<p>সাজেক ভ্রমণ শেষে ব্যক্তিগত গাড়িতে করে বাড়ি ফেরার পথে অপহরণের শিকার হয়েছিলেন ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার তিন যুবক। পরে তাদের ওপর টানা পাঁচ ঘণ্টা নির্যাতন চালিয়ে মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টা করে অপহরণকারীরা। তবে সেনাবাহিনী ও পুলিশের হস্তক্ষেপে মুক্তিপণ ছাড়াই সেখান থেকে তারা মুক্ত হন। এরপর আজ বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকালে যার যার নিজ বাড়িতে ফিরেছেন। </p> <p>তারা হলেন, নগরকান্দা উপজেলার তালমা ইউনিয়নের ঝাউডাঙ্গী গ্রামের মো. মজিবুর রহমানের ছেলে মো. নাহিদ উজ্জামান (৩৮), মানিকনগর গ্রামের মো. হাবিবুর রহমানের ছেলে মো. জোবায়ের আলম (৩৬) ও তালেরশ্বর গ্রামের কুদ্দুস ফকিরের ছেলে মো. মামুন ফকির (৩৯)।</p> <p>এদিকে তারা বাড়িতে ফিরে আসায় আনন্দে আত্মহারা তাদের পরিবারগুলো। নাহিদ ও জোবায়ের পরিবারের সদস্যরা বলেন, ওদের অপহরণের খবরে সেদিন চিন্তায় পাগলের মতো হয়ে গিয়েছিলাম। মহান আল্লাহর রহমতে ওরা আজ বাড়িতে ফিরে এসেছে। ওরা বাড়িতে ফিরে না আসা পর্যন্ত আমাদের কারো ঘুম ছিল না। অবশেষে ওদের ফিরে পেয়ে আমরা অনেক আনন্দিত।</p> <p>বাড়ি ফিরে আসার পর বৃহস্পতিবার দুপুরে কালের কণ্ঠকে অপহরণের বিষয় বিস্তারিত জানান ভুক্তভোগী তিন যুবকের একজন নাহিদ উজ্জামান। তিনি বলেন, গত শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) বাড়ি থেকে ব্যক্তিগত গাড়িতে করে সাজেক ভ্রমণে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে ভ্রমণ শেষে মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টম্বর) সকালে আমরা আমাদের গাড়িতে করে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই। পথে সকাল ৯টার দিকে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা থানার জামতলা বাজার এলাকায় আমাদের গাড়ির গতিরোধ করে ৭-৮ জনের একদল দুর্বৃত্ত।</p> <p>এ সময় তারা বলেন, আপনারা গাড়ি চাপা দিয়ে একজন লোক মেরে ফেলে এসেছেন। দ্রুত গাড়ি থেকে নামেন। একপর্যায় আমাদের গাড়ি থেকে নামিয়ে নিয়ে জামতলা বাজারের পাশে অবস্থিত একটি মিলের ভেতরে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে প্রথমে আমাদের মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে কার কাছে কি আছে জানতে চায় তারা। তখন আমি আমার কাছে থাকা ১০ হাজার টাকা তাদের হাতে দেই। কিন্তু তাদের মধ্যে থেকে একজন ওই টাকা আমার মুখের দিকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে বলেন, আমরা কি ফকিন্নি? মাত্র ১০ হাজার টাকা দিস। এরপর আমাদেরকে মারধর শুরু করে।</p> <p>নাহিদ বলেন, সবচেয়ে বেশি নির্যাতন করা হয় আমাকে। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আমরা তখন তাদের মুক্তিপণের চাহিদা জানতে চাইলে ৫০ লাখ টাকা দাবি করা হয়। দাবি করা ওই টাকার জন্য পরিবারকে চাপ দিতে বলে আর মারধর করে। দুর্বৃত্তদের নির্যাতনে মাত্রা এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, আমরা জীবনের মায়া ছেড়ে দিয়েছিলাম। ভাবছিলাম আর ফিরতে পারব না, আমাদের মেরে ফেরা হবে। পরে তাদের সঙ্গে আমাদের ২০ লাখ টাকা রফাদফা হয়। আমি কৌশলে ফোন করে আমার এক ভাগিনার কাছে ওই ২০ লাখ টাকা চাই। কিন্তু ভাগিনা আমার কথায় বিষয়টি বুঝতে পারেন। এরপর তিনি ঘটনাটি খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার ও সেনাবাহিনীকে জানান। </p> <p>তিনি বলেন, সেনাবাহিনী ও পুলিশ আমার ফোন নম্বর ট্র্যাকিং করে আমাদের ঘটনাস্থল সনাক্ত করেন। তবে দুপুর দেড়টার দিকে সেনাবাহিনী ও পুলিশের অভিযানের বিষয়টি টের পেয়ে ওরা আমাদের ছেড়ে পালিয়ে যান। পরে পাঁচ ঘণ্টা পর সেনাবাহিনী ও পুলিশ এসে আমাদের উদ্ধার করে। এরপর বুধবার ঢাকায় এসে একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে একদিন চিকিৎসা নিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে বাড়িতে ফিরে আসি। অতিরিক্ত মারধরের কারণে এখনো আমি অসুস্থ। শরীরের প্রচুর ব্যথা। এ ঘটনায় আমি বাদী হয়ে দীঘানালা থানায় একটি মামলা করেছি।</p> <p>মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দীঘিনালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাকারিয়া।</p>