মা ফাতেমা খাতুনকে হত্যা করে বাড়ির পাশের একটি ডোবায় ফেলে রাখেন বাবা আল-আমিন হোসেন। এই ঘটনায় আল-আমিনকে আটক করে নন্দীগ্রাম থানা পুলিশ। এর পর থেকে আল-আমিন জেলহাজতে রয়েছেন।
২০২০ সালের ৬ মে নন্দীগ্রাম উপজেলার বুড়ইল ইউনিয়নের কৈগাড়ী গ্রামে এই হত্যার ঘটনা ঘটে।
মাকে খুনের সময় শিশু আলহাজ হোসেনের বয়স ছিল ১০ মাস। সেই শিশুর বয়স এখন সাড়ে ৪ বছর। মা-বাবার সম্পর্কে কিছুই বলতে পারে না সে। নানিকেই মা বলে জানে আলহাজ। নন্দীগ্রাম পৌর এলাকার বাসস্ট্যান্ডে আরব আলী হোটেলে বসে কথা হয় আলহাজ ও তার নানি চাম্পা বিবির সঙ্গে।
মায়ের কথা জানতে চাইলে আলহাজ তার নানিকে দেখিয়ে দিয়ে বলে, ‘ওই যে আমার মা।’ বাবার কথা জানতে চাইলে সে বলে, ‘আমার বাবা নেই।’ লেখাপড়ার কথা শুনতে চাইলে সে বলে, ‘আমি স্কুলে যাব।
আমি পড়তে চাই।’

আলহাজের নানি চাম্পা বিবি বলেন, ‘আমি এই হোটেলে থালাবাসন ধোঁয়ার কাজ করি। আমার স্বামী নেই। আমার থাকার যে ঘর সেটিও অন্যের জায়গায়। কোনো সরকারি সুবিধাও আমি পাই না।
অনেক কষ্টের জীবন আমার। ১৮ বছর বয়সের মেয়েটাকে বিয়ে দিয়েছিলাম দুপচাঁচিয়া উপজেলার মাটিহাস ফকিরপাড়া গ্রামে। বিয়ের পর জামাই-মেয়ে আমার এখানেই থাকত। সে রাজমিস্ত্রির সঙ্গে হেলপারি করত। ভালোই চলচ্ছিল আমাদের জীবন। বছরখানেক পর মেয়ের এই ছেলেসন্তান হয়। নাতির বয়স তখন ১০ মাস। আমি হোটেলে এসেছি। রাতে বাড়িতে যাওয়ার পর দেখি, ফাতেমা নেই।’
তিনি আরো বলেন, ‘জামাইকে বলি, ফাতেমা কুটি গেছে। সে বলে, আমি জানি না। সারা রাত খুঁজে মেয়েকে পাইনি। পরের দিন জামাই সকালে এসে কয় ডোবার মধ্যে ফাতেমার লাশ দেখা গেছে। লাশ দেখার পর প্রথমে জামাই বলছে, আমার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। পরে বোঝা গেল আমার মেয়েকে খুন করেছে ওই পশু।’
তিনি বলেন, ‘আমার সোনার টুকরা মেয়েটাকে খুন করে ডোবার মধ্যে ফেলে দিয়েছে ওই জানোয়ার।’
অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘একদিকে মেয়ের লাশ, অন্যদিকে এই নাতির কান্না। পরে পুলিশ এসে ধরে নিয়ে গেল ওই পশুকে। কী যে সময় তখন আমাদের জীবনে পার হয়েছে আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। তারপর আমি থানায় মামলা করি। এখনো সে জেলেই আছে। অনেক কষ্টে নাতিকে বড় করছি। কাজ করে যে টাকা পাই সেই টাকা খরচ করে খাই আবার মামলাটাও চালাই। আমার মেয়েকে সে খুন করেছে তার ফাঁসি হলেই আমার শান্তি।’
আরব আলী হোটেলের স্বত্বাধিকারী আরব আলী বলেন, ‘চাম্পা আমার হোটেলে দীর্ঘদিন হলো কাজ করে। আমার লোকদের বলা আছে চাম্পার নাতির খাওয়াদাওয়ার যেন কোনো কষ্ট না হয়।’
মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী বগুড়া জজ কোর্টের অ্যাডভোকেট শ্রীদাম ঘোষ বলেন, ‘ওই মামলায় শুধু জবানবন্দি গ্রহণকারী ম্যাজিস্ট্রেটের সাক্ষী বাদ আছে। আর সব সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ। ম্যাজিস্ট্রেটের সাক্ষীর পরেই রায় আসবে। আশা করা যায় আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি হবে।’