<p>জলবায়ু সুরক্ষা ও দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি নিরাপত্তায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশও নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে জোর দিয়েছে। বিশেষ করে সৌর ও বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদনে নজর বেশি বাংলাদেশের। নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার। এই লক্ষ্যপূরণে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে কাজ শুরু হয়েছে।</p> <p>এই খাতে দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, জাপান, সিঙ্গাপুর ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশ বিনিয়োগ করেছে। এ ছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এখন বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখাচ্ছে বলেও বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।</p> <p>বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, সরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার কারণেই বিদেশিরা বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে, যা দেশের জন্য খুবই ভালো।</p> <p>বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক বছরে বিদেশি আটটি প্রতিষ্ঠান দেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য চুক্তি সই সম্পন্ন করেছে।</p> <p>এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন এলাকায় নবায়নযোগ্য খাতে দেশি কম্পানির সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগে কাজ শুরু করেছে আরো ১২টিরও বেশি বিদেশি কম্পানি। প্রতিষ্ঠানগুলো এখন চুক্তি সইয়ের অপেক্ষায় আছে।</p> <p><strong>চুক্তি স্বাক্ষরিত প্রকল্পগুলো : </strong></p> <p>জাপানের মারুবেনি করপোরেশন যৌথ বিনিয়োগে ফেনী জেলার সোনাগাজীতে ১০০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছে। গত ৩ অক্টোবর সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণে চুক্তি স্বাক্ষর হয়।</p> <p>পাবনায় ১০০ মেগাওয়াট সোলার পার্কে ভারতীয় কম্পানি শাপুর্জি পল্লনজি ইনফ্রাস্ট্রাকচার ক্যাপিটাল কম্পানি প্রাইভেট সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছে। জাপানি প্রতিষ্ঠান ইকিসোজি কম্পানির উদ্যোগে সিলেটে নির্মিত হচ্ছে পাঁচ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প। কোরিয়ান প্রতিষ্ঠান হাওর বাংলা কোরিয়া গ্রিন এনার্জি সুনামগঞ্জের ধর্মপাশায় ৩২ মেগাওয়াট সক্ষমতার সোলার পার্ক নির্মাণ করছে। চীনের প্রতিষ্ঠান সিইটিসি ইন্টারন্যাশনাল কম্পানি লালমনিরহাটের পাটগ্রামে পাঁচ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ করছে। চীনের প্রতিষ্ঠান জিয়াংসু জংতিয়ান টেকনোলজি তেতুলিয়ার পঞ্চগড়ে ৩০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছে।</p> <p>চীনের প্রতিষ্ঠান সোলারল্যান্ড ইলেকট্রিক সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি পাবনার বেড়ায় ৩.৭৭ মেগাওয়াটের সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে বিনিয়োগ করেছে। গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জে দেশের সবচেয়ে বৃহৎ ২০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করেছে বেক্সিমকো পাওয়ার এবং চীনা প্রতিষ্ঠান টিবিইএ জিনজিয়াং সান ওয়েসিস কম্পানি লিমিটেড। সম্প্রতি বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে উৎপাদন শুরু হয়।</p> <p>বিদেশি বিনিয়োগে সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ শুরু উল্লেখযোগ্য আরো কয়েকটি প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে— সিঙ্গাপুরের প্রতিষ্ঠান এইট মিনিট এনার্জি সিঙ্গাপুর হোল্ডিংস-২ পঞ্চগড়ে ৫০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পে বিনিয়োগ করছে। নরওয়ের কম্পানি স্ক্যাটেক সোলার এএসএ নীলফামারীতে ৫০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুতে বিনিয়োগ করছে। সিঙ্গাপুরের কম্পানি এসএমই ইলেকট্রিক্যাল প্রাইভেট চাঁদপুরে সাত মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পে বিনিয়োগ করছে। সিঙ্গাপুরের আরেকটি প্রতিষ্ঠান দেশীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে খুলনার তেরখাদায় ৫০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র করছে। কোরিয়ান প্রতিষ্ঠান এইচআই কোরিয়া কম্পানি লিমিটেড পাবনার ঈশ্বরদীতে ৭০ মেগাওয়াটের একটি সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিনিয়োগ করছে।</p> <p>সৌরবিদ্যুতের পাশাপাশি দেশের উপকূলীয় এলাকায় বায়ুবিদ্যুতের সম্ভাবনা দেখছে বিভিন্ন দেশ। যে কারণে বায়ু শক্তিতেও বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র। এ ছাড়া বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিদেশি বেশ কয়েকটি কম্পানি আগ্রহ দেখিয়েছে।</p> <p>জানতে চাইলে বিদ্যুৎ বিভাগের নীতি ও গবেষণা শাখা পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিয়ে আমাদের একটি লক্ষ্য নির্ধারণ করা আছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক (কয়লা, গ্যাস ও তেল) বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সরে আসছে। আমরাও এখন জীবাশ্ম জ্বালানির চেয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনকে প্রাধান্য দিচ্ছি। নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহও বেশি, কারণ তাঁরা বাংলাদেশে এই খাতকে লাভজনকভাবে দেখছেন। যার কারণে ইদানীং এই খাতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ছে।’</p> <p>বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য মতে, বর্তমানে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২৮ হাজার ১৩৪ মেগাওয়াট (ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ)। পাশাপাশি ভারত থেকে আমদানির সক্ষমতা তৈরি হয়েছে দুই হাজার ৬৫৬ মেগাওয়াট। নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎপাদন সক্ষমতা মাত্র এক হাজার ১৯৪.৬২ মেগাওয়াট।</p>