ঈদের বাকি আর মাত্র দুই দিন। এরই মধ্যে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছে মানুষ। দেশের অর্থনৈতিক লাইফলাইন খ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে প্রতিবছর ঈদযাত্রায় তীব্র যানজটে ভোগান্তি থাকলেও এবারের চিত্র পুরোপুরি ভিন্ন। মহাসড়কটির এই অংশে নেই চিরচেনা সেই যানজট।
ফলে স্বস্তিতে বাড়ি ফিরতে পারছে এই মহাসড়কের যাত্রীরা।
আরো পড়ুন
বিশ্ববিদ্যালয় শুধু শেখার জায়গা নয়, স্বপ্ন দেখারও জায়গা : প্রধান উপদেষ্টা
এদিকে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন রাখতে হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি অপরাধ দমনে চেকপোস্ট বসিয়ে সড়কে রয়েছেন সেনাবাহিনী। তাদের সহযোগিতা করছেন কমিউনিটি পুলিশিং, রোভার স্কাউট ও আনসার সদস্যরা। এ ছাড়া মহাসড়কের কুমিল্লার অংশে রাতে যানবাহনে ডাকাতি ও ছিনতাই বন্ধ করতে পুলিশের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
যাত্রীদের নিরাপত্তা দিতে ২৪ ঘণ্টা টহল অব্যাহত রেখেছে হাইওয়ে পুলিশ। রাতে মহাসড়কে কাউকে সন্দেহ হলেই জিজ্ঞাসাবাদ করা করছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের যানজটপ্রবণ ১২টি হটস্পট রয়েছে। যেখানে উল্টো পথে গাড়ি চলাচল, মহাসড়কে যত্রতত্র দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানামা এবং ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার না করে পথচারীদের সড়ক পারাপারসহ নানা অনিয়মের কারণে সৃষ্টি হয়ে থাকে যানজট।
তাই এসব অপরাধ দমনে বাড়তি জনবল মোতায়েন করেছে হাইওয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী। ১০৫ কিলোমিটার এলাকায় প্রায় এক হাজারের অধিক পুলিশ সদস্য, দুই শতাধিক রোভার স্কাউট সদস্য এবং সেনাবাহিনী ও আনসার সদস্য নিয়োজিত রয়েছেন।
আরো পড়ুন
ডিসির বাংলোর গর্তে মিলল সংসদ নির্বাচনের সিলমারা বিপুল ব্যালট
শনিবার (২৯ মার্চ) মহাসড়কের দাউদকান্দি টোল প্লাজা থেকে চৌদ্দগ্রামের দত্তসার পর্যন্ত খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১২টি হটস্পটের মধ্যে কোথাও কোনো যানজট নেই। যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা ও গাড়ি পার্কিংয়ের ফলে কিছুটা ধীর গতি লক্ষ করা গেছে। মহাসড়ক ঘেঁষা বাজারগুলোতে পণ্য ওঠানামায় মাঝে মাঝে অস্থায়ী জট সৃষ্টি হচ্ছে।
তবে দেখা মাত্রই সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিচ্ছেন হাইওয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা। এতে করে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
তিশা পরিবহনের যাত্রী ছিফাতুল্লাহ জাইম বলেন, এবারের ঈদযাত্রায় স্বস্তিদায়ক বলা যায়। ঢাকা থেকে কুমিল্লায় এসেছি মাত্র আড়াই ঘণ্টায়। অন্যান্য বছর যানজটের কারণে ৬-৭ ঘণ্টা সময় লাগত। পরো সড়কে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর তৎপরতা ছিল প্রশংসনীয়। এতে বোঝা যায় প্রশাসন চাইলে সব কিছুই সম্ভব।
আরো পড়ুন
বাংলাদেশের সাবেক কোচকে নিয়োগ দিল নেপাল
স্টারলাইন পরিবহনের যাত্রী আবু সুফিয়ান সুমন বলেন, ‘পরিবার নিয়ে ঢাকা থেকে ফেনীর উদ্দেশে রওনা হলাম। দুশ্চিন্তায় ছিলাম কখন বাড়ি পৌঁছাব। শুকরিয়া সকল শঙ্কা কাটিয়ে স্বস্তিতেই বাড়ি ফিরছি। মনে হচ্ছে ৩ ঘণ্টায় ফেনী যাব। ভোগান্তি ছাড়া এটাই আমার প্রথম ঈদযাত্রা।’
কুমিল্লা রিজিয়ন হাইওয়ে পুলিশ সুপার এডিশনাল ডিআইজি (সুপারনিউমারি) মো. খাইরুল আলম বলেন, মহাসড়কে ঈদযাত্রায় যাত্রীদের বিড়ম্বনা কমাতে কুমিল্লা রিজিয়নে হাইওয়ে সেক্টরের তত্ত্বাবধায়নে ২২টি চেকপোস্ট, দিন-রাত ৭২টি টহল টিম, যানবাহন চেকিং টিম ২২, ট্রাফিক জ্যাম নিয়ন্ত্রণ টিম ৩৮টি, বাসস্ট্যান্ডগুলোতে চেকিং টিম ১৩টি, কুইক রেসপন্স টিম ২২টি, একটি কন্ট্রোলরুম ও অস্থায়ী কন্ট্রোলরুম ৬টি এবং একটি স্ট্রাইকিং রিজার্ভ ফোর্স কাজ করছে। এ ছাড়া দুর্ঘটনাকবলিত যানবাহন দ্রুত সরাতে সার্বক্ষণিক ২২টি রেকার টিম এবং হতাহতদের উদ্ধারে ২৩টি অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তত রাখা হয়েছে।
আরো পড়ুন
ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান বন্ধে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজটমুক্ত ঈদ যাত্রা
তিনি আরো বলেন, হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, কমিউনিটি পুলিশিং, রোভার স্কাউট ও আনসার সদস্যরা সহযোগিতায় করে যাচ্ছেন। গত কয়েক দিনে কুমিল্লার রিজিয়নের হাইওয়ে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ১০ জন ডাকাত, ৯ জন ছিনতাইকারী এবং ৪ জন চোর গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ২টি রামদা, একটি চায়নিজ কুঠাল, বিভিন্ন সাইজের ১১পিস ছুরি এবং ১০টি লোহার রড জব্দ করা হয়। এ ছাড়া ছিনতাই হওয়া ৪১ হাজার টাকা উদ্ধার করে পুলিশ।
কুমিল্লা ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের ১২ বীর ব্যাটালিয়নের মেজর সানিউল আলম বলেন, সড়কে যানজটের কারণগুলো চিহ্নিত করে হটস্পটগুলোতে চেকপোস্ট বসিয়ে সেনাবাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন। সড়ক আইন ও ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করা অসাধু চালক ও পরিবহনের বিরুদ্ধে হাইওয়ে পুলিশের সহযোগিতায় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।