলো ৩৬ জন।

সবিশেষ
বিলুপ্ত ‘ডায়ার উলফ’ ফেরালেন বিজ্ঞানীরা
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

টেলিভিশন সিরিজ ফ্যান্টাসি ড্রামা ‘গেম অব থ্রোনস’ বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছে ডায়ার উলফকে। এবার জিন প্রযুক্তিবিদ্যায় (জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং) ভর করে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার বছর পরে পৃথিবীতে ফিরে এলো নেকড়ের এই প্রজাতি, আদতে যা বিলুপ্ত একটি বিশেষ প্রজাতির সাদা নেকড়ে, যার বিজ্ঞানসম্মত নাম অ্যায়োনোসিয়ন ডায়ারাস।
যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের ডালাসভিত্তিক ‘কলোসাল বায়োসায়েন্সেস’ নামের একটি বায়োটেক সংস্থার কর্মকর্তাদের দাবি, জিন প্রযুক্তিবিদ্যার সাহায্যে বিজ্ঞানীরা বিশ্বের প্রথম বিলুপ্ত প্রাণী পুনরুদ্ধারের (ডি-এক্সটিংকশন) কাজটি সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন। সফলভাবে পরীক্ষাগারে তিনটি ডায়ার উলফ ছানার জন্ম হয়েছে।

বর্ষবরণের প্রস্তুতি


তবু ফিটনেসহীন গাড়ি বেড়ে ছয় লাখ
- অনুপযুক্ত গাড়ি দেড় বছরে বেড়েছে লাখের ওপরে
ঈদ মৌসুমে ৩১৬ দুর্ঘটনা
বিশেষ প্রতিনিধি

ফরিদপুর সদরের বাখুণ্ডা শরিফ জুট মিলের সামনে গত মঙ্গলবার সকালে চালক নিয়ন্ত্রণ হারালে খাদে পড়ে যায় যাত্রীবাহী বাস। তাতে বাবা-ছেলেসহ প্রাণ হারান সাতজন। পরে যাচাই করতে গিয়ে বিআরটিএ ফরিদপুর কার্যালয়ের কর্মকর্তারা দেখতে পান, বাসের ফিটনেস সনদের মেয়াদ গত ৫ মার্চ শেষ হয়েছে। বিআরটিএ ফরিদপুর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক নাসির উদ্দিন গতকাল দুপুরে কালের কণ্ঠকে বলেন, হাইডেক্স পরিবহনের এই বাসের ফিটনেস ছিল না।
নিরাপদ ঈদ যাত্রার জন্য ফিটনেসহীন গাড়ি চলাচল রোধে যৌথ অভিযান শুরু করা হয়েছিল গত ২২ মার্চ। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআরটিএর হিসাবে গত ১২ মার্চ পর্যন্ত দেশে ফিটনেসহীন গাড়ি ছিল ছয় লাখ ১১ হাজার ১৪১টি। তবে অভিযান চালানোর পরও এ ধরনের অনুপযোগী গাড়ি বাড়ছেই।
গত ১৯ ডিসেম্বর রাজধানীতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে পরবর্তী এক মাসের মধ্যে রাজধানীতে চলাচলকারী সব ধরনের যানবাহনের ফিটনেস নিশ্চিত করা না হলে বিআরটিএর বিরুদ্ধে ‘কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে’ বলে সতর্ক করেছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান।
বিআরটিএ ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের ফিটনেস শাখার দায়িত্বে থাকা সহকারী পরিচালক মো. রুহুল আমীন গত সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠকে বলেন, বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানকালে ফিটনেসহীন গাড়ি আটক করে ডাম্পিংয়েও পাঠানো হয়। ২০২৩ সাল থেকে খেলাপি মালিকদের নিয়মিত চিঠিও দেওয়া হচ্ছে। তিনি স্বীকার করেন, ঢাকায়ও ফিটনেসহীন গাড়ি বাড়ছে।
‘সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮’-এর ২৫ ধারা অনুযায়ী, বিআরটিএ থেকে মোটরযানের ফিটনেস সনদ নেওয়ার বিধান রয়েছে।
বিআরটিএর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, দফায় দফায় কর মওকুফের পরও মালিকরা গাড়ির ফিটনেস হালনাগাদ করছেন না। বারবার অভিযান চালানোর পরও এসব গাড়ির মালিকরা কৌশলে গাড়ি চালানোর ব্যবস্থা টিকিয়ে রেখেছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব গাড়ির জন্য সড়কে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি বাড়ছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের হিসাবে, ১৯৯৮ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত সংঘটিত সড়ক দুর্ঘটনাগুলোর অন্যান্য কারণের মধ্যে ছিল ৬৬ হাজার ৬৬১টি অনুপযোগী (ফিটনেসবিহীন) গাড়ি। এখনও সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ এটি। সড়ক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান বলেন, সড়কে দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ ফিটনেসহীন গাড়ি। বাস ও ট্রাকের মতো ভারী গাড়ির ফিটনেস তুলনামূলকভাবে কম। গবেষণায় দেখতে পেয়েছি, ২০১৯ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় ভারী গাড়ি, বাস ও ট্টাকের সংশ্লিষ্টতা ছিল ৪৩.৪ শতাংশ। ২০২০ সালে তা বেড়ে হয় ৪৪.৫ শতাংশ। এখন তা আরো বেড়েছে।
বিআরটিএর মোটরযান পরিদর্শকরা জানান, কোনো গাড়ি সড়কে চলাচলের উপযোগী কি না, তা যাচাই করার জন্য গাড়ির ৩২টি বিষয় পর্যবেক্ষণ করতে হয়। সব বিষয় খালি চোখে ধরা পড়ে না। মিরপুর ছাড়া বাকি অন্য সব সার্কেলে গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষা করা হয় চোখে দেখে। চোখে শুধু গাড়ির বডি, চেসিস নম্বর, ইঞ্জিনের অবস্থা, হেডলাইট ও লুকিং গ্লাস এ ধরনের ছয়-সাতটি অবস্থা দেখে ফিটনেস সনদ দেওয়া হয়। গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষা যান্ত্রিকভাবে সম্পন্ন করতে ১৯৯৪ সালে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। ২০০৪ সালে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে মোট পাঁচটি সেমি অটোমেটিক (আধা-স্বয়ংক্রিয়) ভেহিকল ইন্সপেকশন সেন্টার (ভিআইসি) বা যানবাহন পরীক্ষণকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত শুধু বিআরটিএর মিরপুর কার্যালয়ে এ কেন্দ্র চালু হয়।
ঈদ মৌসুমে ৩১৬ দুর্ঘটনা
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী। গতকাল বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানান, ঈদুল ফিতরের আগে-পরে দেশের বিভিন্ন সড়কে ৩১৫টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় ৩২২ জন নিহত হয়েছেন। প্রতিবারের মতো দুর্ঘটনার শীর্ষে রয়েছে মোটরসাইকেল।
সংবাদ সম্মেলনে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে ফিটনেসহীন গাড়ির কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, দেশের সড়ক-মহাসড়কে মোটরসাইকেল, ব্যাটারিচালিত রিকশা, অটোরিকশা অবাধে চলাচল; জাতীয় মহাসড়কে রোডসাইন বা রোড মার্কিং, সড়কবাতি না থাকায় হঠাৎ ফিডার রোড থেকে যানবাহন উঠে আসা; সড়কে মিডিয়ামে রোড ডিভাইডার না থাকা, অন্ধবাঁকে গাছপালায় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি; মহাসড়কের নির্মাণ ত্রুটি, যানবাহনের ত্রুটি, ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতা—উল্টোপথে যানবাহন, সড়কে চাঁদাবাজি, পণ্যবাহী যানে যাত্রী পরিবহন; অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, অতিরিক্ত যাত্রীবহন ও বেপরোয়া যানবাহন চালানো এবং একজন চালক অতিরিক্ত সময় ধরে যানবাহন চালানোয় দুর্ঘটনা ঘটছে।