মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ঐতিহ্যবাহী পাবলিক লাইব্রেরি ও রাসেল শিশু উদ্যান অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে মুক্ত করার দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও সচেতন নাগরিক সমাজ।
রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাসেল শিশু উদ্যানের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়।
মানববন্ধনে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অবৈধ দখলদারকে উচ্ছেদের আলটিমেটাম দেওয়া হয়। একইসঙ্গে শেখ রাসেল শিশু উদ্যান নামকরণ বাতিল করে শিশু উদ্যান নামকরণ করার জন্য দাবি তুলে ধরেন বক্তারা।
বক্তারা বলেন, শ্রীমঙ্গল পাবলিক লাইব্রেরি ও শিশু উদ্যান উপজেলার ঐতিহ্য। ২০০৭ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক পৌরসভার লাইব্রেরি অডিটোরিয়াম কাম লাইব্রেরি নামকরণ করে উদ্বোধন করেন। এক সময় এ লাইব্রেরিতে প্রচুর বই ছিল, ছিলেন প্রচুর পাঠকও। কিন্তু পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুস শহীদ ২০১২ সালে উপাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আব্দুস শহীদ কলেজ প্রতিষ্ঠার নামে এ লাইব্রেরির ভবন দখল করে কলেজের পাঠদান কার্যক্রম চালান।
পরবর্তীতে আবার ক্লাসের নাম করে শিশু উদ্যান মাঠে লম্বা একটি টিনশেড ঘর নির্মাণ শ্রেণি কার্যক্রম চালানো হয়। পরে কলেজ এই জমি থেকে সরানো হলেও পাবলিক লাইব্রেরি সংস্কার ও পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয়নি।
তারা বলেন, দীর্ঘ ৪০ বছরেও রাসেল শিশু উদ্যানের কোনো উন্নয়ন হয়নি। এখনও অযত্ন-অবহেলায় এবং ভূমি-খেকোদের কুনজরে পড়ে আছে এ জমিটি।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুথ্থানে স্বৈরাচার সরকারের পতন হলেও শিশু উদ্যান ও পাবলিক লাইব্রেরি অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে দখলমুক্ত হয়নি। এখনও উদ্যান-লাইব্রেরির একাংশ দখল করে পল হ্যারিস ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি কেজি স্কুল শ্রেণি কার্যক্রম চালাচ্ছে।
শেখ রাসেল শিশু উদ্যান নামকরণ ও সরকারি জমিতে কেজি স্কুলের ক্লাস করানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তারা বলেন, ক্ষমতার প্রভাবে আব্দুস শহীদ শ্রীমঙ্গল শিশু উদ্যানের নাম পরিবর্তন করে শেখ রাসেল শিশু উদ্যান করেছেন। আমরা শ্রীমঙ্গল শিশু উদ্যান নামকরণ দেখতে চাই। এছাড়া সরকারি জমিতে কোন আইনে বেসরকারি মালিকানাধীন স্কুলের ক্লাস হচ্ছে, সেটা প্রশাসনের কাছে প্রশ্ন রেখেছেন তারা।
ভৈরবগঞ্জ বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ফুয়াদ ইসলামের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, জাতীয় নাগরিক কমিটি মৌলভীবাজারের প্রতিনিধি নিলয় রশিদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি মোজাহিদুল ইসলাম, দেলোয়ার হোসেন, মৌলভীবাজার সরকারি কলেজ শিক্ষার্থী হোসাইন আহমদ আফজল প্রমুখ।
বক্তারা তাদের দাবি সম্বলিত একটি স্মারকলিপি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে প্রদান করেন।
মানববন্ধনে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধি, উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। শিক্ষার্থী ও সচেতন নাগরিক সমাজের এ দাবির সঙ্গে শিক্ষক, গণমাধ্যমকর্মী এবং পথচারীরাও একাত্মতা প্রকাশ করে মানববন্ধনে যোগ দেন।