জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদেরের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানী ঢাকার সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির নিয়মিত বৈঠকে এই অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কমিশনের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
অভিযোগে বলা হয়, জি এম কাদের ১৯৯৬ সাল থেকে বিভিন্ন আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
২০০৯-১৪ সালে তিনি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর জাতীয় পার্টির সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি মনোনয়নে ১৮ কোটি ১০ লাখ টাকা উেকাচ নেওয়া হয়েছে, যার মূল সুবিধাভোগী তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জি এম কাদের। চুক্তি অনুযায়ী অর্থ পরিশোধ না করায় অধ্যাপক মাসুদা এম রশীদ চৌধুরীকে দলীয় পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় এবং তাঁর স্থলে জি এম কাদেরের স্ত্রী শরিফা কাদের সংসদ সদস্য হন।
অভিযোগে আরো বলা হয়, জি এম কাদের জালিয়াতির মাধ্যমে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হন এবং দলীয় পদ বাণিজ্য ও মনোনয়ন বাণিজ্যের মাধ্যমে বিপুল অর্থ সংগ্রহ করেন।
এই অর্থ পরে বিদেশে পাচার করা হয়। জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি ৩০১ সদস্যবিশিষ্ট হলেও বর্তমানে ৬০০ থেকে ৬৫০ জনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা পদ বাণিজ্যের প্রমাণ।
২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে দাখিলকৃত হলফনামা অনুযায়ী জি এম কাদেরের নামে নগদ ৪৯ লাখ ৮৮ হাজার টাকা, ব্যাংকে ৩৫ লাখ ৯৫ হাজার টাকা এবং ৮৪ লাখ ৯৮ হাজার টাকা মূল্যের একটি জিপ গাড়ি রয়েছে। তাঁর স্ত্রী শরিফা কাদেরের নামে নগদ ৫৯ লাখ ৫৯ হাজার টাকা, ব্যাংকে ২৮ লাখ ৯ হাজার টাকা এবং ৮০ লাখ টাকা মূল্যের একটি জিপ গাড়ি রয়েছে।
স্থাবর সম্পদের মধ্যে লালমনিরহাট ও ঢাকায় জমি ও ফ্ল্যাট রয়েছে। জি এম কাদের দেশে-বিদেশে (সিঙ্গাপুর, লন্ডন, সিডনি) নামে-বেনামে সম্পদ পাচার করেছেন। দুদকের গোপন অনুসন্ধানে অভিযোগের যথেষ্ট প্রমাণ মিলেছে।
এদিকে জি এম কাদের বলেছেন, ‘অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলা শুরু করায়, আমার মুখ বন্ধ করতেই দুর্নীতি ও হত্যা মামলা করা হয়েছে। এটি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ক্ষেত্রেও ঘটেছিল।
কিন্তু সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে জাতীয় পার্টি আবারও ঘুরে দাঁড়াবে।’
গতকাল ঢাকার কাকরাইলে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জাতীয় পার্টির ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জি এম কাদের এসব কথা বলেন। জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জন্মদিন উপলক্ষে এই মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
জি এম কাদের বলেন, ‘দেশে নব্য ফ্যাসিবাদের উত্থান হচ্ছে। এ কারণে সম্প্রতি বারবার জাতীয় পার্টির কর্মসূচিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে একটি মহল। কিন্তু বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। বলা হচ্ছে, আমি নাকি ২০১৮ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্য করেছি। এ জন্যই আমার বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত হচ্ছে। অথচ এটা আমার বিরুদ্ধে মনগড়া অভিযোগ, এর সঙ্গে আমার কোনো সংশ্লিষ্ট ছিল না।’
জাতীয় পার্টির ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার আহ্বায়ক আব্দুস সবুর আসুদের সভাপতিত্বে আরো উপস্থিত ছিলেন দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু, পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জহিরুল ইসলাম জহির, জসীম উদ্দিন ভূঁইয়া, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা খলিলুর রহমান খলিল প্রমুখ।