ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাত্জ বলেছেন, দেশটির সামরিক বাহিনী গাজায় তাদের অভিযান সম্প্রসারণ করবে। এ ছাড়া গাজার ‘বিস্তৃত এলাকা’ দখল করবে, যেটিকে তিনি ‘নিরাপত্তা অঞ্চল’ আখ্যা দিয়েছেন।
গতকাল বুধবার এক বিবৃতিতে কাত্জ বলেন, সম্প্রসারিত অভিযানের লক্ষ্য হলো সন্ত্রাসী এবং সন্ত্রাসী অবকাঠামো ধ্বংস করা। এ জন্য সেখান থেকে ফিলিস্তিনিদের ব্যাপক পরিসরে সরিয়ে নেওয়া প্রয়োজন।
আরো অঞ্চল দখলের পরিকল্পনা ঘোষণা করে কাত্জ বলেন, গাজাবাসীকে হামাস অপসারণ এবং অবশিষ্ট ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্ত করার পদক্ষেপ নিতে হবে। তবে তাদের কী করা উচিত, তা স্পষ্ট করেননি কাত্জ।
ইসরায়েলি মানবাধিকার সংস্থা জিশা জানিয়েছে, ইসরায়েল এরই মধ্যে গাজার ৬২ বর্গকিলোমিটার এলাকা দখলে নিয়েছে, যা অবরুদ্ধ উপত্যকাটির মোট আয়তনের ১৭ শতাংশ। বাফার জোনের অংশ হিসেবে এই এলাকা দখল করেছে তেল আবিব।
গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফা ও খান ইউনিসের আশপাশের বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার নির্দেশ জারি করেছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। তাদের উপকূলের আল-মাওয়াসিতে চলে যেতে বলা হয়েছে, যা আগে ‘মানবিক অঞ্চল’ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। এই পদক্ষেপের ফলে গাজার জনগোষ্ঠী নতুন করে বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
ইসরায়েলের আর্মি রেডিও জানিয়েছে, ৩৬তম ডিভিশন সর্বশেষ স্থল অভিযানে অংশ নিচ্ছে।
এই ডিভিশনকে গাজায় সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য গত মাসে পাঠানো হয়েছিল।
ইসরায়েলি বাহিনী গাজার ২৫ শতাংশ ভূখণ্ড দখল ও নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি সামরিক পরিকল্পনা করেছে। তারা এই অঞ্চলকে বাফার জোন আখ্যা দিয়েছে। বাফার জোন হলো ইসরায়েলি ভূখণ্ড সংলগ্ন প্রায় এক কিলোমিটার প্রশস্ত বা এর কিছু বেশি জায়গাজুড়ে বিস্তৃত একটি এলাকা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই এলাকার আবাসিক ভবন, বেসামরিক অবকাঠামোসহ সব কাঠামো ধ্বংস করে দিচ্ছে ইসরায়েল।
গাজার পূর্ব অংশে অভিযান চালানো ইসরায়েলি স্থল সেনাদের জন্য সম্ভাব্য হুমকি দূর করতে এই অভিযান চালানো হচ্ছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েল। তবে ফিলিস্তিনিদের অনেকের বিশ্বাস, পুরো গাজার জনগোষ্ঠীকে মিসরে ব্যাপক পরিসরে স্থানান্তর করার চূড়ান্ত পরিকল্পনার সূচনা এটি। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বরাবরই এ কথা বলে এসেছেন এবং যুক্তরাষ্ট্রও এতে সমর্থন দিয়েছে।
এরই অংশ হিসেবে মিসর সীমান্ত সংলগ্ন গাজার ভূখণ্ডে ব্যাপক বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণ করছে ইসরায়েলি বাহিনী। এটি গাজায় শিগগিরই একটি বড় ধরনের ইসরায়েলি স্থল অভিযানের ইঙ্গিত বলে ধারণা করা হচ্ছে।
চলতি সপ্তাহে ইসরায়েল গাজার এক লাখ ৪০ হাজার মানুষকে রাফা ছাড়ার এবং উত্তর গাজার লোকজনকেও এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে। ইসরায়েল এরই মধ্যে গাজার ভূখণ্ডের মধ্য দিয়ে নিজেদের বাফার জোন সম্প্রসারণ করেছে।
এদিকে গতকাল হাঙ্গেরি সফর করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তাঁর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে। তাই তাঁকে গ্রেপ্তার করতে হাঙ্গেরির প্রতি আহবান জানিয়েছে ইউরোপিয়ান গ্রিন পার্টি।
দলটির কো-চেয়ার সিয়ারান কাফ বলেন, আন্তর্জাতিক আইন সমুন্নত রাখা এবং যুদ্ধাপরাধ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের জবাবদিহি নিশ্চিত করা ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাতীয় সরকারগুলোর কর্তব্য।
তিনি আরো বলেন, নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আইসিসির গ্রেপ্তারি পরোয়ানা উপেক্ষা করে হাঙ্গেরির ভিক্টর অরবান আন্তর্জাতিক মঞ্চে আইনের শাসনের প্রতি একই অবজ্ঞা প্রদর্শন করেছেন, যা তিনি হাঙ্গেরিতে ধারাবাহিকভাবে করে আসছেন।
চলমান উত্তেজনার আগুনে ঘি ঢালতে জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণ ভ্রমণ করেছেন ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থী জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির। মসজিদ প্রাঙ্গণে ইহুদিদের প্রবেশের আনুষ্ঠানিক অনুমতি নেই। বেন-গভিরের আল-আকসা সফরের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাস।
এদিকে জিম্মিদের উদ্ধার না করেই পুনরায় গাজায় অভিযান শুরু করায় নেতানিয়াহু সরকারের সমালোচনা করেছে জিম্মিদের পরিবার।
অন্যদিকে গাজায় গত এক দিনে ইসরায়েলি হামলায় ৫৭ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ইউএনআরডব্লিউএর স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে চালানো হামলায় নিহত হয়েছে ২২ জন। এ নিয়ে ২০২৩ সালে ইসরায়েলি অভিযান শুরুর পর গাজায় ৫০ হাজার ৩৯৯ জন নিহত হলো। সূত্র : বিবিসি, আলজাজিরা