<p>অর্ধশতাব্দীর বেশি সময়ের কর্মস্থল সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে শোক, শ্রদ্ধা, ভালোবাসায় শেষ বিদায় জানানো হলো অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফকে।</p> <p>গতকাল (শনিবার) সকাল সোয়া ১১টায় সুপ্রিম কোর্টের ইনার গার্ডেন প্রাঙ্গণে তার দ্বিতীয় জানাজা হয়। এতে অংশ নেন পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন, সাবেক প্রধান বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেন, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. কামাল হোসেন, এম আমীর-উল-ইসলাম, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ফিদা এম কামাল, বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন, সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতি, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার প্রমুখ।</p> <p>এরপর হাসান আরিফের কফিনে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠনের ব্যক্তিরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সকাল সাড়ে ১১টায় হাসান আরিফের মরদেহ সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে নিয়ে যাওয়া হয়।</p> <p>জানাজার আগে বাবার জন্য দোয়া প্রার্থনা করেন হাসান আরিফের ছেলে মোয়াজ আরিফ। স্মৃতিচারণা করে বক্তব্য দেন হাসান আরিফের জুনিয়র আইনজীবী আশিক আল জলিল। সংক্ষিপ্ত এই আয়োজন সঞ্চালনা করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন।</p> <p>এ সময় তিনি প্রধান বিচারপতির লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান। এতে বলা হয়, হাসান আরিফের মৃত্যুতে বাংলাদেশ আইনের জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্রকে হারিয়েছে।</p> <p>ঘনিষ্ঠ বন্ধু হাসান আরিফকে নিয়ে সংবিধান প্রণেতাদের অন্যতম জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘উনি (হাসান আরিফ) আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। তাকে হারানোয় বারে (আইনজীবী সমিতি) একটা শূন্যতা সৃষ্টি হবে। একজন ভালো অভিজ্ঞ আইনজীবী বন্ধুকে হারিয়েছি।’</p> <p>আক্ষেপ প্রকাশ করে প্রবীণ এই আইনজীবী বলেন, ‘একের পর একজনকে হারাচ্ছি। উনি সেই ধরনের লোক ছিলেন, আইনজীবী হিসেবে অভিজ্ঞ এবং সমাজ ও দেশের প্রতি দরদি। তিনি সব সময় ধর্মনিরপেক্ষ ছিলেন। সংবিধানকে সমুন্নত রাখার জন্য একজন যোদ্ধা হিসেবে কাজ করেছেন।’</p> <p>বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘আমরা একজন ভালো আইনজীবী ও একজন ভালো মনের মানুষকে আমরা হারিয়েছি। জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবীর মৃত্যুতে দেশের আইন অঙ্গনের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।’</p> <p>তীব্র গণ-আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারে মন্ত্রী মর্যাদায় উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন হাসান আরিফ। ১৯৪১ সালের ১০ জুলাই বর্তমান ভারতের কলকাতায় তার জন্ম। সেখানকার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক এবং এলএলবি করেন।</p> <p>হাসান আরিফ ১৯৬৭ সালে কলকাতা হাইকোর্টে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। কিন্তু তিন বছরের মাথায় তিনি চলে আসেন সে সময়ের পূর্ব পাকিস্তান বর্তমান বাংলাদেশে। ১৯৭০ সালে ঢাকা হাইকোর্টে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ এ আইনজীবী ছিলেন, এএফ হাসান আরিফ অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস চেম্বারের প্রধান। স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আমলে ১৯৮২ সালের এপ্রিল থেকে ১৯৮৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত তিনি সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেন। পরে ১৯৮৫ সালের আগস্ট থেকে ১৯৯৬ সালের মার্চ পর্যন্ত ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবং বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০১ সালের অক্টোবর থেকে ২০০৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেন।</p> <p>হাসান আরিফ ২০০৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০০৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইন উপদেষ্টা ছিলেন। বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশন সেন্টারের একজন প্যানেল সদস্য ছিলেন তিনি। এর আগে শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) রাতে হাসান আরিফের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয় রাজধানীর ধানমণ্ডি ৭ নম্বর বায়তুল আমান মসজিদে। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শুক্রবার বিকেল ৩টা ১০ মিনিটে রাজধানী ঢাকার ল্যাবএইড হাসপাতালে মারা যান হাসান আরিফ।</p>