ভোজ্যতেলের সংকট নিরসনের আশ্বাস ব্যবসায়ী সংগঠনের

  • আতঙ্কিত হয়ে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ভোজ্যতেল না কেনার আহবান
  • দেশের শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোর আমদানি করা ভোজ্যতেল আগামী ৭-১০ দিনের মধ্যে বাজারে আসবে
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
ভোজ্যতেলের সংকট নিরসনের আশ্বাস ব্যবসায়ী সংগঠনের
সংগৃহীত ছবি

কয়েক দিনের মধ্যেই বাজারে সয়াবিন তেলের সংকট কেটে যাবে বলে আশ্বস্ত করেছে ভোজ্যতেল সরবরাহকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স ও বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন।

গতকাল রবিবার তেল সরবরাহকারী সংগঠনটির পক্ষ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটি জানায়, পবিত্র রমজান মাস সামনে রেখে বাজারে ভোজ্যতেলের বাড়তি চাহিদা রয়েছে। বিষয়টি বিবেচনায় এনে অ্যাসোসিয়েশনভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বেশি পরিমাণ ভোজ্যতেল সরবরাহ করছে।

ভোজ্যতেলের সরবরাহের পরিমাণ বিবেচনায় সংকটের কোনো সুযোগ নেই। কিছু ব্যবসায়ীর মজুদের প্রবণতা থেকে যদি সংকট হয়ে থাকে তবে তা অচিরেই কেটে যাবে।

সংগঠনটি আরো জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেলের মূল্য স্থিতিশীল থাকায় অস্বাভাবিক মুনাফার সুযোগ নেই। এ ছাড়া দেশের শীর্ষস্থানীয় ভোজ্যতেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি ভোজ্যতেল আমদানি করেছে, যা আগামী ৭ থেকে ১০ দিনের ভেতরে বাজারে প্রবেশ করবে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, সম্প্রতি ভোজ্যতেলের সরবরাহে ঘাটতির সংবাদে সাধারণ ভোক্তাদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তাই ভোক্তা ও ভোজ্যতেলের ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে আমরা অনুরোধ করছি যে তাঁরা যেন আতঙ্কিত হয়ে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পরিমাণে ভোজ্যতেল না কেনেন। এ সংকট মোকাবেলায় সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরগুলোর সঙ্গে সমিতি নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করছে, যাতে এ সংকট দ্রুত নিরসন করা যায়।

এমতাবস্থায় বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স ও বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের আশ্বস্ত করতে চায় যে আমরা এই সংকট কাটিয়ে উঠতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

এ ছাড়া এই সংকটে যেন ভোজ্যতেলের সরবরাহ ও মূল্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে তা নিশ্চিতে সরকারিভাবে বাজার তদারকি বাড়ানো, ভোক্তাদের সহযোগিতা ও ধৈর্য একান্ত কাম্য।

 

শর্ত জুড়ে তেল বিক্রি করলে শাস্তি

এদিকে ভোজ্যতেলের সঙ্গে অন্য পণ্য কেনার শর্ত জুড়ে দিলে কঠোর শাস্তির মুখে পড়তে হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মোহাম্মদ আলীম আখতার খান।

গতকাল রবিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে টিসিবি ভবনে এক মতবিনিময়সভায় তিনি এ কথা বলেন। পবিত্র রমজান উপলক্ষে ভোজ্যতেলের হালনাগাদ তথ্য সম্পর্কে অবহিত, মূল্য স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার উদ্যোগ হিসেবে এই মতবিনিময়সভা অনুষ্ঠিত হয়।

মোহাম্মদ আলীম আখতার খান বলেন, বাজারে তেলের সঙ্গে চাল, আটা, চা-পাতাসহ বিভিন্ন পণ্য কিনতে ভোক্তাদের শর্ত দেওয়া হচ্ছে।

এসবের প্রমাণও পাওয়া গেছে। কিন্তু তেল রিফাইনারিকারী কম্পানিগুলো তা অস্বীকার করছে। আমরা বাজারে কোথাও এমনটা দেখলে কম্পানি ও ডিলারদের জরিমানা করব।

মহাপরিচালক আরো বলেন, বাজারে বর্তমানে সয়াবিন তেল নিয়ে নাজুক অবস্থা বিরাজ করছে। তেলের ক্ষেত্রে আমরা ছয়টি রিফাইন প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরশীল। গত তিন-চার মাস যাবৎ তেল নিয়ে বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে।

সভায় ভোক্তার পরিচালক ফকির মোহাম্মদ মনোয়ার হোসেন জানান, রাজধানীর বিভিন্ন বাজার পর্যবেক্ষণ করে তেলের সঙ্গে শর্ত জুড়ে দেওয়ার বিষয়টির সত্যতা মিলেছে।

সভায় ভোজ্যতেল মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মওলা বলেন, কাদা ছোড়াছুড়ি বাদ দিতে হবে। কম্পানিগুলো তেল এনে পরিশোধন করে, আর আমরা তা বিক্রি করি। কয়েক বছর ধরে ট্যারিফ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মিলে দাম ঠিক করে দিচ্ছে। প্রয়োজনে আবার দাম ঠিক করে নিন, এর পরও বাজার ঠিক রাখুন।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

খরস্রোতা কংস নদ

শেয়ার
খরস্রোতা কংস নদ
হঠাৎ দেখে বোঝার উপায় নেই এটিই একসময়ের খরস্রোতা কংস নদ। এখন এক ফোঁটাও পানি নেই। নদীর বুকে ফুটবল খেলছে শিশু-কিশোররা। ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট ও ফুলপুর উপজেলার সংযোগস্থল সরচাপুর-গাজীপুর গ্রাম থেকে তোলা। ছবি : কালের কণ্ঠ
মন্তব্য
৩২টি প্রস্তাবে দ্বিমত এবি পার্টির

সংস্কারে জনমত নিতে জরিপ চালাবে ঐকমত্য কমিশন

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
সংস্কারে জনমত নিতে জরিপ চালাবে ঐকমত্য কমিশন
অধ্যাপক আলী রীয়াজ

রাষ্ট্র সংস্কারে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রমে দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিতে জরিপ চালানো হবে বলে জানিয়েছেন কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি আরো জানান, ওয়েবসাইটের মাধ্যমেও আগ্রহী জনগণ তাদের মতামত জানাতে পারবে।

গতকাল সোমবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সঙ্গে হওয়া সংলাপের শুরুতে এ কথা জানান তিনি। বৈঠকে এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জুর নেতৃত্বে দলটির ১৩ জন সদস্য অংশগ্রহণ করেন।

এ সময় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন।

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ গত ২০ মার্চ শুরু হয়। ঈদের ছুটির কারণে সংলাপ বন্ধ থাকলেও গতকাল সোমবার থেকে আবারও শুরু হয়েছে। ওই সংলাপে অংশ নিয়ে এবি পার্টি সংস্কার প্রশ্নে তাদের দীর্ঘ বক্তব্য তুলে ধরেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঐকমত্য কমিশন উত্থাপিত ১৬৬টি প্রস্তাবের মধ্যে ১০৮টির সঙ্গে একমত হয়েছে এবি পার্টি। ২৬টি প্রস্তাবে তারা আংশিক একমত আর ৩২টি প্রস্তাবে তাদের দ্বিমত রয়েছে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে ২৯টি রাজনৈতিক দল মতামত দিয়েছে বলে জানান আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, আশা করি, মে মাসের প্রথম সপ্তাহ নাগাদ রাজনৈতিক দল ও জোটগতভাবে প্রথম পর্যায়ের সংলাপ শেষ হবে।

এরপর মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে শুরু হবে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপ। নির্ধারিত সময় অনুযায়ী জুলাই মাসের মধ্যে কাজ শেষ করাই কমিশনের লক্ষ্য।

আলোচনায় এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, যেসব বিষয়ে দ্বিমত এবং আংশিকভাবে একমত, সেসব বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। জাতীয় সংকট নিরসনে আনুষ্ঠানিক আলোচনার বাইরেও পর্দার অন্তরালে আলোচনা করতে হবে। অনেক বিষয়ে আমরা হয়তো একমত হইনি, কিন্তু ভবিষ্যতে সংলাপের মাধ্যমে একমত হব।

অথবা আমাদের মতামতের ভিত্তিতে আপনাদের মতামত প্রত্যাহার করে, একটি জাতীয় ঐকমত্যে পৌঁছব।

তিনি আরো বলেন, সবাইকে নিয়ে একমতে আসার মতো কঠিন কাজ কিছু হতে পারে না। তার পরও আমরা আশাবাদী জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সফল হবে, বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াবে।

উল্লেখ্য, সংস্কার বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য গঠনে ১২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠিত হয়। সংবিধান, নির্বাচন, বিচার বিভাগ, দুদক, জনপ্রশাসন সংস্কারে গঠিত পাঁচটি কমিশনের ১৬৬ সুপারিশে ৩৮টি রাজনৈতিক দলের কাছে মতামত চায় কমিশন। এর আগে এলডিপি, খেলাফত মজলিস, লেবার পার্টি ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে আলোচনা করেছে কমিশন। রাজনৈতিক দলগুলো আলোচনার মাধ্যমে যেসব বিষয়ে একমত হবে, সেগুলো বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতিতে সই হবে জুলাই সনদ।

 

 

 

মন্তব্য

মৌলভীবাজারে ছুরি মেরে আইনজীবীকে হত্যা প্রতিবাদে আদালত বর্জন

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি
শেয়ার
মৌলভীবাজারে ছুরি মেরে আইনজীবীকে হত্যা প্রতিবাদে আদালত বর্জন
সুজন মিয়া

মৌলভীবাজার শহরে এক আইনজীবীকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গত রবিবার রাতে পৌরসভার মেয়র চত্বরের উত্তর পাশের ফুটপাতে ফুচকার দোকানের সামনে এ ঘটনা ঘটে। নিহত আইনজীবী আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তাঁকে হত্যার প্রতিবাদে গতকাল সোমবার আদালত বর্জন করে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন আইনজীবীরা।

নিহত সুজন মিয়া (৩৫) মৌলভীবাজার শহরতলির পূর্ব হিলালপুর গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। তাঁর পৈতৃক বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের ধুবলাপাড়ায়। বাবার নাম জহিরুল ইসলাম। তিনি সাত-আট বছর ধরে মৌলভীবাজার জেলা জজ আদালতে আইন পেশার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

পুলিশ, পরিবার ও স্থানীয় লোকজন সূত্রে জানা গেছে, আইনজীবী সুজন মিয়া রবিবার রাতে পৌরভবনের বিপরীত পাশে সরকারি স্কুল মাঠে বাণিজ্যমেলায় যান। তিনি সেখান থেকে এসে রাত সাড়ে ১১টার দিকে পৌরসভা প্রাঙ্গণে একটি ফুচকার দোকানের সামনে অবস্থান করছিলেন। তখন কয়েকজন দুর্বৃত্ত তাঁর ওপর অতর্কিত হামলা চালায় এবং তাঁকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। স্থানীয় কয়েকজন সুজনকে উদ্ধার করে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আহমেদ ফয়সল জামান বলেন, সুজন মিয়াকে আমরা মৃত অবস্থায় পেয়েছি। তাঁর গলার দিকে স্ট্যাবের (ছুরিকাঘাত) দাগ ছিল। ময়নাতদন্তের পর বিস্তারিত বলা যাবে।

সুজন মিয়ার বাবা জহিরুল ইসলাম বলেন, কেন, কে বা কারা তার ওপর হামলা চালিয়েছে, এ সম্পর্কে কিছুই জানি না। ছয়-সাত মাস আগে সুজন মিয়া বিয়ে করেছিল।

তবে বউকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘরে তোলা হয়নি।

মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার এম কে এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমরা বিষয়টি জানার চেষ্টা করছি, কিছু ভিডিও ফুটেজ পেয়েছি। প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গেও কথা বলেছি। কেউই হামলাকারীদের চিনতে পারেননি। তবে সবাই বলছেন, তাদের বয়স অল্প। বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে আমরা তদন্তে অগ্রসর হচ্ছি। এ বিষয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে থানায় হত্যা মামলা হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, অ্যাডভোকেট সুজন মিয়া দীর্ঘদিন ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। মৌলবাদী ও ধর্ম ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচিতে তাঁর সক্রিয় উপস্থিতি ছিল। এসব ঘটনায় তাঁকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আদালত বর্জন, স্মারকলিপি ও বিক্ষোভ মিছিল : আইনজীবী সুজন মিয়া হত্যার প্রতিবাদে গতকাল আদালত বর্জন করে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন মৌলভীবাজার জেলা আইনজীবী সমিতি। দুপুরে মৌলভীবাজারের আদালত প্রাঙ্গণে ঘণ্টাব্যাপী এই মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করা হয়।

মানববন্ধনে বক্তব্য দেন আইনজীবী সমিতির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান মুজিব, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শান্তি পদ ঘোষ, রমাকান্ত দাশগুপ্ত, মামুনুর রশীদ মামুন, কামরেল আহমদ চৌধুরী, মো. জয়নুল হক, মো. মিজানুর রহমান, বকশী জুবায়ের আহমদ প্রমুখ। পরে তাঁরা আদালত সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করেন। মিছিল শেষে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (ডিসি) ও পুলিশ সুপার বরাবরে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। 

মুজিবুর রহমান মুজিব বলেন, স্মারকলিপিতে আমরা বলেছি, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আইনজীবী সুজন মিয়ার হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করতে হবে। তা না হলে আইনজীবী সমিতি পরবর্তী পর্যায়ে আরো কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে। তিনি বলেন, মৌলভীবাজার শহরের রাস্তাঘাটে ফুচকা ও ভ্রাম্যমাণ দোকানের কারণে যানজটের সৃষ্টি হয়; অবিলম্বে এসব দোকান বন্ধ করতে হবে।

জানাজা ও দাফন : গতকাল বাদ আসর মৌলভীবাজার শহরের হজরত সৈয়দ শাহ মোস্তফা (রহ.) মাজার প্রাঙ্গণে সুজন মিয়ার জানাজা হয়। এতে জেলার আইনজীবী, সুধীসমাজ, সাংবাদিকসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। পরে মাজার এলাকায় মরদেহ দাফন করা হয়।

 

মন্তব্য

তরমুজের বাজার চার হাজার কোটি টাকার

    উপকূলের লবণাক্ত জমিতে লাল সোনা তরমুজ একক জেলা হিসেবে উৎপাদনে শীর্ষে খুলনা
সাইদ শাহীন (ঢাকা) ও এইচ এম আলাউদ্দিন (খুলনা)
সাইদ শাহীন (ঢাকা) ও এইচ এম আলাউদ্দিন (খুলনা)
শেয়ার
তরমুজের বাজার চার হাজার কোটি টাকার

প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে প্রায় আবাদহীন হয়ে পড়েছিল উপকূলের বিভিন্ন জেলার কৃষিজমি। খুলনা জেলার কৃষকদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে তরমুজ চাষ। জেলায় এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে চার হাজার হেক্টর বেশি জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। শুধু খুলনা জেলা থেকেই ৫০০ কোটি টাকার বেশি তরমুজ বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে।

একক জেলা হিসেবে তরমুজ আবাদ ও উৎপাদনে শীর্ষে রয়েছে খুলনা।

খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিক কালের কণ্ঠকে বলেছেন, চলতি সপ্তাহেই মৌসুমের তরমুজ সংগ্রহ ও বিক্রি শুরু হবে। তরমুজ আবাদে খরচের তিন গুণ আয় হয়। প্রতি একর জমিতে সব মিলিয়ে লাখ টাকার মতো খরচ হলেও বিক্রি হয় তিন লাখ টাকার ওপর, যা অন্য ফসলে খুব কমই হয়।

এ জন্যই কৃষকরা তরমুজ চাষের প্রতি ঝুঁকছেন।

ঘূর্ণিঝড় সিডরের পর মাটি-পানিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি এবং ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগে দক্ষিণাঞ্চলে ধান উৎপাদন কমতে থাকে। চিংড়িঘেরের প্রবণতা শুরু হলে ধানের উৎপাদন আরো কমে। লবণাক্ততায় শুকনো মৌসুমে কৃষিজমি পড়ে থাকত অনাবাদি।

ধান উৎপাদন কমায় কৃষকরা বিকল্প হিসেবে তরমুজ চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েন। ২০১১ সালের পর থেকেই এ অঞ্চলে তরমুজের চাষ বাড়তে থাকে। বরিশাল ও খুলনা বিভাগেই সবচেয়ে বেশি তরমুজ আবাদ হচ্ছে। উপকূলের লবণাক্ত জমিতে এখন লাল সোনায় পরিণত হয়েছে তরমুজ।

খুলনার ২ নম্বর দাকোপ ইউনিয়নের কৃষক তরুণ মণ্ডল জানান, অন্যের জমি ইজারা নিয়ে তিনি তরমুজের চাষ করেন।

প্রতি হেক্টরে হাড়ি (জমির ভাড়া) দিতে হয় ৩০ হাজার টাকা। জন নিয়ে জমি প্রস্তুত করে তরমুজের চাষ করে বিক্রির উপযোগী করতে হেক্টরে খরচ পড়ে লাখ টাকার মতো। তবে তিনি তাঁর ক্ষেত থেকেই তরমুজ বিক্রি করে দিয়েছেন। যাঁরা ক্ষেত কেনেন তাঁরা তরমুজ সংগ্রহ করে পাইকারি বিক্রি করেন। পাইকাররা সেগুলো ট্রাকযোগে নিয়ে যান রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে। এই এলাকার প্রতি হেক্টর ক্ষেত তিন লাখ টাকার ওপরে বিক্রি হয়েছে।

দেশে অফ সিজনে সোনালি বর্ণের বিদেশি গোল্ডেন ক্রাউন, ব্ল্যাকবেরি ও বাংলালিংক তরমুজের চাষ বাড়ছে। গ্রীষ্মকালীন সবজির পাশাপাশি কৃষকরা তরমুজের চাষ করে বেশ লাভবান হচ্ছেন। গ্রীষ্মকালীন বেরি তরমুজের চাষ করে কম খরচে অধিক লাভবান হচ্ছেন। মৌসুমি তরজুমের মতো বেশি ফলন না হলেও প্রতি হেক্টরে ৪০ টন তরমুজ পাওয়া যাচ্ছে। প্রথাগত তরমুজের চেয়ে ব্ল্যাকবেরি ও গোল্ডেন ক্রাউন জাতের তরমুজ দুই-তিন গুণ বেশি দামে বিক্রি করা যায়। বীজ বপনের দুই মাসের মাথায় ফল পাওয়া যায়। এই তরমুজ প্রতি বিঘায় এক লাখ টাকার বেশি মুনাফা দিচ্ছে কৃষকদের।

এভাবেই সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে তরমুজের আবাদ। মৌসুম ও অমৌসুমে পাওয়া যাচ্ছে তরমুজ। ফসলোত্তর ক্ষতি বাদ দিয়ে দেশে তরমুজের উৎপাদন প্রায় সাড়ে ছয় লাখ টন। সরকারি ও বাজারের তথ্য মতে, তরমুজের দাম ৫৫ থেকে ৭০ টাকার মধ্যেই ওঠানামা করে। প্রতি কেজির দাম ৫৫ টাকা করে হিসাব করলেও তরমুজের বাজার ছাড়িয়েছে তিন হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা। আর গড় দাম ৬৫ টাকা হিসাবে নিলে বাজার চার হাজার ২২৫ কোটি টাকার। ফলে গড় হিসাবে দেশে তরমুজের বাজার এখন চার হাজার কোটি টাকার।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনা অঞ্চলের উপপরিচালক মো. নজরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, জেলায় এবার ১২ হাজার ৯৬৫ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও আবাদ হয়েছে ১৭ হাজার ২৯১ হেক্টর জমিতে। রবি জাতের এই তরমুজ চাষ ফেব্রুয়ারিতে শুরু হয়। এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি থেকে সংগ্রহ করা হয়। বাজারে ভালো দামের কারণে এবার কৃষক বেশ লাভবান হবেন বলে আশা করছি।

এক মাসের মধ্যেই তরমুজ বিক্রি শেষ হবে। তবে এ অঞ্চলের দুটি উপজেলায় অফ সিজনে বেশ ভালো তরমুজের উৎপাদন হয়। খুলনা জেলার ডুমুরিয়া ও বটিয়াঘাটা উপজেলার কৃষকরা অফ সিজনে তরমুজ আবাদ করে বেশ লাভবান হচ্ছেন। সিডর, আইলা, আম্ফানসহ নানা প্রাকৃতিক ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের মধ্যে বেড়ে ওঠা খুলনার উপকূলবাসীর জন্য সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে তরমুজ।

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ