<p>ভোর রাতে বাসার দরজা ভেঙে জোর করে মাহবুব রহমান রিপনকে মাইক্রোবাস তুলে নিয়ে যান সাদা পোশাকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা। ২০১৪ সালের ২১ মার্চ থেকে আজ ফেরেননি তিনি। প্রায় ১০ বছর হলো, ছেলের ফিরে আসার অপেক্ষায় রয়েছেন মা রৌশন আরা বেগম ও তার স্ত্রী। </p> <p>মা জানেন না, ছেলে কোথায় আছে, কেমন আছে। আদৌ বেঁচে আছে নাকি তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। বিগত হাসিনা সরকারের আমলে ফেনীর রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন রিপন। পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তিনি।</p> <p>রিপনের মা রৌশন আরা জানান, সাদা পোশাকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা বাসার দরজা ভেঙ্গে টেনেহিঁচড়ে মাইক্রোবাস তুলে নেয় তার ছেলেকে। সেই থেকে ছেলের অপেক্ষায় ১০ বছর ধরে চোখের পানি ফেলেছেন তিনি। ৫ আগস্টের পর ছেলে ফিরে আসবে এ অপেক্ষায় ছিলেন তিনি। কিন্তু সেটিও হয়নি। </p> <p>কান্নাজড়িত কণ্ঠে মা রৌশন আরা বলেন, অনেক খোঁজাখুঁজির করেও ছেলেকে খুঁজে পাননি। মা যখন সন্তান গর্ভে ধারণ করে তখন সে থাকে মায়ের শয়নে-সপনে ও আনন্দ-বেদনায়। এটা মা ছাড়া কেউ বুঝে না। ছেলের অপেক্ষায় হা হা কার করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়ে আছেন তিনি।</p> <p>মাহবুব রহমান রিপনের বাড়ি ফেনী জেলার দাগনভুঞাঁ উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের শরীফপুর গ্রামে। তিনি ও তার পরিবার নিয়ে ফেনী শহরের পাঠানবাড়ী রোড়ের মোমিন জাহান মসজিদ সংলগ্ন ভাড়া বাসায় থাকতেন। রিপন ফেনী পৌর যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।</p> <p>রিপনের চাচা ওহিদুর রহমান বলেন, রিপনকে তুলে নেওয়ার পর অনেক জায়গায় সন্ধান করেও পাইনি। </p> <p>রিপনের বড় ভাই মোস্তাফিজুর রহমান শিপু বলেন, 'যুবদলের রাজনীতি করাই ছিল আমার ভাইয়ের অপরাধ। তাকে অনেকভাবে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করে বিগত স্বৈরাচার সরকার। না পেরে শেষে গুম করে। এমন কোনো জায়গা নেই, ভাইকে খুঁজিনি। আজ থেকে ১০ বছর হলো ভাইয়ের কোনো খোঁজ পাইনি। বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় আমার ভাই অপহরণ হয়েছে। রিপন ফিরে না আসায় তার পরিবারের অপেক্ষা দিন দিন বেড়ে চলছে।'</p> <p>গুমের সঙ্গে জড়িত সবাইকে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে জেলা যুবদলের তৎকালীন সভাপতি ও বর্তমান জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক গাজী হাবিবুল্ল্যাহ মানিক জানান, রিপন যুবদলের ত্যাগী ও দক্ষ সংগঠক ছিলেন। ফ্যাসিস্ট সরকার রাতের আধাঁরে তাকে তুলে নিয়ে যায়।</p> <p>জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর ও বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন খান কালের কণ্ঠকে জানান, রিপন যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। তার গুমের পর দলের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানিয়ে ছিলাম। তার স্ত্রী বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। পরবর্তীতে পুলিশ কোনো তদন্ত ছাড়াই একতরফা একটি প্রতিবেদন দাখিল করেছে। এখন তার পরিবারের পক্ষ থেকে যদি মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করে তাহলে আইনি সহায়তা প্রদান করা হবে।</p> <p>ফেনী পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, রিপনের পরিবার থেকে অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।</p>