কোরআন থেকে শিক্ষা

সৃষ্টিজগতের সবাই আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করে

ইসলামী জীবন ডেস্ক
ইসলামী জীবন ডেস্ক
শেয়ার
সৃষ্টিজগতের সবাই আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করে

আয়াতের অর্থ : ‘তুমি কি দেখ না যে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যারা আছে তারা এবং উড্ডীয়মান পাখিরা আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে? প্রত্যেকেই জানে তার ইবাদতের ও পবিত্রতা ঘোষণার পদ্ধতি এবং তারা যা করে সে বিষয়ে আল্লাহ সম্যক অবগত। আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সার্বভৌমত্ব আল্লাহরই এবং আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন। তুমি কি দেখ না, আল্লাহ সঞ্চালিত করেন মেঘমালাকে, তৎপর তাদেরকে একত্র করেন এবং পরে পুঞ্জীভূত করেন।...আল্লাহ দিবস ও রাতের পরিবর্তন ঘটান, তাতে শিক্ষা রয়েছে অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্নদের জন্য।

’ (সুরা : নুর, আয়াত : ৪১-৪৪)

আয়াতগুলোতে আল্লাহর সৃষ্টিজগতের বৈচিত্র্য তুলে ধরা হয়েছে।

শিক্ষা ও বিধান

১. আল্লাহর কতক সৃষ্টি মুখে তাঁর তাসবিহ পাঠ করে আর কতক তাদের অবস্থার মাধ্যমে তাসবিহ পাঠ করে।

২. তাফসিরবিদরা বলেন, আল্লাহ যে বস্তুকে যে কাজের জন্য সৃষ্টি করেছেন তা যথাযথ পালন করা তাঁর ইবাদত।

৩. ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থায় সার্বভৌমত্ব আল্লাহর জন্য সংরক্ষিত।

আল্লাহর সার্বভৌমত্বের অধীনেই রাষ্ট্রপ্রধানরা রাষ্ট্র পরিচালনা করবে।

৪. আল্লাহর কুদরত ও সৃষ্টিজগৎ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা মুমিনের জন্য অপরিহার্য। কেননা এর মাধ্যমে ঈমান বৃদ্ধি পায়।

৫. আয়াত থেকে প্রাণিজগতের বৈচিত্র্য ও শ্রেণিবিন্যাস সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

(বুরহানুল কুরআন : ২/৫৮৯)

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সাক্ষাৎকালের গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত

ইসলামী জীবন ডেস্ক
ইসলামী জীবন ডেস্ক
শেয়ার
আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সাক্ষাৎকালের গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত

ঈদের সময় আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া মুসলিম সমাজের বিশেষ সংস্কৃতি। সারা বছর যাদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হয় না ঈদের সময় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয় এবং তারা পরস্পরের বাড়িতে বেড়াতে আসে। এর মাধ্যমে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা পায় এবং একে অন্যের দুঃখের অংশীদার হয়।

ইসলামের দৃষ্টিতে আত্মীয়-স্বজনের পারস্পরিক যাতায়াত প্রশংসনীয় কাজ।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে মুমিন মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করে এবং তাদের জ্বালাতনে ধৈর্যধারণ করে সে এমন মুমিনের তুলনায় অধিক সাওয়াবের অধিকারী হয়, যে জনগণের সঙ্গে মেলামেশা করে না এবং তাদের জ্বালাতনে ধৈর্য ধারণ করে না।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪৪৩২)

পারস্পরিক সাক্ষাতের বিধান

আত্মীয়-স্বজনের পারস্পরিক দেখা-সাক্ষাৎ সাধারণত মুস্তাহাব। চাই তারা সুখে থাকুক বা দুঃখে, সুস্থ থাকুক বা অসুস্থ। কেননা মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের আশায় কোনো অসুস্থ লোককে দেখতে যায় অথবা নিজের ভাইয়ের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করতে যায়, একজন ঘোষক (ফেরেশতা) তাকে ডেকে বলতে থাকেন, কল্যাণময় তোমার জীবন, কল্যাণময় তোমার এই পথ চলাও।

তুমি তো জান্নাতের মধ্যে একটি বাসস্থান নির্দিষ্ট করে নিলে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২০০৮)

আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে কেন যাব?

মুমিন ব্যক্তি অন্যের বাড়িতে বেড়াতে যাবে আল্লাহর নির্দেশ আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার মাধ্যমে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য। কেননা যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য অপর ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যায়, তার ব্যাপারে একজন ফেরেশতা আল্লাহর পক্ষ থেকে এই সুসংবাদ পৌঁছায় যে ‘আল্লাহ তোমাকে ভালোবাসেন, যেমন তুমি তোমার ভাইকে তাঁরই সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য ভালোবেসেছ।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৪৪৩)

সাক্ষাৎ যখন আবশ্যক

আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ ও সাক্ষাৎ সাধারণ সময়ে মুস্তাহাব।

তবে কখনো কখনো তা আবশ্যক হয়ে যায়। যেমন—

১. মা-বাবার সাক্ষাৎ : মা-বাবার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা, নিয়মিত সাক্ষাৎ করা এবং তাদের খোঁজ-খবর রাখা সন্তানের দায়িত্ব। বিশেষত যখন মা-বাবা বার্ধক্যে উপনীত হন অথবা অক্ষম হয়ে পড়েন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমার প্রতিপালক আদেশ দিয়েছেন...মা-বাবার প্রতি সদ্ব্যবহার করতে। তাদের একজন অথবা উভয়েই তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদের ‘উফ’ বোলো না এবং তাদের ধমক দিয়ো না; তাদের সঙ্গে সম্মানসূচক কথা বোলো।

’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ২৩)

২. আত্মীয়তা ছিন্ন হওয়ার ভয় থাকলে : আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাওয়ার ভয় থাকলে, তা রক্ষার জন্য আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি যাওয়া আবশ্যক। মহানবী (সা.) বলেন, যখন আল্লাহ সৃষ্টি কাজ সমাধা করার জন্য আত্মীয়তার সম্পর্ককে বলেন, তুমি কি এতে খুশি নও যে তোমার সঙ্গে যে সুসম্পর্ক রাখবে, আমিও তার সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখব। আর যে তোমার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবে, আমিও তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করব। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৯৮৭)

৩. অসুস্থ হলে : অসুস্থ ব্যক্তির খোঁজ-খবর নেওয়া মুমিনের দায়িত্ব। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কিয়ামতের দিন আল্লাহ বলবেন, হে আদম সন্তান, আমি অসুস্থ হয়েছিলাম, তুমি আমার সেবা-যত্ন করোনি। সে বলবে, হে আমার রব, আমি কিভাবে আপনার সেবা-যত্ন করব অথচ আপনি জগত্গুলোর প্রতিপালক? আল্লাহ বলবেন, তুমি কি জানতে না আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল। অথচ তুমি তার সেবা করোনি। তুমি কি জানো না, যদি তুমি তার সেবা করতে, তবে তার কাছেই আমাকে পেতে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৫৬৯)

৪. বিপদগ্রস্ত হলে বা মারা গেলে : কেউ বিপদগ্রস্ত হলে বা মারা গেলে তার পরিবারকে সান্ত্বনা দেওয়ার ব্যাপারে হাদিসে তাগিদ আছে। মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার মুমিন ভাইকে তার বিপদে সান্ত্বনা দেবে, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তাকে সম্মানের পোশাক পরাবেন।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৬০১)

বিনা প্রয়োজনে দীর্ঘক্ষণ অবস্থান নয়

কারো বাড়িতে বেড়াতে গেলে, কারো সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে বিনা প্রয়োজনে অবস্থান ও সাক্ষাৎ দীর্ঘ না করাই উত্তম। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের আহবান করলে তোমরা (ঘরে) প্রবেশ কোরো এবং খাওয়া শেষে তোমরা চলে যেয়ো; তোমরা কথাবার্তায় মশগুল হয়ে পড়ো না। কেননা তোমাদের এই আচরণ নবীকে পীড়া দেয়, সে তোমাদের উঠিয়ে দিতে সংকোচ বোধ করে। কিন্তু আল্লাহ সত্য বলতে সংকোচ বোধ করেন না।’ (সুরা আহজাব, আয়াত : ৫৩)

পর্দার বিষয়ে সতর্ক থাকা

আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে গেলে অনেক সময় পর্দার বিধান লঙ্ঘন করা হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘সাবধান! নারীদের কাছে তোমরা প্রবেশ করা পরিত্যাগ কোরো। সে সময় আনসারিদের এক লোক বলল, দেবর সম্পর্কে আপনার কি মত? তিনি বললেন, দেবর তো মৃত্যুতুল্য।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৫৫৬৭)

উপহার নেওয়া কি আবশ্যক

কারো বাড়িতে বেড়াতে গেলে উপহার নিয়ে যাওয়া উত্তম এবং মেজবানের জন্য সাধ্যানুযায়ী অতিথির যত্ন করা আবশ্যক। এই ক্ষেত্রে ইসলাম লৌকিকতাকে অপছন্দ করে। তাই অতিথি যেমন সাধ্যের চেয়ে বেশি খরচ করে উপহার কিনবে না, মেজবানও আপ্যায়নে সামর্থ্যের চেয়ে অর্থ খরচ করবে না; বরং উভয়ে নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী আন্তরিকতার পরিচয় দেবে।

মন্তব্য

যে আমলে পুরো বছর রোজা রাখার সওয়াব

ইসলামী জীবন ডেস্ক
ইসলামী জীবন ডেস্ক
শেয়ার
যে আমলে পুরো বছর রোজা রাখার সওয়াব

পবিত্র রমজান মাস ছিল মুমিনের আমলের মৌসুম। এ মাসের আমলগুলো যেন পুরো বছর অব্যাহত থাকে সেটাই এ মাসের প্রধান শিক্ষা। এর মাধ্যমে রোজার সামর্থ্যের জন্য মহান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা হয়। কোরআনে রোজা রাখার নির্দেশের পরই কৃতজ্ঞতা প্রকাশের কথা এসেছে।

ইরশাদ হয়েছে, ‘যেন তোমাদের সৎপথে পরিচালিত করার কারণে তোমরা আল্লাহর মহিমা ঘোষণা কোরো এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কোরো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৫)

রবের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ

কৃতজ্ঞতা প্রকাশের অন্যতম দিক হলো, আমল করা অব্যাহত রাখা। এর মধ্যে রমজানের পর শাওয়ালের ছয় রোজা রাখা গুরুত্বপূর্ণ আমল। রাসুলুল্লাহ (সা.) এ রোজা রাখতেন এবং সাহাবাদের তা রাখার নির্দেশ দিতেন।

আবু আইউব আনসারি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি রমজানে রোজা রাখবে এবং পরবর্তী সময়ে শাওয়ালের ছয় রোজা রাখবে সে যেন পুরো বছর রোজা রাখল।’ (মুসলিম, হাদিস : ১১৬৪)

ছয় দিনের রোজায় পুরো বছরের সওয়াব

রমজান মাসে রোজা রাখার পর শাওয়াল মাসে আরো ছয়টি রোজা রাখলে পুরো বছর রোজার সওয়াব পাওয়া যায়। সাওবান (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, মহান আল্লাহ সব ভালো কাজের প্রতিদান ১০ গুণ করে দেন। তাই রমজান মাস ১০ মাসের সমতুল্য এবং পরবর্তী (শাওয়াল মাসের) ছয় রোজার মাধ্যমে এক বছর পূর্ণতা লাভ করে।

’ (নাসায়ি : ২/১৬২)

পুরো বছর সওয়াব হয় যেভাবে

মূলত রমজান মাসের রোজার পর অতিরিক্ত ছয় রোজা মিলে সাধারণত ৩৬টি রোজা হয়। আর তা ১০ গুণ করলে মোট ৩৬০টি হয়। কারণ মুমিনের যেকোনো আমলের সওয়াব ১০ গুণ করে দেওয়া হয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘কেউ কোনো ভালো কাজ করলে সে তার ১০ গুণ পাবে। আর কেউ কোনো খারাপ কাজ করলে তাকে শুধু তার প্রতিফলই দেওয়া হবে; তাদের ওপর কোনো জুলুম করা হবে না।

’ (সুরা আনআম, আয়াত : ১৬০)

রমজানের রোজার পরিপূরক

নফল আমলের মাধ্যমে ফরজের ত্রুটি-বিচ্যুতি দূর করা হয়। তেমনি শাওয়ালের রোজার মাধ্যমে রমজানের রোজার ত্রুটিগুলো পূর্ণ করা হবে। নামাজ প্রসঙ্গে হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম বান্দার ফরজ নামাজের হিসাব করা হবে। তা ঠিক থাকলে সে সফলকাম। আর তাতে সমস্যা হলে সে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর কোনো ফরজ আমলে অপূর্ণতা দেখা দিলে মহান রব বলবেন, তোমরা দেখো, আমার বান্দার কি কোনো নফল নামাজ রয়েছে? নফল থাকলে তা দিয়ে ফরজকে পরিপূর্ণ করা হবে। এভাবে সব ফরজ আমলের ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ করা হবে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৪১৩)

ইবনুল কায়্যিম (রহ.) বলেছেন, শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা হওয়ার মধ্যে বিশেষ রহস্য রয়েছে। তা হলো এই ছয়টি রোজা রমজানের রোজার পরিপূরক হিসেবে কাজ করে। রোজার মধ্যে যেসব ভুল-ত্রুটি হয়েছে অতিরিক্ত রোজাগুলো তা দূর করে দেয়। বিষয়টি ফরজ নামাজের পর সুন্নত ও নফল নামাজের মতো এবং নামাজে ভুল হলে সিজদায়ে সাহু দেওয়ার মতো।

যেভাবে রাখতে হয়

শাওয়াল মাসের যেকোনো দিন এই ছয়টি রোজা রাখা যাবে। কেউ চাইলে মাসের শুরুতে রাখতে পারবে। কেউ চাইলে মাসের মধ্য ভাগে কিংবা শেষ অংশেও রাখতে পারবে। কেউ চাইলে তা অল্প অল্প করে পুরো মাসে রাখতে পারবে। এ ক্ষেত্রে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তবে নফল আমলের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা থাকা উচিত। সেই হিসেবে মাসের শুরুতেই এই আমল করা উত্তম।

মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে আমল করার তাওফিক দিন।

মন্তব্য

শাওয়ালের ছয় রোজার বিশেষ গুরুত্ব

ইসলামী জীবন ডেস্ক
ইসলামী জীবন ডেস্ক
শেয়ার
শাওয়ালের ছয় রোজার বিশেষ গুরুত্ব

শাওয়াল মাসের ছয় রোজাকে ইসলাম বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। পূর্বসূরি আলেমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে রমজান মাসের রোজা পালন করতেন। শরিয়তের দৃষ্টিতে শাওয়াল মাসে ছয় রোজা রাখা মুস্তাহাব। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখল, অতঃপর তার সঙ্গে সঙ্গে শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা রাখল, সে যেন পূর্ণ বছরই রোজা রাখল।

(সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১১৬৪)

এক বছরের সমান হয় যেভাবে : রাসুলুল্লাহ (সা.) এক বছরের সমান হওয়ার বিষয়টিও ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেছেন, রমজানের রোজা ১০ মাসের রোজার সমতুল্য আর (শাওয়ালের) ছয় রোজা দুই মাসের রোজার সমান। সুতরাং এই হলো এক বছরের রোজা। (সুনানে নাসায়ি : ২/১৬২)

মুহাদ্দিসরা বিষয়টি আরো ব্যাখ্যা করে বলেন, আল্লাহ তাআলা বলেন ‘কেউ কোনো সৎকাজ করলে সে তার ১০ গুণ সওয়াব পাবে এবং কেউ কোনো অসৎকাজ করলে তাকে শুধু তারই প্রতিদান দেওয়া হবে।

’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ১৬)

এই হিসাবে রমজানের ৩০ রোজায় ৩০০ রোজার সওয়াব হয়। আর শাওয়ালের ছয় রোজায় ৬০ রোজার সওয়াব হয়। এভাবে রমজানের ৩০ রোজা ও শাওয়ালের ছয় রোজা মোট ৩৬০ রোজার সমপরিমাণ হয়। 

যে ব্যক্তির রমজানের রোজা কাজা আছে, সে কোনো কারণে পূর্ণ রমজান মাস রোজা রাখেনি।

রমজান মাসের কিছুদিন রোজা রেখেছে। তাই তার উচিত, আগে কাজা রোজাগুলো রেখে রমজান পূর্ণ করা। তারপর শাওয়ালের নফল ছয় রোজা রাখা।
 
 

মন্তব্য

বছরের যেসব দিন রোজা রাখা নিষিদ্ধ

শেয়ার
বছরের যেসব দিন রোজা রাখা নিষিদ্ধ

আরবি সাওম বা সিয়াম মানে রোজা। কিছু দিনে রোজা পালনে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। নিম্নে সেগুলো তুলে ধরা হলো—

১. সাওমে বিছাল (বিরতিহীন রোজা) : সাওমে বিছাল হচ্ছে ইফতারি ও সাহরি গ্রহণ ছাড়া দিনের পর দিন রোজা পালন করা। এটি নিষিদ্ধ।

(বুখারি, হাদিস : ১৯৬৫)

২. সারা বছরের রোজা : সারা বছর রোজা পালন নিষিদ্ধ। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) সারা বছর রোজা পালন করতে চাইলে রাসুল (সা.) দাউদ (আ.)-এর রোজার কথা উল্লেখ করে বলেন, এর চেয়ে উত্তম রোজা আর নেই। (বুখারি, হাদিস : ১৯৭৬)

অন্যত্র এসেছে, যে ব্যক্তি সারা বছর রোজা রাখে, সে মূলত রোজা রাখে না। (নাসাঈ, হাদিস : ২৩৭৩)

৩. শনিবারের রোজা : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমাদের ওপর ফরজ করা রোজা ছাড়া কেউ যেন শনিবারে রোজা না রাখে।

আঙুরের লতার বাকল বা গাছের ডাল ছাড়া অন্য কিছু যদি না পায়, তাহলে সে যেন (ভঙ্গ করার জন্য) তা-ই চিবিয়ে নেয়। (তিরমিজি, হাদিস : ৭৪৪)

ইমাম তিরমিজি (রহ.) বলেন, এই রোজা মাকরুহ হওয়ার কারণ হচ্ছে, শুধু শনিবারকে (নফল) রোজার জন্য নির্দিষ্ট করা। কারণ ইহুদিরা শনিবারকে বিশেষ মর্যাদা দিয়ে থাকে।

৪. শুক্রবারের রোজা : জুয়াইরিয়া (রা.) বলেন, তিনি রোজারত অবস্থায় রাসুল (সা.)-এর কাছে প্রবেশ করেন।

তিনি তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, তুমি কি গতকাল রোজা পালন করেছিলে? তিনি বলেন, না। আবার জিজ্ঞেস করেন, আগামী দিন কি রোজা পালনের ইচ্ছা রাখো? তিনি বলেন, না। রাসুল (সা.) বলেন, তাহলে রোজা ভেঙে ফেলো। (বুখারি, হাদিস : ১৯৮৬)

বৃহস্পতিবার অথবা শনিবার রোজা রাখার নিয়ত না থাকলে শুধু শুক্রবার রোজা রাখতে রাসুল (সা.) এই হাদিসে নিষেধ করেছেন।

৫. দুই ঈদের দিনের রোজা : ওমর (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) এই দুই দিন রোজা পালন করতে নিষেধ করেছেন।

(ঈদুল ফিতরের দিন) যেদিন তোমরা রোজা ছাড়ো। আরেক দিন, যেদিন তোমরা কোরবানির গোশত খাও। অর্থাৎ ঈদুল আজহার দিন। (বুখারি, হাদিস : ১৯৯০)

৬. আইয়্যামে তাশরিকের রোজা : জিলহজ মাসের ১১, ১২ ও ১৩ তারিখকে আইয়্যামে তাশরিক বলা হয়। ঈদুল আজহার দিনের পরের এই দিনগুলোতে আরবরা গোশত শুকাত বলে এই দিনগুলোকে আইয়্যামে তাশরিক বলা হয়। রাসুল (সা.) বলেন, আইয়্যামে তাশরিক হলো পানাহার ও আল্লাহর জিকিরের দিন। (মুসলিম, মিশকাত, হাদিস : ১৯৫২)

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ