ধীরেন্দ্রনাথ দত্তর বাড়ি অস্তিত্ব সংকটে

আবদুর রহমান, কুমিল্লা
আবদুর রহমান, কুমিল্লা
শেয়ার
ধীরেন্দ্রনাথ দত্তর বাড়ি অস্তিত্ব সংকটে
ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত

১৯৪৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের গণপরিষদের অধিবেশনে কুমিল্লার কৃতী সন্তান অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত সর্বপ্রথম রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে সোচ্চার হন। স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, গণপরিষদে কার্যবিবরণী লেখা হয় ইংরেজি ও উর্দু ভাষায়, কিন্তু সমগ্র পাকিস্তানের ৫৬ শতাংশ মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে। তাই অধিবেশনে ইংরেজি ও উর্দুর সঙ্গে বাংলা ভাষাও ব্যবহার করতে হবে।

এ ঘটনার পর ধীরেন্দ্রনাথ পাকিস্তান সরকারের রোষানলে পড়ে কয়েকবার কারাবরণও করেন।

আগে থেকেই পাকিস্তানিদের টার্গেট ছিলেন তিনি, যার সর্বশেষ পরিণতি দেখা যায় মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়।

১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ গভীর রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কুমিল্লা নগরীর ঝাউতলা এলাকার ধর্মসাগরের পশ্চিম পারের বাড়ি থেকে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত এবং তাঁর ছেলে দিলীপ কুমার দত্তকে ধরে নিয়ে যায়। কুমিল্লা সেনানিবাসে ৮৫ বছর বয়স্ক ধীরেন্দ্রনাথ দত্তর ওপর অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়। পরে বাবা-ছেলে দুজনকেই নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

তাঁদের মরদেহেরও সন্ধান পায়নি পরিবার।

রাষ্ট্রভাষা বাংলা করার অন্যতম ভিত রচনাকারী ধীরেন্দ্রনাথ দত্তর কুমিল্লার স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটি এখন পড়ে আছে অযত্ন-অবহেলায়। ২০১০ সালে তৎকালীন তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ বাড়িটি পরিদর্শনে আসেন। তিনি এখানে ভাষাসৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণের আশ্বাস দিলেও প্রায় ১৪ বছরেও এর বাস্তবায়ন হয়নি।

তবে স্থানীয় প্রশাসন বলছে, বাড়িটি ব্যক্তিমালিকানাধীন হওয়ায় এবং ধীরেন্দ্রনাথ দত্তর উত্তরসূরিদের আগ্রহ না থাকায় বাড়িটি সংরক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে না।

ধীরেন্দ্রনাথ দত্তর বাড়ি অস্তিত্ব সংকটে

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পুরো বাড়িটি স্যাঁতসেঁতে। সামনের ভাঙাচোরা টিনশেড ঘরটি যেকোনো সময় ধসে পড়ার অবস্থা। আর পেছনের ঘরটি ভেঙে পড়েছে। পুরো বাড়িটি নোংরা, আবর্জনায় ভরে গেছে।

বাড়ির সামনে নেই ভাষাসৈনিক শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তর নামফলকও।

প্রায় ২২ বছর ধরে বাড়িটিতে বাস করে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার সুজন মিয়ার পরিবার। সুজন মিয়া মারা গেছেন প্রায় ১২ বছর আগে। এখন তাঁর স্ত্রী জাহানারা বেগম সন্তানদের নিয়ে থাকেন, কেয়ারটেকারের মতো।

কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, ধীরেন্দ্রনাথ দত্তর স্মৃতি সংরক্ষণে তাঁর উত্তরাধিকারীদের অনাগ্রহ রয়েছে। তারা না চাইলে সরকারিভাবে সেখানে কিছুই করা যাচ্ছে না। কারণ ওই বাড়ির সম্পত্তি তাঁদের ব্যক্তিমালিকানাধীন।

ভাষাসৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্তর নাতনি আরমা দত্ত সাবেক সংসদ সদস্য। এ প্রসঙ্গে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বাড়িটি সংরক্ষণে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে। আমরা তাঁর স্মৃতিগুলো রক্ষা করতে চেষ্টা করছি।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

রাষ্ট্রীয় মূল্যায়ন চায় পরিবার

শরীফ আহমেদ শামীম, গাজীপুর
শরীফ আহমেদ শামীম, গাজীপুর
শেয়ার
রাষ্ট্রীয় মূল্যায়ন চায় পরিবার
শহীদ আবুল বরকত

২১ ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য প্রতিবছরই আবেদন করি। কিন্তু সাড়া মেলে না। গাজীপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের প্রথম প্রহরের অনুষ্ঠানেও আমাদের ডাকা হয় না। বাধ্য হয়ে গণমানুষের সঙ্গে গাজীপুর শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাই।

সেখান থেকে সকালে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানোর পর আজিমপুরে বড় চাচা (বরকত) ও বাবার কবর জিযারত শেষে গাজীপুরে মিলাদ মাহফিল ও কাঙালি ভোজের আয়োজন করি। এভাবেই প্রতিবছর আমাদের পরিবারের সদস্যরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করি। গত বৃহস্পতিবার গাজীপুর মহানগরীর নলজানি এলাকার শহীদ বরকত সরণির বাসায় গেলে আলাপকালে কালের কণ্ঠকে এসব কথা বলেন ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে বাংলা ভাষা আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে শহীদ আবুল বরকতের ছোট ভাইয়ের ছেলে আইনউদ্দীন বরকত।

হতাশা ব্যক্ত করে আইনউদ্দীন বরকত আলো বলেন, প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে বিশেষ করে ২১ তারিখে ঘটা করে পালন করা হয় দিবসটি।

শহীদদের নিয়ে চলে নানা অনুষ্ঠান, আলোচনাসভা। যাঁদের কর্ম ও আত্মত্যাগ নিয়ে আয়োজন, তাঁদের পরিবারের সদস্যদের শহীদ দিবসের জাতীয় অনুষ্ঠানে ডাকা হয় না, এটি খুবই পীড়াদায়ক। মাতৃভাষা আন্দোলনের শহীদ আবুল বরকত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। ২০০১ সালে তাঁকে মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান করা হয়।
এ ছাড়া আর কোনো রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পায়নি এই পরিবার। টাকা-পয়সা নয়, বরকতসহ ভাষাশহীদদের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে মূল্যায়ন চান তাঁরা।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, আবুল বরকত ১৯২৭ সালে ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার ভরতপুর থানার বাবলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৮ সালে মুর্শিদাবাদের বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে অনার্সে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। মেধাবী বরকত অনার্সে দ্বিতীয় শ্রেণিতে চতুর্থ স্থান লাভ করে ভর্তি হন মাস্টার্সে।

পরিবারের সদস্যরা জানান, তিন বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে বরকত ছিলেন বড়। ছোট ভাই আবুল হাসনাত মারা যান ১৯৬৮ সালে। তিন বোন শামসুন্নাহার, নুরুন্নাহার ও নুরজাহান। নুরুন্নাহার ভারতে থেকে যান।

২০০৭ গাজীপুর স্টেডিয়ামকে ভাষাশহীদ বরকত স্টেডিয়াম নামকরণ হয়। ২০০৮ সালে বরকতদের বাড়িতে যাওয়ার রাস্তাটি স্থানীয়রা বরকত স্মৃতি সরণি সড়ক নাম দেয়। পারিবারিক উদ্যোগে ভাষাশহীদ স্মৃতি সংঘ নামে একটি সংগঠন রয়েছে।

 

মন্তব্য

সালামনগরে নেই সালামচর্চা

আসাদুজ্জামান দারা, ফেনী
আসাদুজ্জামান দারা, ফেনী
শেয়ার
সালামনগরে নেই সালামচর্চা
শহীদ আবদুস সালাম

শান্ত, ছায়াঘেরা, পাখিডাকা, সুন্দর গ্রাম সালামনগর। আগে গ্রামের নাম ছিল লক্ষ্মণপুর। তিন দশক আগে ভাষা শহীদ সালাম পরিষদের নানা উদ্যোগ ও চেষ্টার ফলে সরকারিভাবে গ্রামটির নামকরণ হয় সালামনগর। শুধু তা-ই নয়, সালামের বাড়ির পাশে লক্ষ্মণপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়টিরও নাম পরিবর্তন করে ভাষা শহীদ সালাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় করা হয়।

সেখানে গড়ে উঠেছে শহীদ মিনার। প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে সালাম স্মৃতি জাদুঘর ও পাঠাগার। এরপর সেখানকার বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই ভাষা শহীদ সালামের বিষয়ে জানে না।

সম্প্রতি দাগনভূঞার মাতুভূঞা ইউনিয়নের সালামনগর গ্রাম ঘুরে ভাষা শহীদ সালাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তানজিনা আক্তার নওরীন, নুসরাত জাহান লামিয়া, নুর ইসলাম, জিয়াদ হোসেন জাহিদ, জান্নাতুল ফেরদৌস, ফাতেমাতুন জান্নাত, বিবি সুমাইয়া, উম্মে বিবিসহ বেশ কয়েকজন চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয়।

দু-একজন ছাড়া কেউ-ই ভাষা শহীদ সালামের বিষয়ে জানে না। অনেকে নামও শোনেনি। শুধু পঞ্চম শ্রেণির নুসরাত জাহান লামিয়া বলল, সালাম ভাষা আন্দোলনের একজন শহীদ। তিনি ১৯৫২ সালে মাতৃভাষা বাংলার দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান।

স্কুলের পাশেই ভাষা শহীদ সালাম জাদুঘর ও পাঠাগার। গ্রন্থাগারিক লুত্ফুর রহমান বাবলু বলেন, তেমন একটা পাঠক এখানে আসে না। পাঠাগারে নিয়মিত দুটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকা রাখা হয়। এলাকার কেউ কেউ পত্রিকা পড়তে আসেন।

তিনি জানান, চার বছর আগে থেকে তিনি এখানে দায়িত্ব পালন করছেন।

এলাকায় শিক্ষার প্রসার কিছুটা কম। তাই পাঠাগারও বেশির ভাগ সময় পাঠকশূন্য থাকে। এখানে তিন হাজারেরও বেশি বই আছে সত্য, তবে সালামকে নিয়ে লেখা বই তেমন একটা নেই।

সালাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিও রয়েছে নানা সংকটে। প্রধান শিক্ষক পদটি গত বছরের এপ্রিল থেকে শূন্য। শিক্ষক আছেন পাঁচজন। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আঁখি রানী দাস ছুটিতে থাকায় তাঁর সঙ্গে কথা বলা যায়নি। শিক্ষিকা আফিফা খান ও লুত্ফুন নাহার জানান, স্কুলে সারা বছর সালামের বিষয়ে আলোচনা না হলেও ফেব্রুয়ারি মাস এলে তাঁরা শিক্ষার্থীদের স্মরণ করিয়ে দেন সালামের কথা। তাদের কাছে বর্ণনা করেন ভাষা শহীদ আবদুস সালামের আত্মত্যাগের কথা।

স্কুল সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৫ সালে লক্ষ্মণপুর রেজিস্ট্রার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে ২০১১ সালে নতুন ভবন নির্মাণ করা হয় এবং ২০১৩ সালে এটি সরকারি হয়। তখন থেকে নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ভাষা শহীদ সালাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

 

মন্তব্য
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিশুদের মাতৃভাষা শিক্ষা

কাগজে আছে, বাস্তবে নেই

    খাগড়াছড়ি : ২০১৭ সাল থেকে সরকার প্রাক-প্রাথমিকে তাদের জন্য পাঠ্যপুস্তক প্রবর্তন করে
আবু দাউদ, খাগড়াছড়ি
আবু দাউদ, খাগড়াছড়ি
শেয়ার
কাগজে আছে, বাস্তবে নেই
খাগড়াছড়িতে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রায় ৩৮ হাজার শিক্ষার্থী হাতে নিজ নিজ মাতৃভাষার বই পেলেও ক্লাসে পাঠদান করার মতো শিক্ষক নেই। ছবি : কালের কণ্ঠ

অনেকটা দায়সারাভাবে চলছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিশুদের জন্য মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম। সরকারের যুগান্তকারী উদ্যোগের সাত বছর পেরিয়ে গেলেও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষায় বই পড়ানো হচ্ছে না শ্রেণিকক্ষে। খাগড়াছড়ির প্রায় ছয় শ বিদ্যালয়ে এই অবস্থা চলছে।

পার্বত্য চুক্তি, আইএলও কনভেনশনসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন আইনের তাগাদা এবং দীর্ঘদিন ধরে মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা চালুর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সাল থেকে সরকার প্রাক-প্রাথমিকে তাদের জন্য পাঠ্যপুস্তক প্রবর্তন করে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা এবং সমতলের সাদ্রি ও গারো শিশুরা নিজেদের ভাষায় পাঠ্যপুস্তক পায়। ১৭ সালে প্রাক-প্রাথমিক এবং পর্যায়ক্রমে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত তাদের বইগুলো নিজ নিজ মাতৃভাষায় ছাপা হয়। কিন্তু তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ৩৮ হাজার শিক্ষার্থী হাতে বই পেলেও পড়ার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে শিক্ষক, শিক্ষাবিদ ও গবেষকরা মাতৃভাষা শিক্ষার কার্যক্রম পুরোদমে চালুর জন্য পার্বত্য জেলা পরিষদগুলোকে বিশেষভাবে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন।

তাঁরা আগামীতে শিক্ষক নিয়োগে ভাষাভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ এবং এখনই শ্রেণি রুটিনে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বই অন্তর্ভুক্ত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। এ ছাড়া প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (পিটিআই) মডিউলেও নৃগোষ্ঠীর ভাষার ওপর প্রশিক্ষণের বিষয়টি রাখার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।

রঞ্জনমনিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ধনা চন্দ্র সেন বলেন, পাঠ্য বইয়ের সঙ্গে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মাতৃভাষার বইও শিশুদের বিতরণ করা হয়েছে। কিন্তু বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষিত শিক্ষক না থাকায় ক্লাসে পড়ানো যাচ্ছে না।

আপাতত শিক্ষকদের স্বল্প মেয়াদি প্রশিক্ষণ দিয়ে হলেও মাতৃভাষার বই পড়ানো উচিত।

ঠাকুরছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অনক ত্রিপুরা বলেন, চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা ভাষার বর্ণমালা সম্পর্কে খোদ শিক্ষকরাই কিছু জানেন না। তাই শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই।

ভাষা গবেষক মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা জানান, হাতেগোনা দু-চারজন শিক্ষক ছাড়া বাকিদেরও নিজ মাতৃভাষার বর্ণমালা সম্পর্কে ধারণা নেই। সুতরাং তাঁরা কিভাবে এসব বই ক্লাসে পড়াবেন? অথচ মাল্টি লিংগুয়াল এডুকেশন বা এমএলই ধারণা থেকেই পাহাড়ি শিশুদের মাতৃভাষার শিক্ষা কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছিল।

প্রাথমিকেই ঝরে পড়ার হার কমিয়ে আনতে উদ্যোগটি বেশ প্রশংসিতও হয়েছিল।

ভাষা নিয়ে লেখালেখি করা ঞোহ্লামং মারমা বলেন, মাতৃভাষার শিক্ষা কাগজে থাকলেও বাস্তবে নেই। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে সাধারণ প্রশ্নের সঙ্গে অন্তত ২০/২৫ নম্বরের প্রশ্ন নিজ নিজ মাতৃভাষায় প্রবর্তন করা হলে আগামীতে শিক্ষক প্রার্থীদেরও মাতৃভাষা শেখার আগ্রহ তৈরি হবে।

এই বিষয়ে পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের আহ্বায়ক ও জেলা পরিষদ সদস্য নিলোৎপল খীসা জানান, শিক্ষকদের নিজ নিজ ভাষার প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং রুটিনে মাতৃভাষার বই অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে ভাবা হচ্ছে।

সহকারী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মুহাম্মদ মোছাদ্দেক হোসেন বলেন, এরই মধ্যে শ্রেণি রুটিনে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বই অন্তর্ভুক্ত করতে প্রধান শিক্ষকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যেই শিক্ষক প্রশিক্ষণও শুরু হতে পারে।

মন্তব্য

শহীদ রফিকের সমাধি কোথায়

মোবারক হোসেন, সিংগাইর (মানিকগঞ্জ)
মোবারক হোসেন, সিংগাইর (মানিকগঞ্জ)
শেয়ার
শহীদ রফিকের সমাধি কোথায়
শহীদ রফিকউদ্দিন

ভাষাশহীদ রফিকউদ্দিন আহমদের আত্মদানের ৭২ বছর পরও চিহ্নিত করা হয়নি তাঁর সমাধিস্থল। সংরক্ষণ করা হয়নি জন্মভিটাও। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে স্মৃতি জাদুঘর ও ভাষাশহীদ রফিকউদ্দিন আহমদের পৈতৃক ভিটায় নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভে হাজারো মানুষের ঢল নামে। কিন্তু ভেতর বাড়ির খবর নেয় না কেউ।

১৯২৬ সালের ৩০ অক্টোবর মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার পারিল গ্রামের আব্দুল লতিফ ও রাফিজা খাতুনের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন রফিকউদ্দিন আহমদ। এই দম্পতির পাঁচ ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে রফিক ছিলেন সবার বড়। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভেঙে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে ছাত্র-জনতা। সেই মিছিলে অংশ নেন রফিক।

মিছিলে নির্বিচারে গুলি চালায় পুলিশ। এতে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। ওই দিন রাত ৩টায় পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর পাহারায় ঢাকার আজিমপুর কবরস্থানে তাঁর লাশ সমাহিত করা হয়।

২০০৬ সালে ভাষাশহীদ রফিকউদ্দিন আহমদের জন্মভূমি পারিল গ্রামের নাম পরিবর্তন করে রফিকনগর রাখা হয়।

স্থানীয় লে. কর্নেল (অব.) মজিবুল ইসলাম খান পাশার দান করা ৩৪ শতাংশ জমির ওপর ২০০৮ সালে নির্মাণ করা হয় ভাষাশহীদ রফিকউদ্দিন আহমদ গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর। স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগারে রফিকের কিছু স্মৃতিচিহ্ন ও বই থাকলেও এখনো সেখানে স্থান পায়নি তাঁর মরণোত্তর একুশে পদক ও শিক্ষা সনদ। এই স্মৃতিচিহ্ন দুটি তাঁর ছোট ভাই খোরশেদ আলমের হেফাজতে রয়েছে।

এদিকে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে দিন দিন সৌন্দর্য হারাচ্ছে ভাষাশহীদ রফিকউদ্দিন আহমেদ স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগারটি। সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগানো হয়েছিল, কিন্তু পরিচর্যার অভাবে সেসব মরে গেছে।

জাদুঘরের তত্ত্বাবধায়ক শাহাজালাল ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী দেলোয়ারা বেগম জানান, ভাষার মাস এলেই তাঁদের কথা মনে পড়ে। অনেকেই চাকরি স্থায়ীকরণের আশ্বাস দেন। কিন্তু যাওয়ার পর কেউ খবর নেয় না।

স্থানীয়রা জানায়, ভাষা আন্দোলনের ৭২ বছরেও ভাষাশহীদ রফিকউদ্দিন আহমদের জন্মভিটা সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। নির্মাণ করা হয়নি জন্মভিটার সীমানাপ্রাচীর। যে ঘরে রফিকের জন্ম সে ঘরটির এখন অস্তিত্ব নেই।

ভাষাশহীদ রফিকউদ্দিন আহমদের ছোট ভাই খোরশেদ আলম বলেন, রফিকউদ্দিন আহমদের আত্মদানের দীর্ঘ ৭২ বছর পরও তাঁর কবরটি চিহ্নিত করা হয়নি।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ