<p>খেজুরের ভেজাল গুড়ে সয়লাব হয়ে গেছে ফরিদপুর সদরপুরের হাট-বাজারগুলো। এসব ভেজাল গুড় কিনে যেমন প্রতারিত হচ্ছেন গ্রাহকরা তেমনই বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। সদরপুরের বিভিন্ন স্থান থেকে ভেজাল গুড় যাচ্ছে অনেক জেলায়। চিনি ও কৃত্রিম রং মিশিয়ে তৈরি করা এ ভেজাল গুড় খেয়ে নানা সমস্যায় ভুগছেন ক্রেতারা।</p> <p>সরকার পতনের পরে স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারি তেমন না থাকার কারণে বাজারগুলোতে সয়লাব হয়ে গেছে ভেজাল গুড়ে। <br /> খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফরিদপুরের মধ্যে সবচেয়ে বেশী ভেজাল গুড় তৈরি করা হয় সদরপুর উপজেলার ঢেউখালী, নয়রশি, পশ্চিম শ্যামপুর, চর বিষ্ণপুর, কৃষ্টপুরসহ বিভিন্ন এলাকায়। এ সব এলাকাগুলোতে বেশ কিছু ভেজাল গুড়ের কারখানা গড়ে উঠেছে।  </p> <p>স্থানীয়রা জানায়, সদরপুর এক সময় খেজুর গুড়ের জন্য বিখ্যাত ছিল। সময়ের পরিক্রমায় খেজুর গাছ কমে যাওয়া ও গাছি না থাকায় একেবারেই কমে যায় খেজুর গুড়ের উৎপাদন। সদরপুরের এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী শীত মৌসুম এলেই বিভিন্ন জেলা থেকে কারিগর এনে অথবা নিজেরাই কারখানা খুলে চিনির সঙ্গে কৃত্রিম রং মিশিয়ে তৈরি করছে খেজুরের নকল গুড়। এ সব খেজুরের গুড়ে খেজুরের কোনো রস নেই। আছে শুধু রং আর চিনি। প্রতিদিন এসব কারখানা থেকে ৬-৭ মন গুড় তৈরি করা হয়। এ সব গুড় উপজেলা থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে বিক্রি করা হয়। তা ছাড়া এসব গুড় ফরিদপুর, ঢাকা, বরিশালসহ বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়। </p> <p>ফরিদপুরের খেজুরের গুড়ের খ্যাতিকে পুঁজি করে নকল গুড় দেদারসে বিক্রি করা হচ্ছে। অনেকেই অনলাইনে আসল গুড়ের কথা বলে নকল গুড় বিক্রি করছে। তা ছাড়া আটরশি বিশ্ব জাকের মঞ্জিল ও চন্দ্রপাড়া দরবার শরীফের বার্ষিক উরসকে সামনে রেখে টনকে টন ভেজাল গুড় বিক্রি করে অসাধু চক্রটি। </p> <p>প্রকৃত খেজুর গুড় তৈরির কারিগর পূর্ব শ্যামপুর এলাকার নালু মীর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রাকৃতিক কারণেই খেজুর গাছে আগের মতো রস হয় না। রসের পরিমাণ কম হওয়ায় খাঁটি গুড় তৈরি করা কষ্টসাধ্য। গুড়ের পরিমাণ বাড়াতে অনেকে রসের সঙ্গে অর্ধেক পরিমাণ চিনি মিশিয়ে গুড় তৈরি করছেন। তাতেও খেজুরের রসের স্বাদ কিছুটা পাওয়া যায়। কিন্তু কারখানা মালিকরা গাছিদের কাছ থেকে রস ও ঝোলা গুড় কিনে নিয়ে কারখানায় যে গুড় তৈরি করছেন তাতে রাসায়নিক ভেষজের কারণে ঘ্রাণ থাকলেও স্বাদ নেই। ভেজাল গুড়ে বাজার সয়লাবের কারণে আসল গুড়ের কদর নেই। এজন্য বাধ্য হয়ে গুড় তৈরি না করে কারখানাগুলোর কাছে রস ও ঝোলা গুড় বিক্রি করে দিচ্ছি।’</p> <p>নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গুড় ব্যবসায়ী কালের কণ্ঠকে জানান, ভারতীয় অপরিশোধিত চিনি ও ঝোলা গুড়ের সঙ্গে ভেষজ নির্যাস, ক্ষতিকর রং, চুন, আটা ও রাসায়নিক কেমিক্যাল মিশিয়ে এসব গুড় তৈরি করেন তারা।  </p> <p>চরবিষ্ণুপুর ইউনিয়নের আজাদ হোসেন নামের এক গাছি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আগে ফরিদপুরের নাম শুনলেই ক্রেতারা খেজুর গুড়ের জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়তেন। বর্তমানে প্রতারিত হয়ে আগ্রহ হারিয়েছেন তারা। এখন গাছিদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে আসল গুড় কিনতে হয়। ভেজাল গুড়ে ভেষজ নির্যাস মেশানোর কারণে আসলের চেয়ে নকল গুড়ের ঘ্রাণ বেশি হয়। বাজারে আসল ও ভেজাল সব গুড়ের একই দাম। আসল গুড় তৈরি করা কঠিন। এ জন্য রস ও ঝোলা গুড় কেজি হিসেবে স্থানীয়দের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছি।’</p> <p>সদরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আহম্মেদ মনজুরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে জানান, কেমিক্যাল মিশ্রিত গুড় খেলে আলসার, ডায়রিয়া, কলেরাসহ পেটের নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। </p> <p>তিনি আরো বলেন, এসব গুড় দিয়ে শিশুদের খাদ্য তৈরি করে খাওয়ালে কিডনি, হৃদরোগ যন্ত্র, ব্রেন ও লিভার ক্যান্সারের মতো জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারে।  </p> <p>নকল গুড় প্রস্তুতকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলে সদরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকিয়া সুলতানা বলেন, খাদ্যে ভেজাল একটি মারাত্মক অপরাধ। খাদ্যে ভেজাল দিলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।</p>