পরে জিইসি মোড়ে হোটেল জামানে কোকা-কোলার সাইনবোর্ড থাকায় সেখানে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। পরে তারা পিৎজা হাটেও ভাঙচুর চালায়।
আরেকটি মিছিল থেকে লালখান বাজার এলাকায় স্পোর্টস ব্র্যান্ড পুমার সাইনবোর্ড, বাটার সাইনবোর্ড ভাঙচুর করা হয়। এ ছাড়া নগরীর কাজীর দেউড়ি মোড় থেকে জামালখান অভিমুখী আরেকটি মিছিল থেকে রাস্তার পাশের বিভিন্ন দোকানে থাকা কোকা-কোলা ও পেপসিকোলা কম্পানির ফ্রিজ ও সাইনবোর্ড ভাঙচুর করা হয়। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতা ফ্রিজে থাকা পেপসি, সেভেন আপসহ বিভিন্ন কোমল পানীয় রাস্তায় ছিটিয়ে দেয়।
কক্সবাজার : কক্সবাজার থেকে বিশেষ প্রতিনিধি জানান, গতকাল কক্সবাজার শহরে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ মিছিলে রোষের শিকার হয়েছে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার পত্রিকার মালিক ট্রান্সকম গ্রুপের প্রতিষ্ঠান কেএফসি ও পিৎজা হাট। মিছিল থেকে ক্ষুব্ধ লোকজন সাগর পারের হোটেল-মোটেল জোনের কলাতলী সড়কের প্রতিষ্ঠান দুটি দেখতে পেয়ে ক্ষোভে চিৎকার দিতে দিতে ইটপাটকেল ছোড়ে। হামলার পরিপ্রেক্ষিতে কেএফসি আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। বিক্ষোভ মিছিল থেকে কক্সবাজার শহরের পর্যটন জোন কলাতলীতে কেএফসিসহ ইসরায়েলি পণ্যের সাইনবোর্ড থাকা অন্তত ১৫ থেকে ২০টি প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর চালানো হয়। এর মধ্যে মূলত কেএফসি ও পিৎজা হাটের ওপর বিক্ষোভকারীদের ক্ষোভ বেশি ছিল।
দুপুর ১২টায় পর্যটননগরী কক্সবাজারের পাবলিক হল ময়দান থেকে ‘দ্য ওয়ার্ল্ড স্টপস ফর গাজা’ কর্মসূচির বিশাল বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়। জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস-পরীক্ষাও হয়নি। মিছিল হয়েছে টেকনাফ, উখিয়া, রামু, চকরিয়াসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায়ও।
শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে মিছিলটি কলাতলী গোলচত্বরের দিকে যাওয়ার পথে ট্রান্সকম গ্রুপের পরিচালনাধীন প্রতিষ্ঠান কেএফসি ও পিৎজা হাটের সামনে গিয়েই মিছিলকারীরা চড়াও হয়। মিছিলে নেতৃত্বদানকারী লোকজন তাদের নিবৃত্ত করার শত চেষ্টা করলেও রেহাই মেলেনি। ইটপাটকেলের আঘাতে প্রতিষ্ঠানগুলোর কাচের গ্লাস ভেঙে যায়।
ছাত্র প্রতিনিধি মোহাম্মদ আলম গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘ইসরায়েলের কম্পানিগুলো বাংলাদেশে চালায় প্রথম আলো এবং ট্রান্সকম কম্পানি (গ্রুপ)। দেশের মানুষকে একতাবদ্ধ হয়ে কেএফসি, পিৎজা হাট, সেভেন আপ, কোকা-কোলা কম্পানিগুলো বয়কট করতে হবে। দেশের মানুষকে প্রথমে প্রথম আলো এবং ট্রান্সকম কম্পানিকে বয়কট করতে হবে। তাহলেই আমরা ফিলিস্তিনের পক্ষে যে একাত্মতা পোষণ করতে চাচ্ছি সেই একাত্মতা পোষণ করতে পারব।’
কক্সবাজার রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাবেদ ইকবাল জানান, কেএফসি, পিৎজা হাটের পাশাপাশি কাঁচা লংকা, পানসি রেস্টুরেন্ট এবং মেরিন ফুড রেস্টুরেন্টে ভাঙচুর চালানো হয়। এ সময় কাচের আঘাতে কয়েকজন পর্যটকও আহত হন। কলাতলীর মোড় থেকে পর্যটন জোনের যেখানে এমন সাইনবোর্ড ছিল তার সব কটিতে ভাঙচুর চালানো হয়। যেখানে অন্তত ২০টি প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জাবেদ ইকবাল বলেন, ‘আমাদের ফিলিস্তিনের প্রতি সব সময় সংহতি রয়েছে। আজকের বিক্ষোভ মিছিলেও আমাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ রয়েছে। তবে কিছু উচ্ছৃঙ্খল লোকজনের এমন ঘটনা কক্সবাজার পর্যটনের জন্য অশনিসংকেত। আমরা ইসরায়েলের পণ্য যথাসম্ভব বর্জন করছি। তারা যদি সাইনবোর্ড নামিয়ে ফেলতে বলত তাহলে সুন্দর একটা সমাধান হতো।’
কক্সবাজার পিৎজা হাটের ইনচার্জ পারভেজ মিয়া বলেন, ‘মূলত কেএফসির ওপর মানুষের ক্ষোভ বেশি। তারা হঠাৎ মিছিল থেকে ইটপাটকেল মারা শুরু করে কেএফসি লক্ষ্য করে। তবে কেএফসি ওপরের ফ্লোরে হওয়ায় এগুলো এসে পড়ে পিৎজা হাটে। আমাদের বেশ কিছু কাচ এবং যন্ত্রপাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা আপাতত রেস্টুরেন্ট বন্ধ রেখেছি।’
কাঁচা লংকা রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থাপক ফিরোজ আহমেদ বলেন, ‘রেস্তোরাঁর সাইনবোর্ডে সেভেন আপের বিজ্ঞাপন ছিল। এই অজুহাতে আমাদের রেস্টুরেন্টে ভাঙচুর চালানো হয়। কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি মো. ইলিয়াস খান জানিয়েছেন, মিছিল বড় হওয়ায় মাঝখান থেকে কিছু অতি উৎসাহী মানুষ কয়েকটি রেস্টুরেন্টে হামলা ও পেপসির সাইনবোর্ড নামিয়ে ফেলেছে।’ ওসি বলেন, এ সময় কিছু ঢিল ছোড়ার ঘটনা ঘটেছে, তবে মিছিলে উপস্থিত মুরব্বিরা তাদের তত্ক্ষণাৎ নিয়ন্ত্রণ করায় অন্তত ব্যাপক ক্ষতি থেকে রক্ষা মিলেছে।
গাজীপুর : বিকেল সাড়ে ৩টায় গাজীপুরের বোর্ডবাজারে বাটা শোরুমসহ বিভিন্ন দোকানের সামনে বিলবোর্ড-ব্যানার ভাঙচুর করে উত্তেজিত জনতা। সড়কের পাশে তিন-চারটি দোকানের সামনে বিলবোর্ড-ব্যানারে ভাঙচুর করা হয়।
খুলনা অফিস জানায়, খুলনায় ইসরায়েলবিরোধী মিছিল থেকে বিক্ষুব্ধরা নগরীর ময়লাপোতা মোড়ে কেএফসি রেস্তোরাঁ ভাঙচুর করে। বিক্ষোভকারীরা সেখান থেকে ইসরায়েলি পণ্যসহ বিভিন্ন কোমল পানীয় বের করে রাস্তায় এনে ভেঙে ফেলে।
ময়লাপোতা থেকে একাধিক মিছিল যাওয়ার সময় কেএফসি রেস্তোরাঁ লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়।
‘নো ওয়ার্ক নো ক্লাস’ কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে সিলেটে সর্বস্তরের মানুষের বিক্ষোভ মিছিলের সুযোগে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় নিন্দার ঝড় বইছে। দাবি উঠেছে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির। এদিকে লুটপাটে জড়িত সন্দেহে পুলিশ এ পর্যন্ত তিনজনকে আটক করেছে।
বরিশালে কর্মসূচি চলাকালে বিক্ষুব্ধরা কেএফসির বরিশাল শাখায় ভাঙচুর চালায়। ছাত্র-জনতা কেএফসির কার্যক্রম বরিশাল থেকে সরিয়ে নেওয়ার দাবি তোলে। বিক্ষোভকারীরা মিছিল নিয়ে নগরীর প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে। সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে কবি জীবনানন্দ দাশ সড়কে কেএফসির সামনে বিক্ষুব্ধ জনতা অবস্থান নেয়। তখন তারা কেএফসি বন্ধ করে দেওয়ার দাবি জানায়। বিকেল সোয়া ৩টায় কয়েকজন বিক্ষোভকারী প্রতিষ্ঠানটির ছাদে উঠে কেএফসির লোগো ভেঙে ফেলে।
বগুড়ায় দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে ১টার মধ্যে শহরের সাতমাথায় বাটার শোরুমে ভাঙচুর চালায় বিক্ষুব্ধরা।
গত সন্ধ্যায় কুমিল্লা নগরীর রানীর বাজার এলাকায় কেএফসি রেস্টুরেন্ট ভাঙচুর করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা। সেখানে এম আলী টাওয়ারের সামনে গিয়ে বিভিন্ন মিছিল থেকে জড়ো হয়ে বিক্ষুব্ধ জনতা কেএফসিতে প্রবেশ করে ভাঙচুর চালায়।