<p style="text-align:justify">স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) সম্পূর্ণ নতুন এক প্রযুক্তি ওয়েট মিক্স মেকাডাম (ডাব্লিইউএমএম) নানা গ্রেডের অ্যাগ্রিগ্রেড খোয়া মিশিয়ে পাবনার ঈশ্বরদীতে নির্মাণ করা হচ্ছে রাস্তা। ৯ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে অন্তত ৫.৬৩ কিলোমিটার এই রাস্তাটি।</p> <p style="text-align:justify">রাজশাহীর ঘোড়ামারা সাহেব বাজার এলাকার বরেন্দ্র কনস্ট্রাকশন লিমিটেড নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি সড়কটির নির্মাণকাজ শুরু করেছে। তবে নতুন প্রযুক্তিতে রাস্তার চলমান কাজ নিয়ে জনমনে সৃষ্টি হয়েছে বিভ্রান্তি। ইটের খোয়ার সঙ্গে মাটি মিছিয়ে পানিতে ভিজিয়ে করা হচ্ছে হালকা কাদাময়। এক দিন পর সেই কাদাময় ইটের খোয়া ফেলা হচ্ছে রাস্তায়। এসব দেখে স্থানীয় জনগণ কাজের মান নিয়ে তুলছেন নানা প্রশ্ন। </p> <p style="text-align:justify">তবে জনগণের নানা প্রশ্নের চেয়ে ঈশ্বরদী উপজেলা প্রকৌশলী মো. এনামুল হক কবির বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন রাস্তাটি টিকিয়ে রাখার চ্যালেঞ্জকে। কারণ রাস্তাটির ধারণ ক্ষমতা থাকবে ১৫-২০ টন। আর এই ধারণ ক্ষমতার রাস্তাটিতে চলাচল করবে সাঁড়াঘাট বালু মহালের বালু বোঝাই ৪০-৪৫ টনের ১০ চাকার ড্রাম ট্রাক। এজন্য রাস্তাটি টিকিয়ে রাখার জন্য জনসচেতনতা প্রয়োজন বলেও মনে করছেন প্রকৌশলী এনামুল কবির।</p> <p style="text-align:justify">স্থানীয় বাসিন্দা ও ঈশ্বরদী উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, পদ্মানদীর সাঁড়াঘাটের বালু মহালের ৪০-৪৫ টন ওজনের ড্রাম চলাচল করায় শহরের রেলগেট থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কার্যালয়ের সামনে হয়ে সাঁড়া ঝাউদিয়া স্কুল, সিভিলহাট তালতলা মোড় পর্যন্ত পৌনে ৬ কিলোমিটার রাস্তা দীর্ঘদিন ধরে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছিল। </p> <p style="text-align:justify">রাস্তার ধারণ ক্ষমতার চেয়ে তিন-চারগুণ বেশি ওজনের যানবাহন চলাচলের কারণে রাস্তার বিটুমিন ভেঙে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছিল। কোথাও কোথাও তিন থেকে চার ফুট পর্যন্ত গর্ত হয়েছিল। বর্ষা মৌসুমে এসব গর্তে জমে থাকতো পানি। পুরো রাস্তায় থাকতো হাঁটু পর্যন্ত কাদা। এরমধ্যেই চলতো ড্রাম ট্রাকগুলো। তাই কাদার কারণে অত্রাঞ্চলের প্রায় ১৫-২০ হাজার মানুষের চলাচলে দুর্ভোগের শেষ ছিল না। রাস্তা সংস্কার, নির্মাণ ও বালু বোঝাই ড্রাম ট্রাক চলাচল বন্ধের জন্য দফায় দফায় মানববন্ধন। অবশেষে অতিগুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি নতুন করে নির্মাণ কাজ শুরু করেছে এলজিইডি।</p> <p style="text-align:justify">স্থানীয় বাসিন্দা হাফিজুর রহমান, মনিরুল ইসলাম, সাহাবুল সরদার ও জাহাঙ্গীর আলম অভিযোগ করে বলেন, প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণীয় রাস্তাটিতে নিম্নমানের ও কাদা মেশানো ইটের খোয়া ব্যবহার করা হচ্ছে। আবার রাস্তাটি মাত্র ১৫-২০ টন ওজন ধারণ ক্ষমতা করে নির্মাণ করা হচ্ছে। কিন্তু এই রাস্তা দিয়ে চলে অন্তত ৪০-৫০ টন ওজনের বালু বোঝাই ট্রাক। সেই হিসেবে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ের এই রাস্তাটি ঠিক কতদিন টিকবে তা অনুমান করা যাচ্ছে।</p> <p style="text-align:justify">খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ঈশ্বরদী পৌর স্টেডিয়াম খেলার মাঠে রাস্তার উপকরণ ইট, বালু, খোয়া, মাটি মেশানোর জন্য রাখা হয়েছে। সেখানেরই ইটের খোয়ার সঙ্গে মাটি মিশিয়ে পানিতে ভিজিয়ে খোয়াগুলো অন্তত একদিন স্তূপ করে রাখা হচ্ছে। সেই কাদামাখা খোয়াগুলো রাস্তায় ফেলা হচ্ছে।</p> <p style="text-align:justify">বরেন্দ্র কন্সট্রাকশন লিমিটেড নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি প্রতিনিধি আলহাজ মো. শৈকত আলী বলেন, জনগণ না বুঝে অভিযোগ করছেন। প্রায় পৌনে ৬ কিলোমিটার রাস্তার জন্য ইটের অন্তত ৬ কোটি সিএফটি খোয়া প্রয়োজন। এক ইটভাটা থেকে তো সব খোয়া পাওয়া যাবে না। ভিন্ন ভিন্ন ভাটা থেকে ইট এনে খোয়া তৈরি করা হচ্ছে। প্রত্যেক ভাটার ইট একই মানের না। আমরা সর্বোচ্চ ভালো ইটের খোয়া দেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু ভাটা থেকে এক নম্বর ইট গাড়িতে লোড দেওয়ার সময় ভাটার মালিকদের পক্ষ থেকে এক লাখে ৪-৫ হাজার দুই নম্বর ইট মিশিয়ে দেয়। এটা যখন আমরা ধরতে পারি, তখন ওই ইটগুলো বাছাই করে ফেলে দিই।</p> <p style="text-align:justify">ঈশ্বরদী উপজেলা প্রকৌশলী মো. এনামুল হক কবির বলেন, নিম্নমানের ইটের খোয়ার সঙ্গে মাটি মিশিয়ে রাস্তায় দেওয়া হচ্ছে বলে এলাকার কিছু মানুষের<br /> অভিযোগটি সত্য নয়। এটা নতুন পদ্ধতি। সেই কারণে জনগণ বুঝতে না পেরে অভিযোগ করছে। গুণগত মান ঠিক রেখে কাজ করা হচ্ছে।</p> <p style="text-align:justify">তিনি আরও বলেন, এলজিইডির নতুন পদ্ধতিতে (ডাবল ইউ এমএম) ঈশ্বরদীতে এই প্রথম এ রাস্তাটির কাজ হচ্ছে। রাস্তাটির দৈর্ঘ্য ৫ দশমিক ৬৩ কিলোমিটার, প্রস্থ ৫ দশমিক ৫ মিটার হবে। গড়ে সাড়ে ৬ ইঞ্চি ডাবল ইউ এমএম পদ্ধতি খোয়া ফেলা হচ্ছে। এর ওপর কার্পেটিং হবে দেড় ইঞ্চি (৪০ এমএম)। আর রাস্তাটির ধারণ ক্ষমতা হবে ১৫-২০ টন। কিন্তু রাস্তায় চলাচল করে সাঁড়া বালু মহালের ১০ চাকার অন্তত ৪০-৪৫ টনের ড্রাম্প ট্রাক। এজন্য রাস্তাটি টিকে রাখাটাই আমাদের নিকট এখন অনেকটা চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠেছে। রাস্তাগুলো রক্ষা করতে তাই প্রয়োজন জন সচেতন।</p>