<p>সম্প্রতি প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৬ সালে প্রায় ৬০ লাখ মানুষ ডায়াবেটিস, রক্তচাপ, কোলেস্টেরল এবং হার্টের রোগের মতো ননকমিউনিকেবল ডিজিজে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। আর এই সবক'টি রোগেই বেশি মাত্রায় আক্রান্ত হচ্ছে যুবসমাজ। শুধু তাই নয়, আক্রান্তের সংখ্যাটা ক্রমশ বাড়ছে।</p> <p>রিপোর্টটিতে আর বলা হয়েছে, যে যে ননকমিউনিকেবল ডিজডিজের প্রকোপ গত কয়েক বছরে সবথেকে বেশিমাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হল উচ্চ রক্তচাপ। সেই কারণেই তো চিকিৎসকেরা আরও চিন্তায় পড়ে গেছেন। কারণ রক্তচাপ ওঠানামা করলে হার্টের ওপর মারাত্মক চাপ পড়ে। ফলে একদিকে যেমন হঠাৎ করে হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের আশঙ্কা বাড়ে, তেমনি নানাবিধ হার্ট ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও বৃদ্ধি পায়।</p> <p>এখন প্রশ্ন হল, উচ্চ রক্তচাপ বা হার্টের রোগে আক্রান্তের সংখ্যাটা এত বাড়ছে কেন? বেশ কিছু কেস স্টাডি অনুসারে অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রা এবং মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে স্ট্রেসের কারণে কম বয়সেই শরীরে এসে বাসা বাঁধতে প্রেসারের রোগ, যা ধীরে ধীরে হার্টের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটাচ্ছে।</p> <p>আর বিশেষ করে বেসরকারি খাতে কর্মরত তরুণ কর্মীদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকেরও বেশি স্ট্রেসের শিকার। যারা আবার ওবেসিটি বা স্থুলতার সমস্যায়ও ভুগছে। আর একথা তো সবারই জানা আছে যে ওজন যত বাড়তে থাকবে, তত ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টরল এবং হার্টের রোগের মতো নন-কমিউনিকেবল ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়বে। তাই স্ট্রেস কমানো যায় কিভাবে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আর এই কজটি করবেন কিভাবে?</p> <p>গবেষণা বলছে এমন কিছু খাবার রয়েছে যা স্ট্রেস, অ্যাংজাইটি এবং মানসিক অবসাদ কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এই খাবারগুলি যদি নিয়মিত খাওয়া যায়, তাহলে মানসিক চাপ কমাতে কোনও সমস্যাই হয় না। কী কী খাবার এক্ষেত্রে সঙ্গে রাখাটা জরুরি?</p> <p><strong>১. দই</strong><br /> দুধ-দই সহ আরও যেসব দুগ্ধজাত খাবার রয়েছে, তাতে টাইরোসিন নামে একটি উপাদান থাকে, যা শরীরে প্রবেশ করার পর সেরোটনিন হরমোনের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে নিমেষে মন ভাল হয়ে যায়। সেই সঙ্গে স্ট্রেস এবং মানসিক অবসাদও কমতে শুরু করে। আরও একভাবে দই বা দুধ মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।<br /> বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে দইয়ে থাকা প্রোটিন শরীরে প্রবেশ করার পর মস্তিষ্কের ভেতরে নিউরোহরমোনের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে ধীরে ধীরে ব্রেন সেলগুলি শান্ত হতে শুরু করে। আর এমনটা হওয়া মাত্র স্ট্রেস লেভেলও কমতে থাকে।</p> <p><strong>২. ডার্ক চকলেট</strong><br /> একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, একটু তিতকুটে খেতে এই বিশেষ ধরনের চকলেটটি স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ কমিয়ে দেয়। সেই সঙ্গে অন্যান্য স্ট্রেস সম্পর্কিত বায়ো-কেমিক্যালের ভারসাম্য ঠিক রাখতেও সাহায্য করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই মানসিক চাপ কমতে থাকে। আসলে ডার্ক চকোলেটে উপস্থিত অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এ ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রসঙ্গত, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যে শুধু স্ট্রেস কমায়, এমন নয়। সেই সঙ্গে আরও নানা রকমের জটিল রোগকে দূরে রাখতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।</p> <p><strong>৩. সাইট্রাস ফল</strong><br /> লেবু, কমলা লেবু অথবা মুসাম্বি লেবুর মতো পছন্দের যেকোনো একটা সাইট্রাস ফল প্রতিদিন খাওয়ার অভ্যাস করলে শরীরে ভিটামিন সি-এর মাত্রা বাড়তে শুরু করে, যা অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়ার মধ্যে দিয়ে স্ট্রেস লেভেল কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রসঙ্গত, সাইট্রাস ফলের পাশাপাশি যেকোনো ফলেই প্রাকৃতিক সুগার রয়েছে, যা মানসিক চপা কামতে দারুনভাবে সাহায্য করে থাকে। যেমন বেদানা বা ডালিম ফলটি মানসিক চাপ কমায় দ্রুত।</p> <p><strong>৪. বাদাম</strong><br /> এতে থাকা ভিটামিন বি২, ভিটামিন ই, ম্যাগনেসিয়াম এবং জিঙ্ক একদিকে সেরাটোনিন হরমোনের ক্ষরণ বাড়িয়ে দিয়ে স্ট্রেস কমাতে যেমন সাহায্য করে, তেমনি অন্যদিকে মানসিক চাপ সম্পর্কিত নানাবিধ শারীরিক সমস্যা কমাতেও বিশেষ ভূমিকা নেয়। এক কথায় বলা যেতে পারে স্ট্রেস এবং অ্যাংজাইটি কমাতে বাদামের বাস্তবিকই কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে।</p> <p><strong>৫. মাছ</strong><br /> প্রতিদিন যদি মাছ খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন, তাহলে স্ট্রেস নিয়ে আর কোনও চিন্তাই থাকবে না। কারণ এতে উপস্থিত ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, সেরাটোনিন হরমোনের ক্ষরণ বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা নেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই স্ট্রেস এবং অ্যাংজাইটি কমতে শুরু করে।</p> <p><strong>৬. রসুন</strong><br /> স্ট্রেস লেভেল বাড়তে শুরু করলে শরীরে অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের মাত্রাও বাড়তে থাকে। যে কারণে ব্লাড প্রেসার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। এমন পরিস্থিতিতে প্রতিদিন যদি এক কোয়া করে রসুন খাওয়া শুরু করেন, তাহলে স্ট্রেস তো কমেই। সেই সঙ্গে ব্লাড প্রেসার এবং বাজে কোলেস্টেরলও নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। ফলে হার্টের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কাও কমে যায়।</p> <p>তবে মানসিক চাপ কমানোর সবচেয়ে ভাল উপায় হলো দুঃশ্চিন্তা মুক্ত থাকা। যেজন্য সবসময় ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখা এবং আশাবাদী হওয়াটা জরুরি।<br /> <span style=\"line-height:1.6em\">সূত্র : বোল্ডস্কাই</span></p>