<p>মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় স্বল্প মূল্যে ইট দেওয়ার নামে শতাধিক মানুষের কাছ থেকে আট কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠেছে। উপজেলার ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের এম এন এইচ ব্রিকস্ ফিল্ডের মালিক নজিবুর রহমান (মোহাম্মদ আলী) ও ব্যবস্থাপক মানিক বর্ধনের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগীরা।</p> <p>মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১টার দিকে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে সংবাদ সম্মেলনে প্রতারণার শিকার হওয়া ভুক্তভোগীদের পক্ষে অভিযোগ করে বক্তব্য দেন কয়ছর রশীদ, মুহিবুর রহমান জাহাঙ্গীর, আজাদ আলী, আবুল কাসেম উসমানী, রুবেল আহমদ ও জালাল উদ্দিনসহ অর্ধশতাধিক ভুক্তভোগী।</p> <p>সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগীরা জানান, গত ১০ বছর ধরে উপজেলার ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের এম এন এইচ ব্রিকস্ ফিল্ডের মালিক নজিবুর রহমান (মোহাম্মদ আলী) ও ব্যবস্থাপক মানিক বর্ধন প্রতি বছর স্বল্প মূল্যে ইট দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন ধাপে কুলাউড়ার বিভিন্ন এলাকার প্রায় ১৩৫ জন মানুষের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা সংগ্রহ করেন। কিন্তু নির্দিষ্ট সময় ইট না দিয়ে নানান টালবাহানা শুরু করেন নজিবুর রহমান ও মানিক বর্ধন। বর্তমানে মানিক বর্ধন গা ঢাকা দিয়েছেন এবং ভাটার মালিক মালিক নজিবুর রহমান প্রকাশ্য এলাকায় দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তিনি এখন সপরিবারে বিদেশ চলে যাওয়ার পায়তারায় লিপ্ত রয়েছেন।</p> <p>তাঁরা জানান, এ ঘটনায় জেলা পুলিশ সুপার, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কুলাউড়া সার্কেল), অফিসার ইনর্চাজ ও স্থানীয় ব্রাহ্মণবাজার ইউপি চেয়ারম্যান বরাবরে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন।</p> <p>ভুক্তভোগী কয়ছর রশীদ ও জসীম উদ্দিন বলেন, গত ২০১৮ ও ২০১৯ সালে বিভিন্ন ধাপে ভাটার মালিক নজিবুর রহমান ও ব্যবস্থাপক মানিক বর্ধন আমাদের কাছ থেকে এক কোটি ১৬ লাখ টাকা নেন। বিনিময়ে ইট বিক্রির মৌসুমে বাজার মূল্য থেকে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা কমে আমাদের কাছে ইট বিক্রি করবেন। এ শর্তে রশীদ দেওয়া হয় আমাদের। কিন্তু মৌসুমে আমরা ইট সংগ্রহ করতে গেলে ইট পোড়ানো হয়নি। ইট তৈরি হলে তখন দেওয়া হবে জানান তাঁরা। অথচ মৌসুমে বাহিরে বিভিন্ন ক্রেতার কাছে ঠিকই ইট বিক্রি করছেন। বিষয়টি আমরা জেনে ভাটার মালিক নজিবুর রহমান কাছে গেলে তিনি টালবাহানা শুরু করেন। আমরা ছাড়াও ভুক্তভোগীদের মধ্যে চুনু মিয়ার কাছ থেকে ৪১ লাখ, মুহিবুর রহমান জাহাঙ্গীর তিন লাখ ৫০ হাজার, আব্দুস সালাম সাত লাখ, ইউসুফ আলী ৩০ লাখ, আবুল কাশেম ওসমানী এক লাখ ৫০ হাজার, সমোজ মিয়া এক লাখ ৯২ হাজার, তজম্মল আলী এক লাখ ২৬ হাজার, আজাদ আলী ১ লাখ ৬০ হাজার, মসুদ আহমদ ৩ লাখ ৫০ হাজার, রুবেল আহমদ নয় লাখ, গিয়াস আহমদ চার লাখ ৫০ হাজার, ওসমান আলী তিন লাখ, মুশিউর রহমান দুই লাখ, হাজির মিয়া তিন লাখ, আব্দুল মজিদ তিন লাখ, নাজমা বেগম এক লাখ, খুশবা বেগম তিন লাখ, মিছবা বেগম তিন লাখ ৭০ হাজার, লোকমান মিয়া ছয় লাখ ৬০ হাজার, মতিন মিয়া পাঁচ লাখ,পায়েল মিয়া এক লাখ টাকাসহ আরো শত শত লোকদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। বিনিময়ে সবাইকে ভাটার ব্যবস্থাপক মানিক বর্ধনের স্বাক্ষরিত একটি রশিদ দেওয়া হয়।</p> <p>অভিযুক্ত ইট ভাটার ব্যবস্থাপক মানিক বর্ধনের ব্যক্তিগত মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলে মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তাঁর বক্তব্যে নেওয়া সম্ভব হয়নি।</p> <p>এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ইট ভাটার মালিক নজিবুর রহমান মোহাম্মদ আলী বলেন, বর্তমানে ইটভাটার সাথে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। ২০১৬ সালে আমার ইট ভাটাটি ব্যবস্থাপক মানিকের কাছে লিজ দিয়েছি। সে এখন ব্যবসা পরিচালনা করছে। </p> <p>টাকা হাতিয়ে নেওয়ার প্রশ্নে তিনি বলেন, মালিক আমি একা নই, আলী হায়দর ও নোমান নামে আরো দুজন রয়েছেন। আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না, ভাটার ব্যবস্থাপক মানিক বর্ধন সবকিছু জানেন। তার সাথে গ্রাহকরা লেনদেন করেছেন। কয়েকজন ভুক্তভোগী মানিকের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করার পর থেকে সে এখন উধাও রয়েছেন।</p>