<p>মমিন মিয়া মুদি দোকান চালান। রাজধানীর মিরপুরের একটি আবাসিক এলাকায় তার দোকান। দোকানে ডিম, আলু, পেঁয়াজ, লবণ, মসলাসহ মেলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। সম্প্রতি প্রায়ই ক্রেতাদের সঙ্গে পণ্যের দাম-দর নিয়ে বচসা হচ্ছে তার।<br /> <br /> মমিন মিয়া বলেন, ‘জিনিসপত্রের দাম বাড়ে। আমরাও পাইকারি থেকে বেশি দামেই কিনে আনি। পেঁয়াজ ও আলু আমদানিতে ট্যাক্স (শুল্ক) কমাইসে সরকার। পাইকারি বাজারে তো দাম সেই বাড়তিই। কাস্টমার এসব বুঝে না। দাম বেশি কেন, এর জবাব আমাদের কাছে চাইলে হবে? ডিম, চাল, সিগারেট এসব থেকে আমার ৭০ শতাংশেরও বেশি ইনকাম। দাম বাড়লে তো আমারই ক্ষতি বেশি।’</p> <p>মমিন মিয়ার মত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা আছেন মহাসংকটে। পাইকারি বাজারে দ্রব্যমূল্যের অস্থিরতার প্রথম আঘাতটা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ওপরেই আসে। ক্ষুদ্র ব্যবসার মুনাফাও স্বল্প। দাম বেড়ে গেলে সেই মুনাফার হারও কমে আসে। বড় ব্যবসায়ীরা সংকট থেকে বের হওয়ার উপায় পেলেও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কোনো উপায় নেই।</p> <p>মমিন মিয়া জানান, পেঁয়াজ প্রতি কেজি ১১০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আলুর কেজি এখনো ৫৫ থেকে ৬০ টাকা।<br /> মমিন মিয়ার এই ছোট্ট দোকানেই চলে তার পাঁচজনের সংসার। জিনিসপত্রের অযৌক্তিক উঠানামার প্রভাব পড়ে তার জীবিকায়।</p> <p>গুলশানে কথা হয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আয়েশা আকতারের সঙ্গে। তিনি ভাসমান বিক্রেতা। ফুটপাতে ফ্লাস্কে চা, বিস্কুট, সিগারেট, বনরুটি-কেক ও কলা বিক্রি করেন তিনি। রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করা সর্বস্তরের মানুষ তার ক্রেতা। সম্প্রতি বেকারি পণ্যের দাম বাড়ার প্রভাব তার ব্যবসাতেও পড়েছে। </p> <p>তিনি বলেন, ‘ফুটপাতে বেচাকিনি করি। কাস্টমার তো অত নাই। অল্প মাল তাই আয়ও অল্প। তবে জিনিসপত্রের দাম বাড়লে কষ্ট হয় আমাগো।’</p> <p>তিনি আরো বলেন, ‘ছোট দোকানে চা এর পাশাপাশি কেক-কলা আর সিগারেট বেশি বিক্রি হয়। কাস্টমার আছে বইলাই সংসারটা চলে।’</p> <p>আয়েশা আকতারের মতো সারা দেশে প্রায় ১৫ লাখ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আছেন। যারা ক্ষুদ্র মূলধনের ওই ব্যবসা দিয়েই জীবিকা নির্বাহ করেন। দেশের বিভিন্ন এলাকার প্রায় ৭৫ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা সরাসরি এসব ক্ষুদ্র ব্যবসার মুনাফার ওপর নির্ভরশীল। দ্রব্যমূল্যের উঠানামা ক্ষুদ্র ব্যবসাকে সরাসরি আঘাত করে। যার প্রভাব সরাসরি ওই ৭৫ লাখ মানুষের ওপর পড়ে। </p> <p>খাতসংশ্লিষ্টরা জানায়, মধ্যম ও বড় ব্যবসায়ীদের জন্য সরকারসহ বিভিন্ন পর্যায়ে চিন্তা-ভাবনা করলেও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য থাকে না তেমন কিছুই। ডলার সংকট, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আমদানি-রপ্তানি সংকটসহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক সমস্যার প্রভাব ক্ষুদ্র দোকানি বা ব্যবসায়ীদের ওপরও বেশ ভালোভাবে পড়ে। বড়-মাঝারি ব্যবসায়ীরা সংকট কাটিয়ে উঠতে পারে কিন্তু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা সংকটের চাকায় পড়ে যান। সরকারের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছাড়া যা থেকে বেরিয়ে আসা বেশ দুরূহ।  </p> <p>এ বিষয়ে বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আতাউল গনি ওসমানী বলেন,‘ অর্থনৈতিক সংকট বা সমস্যা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। তাই তাদের বাঁচাতে ব্যবস্থা সরকারের এমন বাজার ব্যবস্থা তৈরি করা উচিত, যেখান তারা সঠিক মূল্যে পণ্য ক্রয় বিক্রয় করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারেন।’</p> <p>এ ছাড়া মুদ্রানীতি সংস্কার করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।</p>