পঞ্চাশের পর সুস্থ থাকা খুব কঠিন কিছু নয়, তবে প্রয়োজন শুধু বিচক্ষণ জীবনযাপন। দেহ-মনের সুস্থতায় প্রতিকারের চেয়ে সব সময়ই প্রতিরোধ শ্রেয়, সে লক্ষ্যে করণীয় রয়েছে অনেক। আর তা-ই জানাচ্ছেন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. ইরতিফা যাবিন।
সুস্থ থাকতে জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনতে হবে পঞ্চার্ধোদের।
তাদের অবশ্যই মেনে চলতে হবে কিছু নির্দেশনা। নিয়মিত হাঁটাহাঁটি আর খাবার থেকে শর্করা ও চর্বি কমালেই স্বাস্থ্য সুরক্ষিত থাকবে মনে করে প্রচুর মানুষ। তবে এ দুটি নির্দেশনার পাশাপাশি সুস্থ থাকার জন্য প্রয়োজন আরো কিছু পদক্ষেপ। কী সেই পদক্ষেপ, চলুন জেনে নেওয়া যাক।
টিকা নিন
আবহাওয়া দ্রুত বদলায়, রাতে শীত তো দিনে গরম। তাপমাত্রার এমন তারতম্য এবং শুষ্ক বায়ু থেকে সহজেই বয়স্করা আক্রান্ত হচ্ছেন সর্দি-কাশি, জ্বর ও নিউমোনিয়াতে। এসব রোগ থেকে পরিত্রাণ পেতে টিকা নেওয়া প্রয়োজন। ইনফ্লুয়েঞ্জা থেকে বাঁচতে টিকা নিতে হবে প্রতিবছর।
আরো পড়ুন
যে ৪ পানীয় থেকে দূরে রাখবেন শিশুকে
যাদের হাঁপানি বা সিওপিডি আছে, তাদের নিউমোনিয়ার টিকা নেওয়া উচিত পাঁচ বছর পর পর। হৃদরোগ ও ডায়াবেটিক রোগীরা যেকোনো অসুখেই কষ্ট পান বেশি। তাই তাদের সংক্রামক রোগের টিকা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। তবে টিকা নেওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা
বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন ক্রনিক রোগ, যেমন—ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ আর ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে বয়সের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে।
সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল বা সিডিসির রিপোর্ট অনুযায়ী ৬০ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ ব্যক্তি উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষায় আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষেরই অনীহা। ফলে অধিকাংশ ব্যক্তির উচ্চ রক্তচাপ সময়মতো শনাক্ত হয় না। একই কারণে উচ্চ কোলেস্টেরল, লিভারের সমস্যা বা ডায়াবেটিসও রয়ে যাচ্ছে অজানা।
রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও অন্যান্য রক্ত পরীক্ষার পাশাপাশি বয়স্কদের উচিত ভায়া টেস্ট, প্যাপ স্মিয়ার বা প্রোস্টেট পরীক্ষা করা। এতে প্রাথমিক অবস্থায়ই ক্যান্সার শনাক্ত করা সম্ভব। তাই প্রয়োজন রুটিনমাফিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা, কোন পরীক্ষা কখন করতে হবে সেটি জানাবেন চিকিৎসক।
আরো পড়ুন
এবার ফেসবুক-ইনস্টাগ্রামে স্ট্যাটাস শেয়ার করা যাবে হোয়াটসঅ্যাপ থেকেই!
স্বাস্থ্যকর খাবার খান
সুস্থতায় চাই স্বাস্থ্যকর আহার—কথাটি বয়স্কদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুষম খাদ্যাভ্যাস শরীরের ওপর বয়সের প্রভাব কমাতে সাহায্য করে। এতে করে বার্ধক্যজনিত সমস্যাগুলোও কম দেখা দেয়। একে বলা হয় ‘হেলদি এজিং’। টাটকা সবজি, ফলফলাদি, হোল গ্রেন শস্য ও বাদাম খেলে শরীর সুস্থ থাকবে। মনে রাখতে হবে, সবার শরীরের চাহিদা এক নয়। পুষ্টিবিদের পরামর্শে সঠিক ডায়েট চার্ট তৈরি করে নেওয়া উচিত। লন্ডন কিংস কলেজের গবেষক ডা. মেগান রসি বলেছেন, বেশি করে শুধু এক জাতের নয়, খেতে হবে বিভিন্ন প্রজাতির সবজি ও ফল। শীতের সময় সহজেই পাওয়া যায় বিভিন্ন প্রকার সবজি ও ফল, খাবারে বৈচিত্র আনার এটাই সেরা সময়।
শরীরচর্চা করুন
বয়স বাড়ার সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই দেহের সচলতা কমে যায়। তার মূলে আছে পেশিশক্তি কমে যাওয়া এবং অস্থিসন্ধির সমস্যা। বয়স্করা শরীরচর্চা কমিয়ে দেন অথচ তাদের জন্য এক টানা শুয়ে-বসে থাকা অত্যন্ত ক্ষতিকর। শরীরে অতিরিক্ত চাপ ফেলে না এমন ব্যায়াম করতে হবে, যেমন—মাঝারি গতিতে হাঁটা, সম্ভব হলে সাইকেল চালানো, যোগব্যায়াম, ওয়াটার অ্যারোবিক্স করা। এতে শরীর আর মন দুটিই চনমনে থাকবে। ব্যায়ামের মাধ্যমে হাড় ক্ষয় কমানো, অস্টিওআরথ্রাইটিসের ব্যথা উপশম ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব।
আরো পড়ুন
শীত এলে চুল পড়া বাড়ে কেন?
সামাজিকতা বাড়ান
একাকিত্ব একটি গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি। বিষণ্নতা, দুশ্চিন্তা, ডিমেনশিয়া ও হৃদরোগের জন্যও সেটি দায়ী। একাকিত্ব ও নিঃসঙ্গতা কিছু ক্ষেত্রে অকালমৃত্যুও ডেকে আনতে পারে। সামাজিকতা বাড়ানোর মাধ্যমে একাকিত্ব দূর করা সম্ভব। পরিবার-পরিজনের পাশাপাশি বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা ও আলাপে সময় কাটাতে হবে। বিভিন্ন সামাজিক কাজে সম্পৃক্ত থাকাও মানসিক স্বাস্থ্য ঠিকঠাক রাখতে সহায়ক। প্রয়োজনে ডিজিটাল যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে হলেও সামাজিক হতে হবে। একা থাকা যাবে না।
পর্যাপ্ত ঘুমানো
সুস্থ থাকার জন্য পর্যাপ্ত ঘুম খুবই জরুরি। প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি রাতে গড়ে ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুম দরকার। তবে ৬ ঘণ্টা ঘুমও বয়স্কদের জন্য যথেষ্ট হতে পারে। ঘুমের ঘাটতির নেতিবাচক প্রভাব স্বাস্থ্যের ওপর পড়ে দ্রুত। এতে মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয় সবচেয়ে বেশি। মানসিক অবসাদের পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপেরও কারণ অপর্যাপ্ত ঘুম। নিজের অথবা পরিবারের সুস্থ জীবনযাপনের পথ সুগম ও সুন্দর করতে পারে কিছু সচেতনতার পদক্ষেপ। জীবনকে নিয়মের মধ্যে আনুন, সুস্থ থাকুন।
আরো পড়ুন
কালো প্লাস্টিকের পাত্রে খাবার রাখা কতটা স্বাস্থ্যকর
লেখক : এমবিবিএস, এফসিপিএস মেডিসিন
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল