মৌলভীবাজার শহরে এক আইনজীবীকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গত রবিবার রাতে পৌরসভার মেয়র চত্বরের উত্তর পাশের ফুটপাতে ফুচকার দোকানের সামনে এ ঘটনা ঘটে। নিহত আইনজীবী আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তাঁকে হত্যার প্রতিবাদে গতকাল সোমবার আদালত বর্জন করে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন আইনজীবীরা।
নিহত সুজন মিয়া (৩৫) মৌলভীবাজার শহরতলির পূর্ব হিলালপুর গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। তাঁর পৈতৃক বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের ধুবলাপাড়ায়। বাবার নাম জহিরুল ইসলাম। তিনি সাত-আট বছর ধরে মৌলভীবাজার জেলা জজ আদালতে আইন পেশার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
পুলিশ, পরিবার ও স্থানীয় লোকজন সূত্রে জানা গেছে, আইনজীবী সুজন মিয়া রবিবার রাতে পৌরভবনের বিপরীত পাশে সরকারি স্কুল মাঠে বাণিজ্যমেলায় যান। তিনি সেখান থেকে এসে রাত সাড়ে ১১টার দিকে পৌরসভা প্রাঙ্গণে একটি ফুচকার দোকানের সামনে অবস্থান করছিলেন। তখন কয়েকজন দুর্বৃত্ত তাঁর ওপর অতর্কিত হামলা চালায় এবং তাঁকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। স্থানীয় কয়েকজন সুজনকে উদ্ধার করে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আহমেদ ফয়সল জামান বলেন, ‘সুজন মিয়াকে আমরা মৃত অবস্থায় পেয়েছি। তাঁর গলার দিকে স্ট্যাবের (ছুরিকাঘাত) দাগ ছিল। ময়নাতদন্তের পর বিস্তারিত বলা যাবে।’
সুজন মিয়ার বাবা জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘কেন, কে বা কারা তার ওপর হামলা চালিয়েছে, এ সম্পর্কে কিছুই জানি না। ছয়-সাত মাস আগে সুজন মিয়া বিয়ে করেছিল।
তবে বউকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘরে তোলা হয়নি।’
মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার এম কে এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘আমরা বিষয়টি জানার চেষ্টা করছি, কিছু ভিডিও ফুটেজ পেয়েছি। প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গেও কথা বলেছি। কেউই হামলাকারীদের চিনতে পারেননি। তবে সবাই বলছেন, তাদের বয়স অল্প। বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে আমরা তদন্তে অগ্রসর হচ্ছি। এ বিষয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে থানায় হত্যা মামলা হয়েছে।’
অনুসন্ধানে জানা গেছে, অ্যাডভোকেট সুজন মিয়া দীর্ঘদিন ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। মৌলবাদী ও ধর্ম ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচিতে তাঁর সক্রিয় উপস্থিতি ছিল। এসব ঘটনায় তাঁকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আদালত বর্জন, স্মারকলিপি ও বিক্ষোভ মিছিল : আইনজীবী সুজন মিয়া হত্যার প্রতিবাদে গতকাল আদালত বর্জন করে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন মৌলভীবাজার জেলা আইনজীবী সমিতি। দুপুরে মৌলভীবাজারের আদালত প্রাঙ্গণে ঘণ্টাব্যাপী এই মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করা হয়।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন আইনজীবী সমিতির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান মুজিব, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শান্তি পদ ঘোষ, রমাকান্ত দাশগুপ্ত, মামুনুর রশীদ মামুন, কামরেল আহমদ চৌধুরী, মো. জয়নুল হক, মো. মিজানুর রহমান, বকশী জুবায়ের আহমদ প্রমুখ। পরে তাঁরা আদালত সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করেন। মিছিল শেষে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (ডিসি) ও পুলিশ সুপার বরাবরে স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
মুজিবুর রহমান মুজিব বলেন, ‘স্মারকলিপিতে আমরা বলেছি, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আইনজীবী সুজন মিয়ার হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করতে হবে। তা না হলে আইনজীবী সমিতি পরবর্তী পর্যায়ে আরো কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।’ তিনি বলেন, ‘মৌলভীবাজার শহরের রাস্তাঘাটে ফুচকা ও ভ্রাম্যমাণ দোকানের কারণে যানজটের সৃষ্টি হয়; অবিলম্বে এসব দোকান বন্ধ করতে হবে।’
জানাজা ও দাফন : গতকাল বাদ আসর মৌলভীবাজার শহরের হজরত সৈয়দ শাহ মোস্তফা (রহ.) মাজার প্রাঙ্গণে সুজন মিয়ার জানাজা হয়। এতে জেলার আইনজীবী, সুধীসমাজ, সাংবাদিকসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। পরে মাজার এলাকায় মরদেহ দাফন করা হয়।