দেশীয় ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত

ঈদে পাকিস্তানি পোশাকের প্রাধান্য

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
ঈদে পাকিস্তানি পোশাকের প্রাধান্য

ঈদকে কেন্দ্র করে জমে উঠেছে দেশের পোশাকের বাজার। তবে বিশ্বের শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হওয়ার পরও দেশের পোশাকের বাজারে আধিপত্য ভারত-পাকিস্তানের। এই দুটি দেশ থেকে আমদানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় কমলেও বিপণিবিতানগুলোতে এর প্রভাব নেই। সঠিক নজরদারির অভাবে চোরাচালানের মাধ্যমে বিদেশি পোশাকে সয়লাব দেশের বাজার।

একদিকে ব্যবসার খরচ বৃদ্ধি অন্যদিকে বাজারে বিদেশি পোশাকের আধিপত্যে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন দেশের উদ্যোক্তারা।

রাজধানীর বিভিন্ন বিপণিবিতান, ব্র্যান্ড ও নন-ব্র্যান্ডের বিভিন্ন দোকান ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে। কারওয়ান বাজারের বসুন্ধরা সিটি শপিং মলে পোশাক কিনতে আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান বলেন, পাকিস্তানি পোশাকের ডিজাইন, এমব্রয়ডারি সুন্দর। তাই পাকিস্তানি পোশাকই প্রথম পছন্দ।

তবে দাম বেশি হওয়ায় বাজেট নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। কিছু দোকানে ভারতীয় পোশাকও পাওয়া যাচ্ছে, ওগুলোরও দাম বেশি। দেশীয় পোশাক তাঁর অগ্রাধিকারের তালিকায় নেই।

ইস্টার্ন মল্লিকায় ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছিলেন গৃহিণী সাবিহা রহমান।

তিনি বলেন, আমি সাধারণত ভারতীয় পোশাক পরি, কিন্তু এবার বাজারে সেভাবে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই পাকিস্তানি পোশাক দেখছি। ডিজাইন সুন্দর, তবে দাম একটু বেশি মনে হচ্ছে।

স্ত্রীর জন্য পোশাক কিনতে আসা ব্যাংকার মাহমুদুল হাসান বলেন, পাকিস্তানি পোশাক দেখতে ভালো লাগলেও দাম বেশি। আগে তিন-চার হাজার টাকায় যে রকম ভালো একটা পোশাক পাওয়া যেত, এখন ছয়-সাত হাজার টাকা লাগছে।

বসুন্ধরা সিটির ব্যবসায়ী আসিফ বলেন, মানুষ নতুনত্ব পছন্দ করে। আগে ভারতীয় পোশাকের প্রতি নির্ভরতা থাকলেও এখন কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। ৫ আগস্টের পর পরিস্থিতি বদলেছে। বর্তমানে ভারতীয় পোশাক সেভাবে দেশে আসছে না। ফলে মানুষ পাকিস্তানি পোশাকের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে।

জনপ্রিয় ফ্যাশন হাউস জাফিরা ক্লথিংয়ের ব্যবস্থাপক সাজু আহমেদ পাকিস্তানি পোশাক নিয়ে বলেন, পাকিস্তানি পোশাকের দাম সব সময়ই একটু বেশি থাকে। কারণ কাপড়ের মান ভালো। এ ছাড়া আমাদের দেশে পরিবহন খরচ ও ভ্যাট বেশি, যা পোশাকের দামে প্রভাব ফেলে। যদি খরচ কমানো যায় বা পাকিস্তানের সঙ্গে সরাসরি ফ্লাইট চালু হয়, তাহলে পোশাকের দাম আরো কমবে।

দামের বিষয়ে তিনি বলেন, গর্জিয়াস ও ফ্যাশনেবল পোশাকগুলোর দাম তিন হাজার ৫০০ থেকে ১০ হাজার টাকার বেশি পর্যন্ত হয়ে থাকে। আর সাধারণ সুতি কাপড়ের পোশাকের দাম এক হাজার ২০০ থেকে চার হাজার টাকার মধ্যে। মধ্যবিত্তরা পাকিস্তানি পোশাক কিনলেও তারা মূলত মাঝারি দামের পোশাকই কিনছে।

সিদ্দিকী এন্টারপ্রাইজের দায়িত্বে থাকা মো. হানিফ বলেন, কয়েক বছর ধরে আমরা পাকিস্তানি পোশাক নিয়ে কাজ করছি। তবে এবারের মতো এত বেশি চাহিদা আগে দেখিনি। পাকিস্তানি পোশাকের কাপড়, সূচিকর্ম ও ডিজাইন একটু ব্যতিক্রমী, তাই যারা ট্রেন্ডি পোশাক পছন্দ করে, তারা এগুলো কিনছে।

ঈদের বাজারে যেভাবে দোকানে দোকানে ভারত-পাকিস্তানের পোশাক বেচাকেনা হয়, সে তুলনায় বৈধ পথে আমদানি খুবই কম। মূলত ভারত থেকে অবৈধ পথে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ তৈরি পোশাক আমদানি করা হয়। অন্যদিকে পাকিস্তান থেকে লাগেজে করে তৈরি পোশাক আসছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, গত তিন মাসে (ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারি) ভারত ও পাকিস্তান থেকে ২২ লাখ ৩৫ হাজার পিস পোশাক আমদানি করা হয়েছে। গত রোজার আগে একই সময়ে আমদানি করা হয়েছিল ২৬ লাখ পিস পোশাক।

 

ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশ

দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষা এবং রাজস্ব বাড়াতে ট্যারিফ কমিশন সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে বেশ কিছু সুপারিশ করেছে। তারা বলেছে, ভারত থেকে শুল্ক ফাঁকি ও চোরাচালানের মাধ্যমে শাড়ি, টু-পিস, থ্রি-পিস দেশে আসছে। কারণ স্থানীয় বাজারে যে পরিমাণ ভারতীয় টু-পিস, থ্রি-পিস, লেহেঙ্গা, জামদানি ও তাঁতের শাড়ি বিক্রি হয়, তার তুলনায় বৈধ আমদানি অনেক কম। সংস্থাটি চোরাচালান রোধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর তৎপরতা বাড়ানো এবং তৈরি পোশাকের আমদানি চালান শতভাগ পরীক্ষার সুপারিশ করেছে।

 

ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন দেশীয় ব্যবসায়ীরা

ভারত-পাকিস্তানের পোশাক বিক্রির ধুম পড়ায় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন দেশের পোশাক ব্যবসায়ীরা। এ প্রসঙ্গে রঙ বাংলাদেশের স্বত্বাধিকারী সৌমিক দাশ বলেন, ভারত ও পাকিস্তান থেকে অবৈধভাবে তৈরি পোশাক আসায় দেশীয় ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। দেশীয় উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের সুরক্ষা দিতে ভারত-পাকিস্তান থেকে অবৈধ পথে পোশাক আসা বন্ধ করতে হবে। তাহলে সরকারের রাজস্বও বাড়বে।

 

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

বান্দরবানের হোটেলগুলোয় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ কক্ষ বুকিং সম্পন্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক, বান্দরবান
নিজস্ব প্রতিবেদক, বান্দরবান
শেয়ার
বান্দরবানের হোটেলগুলোয় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ কক্ষ বুকিং সম্পন্ন

২০২১ সাল থেকে পাহাড়ে অস্থিরতায় প্রতিটি ঈদ ও উৎসব চরম মন্দায় পার করেছে বান্দরবানের পর্যটন ব্যবসা। কিন্তু এবার সরকারি ছুটি, ঈদুল ফিতর আর সাপ্তাহিক ছুটি মিলে লম্বা অবকাশে অগ্রিম হোটেল বুকিংয়ের হিড়িক পড়ে গেছে। এরই মধ্যে বেশির ভাগ হোটেলের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ কক্ষ বুকিং নিয়ে রেখেছে ভ্রমণপ্রত্যাশীরা।

গত মঙ্গলবার পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য জানা যায়।

বান্দরবান হোটেল-মোটেল, কটেজ মালিক সমিতির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম জানান, ৩১ মার্চ পবিত্র ঈদুল ফিতরের সম্ভাব্য তারিখ ধরে পাঁচ দিনের ছুটির তারিখ নির্ধারণ করেছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এই হিসাবে কাগজপত্রে ২৯ মার্চ শুরু হচ্ছে ছুটি। কিন্তু এর আগের দিন ২৮ মার্চ শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন। ছুটি শেষে অফিস খোলার কথা ৩ এপ্রিল বৃহস্পতিবার।

তারপরের দুই দিন আবার শুক্র ও শনিবার। সুতরাং ২৮ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ৯ দিন ছুটি ভোগ করবেন সরকারি ও বেশির ভাগ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ঈদের যে কয়েক দিন সময় আছে এর মধ্যে বুকিংয়ের সংখ্যা আরো বাড়বে বলে আশা করছেন তিনি।

হোটেল হিল ভিউর ফ্রন্ট ডেস্ক ম্যানেজার তৌহিদ পারভেজ জানান, ঈদ উপলক্ষে আগামী ২, ৩ ও ৪ এপ্রিল ৬০ শতাংশ কক্ষ আগাম বুকিং নিয়ে নিয়েছে ভ্রমণপ্রত্যাশীরা।

হোটেল হিল্টনের ম্যানেজার আক্কাস উদ্দিন সিদ্দিকি জানান, তাঁর হোটেলে ২ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত বেশির ভাগ কক্ষ আগাম বুকিং হয়ে গেছে।

হোটেল গার্ডেন সিটির মালিক জাফর উল্লাহ জানান, আগামী ২ থেকে ৭ এপ্রিল তাঁর হোটেলের ৩৪টি কক্ষের মধ্যে ২৭টি কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে। আগামী দিনগুলোতে শতভাগই বুকিং হবে বলে আশা করছেন তিনি।

বান্দরবান হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জসীম উদ্দীন জানান, টানা ছুটির কারণে পর্যটকদের ভালো সাড়া পাচ্ছেন। আগত পর্যটকদের সার্বিক সেবা নিশ্চিত করতে হোটেল মালিকদের বলে দেওয়া হয়েছে।

বান্দরবানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল করিম বলেন, পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি জেলা পুলিশের সদস্যরা কাজ করবেন।

 

মন্তব্য

পরিবেশ অনুকূলে পাঁচ বছরের ক্ষতি এবার কাটিয়ে উঠবে সিলেট

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট
নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট
শেয়ার
পরিবেশ অনুকূলে পাঁচ বছরের ক্ষতি এবার কাটিয়ে উঠবে সিলেট

সিলেটের পর্যটনে সেই ২০২০ অতিমারি করোনা নিয়ে এসেছিল দুর্দিন। করোনা বিদায় নিলেও দুর্দশা কাটছিল না। বন্যা, বৈরী আবহাওয়া না হয় রাজনৈতিক অস্থিরতা মিলিয়ে সিলেটের পর্যটনে সবচেয়ে বড় ব্যবসার মৌসুম ঈদে ছিল শুধুই হতাশার গল্প।

দীর্ঘ প্রায় পাঁচ বছর পর এবার পরিবেশ অনুকূলে।

তাই এবার বড় রকমের ব্যবসার স্বপ্ন দেখছেন পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। প্রশাসন থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী পর্যন্ত সবাই মিলে সব প্রস্তুতি নিয়েছে। এখন পর্যটকদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত সিলেট।

আগত দর্শনার্থীদের বরণ করে নিতে এবং বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করতে এরই মধ্যে ব্যবসায়ী, শ্রমিক, ফটোগ্রাফার ও নৌকার মাঝিরা সভা করে বিভিন্ন ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছেন।

স্পটের সৌন্দর্য বৃদ্ধি, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, ঘাটে নৌকা বৃদ্ধি এবং পার্কিং এলাকার উন্নয়নকাজ করা হয়েছে।

দেশের একমাত্র জলাবন খ্যাত রাতারগুল পর্যটন কেন্দ্র এলাকার রিসোর্ট সোহেল স্কয়ারের স্বত্বাধিকারী সোহেল আহমদ বলেন, এবার দেশের পরিস্থিতিও তুলনামূলক স্থিতিশীল। আবহাওয়াও অনুকূল। তাই ঈদ মৌসুমে ভালো ব্যবসা হবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।

গেল বছর ঈদুল ফিতরের সময় পাহাড়ি ঢলের কারণে সাদা পাথর পর্যটন কেন্দ্র তলিয়ে গেলে কেন্দ্রটি বন্ধ ঘোষণা করে প্রশাসন। এবার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, এ ঈদের ছুটিতে আট থেকে ১০ লাখ পর্যটকের সমাগম হবে।

ভোলাগঞ্জ পর্যটন ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ সফাত উল্লাহ বলেন, আশা করছি, ক্ষতি কাটিয়ে উঠে এ বছর বাম্পার ব্যবসা হবে।

ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টের পরিচালক জুয়েল মিয়া বলেন, আসছে ঈদে আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে সিলেটে বন্যার আশঙ্কা না থাকায় আমরা আশা করছি, গত পাঁচ-ছয় বছরের তুলনায় এ বছর বেশি পর্যটকের আগমন ঘটবে।

হোটেল বুকিং শুরু হয়েছে জানিয়ে সিলেট হোটেল-মোটেল রেস্টহাউস মালিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমিত নূরী জুয়েল বলেন, এবার মানুষ দরদাম করছেন বেশি। তবে বুকিং হচ্ছে।

সিলেটের সবচেয়ে বেশি পর্যটন কেন্দ্র গোয়াইনঘাট উপজেলায়। সেখানকার উপজেলা প্রশাসন পর্যটনসংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে গত বৃহস্পতিবার সভা করে প্রস্তুতি নিয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তা ও তাদের সুবিধা নিশ্চিতে আমরা পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, ব্যবসায়ীসহ সব পক্ষ মিলে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।

 

 

মন্তব্য
ঈদ পর্যটন

পর্যটক বরণে সাজগোজ চলছে কক্সবাজারে

বিশেষ প্রতিনিধি, কক্সবাজার
বিশেষ প্রতিনিধি, কক্সবাজার
শেয়ার
পর্যটক বরণে সাজগোজ চলছে কক্সবাজারে
ঈদের ছুটিতে পর্যটকে জমজমাট হবে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত। ছবি : কালের কণ্ঠ

এবারের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস, ২৮ মার্চ শবেকদর, সেই সঙ্গে ২৯ মার্চ থেকে ঈদের ছুটি শুরু। সব মিলিয়ে ১১ দিনের লম্বা ছুটি। পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ধারণা করছেন, টানা এই ছুটিতে দেশের পর্যটন রাজধানী কক্সবাজারে নামবে ভ্রমণপিপাসুদের ঢল।

আর এই ছুটিতে পর্যটকদের টানতে শেষ মুহূর্তের সাজগোজ চলছে কক্সবাজারের পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল-গেস্ট হাউসসহ খাবারের হোটেলগুলোয়।

রমজানের সময় সৈকত থাকে পর্যটকশূন্য। গত মঙ্গলবার কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ঘুরে তেমন পর্যটকের উপস্থিতি চোখে পড়েনি। হোটেল মোটেল জোন এবং মেরিন ট্রাইভ সড়কে ঘুরে দেখা গেছে, হোটেলগুলোতে ঈদকেন্দ্রিক কর্মতৎপরতার দৃশ্য।

শহরের কলাতলীর তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইস লিমিটেডের বিপণন ব্যবস্থাপক ইমতিয়াজ নুর সোমেল বলেন, পয়লা এপ্রিল থেকে ৫ এপ্রিল কক্সবাজারে পর্যটক সমাগম বাড়বে।

এরই মধ্যে তারকা হোটেলগুলোতে ১-২ এপ্রিলের জন্য ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ রুম বুকিং হয়ে গেছে। আর ৩-৪ এপ্রিলের বুকিং এসেছে ৯০-৯৫ শতাংশ। ৫ এপ্রিল আবার ৫০ থেকে ৬০ শতাংশে নেমেছে। এই পাঁচ দিনে গড়ে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ রুম বুকিং থাকবে বলে আশা করা যায়।

পর্যটন উদ্যোক্তা আবদুর রহমান বলেন, রমজানের আগের কয়েক মাস কক্সবাজার পর্যটকে ভরপুর ছিল। তবে রমজানের শুরু থেকে একেবারে পর্যটকশূন্য। আর এই বিরতিতে অনেকে নতুন করে সাজিয়ে নিয়েছেন নিজেদের প্রতিষ্ঠান। কক্সবাজার ট্যুরিস্ট ক্লাব ও ট্যুরস অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন (টুয়াক) সভাপতি রেজাউল করিম বলেন, নিরাপদ অবকাশ যাপনের সব রকম প্রস্তুতি নিচ্ছে হোটেল-মোটেল-কটেজগুলো।

জেলার অন্যান্য পর্যটনকেন্দ্র যেমন হিমছড়ি, দরিয়ানগর, ইনানী, মহেশখালী, বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কসহ সব পর্যটন স্পট ইজারাদাররা সাজিয়ে তুলছেন নতুন করে।

টানা ছুটিতে পর্যটকের ঢল নামবে, তাই ঝামেলা এড়াতে ভ্রমণে আসার আগে অবশ্যই হোটেলের রুম বুকিং দিয়ে আসার অনুরোধ জানিয়েছেন কক্সবাজার হোটেল ও গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার।

কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও অপরাধ দমনে জেলা পুলিশের সহযোগিতায় কয়েকটি ভাগে সাজানো হচ্ছে ট্যুরিস্ট পুলিশকে। নিরাপত্তায় বিঘ্ন ঘটালে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

মন্তব্য

মসলার বাজার স্থিতিশীল, নাগালের বাইরে এলাচ

সজীব আহমেদ
সজীব আহমেদ
শেয়ার
মসলার বাজার স্থিতিশীল, নাগালের বাইরে এলাচ

এবার ঈদ বাজারে কিছুটা স্থিতিশীল রয়েছে জিরা, দারচিনি, লবঙ্গ, তেজপাতা, শুকনা মরিচ, হলুদ, পেঁয়াজ, আদাসহ কয়েকটি মসলাজাতীয় পণ্যের দাম। তবে এলাচের দাম দফায় দফায় বেড়ে এখন সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে।

খুচরা বাজারে প্রতি কেজি এলাচ বিক্রি হচ্ছে সাড়ে পাঁচ হাজার থেকে ছয় হাজার টাকায়। ৫০ থেকে ১০০ টাকার নিচে খুচরা বিক্রেতারা এখন এলাচ বিক্রি করতে চাচ্ছেন না।

তাঁরা বলছেন, পাইকারিতে দাম বাড়ার কারণে তাঁরাও দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এবং মসলার পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবার ঈদ ঘিরে দেশের বাজারে এলাচ ছাড়া অন্য কোনো মসলার দাম নতুন করে বাড়েনি। জিরাসহ কয়েকটি মসলার দাম কিছুটা কমেছে বলেও বিক্রেতারা জানান।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মানভেদে খুচরায় প্রতি কেজি এলাচ বিক্রি হচ্ছে পাঁচ হাজার ৫০০ থেকে ছয় হাজার টাকায়।

জিরা বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, লবঙ্গ কেজি এক হাজার ৪৫০ থেকে এক হাজার ৬০০, দারচিনি কেজি ৫০০ থেকে ৫৫০, কালো গোলমরিচ কেজি এক হাজার ৪০০ থেকে এক হাজার ৫০০, কিশমিশ কেজি ৭০০ থেকে ৮০০, পেঁয়াজ কেজি ৩৫ থেকে ৪০, দেশি রসুন কেজি ১০০ থেকে ১২০, আমদানি করা রসুন কেজি ২৩০ থেকে ২৪০, দেশি আদা কেজি ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

পাইকারি মসলা আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, গুয়াতেমালা, ভারতসহ বিশ্বের প্রধান প্রধান এলাচ উৎপাদনকারী দেশগুলোয় ফলন কম হওয়ায় বিশ্ববাজারে এর দাম বেড়েছে। এ ছাড়া শুল্ক প্রায় দ্বিগুণ করা ও ডলারের উচ্চমূল্যের কারণে সাম্প্রতিক মাসগুলোয় এলাচের আমদানি আশানুরূপ হয়নি।

আমদানির তথ্য থেকে এবং আমদানিকারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পেঁয়াজ, আদা ও রসুন ছাড়া দেশে মসলার বার্ষিক বাজার এখন ১০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।

এই বাজারের বড় অংশই আমদানিনির্ভর। দেশে এলাচের বার্ষিক চাহিদা সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টন। খাদ্যপণ্য ছাড়াও ওষুধ, কনজিউমার পণ্য উৎপাদনে এলাচের ব্যবহার হয়।

কারওয়ান বাজারের মাসুদ জেনারেল স্টোরের বিক্রেতা মাসুদ রানা কালের কণ্ঠকে বলেন, এবার ঈদ উপলক্ষে এলাচ ছাড়া অন্য সব মসলার বাজার স্থিতিশীল। এলাচের দাম বাড়তে বাড়তে এখন অস্বাভাবিক পর্যায়ে চলে গেছে।

রামপুরা কাঁচাবাজারের মেসার্স মহিউদ্দিন এন্টারপ্রাইজের বিক্রেতা মহিউদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, এলাচের কেজি ছয় হাজার টাকা শুনে ক্রেতারা অবাক হয়ে যান। বিক্রি অনেকটাই কমে গেছে। যাঁরা আগে ১০০ গ্রাম নিতেন, তাঁরা এখন ৫০ গ্রাম বা ২৫ গ্রাম নিচ্ছেন। তবে রোজার ঈদ উপলক্ষে এলাচ ছাড়া অন্যান্য মসলার দামে কোনো অস্থিরতা নেই।     

রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) গত সোমবারের বাজারদরের তালিকানুযায়ী, ছোট আকারের এলাচের খুচরা দাম কেজি চার হাজার ৫০০ থেকে পাঁচ হাজার টাকা। এক বছর আগে এলাচের দাম ছিল তিন হাজার ৫০০ টাকা। বাজারে বড় আকারের এলাচের দাম আরেকটু বেশি। খুচরা বাজারে বড় আকারের প্রতি কেজি এলাচ সর্বোচ্চ ছয় হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। টিসিবির বাজারদরের তথ্য বলছে, প্রতি কেজি জিরা বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ থেকে ৭৮০ টাকায়, যা গত বছরের এই সময় ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকায় বিক্রি হয়। লবঙ্গর কেজি এক হাজার ৪০০ থেকে এক হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছর বিক্রি হয়েছিল এক হাজার ৯০০ টাকা পর্যন্ত। দারচিনি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকায়, গত বছর বিক্রি হয়েছিল ৫০০ থেকে ৫২০ টাকায়।

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, সর্বশেষ গত ৯ ফেব্রুয়ারি এলাচের শুল্ক প্রায় দ্বিগুণ করে কাস্টম কর্তৃপক্ষ। আগে কেজিপ্রতি শুল্ক ছিল সাড়ে সাত ডলার। বর্তমানে সেটি বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৫ ডলার। যার কারণে গত এক-দেড় মাসের ব্যবধানে দাম আরো বেড়ে এলাচের কেজি মানভেদে পাঁচ হাজার ৫০০ থেকে ছয় হাজার টাকা পর্যন্ত উঠেছে। তবে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না বাড়লে এলাচের বাজার অস্থিতিশীল হওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

 

 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ