<p style="text-align:justify">সংস্কারের পর পুরনো হাইকোর্ট ভবনে ফিরছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, যেখানে বিচারের অপেক্ষায় আছে শেখ হাসিনা সরকারের মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগ।</p> <p style="text-align:justify">মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) দুপুরে ১২০ বছরের পুরনো ভবনটিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এজলাস (বিচারকক্ষ) উদ্বোধন করেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। উদ্বোধনের লিখিত বক্তব্যে বিচার বিভাগের প্রধান বলেন, ‘২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সংস্কারকৃত মূল ভবন ও এজলাস কক্ষ উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে নতুন যুগের সূচনা হলো।’</p> <p style="text-align:justify">প্রধান বিচারপতির লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, ‘এই ভূখণ্ডে বিচার বিভাগীয় ইতিহাসে ঐতিহাসিক এই স্থাপনাটি ‘ঢাকা হাইকোর্ট’ বা ‘পুরাতন হাইকোর্ট ভবন’ হিসেবে যে মহান ঐতিহ্য ধারণ করে আছে, ২০২৪-এর জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনয়ন, যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া ও ন্যায়বিচারের শাশ্বত নীতিসমূহের অনুসরণের মাধ্যমে তা নতুন মাত্রায় পূর্ণতা পাবে।’  </p> <p style="text-align:justify">আরো বলা হয়, সমগ্র জাতির নৈতিক সমর্থনপুষ্ট একটি গণজোয়ার রুখতে সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে একজন সাধারণ নাগরিক আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রতি যে প্রত্যাশা রাখেন, প্রধান বিচারপতিও ঠিক অনুরূপ প্রত্যাশা রাখেন।’</p> <p style="text-align:justify">উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে ছিলেন আপিল বিভাগের বিচারপতি এস এম এমদাদুল হক, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার, ট্রাইব্যুনালের সদস্য বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ, অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামসহ অন্যান্য প্রসিকিউটর, ট্রাইব্যুনালের কর্মকর্তারা। উদ্বোধনের পর প্রধান বিচারপতি ট্রাইব্যুনালের প্রশাসনিক দপ্তর ও চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয় পরিদর্শন করেন।</p> <p style="text-align:justify">পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘জাতি অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দিকে তাকিয়ে আছে। একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে ঠিক সেই আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আমিও তাকিয়ে আছি। ন্যায়বিচারটা দেখতে চাই।’</p> <p style="text-align:justify">প্রধান বিচারপতির উদ্বোধনের পর অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘ট্রাইব্যুনালের অবকাঠামোর যে সংস্কার কাজ করা হয়েছে তা রুটিন কাজের অংশ। জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানে মানুষ মারা গেছে, এখানে মানবতাবিরোধী অপরাধের উপাদান আছে। আইনের সংজ্ঞার মধ্যে যারা পড়বেন তাদের বিচার এই ট্রাইব্যুনালে করা হবে।</p> <p style="text-align:justify">আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে বিচারের প্রত্যাশা ব্যক্ত করে রাষ্ট্রের প্রধান এই আইন কর্মকর্তা বলেন, ‘সরকারের মতো আমিও আশাবাদী। এখানে (আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে) কোনো বিতর্ক রাখতে চাই না। এ জন্য আইনের সংশোধন করা হয়েছে। ব্যক্তি নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার জন্য যা যা করার প্রয়োজন তার সব এখানে নিশ্চিত করা হবে বলে আমি প্রত্যাশা করি। অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের সহযোগিতা লাগলে আমরা তা করব।’</p> <p style="text-align:justify">প্রধান বিচারপতির বক্তব্য ও প্রত্যাশার সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আশা করছি প্রধান বিচারপতির প্রত্যাশা ও জাতির যে প্রত্যাশা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র‍্যাইব্যুনাল পূরণ করতে পারবে।’ পরবর্তী যেকোনো বিচারিক কার্যক্রম ট্রাইব্যুনাল নতুন এজলাস থেকেই করবেন বলে জানান চিফ প্রসিকিউটর।</p> <p style="text-align:justify">ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলে ১৯০৫ সালে ‘গভর্নর হাউজ’ হিসেবে যাত্রা শুরু হয় এই ভবনের। ১৯৪৭ সালের পর ‘ঢাকা হাইকোর্ট’র বিচারকাজ চলে এই ভবনে। পরে এই ভবনটি ‘পুরাতন হাইকোর্ট ভবন’ হিসেবে পরিচিতি পায়। মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য ২০১০ সালে এই ভবনে স্থাপন করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বিচার চলার মধ্যেই ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় ১২০ বছরের পুরনো এই ভবন থেকে ট্রাইব্যুনাল সরিয়ে নেয় আওয়ামী লীগ সরকার। পুরনো এই ভবনের আঙিনায় টিনশেডের স্থাপনা তৈরি করে সেখানে স্থানান্তর করা হয়  ট্রাইব্যুনাল ও প্রসিকিউশন। এরপর থেকে নতুন স্থাপনাতেই চলছিল ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজ।</p> <p style="text-align:justify">ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট পতন ঘটে শেখ হাসিনা সরকারের। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে ৮ আগস্ট গঠন করা হয় অন্তর্বর্তী সরকার। এই সরকারে আইন উপদেষ্টার দায়িত্ব নিয়ে আসিফ নজরুল ঘোষণা দেন ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গণহত্যার বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে করা হবে। এ ঘোষণার পূর্ত মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব দেওয়া হয় ভবনটির সংস্কারকাজের। গত ৮ অক্টোবর সংস্কারকাজ শুরু হয়।</p>