১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী দেশজুড়ে অসংখ্য স্থানে গণহত্যা চালায়। ২০১৮ সালে এ রকম ২৮১টি বধ্যভূমি সংরক্ষণ ও সেখানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণে একটি প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। তিন বছর মেয়াদি এই প্রকল্পটি ছয় বছর পার করে ফেললেও অগ্রগতি মাত্র ১২.৪ শতাংশ। প্রকল্পটির বর্তমান গতি ও অবস্থা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন খোদ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাই।
একাত্তরের বধ্যভূমি সংরক্ষণ
৩ বছরের প্রকল্প শেষ হয়নি ৬ বছরেও
- * সার্বিক অগ্রগতি ১২ শতাংশ * মেয়াদ বেড়েছে দুই বার * জমি অধিগ্রহণ ও লোকবল মূল সমস্যা
খায়রুল কবির চৌধুরী

বধ্যভূমি সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ প্রকল্পটির পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম। প্রকল্পটির ধীরগতির কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জায়গা পাচ্ছি না, অধিগ্রহণ হচ্ছে না, তাই কাজও হচ্ছে না। বেশির ভাগ জায়গাই ব্যক্তি মালিকানাধীন। যেগুলো সরকারি বা ফ্রি পাওয়া গেছে সেগুলো হয়ে গেছে।
প্রকল্প পরিচালক জানান, ২৮১টির মধ্যে চলতি বছরের ২০ মার্চ পর্যন্ত ৩৫টি বধ্যভূমি সংরক্ষণ ও স্মৃতিসৌধ নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আরো ৯টির কাজ চলমান।
মেয়াদ বেড়েছে দুইবার
২০১৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদিত প্রকল্পটির বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছিল ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত। মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের ৪৪২ কোটি ৪০ লাখ টাকার এই প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী সংস্থা গণপূর্ত অধিদপ্তর। তেমন অগ্রগতি না থাকায় ২০২১ সালে প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত করা হয়। দ্বিতীয় দফায় আবারও মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৫ সালের জুন নির্ধারণ করা হয়।
ভূমি অধিগ্রহণে জেলা প্রশাসনকে উদ্যোগী হতে হবে
বধ্যভূমির জন্য ভূমি অধিগ্রহণের দায়িত্ব পুরোটাই জেলা প্রশাসনের ওপর। তারা জায়গা চূড়ান্ত করে দিলে অধিগ্রহণের প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই জায়গা চূড়ান্ত না হওয়ায় কাজ এগোচ্ছে না। প্রকল্প পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ডিসি সাহেবরা (জেলা প্রশাসক) একটু উদ্যোগী হলেই তাড়াতাড়ি হবে।’
অর্থ ছাড় ও লোকবলের সংকট
মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে প্রশাসনিক অনুমোদন পাওয়া ৫০টি বধ্যভূমির অধিগ্রহণ থমকে আছে। চার-পাঁচটির প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে এলেও অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে টাকা আসেনি। প্রকল্পের নেই কোনো স্থায়ী প্রকল্প পরিচালক। দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে প্রকল্প পরিচালকের কাজ করে আসা উপসচিব জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘সাধারণত অন্য প্রকল্পগুলো নির্দিষ্ট একটি জায়গাতে হয়। কিন্তু এই প্রকল্পে সারা দেশে ২৮১টি স্থান রয়েছে। একটা জমি বের করতে যদি দুই-চার বছর লাগে, তাহলে ২৮১টির ক্ষেত্রে কী হবে?’
‘মন্ত্রণালয়ের প্রক্রিয়া ত্রুটিপূর্ণ’
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির প্রকল্পের সমস্যার জন্য আমলানির্ভরতাকে দায়ী করেন। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মন্ত্রণালয় স্থানীয় জনগণ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সংগঠনগুলোর কোনো সহায়তা নিচ্ছে না। তারা ডিসির ওপর দায়িত্ব দিয়েছে। ডিসির তো অন্য বহু প্রশাসনিক কাজ আছে। এটা করতে হবে বিশেষজ্ঞদের দিয়ে।’
শাহরিয়ার কবির আরো বলেন, ‘একজন গরিব কৃষক কেন তাঁর ফসলি জমি স্মৃতিসৌধ করার জন্য দেবেন? তাঁকে তো উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। আর অর্থ বা লোকবল না থাকলে অন্য প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে কিভাবে?’
প্রকল্পের ধীরগতির বিষয়টি স্বীকার করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা অর্থ বরাদ্দ দিচ্ছি। জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসনকে আরো তাগাদা দেব আমরা।’
সম্পর্কিত খবর

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের হাতে উপহার তুলে দেন পরিবেশ উপদেষ্টা


সংস্কারে ১১ দল মতামত দিয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক

সংস্কার কমিশনের সুপারিশের ব্যাপারে আরো চারটি রাজনৈতিক দল তাদের মতামত জানিয়েছে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত ১১টি দল তাদের মতামত জমা দিয়েছে। এ দলগুলোকে নিয়ে আগামীকাল মঙ্গলবার ও পরদিন বুধবার নাগাদ আলোচনা শুরু করা হতে পারে। দলগুলোর সঙ্গে আলাদাভাবে এসব আলোচনা জাতীয় সংসদ ভবনে করা হবে।
গতকাল রবিবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জানায়, মতামতের বিষয়ে কোনো কিছু না জানানো দলগুলোর সঙ্গে কমিশন পুনরায় যোগাযোগ করছে। এর আগে ৩৮টি রাজনৈতিক দলের কাছে মতামত চেয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

জুলাই আন্দোলনে আহতদের পুনাকের আর্থিক সহায়তা
নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি (পুনাক) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের আর্থিক সহায়তা দিয়েছে। গতকাল রবিবার বিকেলে পুনাক সভানেত্রী আফরোজা হেলেন জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট হাসপাতাল ও জাতীয় অর্থোপেডিক ইনস্টিটিউট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ২৫০ জনকে দেখতে যান। এ সময় তিনি তাঁদের হাতে আর্থিক সহায়তার অর্থ তুলে দেন। তিনি তাঁদের খোঁজখবর নেন এবং চিকিৎসা সম্পর্কে কর্তব্যরত চিকিৎসকদের সঙ্গে আলাপ করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন পুনাকের সহসভানেত্রী আইরিন রহমান, সাধারণ সম্পাদিকা কানিজ ফাতেমা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদিকা তৌহিদা নূপুর।

পিলখানা হত্যাকাণ্ড
২৩৯ বিডিআর জওয়ানের জামিনের বিষয়ে আদেশ আজ
নিজস্ব প্রতিবেদক

পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিস্ফোরক আইনে করা মামলায় কারাগারে থাকা ২৩৯ বিডিআর জওয়ানের জামিনের বিষয়ে আদেশের জন্য আজ সোমবার দিন ধার্য করেছেন আদালত। গতকাল রবিবার ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিচারক মো. ইব্রাহিম মিয়ার আদালত এ দিন ধার্য করেন। এর আগে বৃহস্পতিবার জামিনের বিষয়ে শুনানি হয়েছিল। ওই দিন শুনানি শেষে আদালত এ বিষয়ে আদেশের জন্য রবিবার দিন ধার্য করেন।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদর দপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। সে ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। হত্যা মামলায় ৮৫০ জনের বিচার শেষ হয় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর।