মাদারীপুরে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) উপপরিচালক (ডিডি) কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে ব্যাপক ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। টিসিবির পণ্য বিক্রি ও বিতরণে অনিয়মের কোনো সংবাদ না করার জন্য কালের কণ্ঠের প্রতিবেদককে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন। এদিকে পণ্যবাহী প্রতিটি ট্রাকের সঙ্গে মাঠ পর্যায়ে একজন করে ট্যাগ কর্মকর্তা থাকার কথা থাকলেও ট্যাগ কর্মকর্তারা জানেন না কার ডিউটি কোথায়। দু-একটি জায়গা ছাড়া বাকি স্পটগুলোতে ট্যাগ কর্মকর্তাদের ট্রাকের সঙ্গে পাওয়া যায়নি।
সপ্তাহব্যাপী অনুসন্ধানকালে ঘুষের টাকা লেনদেনের দৃশ্য গোপন ক্যামেরায় ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ডিডির বিভিন্ন দুর্নীতির বিষয়ে লাইসেন্স বাতিল হওয়ার ভয়ে ডিলাররা প্রকাশ্যে কিছু বলতে না চাওয়ায় তাঁদের বক্তব্যও গোপন ক্যামেরায় রেকর্ড করে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ডিলার জানান, মাদারীপুরে টিসিবির উপপরিচালক কামাল হোসেন প্রত্যেক ডিলারের কাছ থেকে ট্রাকপ্রতি এক থেকে দুই হাজার টাকা ঘুষ নেন। এর পরই ট্রাক মাঠ পর্যায়ে যাওয়ার অনুমতি দেন ডিডি।
টাকা না দিলে পণ্য দিতে টালবাহানা করেন। কোনো ধরনের প্রচার-প্রচারণা ছাড়াই শহরের বিভিন্ন স্থানে টিসিবির পণ্য বিতরণের কারণে অনেকেই পণ্য পাচ্ছেন না, এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
একাধিক ডিলারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডিলাররা লাইসেন্স করতে গেলে লক্ষাধিক টাকা ঘুষ দিতে হয় ডিডি কামাল হোসেনসহ বিভিন্ন অফিসে। তবে বেশির ভাগ টাকা দিতে হয় ডিডি কামাল হোসেনকে।
টাকা না দিলে নানা ত্রুটি দেখিয়ে তাঁদের হয়রানি করা হয় মাসের পর মাস। আবার মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে একই ব্যক্তিকে একাধিক লাইসেন্স দিয়ে থাকেন বিভিন্ন নামে।
অন্যদিকে মাঠে তদারকির জন্য ট্যাগ অফিসার না থাকায় কিছু কিছু ডিলার সুবিধাভোগীদের কাছে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ পণ্য বিক্রি করে বাকি পণ্য নিয়ে দ্রুত চলে যান। এ সময় সুবিধাভোগীদের ট্রাকের পেছনে পেছনে ছুটতেও দেখা যায়। কখনো আবার জনতার চাপের মুখে পড়ে পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য হন।
ফেরত নিয়ে যাওয়া পণ্য ডিলাররা বেশি দামে কালোবাজারে বিক্রি করেন।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে টিসিবির উপপরিচালক কামাল হোসেন বলেন, ‘আপনারা যে টাকা লেনদেনের কথা বলছেন তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আমি সমানভাবে সব কিছু দিচ্ছি এবং প্রতিদিন ট্যাগ অফিসারদের অবগত করছি। কোথাও কোনো অনিয়ম হলে আমরা ডিলারদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেব।’
মাদারীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ফাতিমা আজরিন তন্বী বলেন, ‘ডিসি স্যারের স্বাক্ষর নিয়ে আমরা পাঁচজন ট্যাগ অফিসার নিয়োগ দিয়েছি। ট্যাগ অফিসারদের সঙ্গে ডিলারদের নামও ফিক্সড করে দিয়েছি। ডিলারের সংখ্যা বেশি হওয়ায় বাই রোটেশন ডিলার পরিবর্তন করা হচ্ছে। এটা সমন্বয় করার কথা টিসিবি কর্মকর্তার। প্রতি ট্রাকে ৪০০ প্যাকেট থাকবে। স্পটে পুরো সময় ট্যাগ অফিসাররা থাকবেন। পণ্য দেওয়া শেষ হলে ট্যাগ অফিসাররা ওখান থেকে চলে আসবেন। যদি কোনো অনিয়ম হয় তাহলে টিসিবি কর্মকর্তাকে জবাবদিহি করতে হবে।’