<p>যখন আমরা অসুস্থ হই, শরীরের সব শক্তি হারিয়ে ফেলি, আমাদের মনোবল ভেঙে যায়, অস্থিমজ্জায় দুর্বলতার ছাপ স্পষ্ট পরিলক্ষিত হয়, তখন মহান আল্লাহ আবার আমাদের সুস্থ করে তোলেন। তাঁর অশেষ কৃপায় আমরা ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠি। মনে হয়, নতুন করে তিনি আবার আমাদের জীবন দান করেন। অসুস্থতার দিনগুলোতে মুমিনের আত্মোপলব্ধি কেমন হওয়া দরকার—তা দেখা যায় ইবরাহিম (আ.)-এর জীবনে। ইবরাহিম (আ.) সব পরিস্থিতিতে আল্লাহকে স্মরণ করতেন এবং তাঁর কাছেই আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। তাঁর কথা কোরআনে এভাবে এসেছে—‘আর যখন আমি অসুস্থ হই, তখন তিনিই আমাকে সুস্থতা দান করেন।’ (সুরা : শুআরা, আয়াত : ৮০)</p> <p><strong>সুস্থতার জন্য প্রার্থনা  </strong></p> <p>আমাদের প্রিয় নবী (সা.) সুস্থতা ও নিরাপত্তার জন্য আল্লাহর কাছে প্রতিনিয়ত প্রার্থনা করতেন। জুবাইর ইবনে আবু সুলাইমান, ইবনে জুবাইর ইবনে মুতইম (রা.) বলেন, আমি ইবনে ওমর (রা.)-কে বলতে শুনেছি, রাসুলুল্লাহ (সা.) সকাল ও সন্ধ্যায় উপনীত হয়ে এ দোয়াগুলো পড়া ছেড়ে দিতেন না—‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে দুনিয়া ও আখিরাতের নিরাপত্তা চাই। হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে ক্ষমা এবং আমার দ্বিন, দুনিয়া, পরিবার ও সম্পদের নিরাপত্তা চাই। হে আল্লাহ! আপনি আমার দোষত্রুটিগুলো ঢেকে রাখুন এবং ভীতিপ্রদ বিষয় থেকে আমাকে নিরাপদ রাখুন। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে হেফাজত করুন আমার সম্মুখ হতে, আমার পেছন দিক থেকে, আমার ডান দিক থেকে, আমার বাঁ দিক থেকে এবং আমার ওপর দিক থেকে। হে আল্লাহ! আমি আপনার মর্যাদার অসিলায় মাটিতে ধসে যাওয়া থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৫০৭৪)</p> <p><strong>আল্লাহ শিফা দানকারী</strong></p> <p>অনেকেই এমন আছে, যারা প্রতিনিয়ত ডাক্তারের কাছে যেতে যেতে বিরক্ত, হাসপাতালের নাম শুনলেই কেমন যেন বিষিয়ে ওঠে দেহমন, ওষুধগুলো দেখলেই মনে হয় বিষাক্ত কিছু জিনিস ঘুরপাক খায় তার মনে। তাদেরও মহান সত্তা সুস্থতা দান করেন। তিনি শেফা নসিব করেন তাঁর বান্দাকে। নতুন করে আবার শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণের সুযোগ করে দেন। তিনি আশ-শাফি, এর অর্থ যিনি সুস্থতা দান করেন। বান্দার শরীরকে সুস্থ ও নিরাপদে রাখেন। আল্লাহর এই গুণবাচক নামের সঙ্গে আমাদের সবার পরিচয় হওয়া দরকার।</p> <p>কমবেশি আমরা সবই রোগে আক্রান্ত হয়ে ভুগি। যে ব্যক্তি অসুস্থ হয়, সেই জানে অসুস্থতার যন্ত্রণা কত প্রকট। যেই চোখের ব্যথা থেকে মুক্তি লাভ করে আবার শুরু হয় মাথায় ব্যথা। জ্বরে আক্রান্ত হওয়া ব্যক্তি সুস্থতা লাভ করতে করতেই পেটের পীড়া শুরু হয়ে যায়। এসব অবস্থায় যিনি আমাদের সুস্থতা দান করেন তিনি আশ-শাফি, তিনি আরোগ্যদাতা। প্রচণ্ড অহংকারী ব্যক্তিও অসুস্থতার কারণে শক্তি-সাহস হারিয়ে ফেলে, হতাশা ও দুর্বলতা তাকে চতুর্দিক থেকে ঘিরে ফেলে। ফলে সজীব সতেজ মানুষটিও একসময় তার ভেতরে অনুভব করে অবসাদ ও দুর্বলতা। মহান আল্লাহ তাআলা বান্দাকে এই দুর্বলতা আর অবসাদ দিয়ে তার ভেতরে এই অনুভূতি জাগ্রত করতে চান যে আমি দুর্বল, আমার শক্তি-সামর্থ্য কিছুই নেই। মৃত্যুর আগেই যেন সে বিশ্বাসে বিশ্বাসী হয়ে ওঠে যে সব কিছুর ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর হাতে। এই ভাবনায় আমি যেন তাঁর প্রতি বিনীত হই মনেপ্রাণে।</p> <p><strong>মৃত্যুর কথা স্মরণ</strong></p> <p>আমরা প্রতিনিয়ত ছোট ছোট মৃত্যুর সঙ্গে মিলিত হই। অসুস্থতার কারণে সুস্থতার মৃত্যু ঘটে, যৌবনে পৌঁছানোর পরে শৈশবের মৃত্যু ঘটে, বার্ধক্যের কারণে যৌবনের মৃত্যু ঘটে। জীবনের প্রতিটি নতুন ধাপে পৌঁছলে আগের ধাপের মৃত্যু ঘটে। এভাবেই আমাদের জীবন প্রদীপ ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে থাকে পরকালের দিকে। আর এসব মৃত্যুর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা আমাদের আসল দিনের কথা বারবার স্মরণ করিয়ে দেন।</p> <p>হে আল্লাহ! আমাদের সুস্থতার নিয়ামত দান করুন; কঠিন ও জটিল রোগ থেকে হেফাজত করুন।</p> <p> </p>