ছবিতে একটি পরাবাস্তব দৃশ্য আছে, আমার ওপর অনেক শাপলা ফুলের পাপড়ি ঝরানো হয়। এর জন্য শাপলাগুলো আনা হয়েছিল। এত শাপলা একসঙ্গে কখনো দেখিনি
বছরের শুরুতে যেমন প্রেক্ষাগৃহে ছিলেন, শেষেও এলেন। মাঝে ভারতে মুক্তি পেয়েছে ‘ভূতপরী’, জিতলেন ফিল্মফেয়ার পুরস্কার, অংশ নিলেন ইরানের উৎসবে।
কোনো নায়ককে কেন্দ্র করে হয়তো গল্প এগিয়েছে। মেয়েরা যে নিষ্পেষিত ছিল, যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে মেয়েদের কী অবস্থা ছিল, সব হারিয়ে তাদের সময় কেমন গেছে, সেসব উঠে এসেছে এই ছবিতে। এদিক থেকে ছবিটা আলাদা বলতে পারি।
এই ছবির শুটিং কবে, কোথায় করেছিলেন?
ঢাকার আশপাশেই শুটিং করেছি, ঠিক মনেও নেই এখন। বছর দুই-তিন হয়ে গেল শুটিংয়ের। এই ধরনের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে কাজ করতে গেলে আলাদা ভালোলাগা থাকে। গল্পের হাত ধরে টাইম ট্রাভেল করি।
একটা বিহাইন্ড দ্য সিন দেখলাম, একগুচ্ছ শাপলা ফুল হাতে খুব উচ্ছ্বসিত আপনি...
ছবিতে একটি পরাবাস্তব দৃশ্য আছে, আমার ওপর অনেক শাপলা ফুলের পাপড়ি ঝরানো হয়। এর জন্য শাপলাগুলো আনা হয়েছিল। এত শাপলা একসঙ্গে কখনো দেখিনি। প্রথমবার দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম, সেই মুগ্ধতা থেকেই নিজে আলাদা করে ছবি তুলে রেখেছি।
মুক্তিযুদ্ধের ছবিতে আগেও অভিনয় করেছেন, এর মধ্যে ‘গেরিলা’ তো কালজয়ী হয়ে গেল। আপনার অভিনয় এবং দর্শক হিসেবে দেখার অভিজ্ঞতা থেকে যদি বলেন, পর্দায় মুক্তিযুদ্ধের উপস্থাপন কি পর্যাপ্ত?
পর্যাপ্ত হয়তো না। আসলে আমরা যে স্বল্প বাজেটে ছবি করি, তাতে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের কাজ করা কঠিন হয়ে যায়। ‘গেরিলা’ নির্মাণ করেছেন একজন মুক্তিযোদ্ধা [নাসির উদ্দীন ইউসুফ], তাঁর দৃষ্টিকোণ থেকে সে সময়ের ভয়াবহতা তুলে ধরেছেন, হয়তো সে কারণে ছবিটা মুক্তিযুদ্ধের দলিল হয়ে উঠেছে। এখনো মনে আছে, এই ছবির প্রথম শট দেওয়ার সময় আমার গায়ে কাঁটা দিচ্ছিল! যেহেতু আমি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, খালেদ মোশাররফের সঙ্গে আমার বাবা [এ এস মাসউদ] সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিলেন। আমরা রূপকথার গল্প না, মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনে বড় হয়েছি। আমাদের পরিবারে মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্ব অনেক। অনেক কিছু হারিয়েছি আমরা। আমাদের গ্রামের বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল, ফুপাকে [ফুফুর স্বামী] বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে মারা হয়েছে। আমরা সরাসরি ভুক্তভোগী একটি পরিবার। পাকবাহিনীর গুলি খাওয়ার আগমুহূর্তে আমার বাবা তুরাগ নদে ঝাঁপ দিয়েছিলেন, বেঁচে ছিলেন বোনাস লাইফে। আমি সেই পরিবারের মেয়ে। মুক্তিযুদ্ধের সেই সব বিষয় আমাদের মানসপটে ভাসে। সুতরাং আমি মনে করি, সাহিত্য ও চলচ্চিত্রের মাধ্যমে এই প্রজন্ম বা পরের প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্ব আরো তুলে ধরা প্রয়োজন।
সম্প্রতি আরেকটি সুখবর পেলেন, নেদারল্যান্ডসের বিখ্যাত রটারড্যাম উৎসবে নির্বাচিত হয়েছে আপনার অভিনীত ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’। ছবিটি নিয়ে কিছু বলবেন?
বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠতম সম্পদ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’। সেটা যখন চলচ্চিত্রে রূপ দেওয়া হলো, তার একটি অংশ হতে পেরে আমি সত্যিই খুশি। দ্বিতীয়ত হলো, এর ভ্রমণটা শুরু হলো রটারড্যাম উৎসবের মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে অংশ নিয়ে। ভারত থেকে এই একটি ছবিই মূল প্রতিযোগিতায় জায়গা পেল, বুঝতেই পারছেন কতটা ভালো লাগার। এই ছবিতে কুসুম চরিত্রে অভিনয় করেছি, এটা যেকোনো শিল্পীর জন্যই আরাধ্য একটি চরিত্র।
বলিউডে তো অভিষেক হলো। ‘কড়ক সিং’ দিয়ে প্রশংসাও পেলেন বেশ। নতুন কোনো কাজ করছেন সেখানে?
এখনই কিছু না। আসলে সময় তো দিতে হয়। কোথাও কাজ করতে হলে সেখানে গিয়ে থাকতে হয়, সেটাও সম্ভব হচ্ছে না। কিছু প্রস্তাব পেয়েছি, তবে গ্রহণ করিনি। দেখা যাক, সামনে ভালো কিছু পেলে করব।
পটপরিবর্তনের পর বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক টালমাটাল অবস্থায়। দীর্ঘদিন ধরে আপনি দুই দেশেই সমানতালে কাজ করছেন। বর্তমান পরিস্থিতি আপনি কিভাবে দেখছেন?
এটা রাজনৈতিক বিষয়, এ নিয়ে কথা বলতেও আসলে চাই না। একটা কথা বলি, শিল্পীদের কাজ হলো মেলবন্ধন তৈরি করা। কাজ দিয়ে দূরত্ব ঘোচানো। যেকোনো দেশের সঙ্গে যেমনই সম্পর্ক থাকুক, কূটনৈতিক সম্পর্ক কূটনীতি দিয়ে মিটবে, রাজনৈতিক সম্পর্ক রাজনীতি দিয়ে মিটবে। কিন্তু শিল্পীদের কাজ কিংবা মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা ঠিকই থাকবে।