<p>গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার কালির বাজার ইউনিয়নের শান্তির মোড় এলাকা থেকে একটি হিমালয়ান প্রজাতির শকুন উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) কর্তৃপক্ষের পরামর্শক্রমে শকুনটিকে গাইবান্ধা বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়।</p> <p>রবিবার রাতে এই উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করেন শিক্ষার্থীদের পরিবেশবাদী সংগঠন ‘তীর’-এর সদস্যরা। </p> <p>‘তীর’ সূত্র জানায়, রবিবার বিকেল ৪টার দিকে গাছে দুটি অসুস্থ শকুন দেখতে পায় মো. রেজ্জাক মিয়া (৪২) নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি। এর মধ্যে একটি শকুন ডাল থেকে মাটিতে পড়ে গেলে সেটির সুরক্ষার জন্য আব্দুল জলিল মিয়ার দোকানে রাখা হয়। </p> <p>বিষয়টি জানার পর ‘তীর’-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হোসেন রহমান, প্রকৃতি সংরক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক ইউনিয়নের (আইইউসিএন) শকুন সংরক্ষণ প্রকল্পের মুখ্য গবেষক সারোয়ার আলম ও গাইবান্ধা বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলামকে বিষয়টি সম্পর্কে জানান তীর কর্মকর্তা মো. মোশারফ হোসেন। তাদের সহায়তা ও পরামর্শ ক্রমে শকুন উদ্ধারে তাৎক্ষণিক একটি টিম ঘটনা স্থলে পাঠানো হয়। এই টিমের সদস্য ছিলেন ‘তীর’ গাইবান্ধা সরকারি কলেজ শাখার সাবেক সভাপতি জিসান মাহমুদ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহীম রাফি ও প্রচার সম্পাদক মেজবাহুল হক ও মো. মোশারফ হোসেন। </p> <p>উদ্ধার শকুনের বিষয়ে গাইবান্ধা সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর মো. খলিলুর রহমান জানান, ‘শকুনটি দীর্ঘপথ পাড়ি ও কিছুটা ঠান্ডাজনিত কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ায় উড়তে পারেনি। শকুন মৃত প্রাণীদের মাংস খেয়ে বেঁচে থাকে। ‘প্রকৃতির ঝাড়ুদার’ হিসেবে পরিচিত শকুনের কারণে নিজের অজান্তেই মানুষ রেহাই পেয়ে যায় নানান রোগ-ব্যাধি থেকে। শকুনই একমাত্র প্রাণী যারা রোগাক্রান্ত মৃত প্রাণী খেয়ে হজম করতে পারে এবং অ্যানথ্রাক্স, যক্ষ্মা, খুরারোগের সংক্রমণ থেকে জীবকুলকে রক্ষা করে।’</p> <p>‘তীর’ গাইবান্ধা সরকারি কলেজ শাখার সভাপতি মো. মোশারফ হোসেন বলেন, বাংলাদেশে সাত প্রজাতির শকুন ছিল। এর মধ্যে রাজশকুন বিলুপ্ত প্রায়। এ দেশের স্থায়ী বাংলা শকুন ও সরু ঠোঁটি শকুনও রয়েছে খুব কম। আইইউসিএনের হিসাবে, দেশে ২৬০টির মতো বাংলা শকুন টিকে আছে। এ ছাড়া দেশে তিন প্রজাতির পরিযায়ী শকুন দেখা যায়। এর মধ্যে ‘হিমালয়ান গৃধিনী’ অন্যতম।</p> <p>প্রকৃতি সংরক্ষণ বিষয়ক সংস্থাগুলোর জোট আইইউসিএনের শকুন সংরক্ষণ প্রকল্পের মুখ্য গবেষক সারোয়ার আলম বলেন, হিমালয়ের ঠান্ডা ও হিমঝড়ের কারণে নভেম্বর-ডিসেম্বরের দিকে হিমালয়ান গৃধিনীগুলো সমতলের দিকে আসে। মার্চের দিকে আবার চলে যায়। একেকটা শকুনকে প্রায় এক হাজার কিলোমিটার আকাশপথ পাড়ি দিতে হয়। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে সমতলে এসে তারা পর্যাপ্ত খাবার পায় না। তাই ভ্রমণক্লান্তিতে বিভিন্ন এলাকায় মাটিতে পড়ে যায়।</p> <p>বন্যপ্রাণী পরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবির বলেন, প্রাথমিক পরিচর্যার পর ‘শকুন উদ্ধার ও পরিচর্যা কেন্দ্রে’ এই পরিযায়ী শকুনটিকে  হস্তান্তর করা হবে।</p>