<p><em>বল পায়ের কাছে এলে কার না কিক দিতে মন চায়? এমবাপ্পের মতো এত কম বয়সী বিশ্বকাপ প্লেয়ার দেখে তোমারও কি মনে মনে ফুটবলার হওয়ার ইচ্ছা জেগেছে? রাজধানীর কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ফুটবল প্রশিক্ষক ও প্রশিক্ষণার্থীদের সঙ্গে কথা বলে ফুটবল শেখার তন্ত্রমন্ত্র জানাচ্ছেন জুবায়ের আহম্মেদ</em></p> <p>ফুটবল শেখার শুরুটা হয় বেসিক কিছু বিষয় দিয়ে। প্রথমে পাঁচ-ছয় মাসের ওয়ার্ম আপ, পুশ আপ, তথা ফিটনেস তৈরির সময়। কারণ ফুটবল দাবাখেলা নয়, এখানে শারীরিক সক্ষমতা বিরাট ভূমিকা রাখে। তাই শুরুর দিকে পাওয়ার, স্পিড, শোল্ড টার্ন—এ ধরনের কিছু বিষয় আছে, যেগুলোর জোর অনুশীলন চালিয়ে যেতে হয়। এরপর আসে কিকিং, হেডিং, ট্র্যাপিং ও ট্যাকলিং। এসবই চলবে টানা পাঁচ-ছয় বছর। তারপর নিজেকে মোটামুটি একজন ফুটবলার বলে দাবি করতে পারবে কেউ।</p> <p>নিয়মিত অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছে চাঁদপুরের ১৭ বছরের আল-খালিদ। সে বলল, ‘প্রথমে স্পিড আর ফিটনেস বাড়ানোর প্র্যাকটিস করেছি। এখন আমি মোটামুটি ট্র্যাপিং, কিকিং, হেডিং এসব পারি। এখন কাজ হলো অন্য সব তারকা খেলোয়াড়ের কৌশলগুলো অনুকরণ করা। আগে আমি অনেক মোটা ছিলাম। ফুটবল খেলার কারণে মেদ কমেছে। শরীরেও এখন বেশ জোর পাই।’</p> <p>ফুটবলে যা যা শেখানো হয়, সে সম্পর্কে কয়েকজন প্রশিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে যা যা জানা গেল, তা হলো—</p> <p><strong>ট্র্যাপিং</strong><br /> বল আটকানোকে বলা হয় ট্র্যাপিং। পায়ের অগ্রভাগ ওপরের দিক করে গোড়ালি মাটি থেকে ১০ সেন্টিমিটার ওপরে তুলে ‘ভি’ আকৃতির মতো করে বল থামানো যায়। এটাকে বলে সোল্ড ট্র্যাপিং। আবার মাটিতে বাউন্স করা বলকে হাঁটুর ভাজ দিয়ে সামনের দিকে নিয়ে আবার হাঁটুর নিচের অংশ দিয়ে থামিয়ে ফেলা যায়। শূন্যে তির্যকভাবে আসা বলকে মাথায় লগিয়ে বলের গতি কমিয়ে নিজের কাছে ফেলা যায়। আর ৭৫-৮৫ ডিগ্রি ওপর দিয়ে আসা বল উরুর ওপরের অংশ দিয়ে ধরতে হয়। উরু স্পর্শ করার সঙ্গে সঙ্গে বলটিকে হাঁটুর নিচের অংশ দিয়ে থামাতে হবে। ট্র্যাপিং ভালো হলে তবেই ভালো পাস দেওয়া যায়। তা না হলে বল ধরতে ধরতেই প্রতিপক্ষের আক্রমণের শিকার হতে হবে।</p> <p><strong>কিকিং</strong><br /> অল্প দূরত্বে সজোরে বল গড়িয়ে কিক করার নাম ইনস্টেপ কিক। পায়ের পাতার ওপরের অংশ দিয়ে বলের মাঝে জোরে কিক মারতে হবে এবং এক পা থেকে অন্য পায়ের দূরত্ব হবে ১৫-২০ সেন্টিমিটার। বল উঁচু দিয়ে দূরে পাঠাতে হলে পায়ের পাতার অগ্রভাগ কোনাকুনি রেখে বলের নিচের দিকে আঘাত করতে হবে। ওপর দিয়ে বল দূরে পাঠানোর জন্য বলটি বাউন্স করার কিছুটা পরই কিক দিতে হবে। একে বলে ভলি কিক। যখন পাস করে নিজ দলের অপর খেলোয়াড়ের কাছে বল পাঠানো সম্ভব নয়, তখন একটু ওপর দিয়ে চিপ শর্ট মেরে বল পাঠানো যায়। আর গোলকিকের ক্ষেত্রে সবচেয়ে দূরে বল পাঠাতে কিক দিতে ৪৫ ডিগ্রি কোণ করে।</p> <p><strong>হেডিং</strong><br /> হেডিংয়ের সময় ঘাড় শক্ত রেখে মাথার সম্মুখ অংশ দিয়ে বলে আঘাত করতে হবে। ঘাড় ঘুরিয়ে বলের দিক পরিবর্তন করা যায়। এ সময় নজর পুরোপুরি বলেই রাখতে হয় এবং চোখের পাতাও ফেলা যাবে না।</p> <p><strong>গোলকিপিং</strong><br /> একজন গোলকিপারকেও কিছু কৌশল রপ্ত করতে হয়। বল কাছে হোক আর দূরে, তার চোখ সব সময় বলেই থাকতে হবে। নিচু বল ধরার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ দেহ বলের পেছনে এবং হাঁটু সোজা রেখে বল কুড়িয়ে বুকের সঙ্গে জড়িয়ে নেবে। কোমর সমান উঁচু বল ধরার ক্ষেত্রে বল ধরার সঙ্গে সঙ্গে তলপেটটাকে ভেতরে নিয়ে তার মধ্যে বলটাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে হয়। আর উঁচু বল ধরার জন্য দুই হাত সামনে বাড়িয়ে তালু বা আঙুলের সাহায্যেই ধরতে হয়।</p> <p>আজকের ফাইনালটা দেখার সময় এগুলো মিলিয়ে দেখে নিতে পারো। দেখবে খেলা দেখার মজাটাই বেড়ে গেছে অনেক।</p> <p>রাজধানীর গোপালগঞ্জ ফুটবল একাডেমির কোচ ও জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘আমাদের ছেলে-মেয়েদের সাধারণত ফিটনেস বাড়ানোর ওপরই জোর দেওয়া হয় আগে। ভালো ফুটবলার হতে হলে এটাই আগে দরকার। এরপর ভালো একজন কোচের তত্ত্বাবধানে বেসিকগুলো রপ্ত করতে হবে। ফুটবল জটিল বিজ্ঞান বা অনেক পড়াশোনার বিষয় না। এখানে অনুশীলনই শেষ কথা।’</p> <p><strong>শেখার জন্য</strong><br /> বাংলাদেশে একজন স্কুলশিক্ষার্থীর জন্য সেই অর্থে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ফুটবল প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। বেশির ভাগই স্কুলপর্যায়ে ভালো খেলার পর ডিভিশনাল টুর্নামেন্টে সুযোগ পায় এবং সেখান থেকেই বড় বড় ক্লাবে নিজের দক্ষতার সাপেক্ষে জায়গা করে নেয়। এরপর ক্লাবের নিজস্ব কোচের মাধ্যমেই চলে প্রশিক্ষণ।</p> <p>আর শেখার জন্য বড় প্রতিষ্ঠান বলতে আছে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি)। এখানে প্রতিবছর ডিসেম্বরে আসন খালি থাকা সাপেক্ষে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়। আবেদনকারীদের দুই ধাপে নির্বাচন করা হয়। প্রাথমিক বাছাই শেষে চূড়ান্ত নির্বাচনের জন্য পাঠানো হয়। সেখানে উত্তীর্ণ হলেই ভর্তি করা হয়। ফুটবলে ভর্তির জন্য ন্যূনতম উচ্চতা ছেলে ৫ ফুট ১ ইঞ্চি এবং সপ্তম শ্রেণিপড়ুয়া হতে হয়। ভর্তি ফি দুই হাজার টাকাসহ অন্যান্য ফি রয়েছে। বেতন নির্ধারণ করা হয় অভিভাবকের আয় অনুযায়ী। যোগাযোগের ঠিকানা ও বিস্তারিত জানতে ভিজিট করো .িনশংঢ়.মড়া.নফ.</p> <p>রাজধানীতে ফুটবল শেখাতে আরো আছে গোপালগঞ্জ ফুটবল একাডেমি। এখানে তিন বছর বয়সের পর থেকে যে কেউ ফুটবল শেখার জন্য ভর্তি হতে পারবে। ভর্তি ফি এক হাজার টাকা। তিন বা চার বছরের কোর্স করতে পারবে। আবার শুধু বেসিক শেখার পরও কোর্স সমাপ্ত করতে পারবে। মাসিক বেতন পাঁচ শ টাকা। যোগাযোগ : আবাহনী মাঠ, ধানমণ্ডি, ঢাকা। মোবাইল-০১৭৯০০৫৫০৬৪।</p> <p><strong>অনলাইন</strong><br /> তথ্য-প্রযুক্তির এ যুগে অনলাইনই হতে পারে তোমার ফুটবল কোচ। আছে মাই পারসোনাল ফুটবল কোচ ডটকম, কমপ্লিট সকার গাইড ডটকম। ইউটিউবে স্ট্রিট সকার ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি চ্যানেল আছে। এতে সাবস্ক্রাইবার আছে সাড়ে ১৪ লাখ। ফুটবলের দারুণ সব কৌশল নিয়ে আছে শতাধিক ভিডিও। চ্যানেলের মধ্যে আরো আছে ইউনিস্পোর্ট, ফ্রিকিকারজ, নিউ হরাইজন। ইউটিউবের সার্চ অপশনে ইংরেজিতে লার্নিং ফুটবল লিখে সার্চ দিলেই মিলবে এসব চ্যানেল। এ ছাড়া খেলাধুলাবিষয়ক বাংলা ইউটিউব চ্যানেল ‘খেলবেই বাংলাদেশ’-এও বাংলায় ফুটবলের কিছু কৌশল জানতে পারবে। </p>