বাংলাদেশের আর দশটি ইউনিয়নের মতোই সাধারণ চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার শ্রীপুর-খরণদ্বীপ ইউনিয়ন। কিন্তু এটি অনন্য হয়ে উঠেছে একটি বিশেষ কারণে। ইউনিয়নটি ধরে রেখেছে শত বছরের পুরোনো একটি স্মৃতি। যা গৌরব আর ঐতিহ্য বহন করে চলেছে বছরের পর বছর।
বাংলাদেশের আর দশটি ইউনিয়নের মতোই সাধারণ চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার শ্রীপুর-খরণদ্বীপ ইউনিয়ন। কিন্তু এটি অনন্য হয়ে উঠেছে একটি বিশেষ কারণে। ইউনিয়নটি ধরে রেখেছে শত বছরের পুরোনো একটি স্মৃতি। যা গৌরব আর ঐতিহ্য বহন করে চলেছে বছরের পর বছর।
শত শত বছর ধরে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে আসছেন। স্থাপত্য নিদর্শনটি নির্মাণকাল থেকে কিছুটা পরিবর্তিত হয়েছে।
প্রতিদিন ১০০ গ্রাম কাঠবাদাম খেলে শরীরের যে উপকার
চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে বোয়ালখালী উপজেলা। শুক্রবার (২৮ মার্চ) জুমার নামাজ আদায় করতে মসজিদে ঢুকতেই দেখা যায়, ৮০ ফুট উচ্চতার একটি মিনার স্ব-গৌরবের সঙ্গে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। দৈনিক পাঁচবার এই মিনার থেকে আযানের ধ্বনি ভেসে আসে।
দিনটি শুক্রবার হওয়ায় সকাল ১১টা থেকে মসজিদে হাজার হাজার মুসল্লি আসতে দেখা যায়। পুকুর থেকে অযু করে সিঁড়ি বেয়ে উঠতেই আমাকে আতর, সুগন্ধি ও সুরমা লাগিয়ে দেন মহিউদ্দিন। বিনিময়ে যা দেওয়া হয় তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকেন তিনি।
মসজিদের মতোয়াল্লি মো. নুরুন্নবী চৌধুরী প্রায় ৩০ বছর ধরে খেদমত করে আসছেন। তাকে নিয়ে মসজিদে ঢুকতেই সামনের তোরণটি চোখে পড়ে, যেটি নির্মিত হয়েছে ১৯৭৫ সালে। তাকে নিয়ে মসজিদ ঘুরে দেখতে পেলাম মসজিদের ভিতরে বাহিরে ২৪টি জানালা ও ১টি মিম্বর রয়েছে। মসজিদের পশ্চিমে রয়েছে ২৪৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৭০ ফুট প্রস্থের একটি ইদগাহ।
‘তাইওয়ানের স্বাধীনতার’ বিরোধিতা করে বাংলাদেশ
মসজিদের দক্ষিণে বিশাল কবরস্থান, যে কবরস্থানে অনেক বুজুর্গ ব্যক্তিরা কবরস্থ হয়েছেন। মসজিদ, কবরস্থান ও পুকুরসহ প্রায় ৩ একর জায়গা জুড়ে রয়েছে এই মসজিদটি। মসজিদের পাশে রয়েছে নুরুল্লা মুন্সির হাট, তবে নলা মুন্সির হাট নামে বেশি পরিচিত। বাজারে হাঁস, মুরগিসহ হরেক রকমের পাহাড়ি তাজা শাক-সবজি পাওয়া যায়।
মসজিদের দক্ষিণ পাশে রয়েছে নারীদের বসার স্থান। প্রতি শুক্রবার প্রায় ৪০০ নারীর সমাগম হয় এখানে। যেখানে হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলিম এক সঙ্গে বসে প্রার্থনা করে। কেউ আবার রোগ নিরাময়ের আশায় পুকুরে গোসলও করে।
মসজিদ থেকে বের হতেই চোখে পড়ল মসজিদের সামনে মোমবাতি জ্বালাচ্ছেন এক হিন্দু নারী। পাশে গিয়ে নাম জিজ্ঞেস করতেই বললেন অর্পা চক্রবর্তী (৩০)। তিনি রাঙ্গুনিয়া থেকে এসেছেন। তিনি তার মনের বাসনা পূর্ণ করতে বিশ্বাস, শ্রদ্ধা ও ভক্তি নিয়ে মোমবাতি জ্বালাচ্ছেন এই মসজিদের সামনে। শুধু তিনি নন, একসঙ্গে হিন্দু, মুসলিম সবাই মনের বাসনা পূর্ণ করতে মোমবাতি জ্বালায়। কেউ কেউ আবার হাঁস, মুরগি, ছাগল, রুটি, তবারুকসহ অনেক রান্না করা খাবার পাঠান এ মসজিদে। তবারুকগুলো নামাজ শেষে আগত মুসল্লীদের মাঝে বিতরণ করতে দেখা যায়।
সড়কের ওপর ২২ বৈদ্যুতিক খুঁটি, স্থানীয়দের ক্ষোভ
মতোয়াল্লী নুরুন্নবী চৌধুরী বলেন, এ মসজিদ কখন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তার নির্দিষ্ট কোনো দিন তারিখ কারো জানা নেই। এখন থেকে ৪০০ বছর পূর্বে মোঘল আমলের শেষ দিকে এটি নির্মিত হয় বলে অনেকেরই ধারণা।
তিনি জানান, প্রথম পর্যায়ে একটি বট গাছের নিচে এক বুজুর্গ ব্যক্তি নামাজ আদায় করতেন। পরবর্তীতে কুঁড়ে ঘরে গায়েবি আজান পড়ত নিয়মিত, এমনটা শুনেছি এলাকার মুরব্বিদের থেকে। চট্টগ্রামের তৎকালীন প্রশাসক থানাদার ওয়াসিন চৌধুরী এ মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন বলে জানা যায়। তার দাদা শেখ নাছির উদ্দিন তৎকালীন অবিভক্ত ভারতের গৌড় এলাকা থেকে এ এলাকায় দ্বীন প্রচারের উদ্দেশ্যে আগমন করেন। শ্রীপুর তখন থেকে ছিল অমুসলিম অধ্যুষিত এলাকা। বর্তমানেও মসজিদের উত্তরে হিন্দু ও দক্ষিণো বড়ুয়া পাড়া।
তিনি আরো জানান, শেখ নাছির উদ্দিন তাদের মাঝে ধর্ম প্রচার করে দলে দলে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করেন। তার অধস্তন পুরুষ থানাদার দীক্ষিত লোকদের পাঞ্জাগানা নামাজ আদায়ের সুবিধার্থে এ মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। অল্প কজন মুসল্লী নামাজ পড়ার মত জায়গা নিয়ে শণ পাতার বেড়া এবং ওপরে দুনালি শণ দিয়ে মসজিদের প্রথম ঘর নির্মিত হয়। ঝোঁপ-ঝাড়ের মাঝে অবস্থিত হওয়ায় এ মসজিদে মুসল্লীরা রাতে নামাজ আদায় করতে পারতো না। নিরাপদ দূরত্বে থেকে মুসল্লীরা আযান দিয়ে চলে যেত। পরবর্তীতে চারপাশে বাঁশের বেড়া এবং ওপরে শনের ছাউনি দিয়ে ১০-১৫ হাত লম্বা চওড়া করে মসজিদ নির্মাণ করা হয়। খুব সম্ভবত ১৮৮৬ সালে বেড়া ও শনের ছাউনি ঘর ভেঙে যায় প্রবল ভূমিকম্পের কারণে। ভাঙা অবস্থায় জোড়া তালি দিয়ে ২০-২৫ বছর চলছিল এ মসজিদের কার্যক্রম। এর পর গুদাম তৈরি হয়। তারপর পর্যায়ক্রমে এ পর্যন্ত আসতে থাকে।
‘যন্ত্রণায়’ ভুগে মারা গেছেন ম্যারাডোনা, বলছেন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ
এ মসজিদের নামকরণ সম্পর্কে জানা যায়, ওয়াসিন চৌধুরীর পিতা একজন ইবাদত গুজার ব্যক্তি ছিলেন। তিনি ইবাদত বন্দেগিতে এতই মশগুল থাকতেন যে পারিপার্শ্বিক অবস্থার কোনো খবর রাখতেন না। তিনি বুড়ো বয়সে ঐ মসজিদে নামাজ যিকির আজকারে দিন রাত কাটিয়ে দিতেন। এভাবেই দিনের পর দিন কেটে যেত আধ্যাত্মিক সাধনায়। তিনি এতই পরহেজগার ছিলেন যে তাকে সবাই বুড়া হুজুর নামে ডাকত। ইবাদত করতে করতে তিনি একদিন এই মসজিদ থেকে হারিয়ে যান। পরবর্তীতে তার কোনো সন্ধান কেউ পাননি বলে কথিত আছে। তাই তার নামানুসারে এটি ‘বুড়া মসজিদ’ নামে প্রসিদ্ধি লাভ করেন।
আরেকটি সূত্র জানায়, শ্রীপুর এলাকায় তৎকালীন দুই বুজুর্গ ব্যক্তি ছিলেন। যাদের নাম হজরত আনছার উল্লাহ শাহ্ (র.) ও হজরত কুদরত গণি শাহ্ (র.)। তারা অনেক প্রাচীন কালের বুজুর্গ ব্যক্তি। এলাকায় তাদেরকে বুড়া হুজুর বলেই ডাক নাম আছে। অনেকের ধারণা তাদের নামেই বুড়া মসজিদ নামকরণ করা হয়েছে।
মতোয়াল্লী নুরুন্নবী চৌধুরী বলেন, তিন-চার মাস পর পর দানবাক্স খোলা হয়। যা টাকা পাওয়া যায় এসব টাকা মসজিদের অ্যাকাউন্টে রাখা হয়। সে টাকা থেকে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য শৌচাগার সংস্কার, মহিলাদের দুটি প্রার্থনার কক্ষ, অযুখানা সংস্কার ও ইমাম, মোয়াজ্জিন এবং খতিবের জন্য থাকার কক্ষ, দ্বিতীয় তলায় নামাজ পড়ার স্থান সংস্কারসহ বিভিন্ন খাতে ব্যয় করা হয়েছে। এ ছাড়া এ মসজিদের উন্নয়নে মেঘা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল। কর্তৃপক্ষ প্রকল্পটি তদন্ত ও পরিদর্শনে আসবেন বলে এখনো আসেনি। তদন্ত সাপেক্ষে অনুমতি পেলে কাজ শুরু করা হবে।
এ যাবত কতজন মতোয়াল্লীর দায়িত্ব পালন করেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, মো. মিয়া চৌধুরী, মো. কামাল উদ্দীন চৌধুরী, অফিসিয়ালভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মতোয়াল্লী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শুরু থেকেই আমাদের ওয়ারিশগণ এ মসজিদের মতোয়াল্লী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ২০০০ সালে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ ওয়াক্ফ প্রশাসনের কার্যালয় হতে আমাকে মতোয়াল্লী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
মসজিদে কতজন খতিবের দায়িত্ব পালন করেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমার জানা মতে, এ মসজিদের খতিবের দায়িত্ব পালন করেছিলেন জ্যৈষ্ঠপুরার আল্লামা ওসমান গণি (র.), খরণদ্বীপের পীরে কামেল আল্লামা মোতাহেরুল হক (র.), চরণদ্বীপের মুফতি মুহাম্মদ ইদ্রিচ রজভী (র.), শ্রীপুরের মাওলানা আবদুর রহমান আলকাদেরী (র.), জৈষ্ঠপুরার মাওলানা আবদুর রহমান আল কাদেরী (র.)। এর আগে নাম না জানা আরো অনেকে খতিবের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তবে সবাই বুজুর্গ ও বড় মাপের আলমে ছিলেন।
বর্তমানে এ মসজিদে খতিবের দায়িত্ব আছেন চরণদ্বীপের মুফতি মুহাম্মদ ইদ্রিচ রজভী (র.) এর সুযোগ্য ছেলে আল্লামা মুহাম্মদ শোয়াইব রেজা। যিনি বর্তমানে চরণদ্বীপ রজভীয়া ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন।
সম্পর্কিত খবর
নীলফামারীতে জন নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ও ঈদের পরেও সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং পুলিশের যৌথ টহল ও চেকপোষ্ট কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। মঙ্গলবার (১লা এপ্রিল) জেলা সদরের উত্তরা ইপিজেড, পাঁচমাথা মোড়, সৈয়দপুর বাসটার্মিনাল, শুটকির মোড়সহ বিভিন্ন স্থানে এ কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
এ সময় বিভিন্ন যানবাহনে সন্দেহভাজন ব্যক্তি, হেলমেট ও লাইসেন্স বিহীন মোটরসাইকেল আরোহী, নছিমন, ভটভটি, প্রাইভেট কার ও বাসে তল্লাসী চালায় যৌথবাহিনী।
সেনাবাহিনীর নীলফামারী ক্যম্পের ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ ফাহিম এহসান ও সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার ওমর ফারুক এবং সৈয়দপুরে সেনাবাহিনীর ওয়ারেন্ট অফিসার মোস্তফা মজুমদারের নেতৃত্বে এই কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ ফাহিম এহসান জানান, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সাধারণ জনগণের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনীর সদস্যরা নিরলসভাবে কাজ করছে। যৌথ বাহিনীর চেকপোস্ট পরিচালনার মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধিসহ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। যাতে মানুষ নিরাপদে চলাফেরা করতে পারে।
তিনি জানান, গত ২মার্চ থেকে এ কার্যক্রম শুরু হয়। এ পর্যন্ত সদর ও সৈয়দপুর উপজেলায় ২৫২টি মামলায় আট লাখ ৩৬ হাজার ৫ শ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এর মধ্যে নীলফামারী সদরে ১৪২ টি মামলায় চার লাখ ৭০ হাজার ৬০০ টাকা এবং সৈয়দপুরে ১১০টি মামলায় তিন লাখ ৬৫ হাজার ৯শ টাকা।
তিনি আরো জানান, এ কার্যক্রমের ফলে জনগণের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষা বরগুনা, যেখানে প্রকৃতি তার অপার সৌন্দর্যের হাতছানি দিয়ে ডাকছে ভ্রমণপিপাসুদের। অপার সম্ভাবনাময় এ জেলার পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে ছড়িয়ে আছে সমুদ্রের গর্জন, সবুজ বনানীর শীতল পরশ, আর বন্যপ্রাণীর দুরন্তপনা।
বরগুনার তালতলীর আশারচর, সোনাকাটা, টেংরাগিরি সংরক্ষিত বনাঞ্চল, শুভ সন্ধ্যা কিংবা পাথরঘাটার লালদিয়ারচর, হরিণঘাটা, বিহঙ্গ দ্বীপ প্রতিটি স্থানেই প্রকৃতি তার নিজস্ব রূপে ধরা দিয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হওয়ায় বরগুনার এই পর্যটন স্পটগুলোতে বাড়ছে আগ্রহ।
এসব পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে পরখ করা যাবে বঙ্গোপসাগরের শোঁ শোঁ গর্জন। শ্যামল ছায়ার কোমল পরশ, মায়াবী চিত্রল হরিণের দুরন্তপনা, রাখাইন নৃগোষ্ঠীর বৈচিত্র্যপূর্ণ জীবনচিত্র, চরাঞ্চলের মানুষের জীবনযুদ্ধ যে কাউকে মুগ্ধ করে তুলবে। একই স্থানে প্রকৃতির এমন বাহারি সৌন্দর্যের সমাহার খুব কম জায়গায়ই মেলে।
টেংরাগিরি বনাঞ্চল
বঙ্গোপসাগরের কোলে ঘেঁষে গড়ে ওঠা তালতলী উপজেলার ফকিরহাটে অবস্থিত টেংরাগিরি এক সময় সুন্দরবনের অংশ ছিল। প্রাকৃতিক এই বনকে স্থানীয় লোকজন ‘ফাতরা বন’ হিসেবে চেনে। সুন্দরবনের পর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্বাসমূলীয় টেংরাগিরি বনাঞ্চল হিসেবে স্বীকৃতি পায় ১৯৬৭ সালে।
তালতলী থেকে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা পর্যন্ত বিস্তৃত এই বনের আয়তন ১৩ হাজার ৬৪৪ একর। ২০১০ সালের ২৪ অক্টোবর ৪ হাজার ৪৮ দশমিক ৫৮ হেক্টর জমি নিয়ে গঠিত হয় টেংরাগিরি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। এই বনাঞ্চলের তিন দিকে বঙ্গোপসাগর। বনাঞ্চলের সখিনা বিটে ২০১১ সালে ইকোপার্ক প্রতিষ্ঠা করা হয়। টেংরাগিরি বনাঞ্চলের অভয়ারণ্যে হরিণ, শূকর, চিতাবাঘ, অজগর, কুমির, বানর, সজারুসহ বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী রয়েছে।
সোনাকাটা ও আশারচর
টেংরাগিরি বনের খুব কাছেই আরেক নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাকেন্দ্র সোনাকাটা ও আশারচর চরাঞ্চল। তালতলী সদর থেকে খুব কাছেই বঙ্গোপসাগরের কোলে সোনাকাটা। এর একদিকে টেংরাগিরি বনের সবুজ নৈসর্গ আর অন্যদিকে বিশাল সৈকতের বুকে কান পাতলে শোনা যাবে বঙ্গোপসাগরের কুল কুল ধ্বনি। সোনাকাটায় দেখা যাবে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের সৌন্দর্য। বালিহাঁস, গাঙচিল, পানকৌড়িসহ হরেক পাখির কুজনে সব সময় মুখর থাকে আশারচর। তালতলী সদর থেকে আট কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত আশারচরে আছে শুঁটকির সাম্রাজ্য। রাতের নিস্তব্ধতার মধ্যে দূর সাগরের বুকে মাছ ধরতে নামা ছোট ছোট ডিঙিনৌকার টিপটিপ আলোর মিছিল দূর থেকে দেখলে মনে হবে ভাসমান কোনো শহর।
শুভ সন্ধ্যা সি বিচ
টেংরাগিরি বনের খুব কাছেই আরেক নৈসর্গিক সৌন্দর্যের স্থান শুভ সন্ধ্যা সি বিচ। তালতলী সদর থেকে খুব কাছেই বঙ্গোপসাগরের কোলে শুভ সন্ধ্যা সি বিচ। এর একদিকে টেংরাগিরি বনের সবুজ নৈসর্গ আর অন্যদিকে বিশাল সৈকতের বুকে কান পাতলে শোনা যাবে বঙ্গোপসাগরের গর্জন। এখান থেকে দেখা যাবে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত।
হরিণঘাটা বনাঞ্চল
মায়াবী হরিণের দল বেঁধে ছুটে চলা, চঞ্চল বানর আর বুনো শূকরের অবাধ বিচরণ, পাখির কলরবে সারাক্ষণ মুখর থাকে হরিণঘাটা বনাঞ্চল। পাথরঘাটা উপজেলায় বঙ্গোপসাগরের মোহনায় পায়রা-বিষখালী-বলেশ্বর তিন নদ-নদীর সঙ্গমস্থলে অবস্থিত হরিণঘাটা। সৃজিত এই বনে হরিণ, বানর, শূকর, কাঠবিড়ালি, মেছো বাঘ, ডোরাকাটা বাঘ, সজারু, উদ, শৃগালসহ অসংখ্য বুনো প্রাণীর বিচরণ। সুন্দরবনের চেয়ে আকৃতিতে বড় প্রজাতির মায়াবী চিত্রল হরিণের বিচরণস্থল হওয়ায় এই বনের নামকরণ হয়েছে হরিণঘাটা। দৃষ্টিনন্দন ঘন বন আর সবুজে ছাওয়া হরিণঘাটা বনের সৌন্দর্যকে আরো আকর্ষণীয় করেছে পাশাপাশি সুবিশাল তিনটি সৈকত লালদিয়া, পদ্মা, লাঠিমারা। এই বনাঞ্চল ৫ হাজার ৬০০ একর আয়তন নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে। ‘লালদিয়া সংরক্ষিত বনাঞ্চলে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও ইকো ট্যুরিজম সুযোগ বৃদ্ধি প্রকল্পের’ আওতায় ৯৫০ মিটার ফুটট্রেল (পায়ে হাঁটার কাঠের ব্রিজ) স্থাপন করা হয়েছে। রয়েছে ওয়াচ টাওয়ার বেঞ্চ, ঘাটলা ও ইটের রাস্তা। মিঠাপানির জন্য খনন করা হয়েছে পুকুর।
গোড়া পদ্মা ইকো ফরেস্ট-মোহনা পর্যটন কেন্দ্র
বিষখালী-পায়রা-বলেশ্বর বঙ্গোপসাগরে মিলেছে সোনাতলা এলাকায়। তিন নদনদীর সঙ্গমস্থলে গড়ে উঠেছে প্রাকৃতিক নৈসর্গের আরেক লীলাভূমি গোড়া পদ্মা ইকো ফরেস্ট-মোহনা পর্যটন কেন্দ্র। সৃজিত এই বনভূমির আয়তন ৪ হাজার ৬০০ একর।
সারি সারি কেওড়া, গেওয়া গাছে ছাওয়া এই বনে শূকর, বিভিন্ন প্রজাতির সাপ, মেছো বাঘসহ বিভিন্ন বন্য প্রাণি রয়েছে। রয়েছে একটি পিকনিক স্পট, কয়েকটি গোলঘর, একটি ডাকবাংলো ও পুকুর।
বরগুনা পর্যটন উদ্যোক্তা আরিফুর রহমান বলেন, সাগর, নদী ও সবুজ বনানীর মেলবন্ধনে গড়ে ওঠা বরগুনা জেলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সত্যিই মনোমুগ্ধকর। তবে বরগুনার এই সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্পকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলতে প্রয়োজন যথাযথ পরিকল্পনা ও সরকারি-বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগ।
বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, বরগুনার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও পর্যটন সম্ভাবনা উন্নয়নে জেলা প্রশাসন বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে, যা পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় পরিবেশ তৈরি করবে।
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ঈদের দিন টেলিভিশন দেখতে যাওয়ার পর ৭ বছরের এক কন্যা শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে বাড়ির মালিক দুলালের (৪৭) বিরুদ্ধে। গতকাল সোমবার (৩১ মার্চ) ঈদের দিন বিকাল সাড়ে ৪টায় উপজেলার বারইয়ারহাট পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের চিনকি আস্তানা এলাকার শফী সওদাগর বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে।
দুলাল ওই বাড়ির মৃত ফকির আহমদের ছেলে। ভুক্তভোগী শিশুর পরিবারে ৩০ বছর যাবৎ বারইয়ারহাট পৌরসভায় ভাড়াবাসায় থাকেন।
শিশুটির চাচা বলেন, ‘আমার বড় ভাই ও তার পরিবারসহ আমরা দুলাল ড্রাইভারের বাড়িতে টিনসেড ঘরে ভাড়া থাকি। ঈদের দিন (সোমবার) বিকেলে দুলাল প্রথমে আমার ভাতিজিকে চকলেট খাওয়ার জন্য ডাকে। তখন সে যায়নি। পরবর্তীতে আমার ভাতিজি যখন টেলিভিশন দেখার জন্য তাদের ঘরে যায় তখন দুলাল তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে।
তিনি আরো বলেন, ‘রাতে আমার ভাবিকে ভাতিজি সবকিছু খুলে বলে। আজ মঙ্গলবার সকালে আমার ভাবিসহ আমরা জোরারগঞ্জ থানায় গেলে সেখান থেকে পুলিশ আমাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠায়।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসক বাঁধন দাশ বলেন, ‘আজ মঙ্গলবার দুপুরে ৭ বছরের এক কন্যা শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে তার পরিবার নিয়ে আসে। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পরীক্ষা শেষে ধর্ষণের বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে।’
জোরারগঞ্জ থানার ডিউটি অফিসার এসআই মো. ওয়াদুদ বলেন, ‘আজ মঙ্গলবার সকালে ধর্ষণের অভিযোগ এক কন্যা শিশুকে থানায় আনা হয়েছিল।
জোরারগঞ্জ থানার ওসি সাব্বির মোহাম্মদ সেলিম বলেন, ‘অভিযুক্ত দুলালকে দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে মুহুরী প্রজেক্ট এলাকা থেকে অভিযান চালিয়ে আটক করা হয়েছে।’
যশোরের অভয়নগরে ঈদ মেলায় ফুচকা খেয়ে নারী, শিশুসহ ৪০ জন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। গতকাল সোমবার (৩১ মার্চ) ঈদের দিন এ ঘটনা ঘটে। খাদ্যে বিষক্রিয়ার ফলে (ফুড পয়জনিং) অধিকাংশ রোগীর পেটে ব্যথা ও বমির লক্ষণ রয়েছে। এসব লক্ষণ নিয়ে ঈদের দিন নারী, শিশুসহ অন্তত ৪০ জনকে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, খাদ্যে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত উপজেলার কাপাশহাটী গ্রামের মাওলানা তাকিব হুসাইনের পরিবারের তিনজন, বেঙ্গল টেক্সটাইল মিল মসজিদের ইমাম সাহেবের পরিবারের ৮ জন, প্রেমবাগ ইউনিয়নের প্রেমবাগ গ্রামের ৫ জন, গুয়াখোলা, বুইকারা, শংকরপাশাসহ বিভিন্ন গ্রামের প্রায় ৪০ জন রোগীর চিকিৎসা চলছে। এ ছাড়া প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে অনেক পরিবার বাড়ি ফিরে গেছেন।
উপজেলার কাপাশহাটী গ্রামের বাসিন্দা মাওলানা তাকিব হুসাইন জানান, ঈদের দিন বিকেলে সপরিবারে ভাঙ্গাগেট এলাকায় ভৈরব সেতুসংলগ্ন এক ঈদ মেলায় বেড়াতে গিয়েছিলাম। সেখানে এক স্টল থেকে ফুচকা খেয়ে তিনজন অসুস্থ হয়ে পড়ি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আলীমুর রাজীব কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ঈদের দিন ৩০-৪০ জন ফুড পয়জনিং (খাদ্যে বিষক্রিয়া) রোগীকে ভর্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে শিশুর সংখ্যা বেশি, তবে বয়স্ক নারী-পুরুষও রয়েছেন।